বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে

উন্নত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ১০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন’ শিরোনামে প্রায় ২১ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থাটির প্রতিশ্রুত অংশ অনুমোদন দেয়। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ পরিবারের উন্নত উৎস থেকে পানি পাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১০ শতাংশের বেশি মানুষ পাইপলাইনের পানি পায় না। প্রায় অর্ধেক পৌরসভায় পাইপলাইনে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তার সুবিধা শুধু শহরের কেন্দ্রস্থলের গুটিকতক মানুষ ভোগ করতে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওইসব পৌরসভার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন পরিষেবার ক্ষমতা তৈরি হবে। এর অধীনে ছোট শহরগুলোর প্রায় ৬ লাখ বাসিন্দাকে পাইপলাইনে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে। এজন্য এই ৩০টি পৌরসভায় পানি শোধন সুবিধা, পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পাইপলাইনে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্ক ও ঘরে মিটারসহ সংযোগসহ সাবিক পানি অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ প্রকল্প পৌরসভাগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ও নালা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশন, গণশৌচাগার ও গুরুতর পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো তৈরিতে এ প্রকল্প বিনিয়োগ করবে। এর আওতায় মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের (মেথর) প্রশিক্ষণ দেয়া ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) দেয়া সহজ শর্তের এ ঋণ ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে প্রথম পাঁচবছর ঋণের কিস্তি দিতে হবে না। সোয়া এক শতাংশ সুদ ও পৌনে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এই ঋণের বাংলাদেশকে বাড়তি ২ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের এই প্রকল্পের বাকি অর্থের মধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দেবে ১০ কোটি ডলার। বাকি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বাংলাদেশ সরকার যোগান দেবে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে গত বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব অভিযোজন কমিশনের (জিসিএ) বৈঠকে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। একই দিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচন সফলতার বিষয়ে প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে অগ্রাধিকার খাত এবং এতে বিশ্বব্যাংক কীভাবে সহায়তা দিতে পারে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা বলেন, অভিযোজন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। দুর্যোগ ও জলবায়ুভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশগুলোর মধ্যে একটি। স্বাধীনতার পর মাত্র চার দশকের মধ্যে দরিদ্রতম দেশ থেকে বের হয়ে এসে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত উদারতার পরিচয় দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত আনন্দ স্কুল পরিদর্শন করেন। পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে যুক্ত করতে ২০১২ সাল থেকে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে আনন্দ স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে সারাদেশের ১৪৮টি নির্বাচিত উপজেলা এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থীকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো (এনজিও) এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবমিলিয়ে এ খাতে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

উন্নত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায়

বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

উন্নত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ১০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন’ শিরোনামে প্রায় ২১ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থাটির প্রতিশ্রুত অংশ অনুমোদন দেয়। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ পরিবারের উন্নত উৎস থেকে পানি পাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১০ শতাংশের বেশি মানুষ পাইপলাইনের পানি পায় না। প্রায় অর্ধেক পৌরসভায় পাইপলাইনে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তার সুবিধা শুধু শহরের কেন্দ্রস্থলের গুটিকতক মানুষ ভোগ করতে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওইসব পৌরসভার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন পরিষেবার ক্ষমতা তৈরি হবে। এর অধীনে ছোট শহরগুলোর প্রায় ৬ লাখ বাসিন্দাকে পাইপলাইনে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে। এজন্য এই ৩০টি পৌরসভায় পানি শোধন সুবিধা, পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পাইপলাইনে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্ক ও ঘরে মিটারসহ সংযোগসহ সাবিক পানি অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ প্রকল্প পৌরসভাগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ও নালা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশন, গণশৌচাগার ও গুরুতর পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো তৈরিতে এ প্রকল্প বিনিয়োগ করবে। এর আওতায় মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের (মেথর) প্রশিক্ষণ দেয়া ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) দেয়া সহজ শর্তের এ ঋণ ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে প্রথম পাঁচবছর ঋণের কিস্তি দিতে হবে না। সোয়া এক শতাংশ সুদ ও পৌনে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এই ঋণের বাংলাদেশকে বাড়তি ২ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের এই প্রকল্পের বাকি অর্থের মধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দেবে ১০ কোটি ডলার। বাকি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বাংলাদেশ সরকার যোগান দেবে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে গত বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব অভিযোজন কমিশনের (জিসিএ) বৈঠকে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। একই দিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচন সফলতার বিষয়ে প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে অগ্রাধিকার খাত এবং এতে বিশ্বব্যাংক কীভাবে সহায়তা দিতে পারে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা বলেন, অভিযোজন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। দুর্যোগ ও জলবায়ুভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশগুলোর মধ্যে একটি। স্বাধীনতার পর মাত্র চার দশকের মধ্যে দরিদ্রতম দেশ থেকে বের হয়ে এসে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত উদারতার পরিচয় দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত আনন্দ স্কুল পরিদর্শন করেন। পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে যুক্ত করতে ২০১২ সাল থেকে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে আনন্দ স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে সারাদেশের ১৪৮টি নির্বাচিত উপজেলা এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থীকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো (এনজিও) এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবমিলিয়ে এ খাতে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।