কাপ্তাইয়ে পাহাড়ে ধস : নিহত ২ সড়ক বন্ধ

রাঙ্গামাটি সড়কে ১২টি স্পটে ভাঙন

টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ার রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে পাহাড়ধসে মাটিচাপায় দুজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন অতুল বড়ুয়া (৫০) ও সুইলাউ মারমা (৪৫)। বর্তমানে রাঙ্গামাটি-রাজস্থলী-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িসহ অভ্যন্তরীণ সড়কের প্রায় ১২টি স্পটে মাঝারি ধরনের ভাঙন দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সওজ বিভাগ সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমে জনগণ সন্তুষ্ট নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ার রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে হঠাৎ পাহাড়ধসে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকার মৃত দুলাল বড়ুয়ার ছেলে অতুল বড়ুয়া ও কারিগরপাড়ার স্থানীয় তংহ্লাচাই মারমার ছেলে সুইলাউ মারমা নামে দুুই পথচারী মারা যান। এ সময় সড়কে চলমান অবস্থায় একটি অটোরিকশাচালকসহ ৪ জন যাত্রী আহত হন। আহতদের নাম জানা যায়নি। এ সময় নিহত অতল বড়ুয়া সুইলাউ মারমাকে নিয়ে নিজের আমবাগান দেখার পর বাঙ্গালহালিয়া ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে একটি দল, কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয় তাদের মরদেহ। এছাড়া রাইখালীর কারিগরপাড়া, সন্দ্বীপপাড়া ও বড়খোলাপাড়ায় পাহাড়ধসের ফলে বন্ধ রয়েছে চন্দ্রঘোনা-রাজস্থালী-বান্দরবান সড়ক যোগাযোগ।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আশ্রাফ উদ্দিন, রাইখালী আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদারসহ আরও অনেকে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, পাহাড়ধসে দুজন নিহত হয়েছেন। টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনার কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে মাটিচাপায় এক শিশুসহ দুজন নিহত ও অপর দুজন আহত হন।

এদিকে টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীরা জেলা প্রশাসনের খোলা ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে প্রায় এক হাজারের অধিক লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের দুবেলা খাবার ও সকালের নাশতা সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের এনডিসি উত্তম কুমার দাশ জানিয়েছেন। অপরদিকে বাঘাইছড়িতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের প্রায় ৩৪০ পরিবার উপজেলা প্রশাসনের খোলা ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও পাহাড়ধসের কারণে অভ্যন্তরীণ ও বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ লঞ্চ যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

অপরদিকে ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িসহ অভ্যন্তরীণ সড়কের প্রায় ১২টি স্পটে মাঝারি ধরনের ভাঙন দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের মানিকছড়ি এলাকায় ১০-১২ ফুট গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ওই রুটে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের শালবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমে ক্রমান্বয়ে জনমনে আস্থার অভাব ঘটছে। কেননা, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাঙ্গামাটিতে অনুপস্থিতি ও ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় তখনকার সময়ে ভেঙে পড়া সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য এ বিভাগের কয়েক কোটি টাকার পরিকল্পনা এখনও বাস্তবাযিত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা টেকসই করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও জনমনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এবারের টানা ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর জন্য বোল্লা প্যারাসাইডিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভাগীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তবে একে লোক দেখানো এবং স্থানীয় কিছু লোকজনের পকেট ভারি করার উদ্যোগ বলে অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যে বোল্লা পোঁতা হচ্ছে সেগুলোর মাধ্যমে সড়কের ধস রক্ষা করার পরিবর্তে সড়কগুলো আরও হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। এবারের অতি বৃষ্টির ফলে গত ছয় দিনের এ জেলায় মৃতের সংখ্যা এ পর্ষন্ত চারে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

কাপ্তাইয়ে পাহাড়ে ধস : নিহত ২ সড়ক বন্ধ

রাঙ্গামাটি সড়কে ১২টি স্পটে ভাঙন

সুনীল কান্তি দে, পার্বত্য অঞ্চল

টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ার রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে পাহাড়ধসে মাটিচাপায় দুজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন অতুল বড়ুয়া (৫০) ও সুইলাউ মারমা (৪৫)। বর্তমানে রাঙ্গামাটি-রাজস্থলী-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িসহ অভ্যন্তরীণ সড়কের প্রায় ১২টি স্পটে মাঝারি ধরনের ভাঙন দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সওজ বিভাগ সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমে জনগণ সন্তুষ্ট নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ার রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে হঠাৎ পাহাড়ধসে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকার মৃত দুলাল বড়ুয়ার ছেলে অতুল বড়ুয়া ও কারিগরপাড়ার স্থানীয় তংহ্লাচাই মারমার ছেলে সুইলাউ মারমা নামে দুুই পথচারী মারা যান। এ সময় সড়কে চলমান অবস্থায় একটি অটোরিকশাচালকসহ ৪ জন যাত্রী আহত হন। আহতদের নাম জানা যায়নি। এ সময় নিহত অতল বড়ুয়া সুইলাউ মারমাকে নিয়ে নিজের আমবাগান দেখার পর বাঙ্গালহালিয়া ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে একটি দল, কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয় তাদের মরদেহ। এছাড়া রাইখালীর কারিগরপাড়া, সন্দ্বীপপাড়া ও বড়খোলাপাড়ায় পাহাড়ধসের ফলে বন্ধ রয়েছে চন্দ্রঘোনা-রাজস্থালী-বান্দরবান সড়ক যোগাযোগ।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আশ্রাফ উদ্দিন, রাইখালী আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদারসহ আরও অনেকে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, পাহাড়ধসে দুজন নিহত হয়েছেন। টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনার কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে মাটিচাপায় এক শিশুসহ দুজন নিহত ও অপর দুজন আহত হন।

এদিকে টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীরা জেলা প্রশাসনের খোলা ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে প্রায় এক হাজারের অধিক লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের দুবেলা খাবার ও সকালের নাশতা সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের এনডিসি উত্তম কুমার দাশ জানিয়েছেন। অপরদিকে বাঘাইছড়িতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের প্রায় ৩৪০ পরিবার উপজেলা প্রশাসনের খোলা ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও পাহাড়ধসের কারণে অভ্যন্তরীণ ও বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ লঞ্চ যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

অপরদিকে ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িসহ অভ্যন্তরীণ সড়কের প্রায় ১২টি স্পটে মাঝারি ধরনের ভাঙন দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের মানিকছড়ি এলাকায় ১০-১২ ফুট গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ওই রুটে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের শালবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমে ক্রমান্বয়ে জনমনে আস্থার অভাব ঘটছে। কেননা, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাঙ্গামাটিতে অনুপস্থিতি ও ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় তখনকার সময়ে ভেