৬ নম্বর আসামি রাব্বী আকন গ্রেফতার : ৭ দিনের রিমান্ডে

আসামির আশ্রয়দাতাদেরও ছেড়ে দেয়া হবে না : পুলিশ সুপার

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি রাব্বী আকনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় বরগুনা শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ৭ দিন ও সাইমুনকে আরও ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন রাব্বী আকনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, সে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।

অন্যদিকে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের হাজারবিঘা গ্রামের কাওসার হোসেন লিটনের ছেলে কামরুল হাসান সাইমুনকে ৩ জুলাই পটুয়াখালী থানার পুলিশ গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ জনসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলায় রাব্বী আকন প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ ০০৭ বন্ডের সদস্য। রিফাদ হত্যার ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা যায়, সে রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আগে ও হত্যাকান্ডের সময় অংশ নেয়। পরে খুনিরা যখন চলে যায়, তখন নিজেদের দায়ের কোপে আহত রিসান ফরাজীকে ধরে নিয়ে পশ্চিমে বরগুনা সরকারি কলেজের দিকে আগাতে থাকে। তখন রাব্বীর মাথায় কম চুল, চোখে রঙিন চশমা ও গায়ে উজ্জ্বল রঙের জামা পরা দেখা যায়। বরগুনা পুলিশের গ্রেফতার তালিকায় তার নাম থাকলেও তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি পুলিশের আবেদন ছিল বলে বরগুনার পুলিশ সুপার জানান।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে রাব্বীকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে তাকে ৭ দিন ও সাইমুনকে আরও ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

অন্যদিকে বুধবার রাতে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রাতুল সিকদারকে গ্রেফতার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হলে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির তাকে ৫ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন।

১ জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীর, ৪ জুলাই রাতে ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান, ৫ জুলাই রাতে মো. সাগর ও নাজমুল হাসান এবং ১০ জুলাই রাতে রাফিউল ইসলাম রাব্বী আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের সামনে রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এখন পর্যন্ত ৭ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে ৩ জুলাই রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে ৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অস্ত্র মামলায় আরও ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কামরুল হাসান সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ ও টিকটক হৃদয়কে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আশ্রয়দাতাদেরও ছেড়ে দেয়া হবে না

বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলায় আসামিদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, তাদেরও এবার ছেড়ে দেয়া হবে না। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কারা রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী, তা প্রকাশ করতে চাননি তিনি। তবে আসামিদের পেছনে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়া রয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।

দ্রুত বিচার আইনে বিচারের জন্য আবেদন করা হবে

সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, দেশ, এমনকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত পেশ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আশা করেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করতে পারবেন। মামলাটি যাতে দ্রুত বিচার আইনে সম্পন্ন করা যায়, এ উদ্যোগ নেয়া হবে।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা

৬ নম্বর আসামি রাব্বী আকন গ্রেফতার : ৭ দিনের রিমান্ডে

আসামির আশ্রয়দাতাদেরও ছেড়ে দেয়া হবে না : পুলিশ সুপার

চিত্তরঞ্জন শীল, বরগুনা

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি রাব্বী আকনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় বরগুনা শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ৭ দিন ও সাইমুনকে আরও ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন রাব্বী আকনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, সে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।

অন্যদিকে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের হাজারবিঘা গ্রামের কাওসার হোসেন লিটনের ছেলে কামরুল হাসান সাইমুনকে ৩ জুলাই পটুয়াখালী থানার পুলিশ গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ জনসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলায় রাব্বী আকন প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ ০০৭ বন্ডের সদস্য। রিফাদ হত্যার ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা যায়, সে রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আগে ও হত্যাকান্ডের সময় অংশ নেয়। পরে খুনিরা যখন চলে যায়, তখন নিজেদের দায়ের কোপে আহত রিসান ফরাজীকে ধরে নিয়ে পশ্চিমে বরগুনা সরকারি কলেজের দিকে আগাতে থাকে। তখন রাব্বীর মাথায় কম চুল, চোখে রঙিন চশমা ও গায়ে উজ্জ্বল রঙের জামা পরা দেখা যায়। বরগুনা পুলিশের গ্রেফতার তালিকায় তার নাম থাকলেও তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি পুলিশের আবেদন ছিল বলে বরগুনার পুলিশ সুপার জানান।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে রাব্বীকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে তাকে ৭ দিন ও সাইমুনকে আরও ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

অন্যদিকে বুধবার রাতে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রাতুল সিকদারকে গ্রেফতার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হলে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির তাকে ৫ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন।

১ জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীর, ৪ জুলাই রাতে ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান, ৫ জুলাই রাতে মো. সাগর ও নাজমুল হাসান এবং ১০ জুলাই রাতে রাফিউল ইসলাম রাব্বী আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের সামনে রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এখন পর্যন্ত ৭ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে ৩ জুলাই রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে ৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অস্ত্র মামলায় আরও ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কামরুল হাসান সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ ও টিকটক হৃদয়কে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আশ্রয়দাতাদেরও ছেড়ে দেয়া হবে না

বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলায় আসামিদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, তাদেরও এবার ছেড়ে দেয়া হবে না। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কারা রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী, তা প্রকাশ করতে চাননি তিনি। তবে আসামিদের পেছনে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়া রয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।

দ্রুত বিচার আইনে বিচারের জন্য আবেদন করা হবে

সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, দেশ, এমনকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত পেশ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আশা করেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করতে পারবেন। মামলাটি যাতে দ্রুত বিচার আইনে সম্পন্ন করা যায়, এ উদ্যোগ নেয়া হবে।