পিয়াজে কমলেও অপরিবর্তিত সবজি ও মাছ-মাংসের দাম

হঠাৎ করেই বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া পিয়াজের দর রাজধানীর বাজারগুলোতে কিছুটা কমেছে। গত মঙ্গলবারের তুলনায় পিয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। পিয়াজের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি, মাংস ও মাছের দাম। তবে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার, এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করেছেন। এখন সেই পিয়াজের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরে।

এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যেসব বাজারে গত বুধবার দেশি পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল, তা এখন কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি, যা গত বুধবার ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। তবে বাজারভেদে ভালো মানের দেশি পিয়াজের কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বুধবার ছিল ৫৫ টাকা কেজি।

পিয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত মঙ্গলবার ও বুধবার পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করলেও এখন তা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে পিয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। পাইকারিতে দাম কমার কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। পাইকারিতে হঠাৎ করেই পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও কিছুদিন বাড়তি দামে বিক্রি করেছি। ৩০ টাকার পিয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছিল। গত বুধবার যে পিয়াজের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি করেছি, তা এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজার ভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও গাজর সপ্তাহের ব্যবধানে শসা ও গাজরের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে কোন বাজারেই টমেটোর কেজি একশ’ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি। শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল।

এছাড়া পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বলেন, নতুন করে কোন সবজির দাম বাড়েনি। গত সপ্তাহের দামেই বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যে কোন সময় সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী রবিন বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ৮০ টাকায়। সেই মরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়াতে মরিচের ক্ষতি হচ্ছে। পানিতে মরিচ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মরিচ গাছও পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।

এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছ এখনও সাধারণ ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

ক্রেতাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই মাছের দাম চড়া। বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের এমন দাম বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বৃষ্টি হলেও মাছের দাম কমেনি। আগের মতোই চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিয়মিত মাছ খাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

পিয়াজে কমলেও অপরিবর্তিত সবজি ও মাছ-মাংসের দাম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

হঠাৎ করেই বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া পিয়াজের দর রাজধানীর বাজারগুলোতে কিছুটা কমেছে। গত মঙ্গলবারের তুলনায় পিয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। পিয়াজের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি, মাংস ও মাছের দাম। তবে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার, এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করেছেন। এখন সেই পিয়াজের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরে।

এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যেসব বাজারে গত বুধবার দেশি পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল, তা এখন কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি, যা গত বুধবার ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। তবে বাজারভেদে ভালো মানের দেশি পিয়াজের কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বুধবার ছিল ৫৫ টাকা কেজি।

পিয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত মঙ্গলবার ও বুধবার পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করলেও এখন তা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে পিয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। পাইকারিতে দাম কমার কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। পাইকারিতে হঠাৎ করেই পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও কিছুদিন বাড়তি দামে বিক্রি করেছি। ৩০ টাকার পিয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছিল। গত বুধবার যে পিয়াজের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি করেছি, তা এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজার ভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও গাজর সপ্তাহের ব্যবধানে শসা ও গাজরের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে কোন বাজারেই টমেটোর কেজি একশ’ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি। শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল।

এছাড়া পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বলেন, নতুন করে কোন সবজির দাম বাড়েনি। গত সপ্তাহের দামেই বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যে কোন সময় সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী রবিন বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ৮০ টাকায়। সেই মরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়াতে মরিচের ক্ষতি হচ্ছে। পানিতে মরিচ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মরিচ গাছও পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।

এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছ এখনও সাধারণ ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

ক্রেতাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই মাছের দাম চড়া। বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের এমন দাম বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বৃষ্টি হলেও মাছের দাম কমেনি। আগের মতোই চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিয়মিত মাছ খাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।