২৫টির মধ্যে ১৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল

কিডনি রোগীরা বিপাকে

উত্তরাঞ্চলের চার কোটি মানুষের কিডনি রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস বিভাগের ওয়াটার প্লান্টসহ দুটি মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় তিন দিন ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকার পরেও জোড়াতালি দিয়ে আবারও চালু করা হলেও আবারও যেকোন সময় কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস বন্ধ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কিডনি রোগীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের ডাইলাইসিস করার জন্য ২৫টি মেশিনের মধ্যে ৯টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আর ৩টি মেরামত অপেক্ষায়। চালু আছে মাত্র ১৩টি মেশিন। তার ওপর কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস করতে সেখানে থাকা ওয়াটারপ্লান্ট যা পানি রিফিল করে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্লান্ট কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। গত ২০ দিনে দুবার দুটি প্লান্ট বিকল হয়ে পড়ায় কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অনেক রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এদের মধ্যে দুজন রোগী মারাও যায়।

সরজমিন হাসপাতালের কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অনেক রোগী ডায়ালাইসিস করানোর অপেক্ষা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস মেশিন কম হওয়ায় রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় তারিখ নির্ধারিত থাকলেও রোগীদের চাপে ডায়ালাসিস না করে ফিরে যেতে হয় অনেককে। এ ব্যাপারে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা, সোহরাব আলী জানালেন একজন রোগীর ডাইলাইসিস করতে কমপক্ষে চার ঘণ্টা সময় লাগে রোগীর সংখ্যা বেশি হবার ফলে ১৩টি মেশিন দিয়ে ডায়ালাইসিস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি জানান গড়ে প্রতিদিন ৬০/৭০ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। আর একটা বিষয় একটি মেশিনতো আর সার্বক্ষণিক চালু রাখা সম্ভব না। মেশিনগুলোকেও রেস্ট দেয়ার প্রয়োজন হয় কিন্তু রোগীদের প্রচন্ড চাপে সর্বক্ষণ মেশিন চালানোর কারণে মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে ৩০টি মেশিন থাকলে রোগীদের চাপ সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স মোরশেদা বেগম জানান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে ৬ মাসের প্যাকেজ মাত্র বিশ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সপ্তাহে তিনদিন করে ছয়মাস ডায়ালাইসিস করা যায়। অল্প টাকায় হয় বলে অনেক হতদরিদ্র পরিবারের রোগী আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। তবে এখানে নানাবিধ সমস্যার কারণে তারা রোগীদের সেবা ঠিকমতো দিতে পারেন না। তিনি বলেন প্রথমত এখানে কোন নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফলে যে কেউ এখানে ঢুকে পড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভোল্টেজ আপ-ডাউন আর লো ভোল্টেজের কারণে ডায়ালাইসিস বিভাগের সবগুলো এসি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অন্যদিকে ২/৩টি সিলিং ফ্যান থাকলেও সেগুলো কাজ কাজ করে না। এমনি অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।

গাইবান্ধা থেকে আসা সুশীল চন্দ্র জানান, এর আগে দুবার ডায়ালাইসিস করতে এসে ফিরে গেছেন। তাদের নাকি মেশিন বিকল হয়েছে। কিন্তু তাকে তো সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস না করালে নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে। এছাড়া শারিরীক নানা সমস্যা দেখা দেয়। তিনি মেশিন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান। ১০ বছরের শিশু নাদিয়া জানায়, তিন বছর ধরে তাকে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। কিন্তু মেশিন স্বল্পতার কারণে অনেক দিন ফিরে যেতে হয় অথবা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহাম্মেদ স্বীকার করেন বেশ কয়েকটি মেশিন নষ্ট। তবে এগুলো সচল করার উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে বলে। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এ অঞ্চলে কিডনি রোগীর সংখ্যার তুলনায় ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড অনেক ছোট। সেজন্য বড় পরিসর এবং আলাদা ইউনিট দরকার এবং মেশিন প্রয়োজন। তাহলে রোগীদের সেবাদান নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

