বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নদী ভাঙছে
তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ

পাহাড়ি উজান ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। কোন কোন জেলায় নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনে সৃষ্ট বন্যায় সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, রংপুর, জামালপুর ও চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। তাদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন হয়ে উঠছে। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ৯৩টি পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৭৯টি পয়েন্টে বৃদ্ধি ও ১১টি পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেশের এ চিত্র উঠে এসেছে।

সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক নদীভাঙন। ইতোমধ্যেই জেলার কাজিপুর এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যমুনা নদীর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। কাজিপুরের বাঐখোলা বাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্র্ণ জনপদ। স্থানীয়দের অভিযোগ ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, ভাঙনরোধে বালু ভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। বন্যায় রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।এখনও পর্যন্ত বন্যা কবলিত মানুষের নিকট ত্রান পৌছেঁনি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা। গতকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ পেয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাউজুল কবীর প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে ও ইউপি প্রতিনিধি মারফত জানা গেছে, নদী বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি, পাইকানটারী পাড়া, সাজাই, চর সাজাই, পাখিউড়া, কোদালকাটি, কারিগর পাড়া, শংকর মাধবপুর ও তেরো রশি পাড়ার সব বাড়িতেই পানি উঠেছে। তীব্র নদীভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শংকর মাধবপুর গ্রাম। অধিকাংশ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু জায়গা ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। নদীর পানি উপচে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে ডুবে যাচ্ছে মাঠঘাটসহ মানুষের বসতবাড়ি। পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও হাওরখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে বন্যার আকার বেড়েই চলছে। শান্ত নদী আর টলটলে জলের হাওরগুলো ধরেছে ভিন্নরূপ, উথাল-পাথাল আর অথৈ-উচ্ছ্বাস। এসব উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় কয়েক শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। জীবন বাঁচাতে তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদসহ উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। দুর্যোগ কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পৌঁছে দিচ্ছে সবার হাতে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার। দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, পাহাড়ি ঢল আর অবিরত বর্ষণে উপজেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরীসহ অন্য নদীগুলোর পানি বেড়ে যায়। এতে গাঁওকান্দিয়া, কুল্লগড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন কয়েক শতাধিক পরিবার। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত হওয়া কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ২২ মেট্রিকটন চাল, ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সবগুলো উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বের করে সুবিধা-সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। জেলার উল্লেখযোগ্য নদী সোমেশ্বরীর পানি কমে আসলেও কংস, ধনু ও উব্দাখালি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল : জোয়ারের পানি আসার শুরুতেই যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও ঘুর্ণনস্রোতের তোড়ে যমুনার পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়ন ও ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির ঢলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মাহমুদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে পাউবোর আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে তিন হাজার পিস করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে গত ১৭ জুন থেকে ওইসব স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বার বাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদামসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ের ভাঙনের শিকার হয়ে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার তীব্রস্রোতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে হাজারও পরিবার। অনেক পরিবার তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় অনেক পরিবার টিনের চালার উপর বসবাস করছে। গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার, লালচামার, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাড়ছে পানি ডুবছে চর। যার কারণে নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়ে চরাঞ্চলবাসী। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নিচু এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা অনেকটা বেড়ে গেছে। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এখনও পানিবন্দী পরিবারগুলো চরেই বসবাস করছে।

রংপুর : অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রংপুরের তিন উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি গত ৪ দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপদসীমা শুক্রবার দুপুর থেকে অতিক্রম করা শুরু হয়েছে। তিনি জানান শনিবার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

জামালপুর : গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। জেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে যমুনার পানি বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট ও নতুন করে রাস্তাঘাট ভেঙে বন্যার পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত গতিতে পানি বাড়ায় গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে। পানি প্রবেশ করছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ বন্যা আঘাত হানায় গরু ছাগল সহায় সম্পল নিয়ে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটাছুটি করছে। আশ্রয় নিচ্ছে রেললাইন, বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার ধারে উঁচু স্থানে।

রাউজান (চট্টগ্রাম) : টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় রাউজানের মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান অংশ হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। তীব্র স্রোতে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। অবিরাম বর্ষণে পানির সঙ্গে গতকাল সকালে পাহাড়ি ঢলের পানি এসে এই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সূত্রসমূহ বলেছে, রাউজানের পূর্বাংশজুড়ে রয়েছে পার্বত্য জেলার অসংখ্য পাহাড়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির চাপে উপজেলার উত্তরাংশের ডাবুয়া খালের বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধে তীব্র বেগে পানি রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে গড়িয়ে এসে রাউজানকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এলাকার লোকজন বলেছেন সর্তার বেড়িবাঁধ এখন অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এই খালের বাঁধ ভেঙে পড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। গতকাল সকাল থেকে দেখা গেছে রাঙ্গামাটি সড়কের উপর দিয়ে হাঁটু থেকে কোমর পানি গড়াচ্ছে। উপজেলা ও পৌরসদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নদী ভাঙছে
তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ

