আটক ট্যাংকার ছেড়ে না দিলে পাল্টা ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ইরানের

জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক হওয়া ইরানি তেলবাহী সুপার ট্যাংকারটিকে দ্রু ছেড়ে দেয়া না হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি গতকাল শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে জানান, ‘এটা খুবই বিপজ্জনক খেলা, এর প্রতিক্রিয়াও আছে।’ পারস্য উপসাগরে বুধবার তিনটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল- যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এমন দাবির মধ্যেই তেহরান তাদের জব্দ ট্যাংকার ছেড়ে দেওয়ার এ আহ্বান জানাল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরানি ট্যাংকার আটকের পাল্টা জবাব হিসেবে পারস্য উপসাগরে ওই ‘হয়রানির’ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান পর্যবেক্ষকদের। ব্রিটিশ রাজকীয় যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মন্ট্রোসের তাড়া খেয়ে পরে ওই ইরানি নৌকাগুলো পিছু হটে। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ইরানি সুপার-ট্যাংকার গ্রেস ১ ও এর সব কার্গো জব্দ করে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাংকারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অপরিশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছিল বলে এটিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তারা। এ ঘটনার জন্য ব্রিটেনকে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হতে পারে বলে বুধবার সকালেই হুঁশিয়ারি জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

ইরানের জলসীমায় জাহাজ চলাচলে

হুমকির মাত্রা বাড়ালো যুক্তরাজ্য

এদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের জলসীমায় নিজেদের জাহাজ চলাচলের উপর হুমকির মাত্রা সর্বোচ্চ বাড়িয়েছে যুক্তরাজ্য। তারা জানায়, হামলার হুমকি ‘গুরুতর’ পর্যায়ে রয়েছে। একদিন আগেই ওই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ট্যাংকার আটকের চেষ্টার অভিযোগ আনে দেশটি। তবে ইরান ওই অভিযোগ অস্বীকার করলেও হুমকির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার ঘোষণা দিলো ব্রিটেন। বুধবার ওমান ও পারস্য উপসাগরের মাঝামাঝি স্ট্রেইট অব হরমুজে একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার প্রতিহতের চেষ্টা করায় একটি ইরানি নৌকাকে সরিয়ে দিয়েছে রয়্যাল নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানি বিপ্লবী বাহিনীর পাঁচটি নৌকা ব্রিটিশ হেরিটেজ ট্যাংকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরে একটি ব্রিটিশ জাহাজ চলে এলে নৌকাগুলো সরে যায়। এ ঘটনার পর ওই অঞ্চলের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার এমন পদক্ষেপ নিল যুক্তরাজ্য। দেশটির পরিবহন বিভাগ বলছে, উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে এমন এলাকায় সব সময়ই যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়েছে তারা। বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক জনাথন বিয়াল জানান, হুমকির মাত্রা বলতে বোঝায়, ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরানি নৌকাগুলোর কবলে পড়ার সময় ব্রিটিশ হেরিটেজ আবু মুসা দ্বীপের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। আবু মুসা বিতর্কিত জলসীমায় হলেও এইচএমএস মনট্রোজ আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই ছিল।

প্রসঙ্গত, এর আগে নিজেদের একটি তেল ট্যাংকার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান। তবে, তারা জাহাজ দখলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তেহরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে দেশটির ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ তৈরির চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন । এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোর উত্তেজনা চরম আকার ধারন করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া পারমাণবিক তৎপরতার সীমা ইতোমধ্যেই লঙ্ঘন করতে শুরু করেছে ইরান।

মে ও জুনে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান তা অস্বীকার করে আসছে। ইরান গত মাসে হরমুজ প্রণালীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিতও করে।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

আটক ট্যাংকার ছেড়ে না দিলে পাল্টা ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ইরানের

সংবাদ ডেস্ক

জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক হওয়া ইরানি তেলবাহী সুপার ট্যাংকারটিকে দ্রু ছেড়ে দেয়া না হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি গতকাল শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে জানান, ‘এটা খুবই বিপজ্জনক খেলা, এর প্রতিক্রিয়াও আছে।’ পারস্য উপসাগরে বুধবার তিনটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল- যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এমন দাবির মধ্যেই তেহরান তাদের জব্দ ট্যাংকার ছেড়ে দেওয়ার এ আহ্বান জানাল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরানি ট্যাংকার আটকের পাল্টা জবাব হিসেবে পারস্য উপসাগরে ওই ‘হয়রানির’ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান পর্যবেক্ষকদের। ব্রিটিশ রাজকীয় যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মন্ট্রোসের তাড়া খেয়ে পরে ওই ইরানি নৌকাগুলো পিছু হটে। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ইরানি সুপার-ট্যাংকার গ্রেস ১ ও এর সব কার্গো জব্দ করে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাংকারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অপরিশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছিল বলে এটিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তারা। এ ঘটনার জন্য ব্রিটেনকে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হতে পারে বলে বুধবার সকালেই হুঁশিয়ারি জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

ইরানের জলসীমায় জাহাজ চলাচলে

হুমকির মাত্রা বাড়ালো যুক্তরাজ্য

এদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের জলসীমায় নিজেদের জাহাজ চলাচলের উপর হুমকির মাত্রা সর্বোচ্চ বাড়িয়েছে যুক্তরাজ্য। তারা জানায়, হামলার হুমকি ‘গুরুতর’ পর্যায়ে রয়েছে। একদিন আগেই ওই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ট্যাংকার আটকের চেষ্টার অভিযোগ আনে দেশটি। তবে ইরান ওই অভিযোগ অস্বীকার করলেও হুমকির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার ঘোষণা দিলো ব্রিটেন। বুধবার ওমান ও পারস্য উপসাগরের মাঝামাঝি স্ট্রেইট অব হরমুজে একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার প্রতিহতের চেষ্টা করায় একটি ইরানি নৌকাকে সরিয়ে দিয়েছে রয়্যাল নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানি বিপ্লবী বাহিনীর পাঁচটি নৌকা ব্রিটিশ হেরিটেজ ট্যাংকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরে একটি ব্রিটিশ জাহাজ চলে এলে নৌকাগুলো সরে যায়। এ ঘটনার পর ওই অঞ্চলের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার এমন পদক্ষেপ নিল যুক্তরাজ্য। দেশটির পরিবহন বিভাগ বলছে, উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে এমন এলাকায় সব সময়ই যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়েছে তারা। বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক জনাথন বিয়াল জানান, হুমকির মাত্রা বলতে বোঝায়, ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরানি নৌকাগুলোর কবলে পড়ার সময় ব্রিটিশ হেরিটেজ আবু মুসা দ্বীপের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। আবু মুসা বিতর্কিত জলসীমায় হলেও এইচএমএস মনট্রোজ আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই ছিল।

প্রসঙ্গত, এর আগে নিজেদের একটি তেল ট্যাংকার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান। তবে, তারা জাহাজ দখলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তেহরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে দেশটির ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ তৈরির চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন । এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোর উত্তেজনা চরম আকার ধারন করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া পারমাণবিক তৎপরতার সীমা ইতোমধ্যেই লঙ্ঘন করতে শুরু করেছে ইরান।

মে ও জুনে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান তা অস্বীকার করে আসছে। ইরান গত মাসে হরমুজ প্রণালীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিতও করে।