রংপুর মেডিকেল কলেজ

২৫টির মধ্যে ১৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল

কিডনি রোগীরা বিপাকে

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

উত্তরাঞ্চলের চার কোটি মানুষের কিডনি রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস বিভাগের ওয়াটার প্লান্টসহ দুটি মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় তিন দিন ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকার পরেও জোড়াতালি দিয়ে আবারও চালু করা হলেও আবারও যেকোন সময় কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস বন্ধ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কিডনি রোগীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের ডাইলাইসিস করার জন্য ২৫টি মেশিনের মধ্যে ৯টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আর ৩টি মেরামত অপেক্ষায়। চালু আছে মাত্র ১৩টি মেশিন। তার ওপর কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস করতে সেখানে থাকা ওয়াটারপ্লান্ট যা পানি রিফিল করে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্লান্ট কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। গত ২০ দিনে দুবার দুটি প্লান্ট বিকল হয়ে পড়ায় কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অনেক রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এদের মধ্যে দুজন রোগী মারাও যায়।

সরজমিন হাসপাতালের কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অনেক রোগী ডায়ালাইসিস করানোর অপেক্ষা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস মেশিন কম হওয়ায় রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় তারিখ নির্ধারিত থাকলেও রোগীদের চাপে ডায়ালাসিস না করে ফিরে যেতে হয় অনেককে। এ ব্যাপারে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা, সোহরাব আলী জানালেন একজন রোগীর ডাইলাইসিস করতে কমপক্ষে চার ঘণ্টা সময় লাগে রোগীর সংখ্যা বেশি হবার ফলে ১৩টি মেশিন দিয়ে ডায়ালাইসিস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি জানান গড়ে প্রতিদিন ৬০/৭০ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। আর একটা বিষয় একটি মেশিনতো আর সার্বক্ষণিক চালু রাখা সম্ভব না। মেশিনগুলোকেও রেস্ট দেয়ার প্রয়োজন হয় কিন্তু রোগীদের প্রচন্ড চাপে সর্বক্ষণ মেশিন চালানোর কারণে মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে ৩০টি মেশিন থাকলে রোগীদের চাপ সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স মোরশেদা বেগম জানান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে ৬ মাসের প্যাকেজ মাত্র বিশ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সপ্তাহে তিনদিন করে ছয়মাস ডায়ালাইসিস করা যায়। অল্প টাকায় হয় বলে অনেক হতদরিদ্র পরিবারের রোগী আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। তবে এখানে নানাবিধ সমস্যার কারণে তারা রোগীদের সেবা ঠিকমতো দিতে পারেন না। তিনি বলেন প্রথমত এখানে কোন নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফলে যে কেউ এখানে ঢুকে পড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভোল্টেজ আপ-ডাউন আর লো ভোল্টেজের কারণে ডায়ালাইসিস বিভাগের সবগুলো এসি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অন্যদিকে ২/৩টি সিলিং ফ্যান থাকলেও সেগুলো কাজ কাজ করে না। এমনি অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।

গাইবান্ধা থেকে আসা সুশীল চন্দ্র জানান, এর আগে দুবার ডায়ালাইসিস করতে এসে ফিরে গেছেন। তাদের নাকি মেশিন বিকল হয়েছে। কিন্তু তাকে তো সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস না করালে নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে। এছাড়া শারিরীক নানা সমস্যা দেখা দেয়। তিনি মেশিন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান। ১০ বছরের শিশু নাদিয়া জানায়, তিন বছর ধরে তাকে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। কিন্তু মেশিন স্বল্পতার কারণে অনেক দিন ফিরে যেতে হয় অথবা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহাম্মেদ স্বীকার করেন বেশ কয়েকটি মেশিন নষ্ট। তবে এগুলো সচল করার উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে বলে। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এ অঞ্চলে কিডনি রোগীর সংখ্যার তুলনায় ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড অনেক ছোট। সেজন্য বড় পরিসর এবং আলাদা ইউনিট দরকার এবং মেশিন প্রয়োজন। তাহলে রোগীদের সেবাদান নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।