সংবাদ ডেস্ক

পাহাড়ি উজান ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। কোন কোন জেলায় নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনে সৃষ্ট বন্যায় সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, রংপুর, জামালপুর ও চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। তাদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন হয়ে উঠছে। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ৯৩টি পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৭৯টি পয়েন্টে বৃদ্ধি ও ১১টি পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেশের এ চিত্র উঠে এসেছে।

সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক নদীভাঙন। ইতোমধ্যেই জেলার কাজিপুর এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যমুনা নদীর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। কাজিপুরের বাঐখোলা বাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্র্ণ জনপদ। স্থানীয়দের অভিযোগ ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, ভাঙনরোধে বালু ভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। বন্যায় রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।এখনও পর্যন্ত বন্যা কবলিত মানুষের নিকট ত্রান পৌছেঁনি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা। গতকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ পেয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাউজুল কবীর প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে ও ইউপি প্রতিনিধি মারফত জানা গেছে, নদী বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি, পাইকানটারী পাড়া, সাজাই, চর সাজাই, পাখিউড়া, কোদালকাটি, কারিগর পাড়া, শংকর মাধবপুর ও তেরো রশি পাড়ার সব বাড়িতেই পানি উঠেছে। তীব্র নদীভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শংকর মাধবপুর গ্রাম। অধিকাংশ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু জায়গা ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। নদীর পানি উপচে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে ডুবে যাচ্ছে মাঠঘাটসহ মানুষের বসতবাড়ি। পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও হাওরখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে বন্যার আকার বেড়েই চলছে। শান্ত নদী আর টলটলে জলের হাওরগুলো ধরেছে ভিন্নরূপ, উথাল-পাথাল আর অথৈ-উচ্ছ্বাস। এসব উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় কয়েক শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। জীবন বাঁচাতে তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদসহ উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। দুর্যোগ কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পৌঁছে দিচ্ছে সবার হাতে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার। দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, পাহাড়ি ঢল আর অবিরত বর্ষণে উপজেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরীসহ অন্য নদীগুলোর পানি বেড়ে যায়। এতে গাঁওকান্দিয়া, কুল্লগড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন কয়েক শতাধিক পরিবার। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত হওয়া কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ২২ মেট্রিকটন চাল, ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সবগুলো উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বের করে সুবিধা-সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। জেলার উল্লেখযোগ্য নদী সোমেশ্বরীর পানি কমে আসলেও কংস, ধনু ও উব্দাখালি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল : জোয়ারের পানি আসার শুরুতেই যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও ঘুর্ণনস্রোতের তোড়ে যমুনার পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়ন ও ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির ঢলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মাহমুদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে পাউবোর আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে তিন হাজার পিস করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে গত ১৭ জুন থেকে ওইসব স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বার বাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদামসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ের ভাঙনের শিকার হয়ে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার তীব্রস্রোতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে হাজারও পরিবার। অনেক পরিবার তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় অনেক পরিবার টিনের চালার উপর বসবাস করছে। গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার, লালচামার, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাড়ছে পানি ডুবছে চর। যার কারণে নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়ে চরাঞ্চলবাসী। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নিচু এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা অনেকটা বেড়ে গেছে। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এখনও পানিবন্দী পরিবারগুলো চরেই বসবাস করছে।

রংপুর : অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রংপুরের তিন উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি গত ৪ দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপদসীমা শুক্রবার দুপুর থেকে অতিক্রম করা শুরু হয়েছে। তিনি জানান শনিবার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

জামালপুর : গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। জেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে যমুনার পানি বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট ও নতুন করে রাস্তাঘাট ভেঙে বন্যার পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত গতিতে পানি বাড়ায় গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে। পানি প্রবেশ করছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ বন্যা আঘাত হানায় গরু ছাগল সহায় সম্পল নিয়ে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটাছুটি করছে। আশ্রয় নিচ্ছে রেললাইন, বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার ধারে উঁচু স্থানে।

রাউজান (চট্টগ্রাম) : টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় রাউজানের মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান অংশ হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। তীব্র স্রোতে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। অবিরাম বর্ষণে পানির সঙ্গে গতকাল সকালে পাহাড়ি ঢলের পানি এসে এই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সূত্রসমূহ বলেছে, রাউজানের পূর্বাংশজুড়ে রয়েছে পার্বত্য জেলার অসংখ্য পাহাড়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির চাপে উপজেলার উত্তরাংশের ডাবুয়া খালের বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধে তীব্র বেগে পানি রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে গড়িয়ে এসে রাউজানকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এলাকার লোকজন বলেছেন সর্তার বেড়িবাঁধ এখন অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এই খালের বাঁধ ভেঙে পড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। গতকাল সকাল থেকে দেখা গেছে রাঙ্গামাটি সড়কের উপর দিয়ে হাঁটু থেকে কোমর পানি গড়াচ্ছে। উপজেলা ও পৌরসদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।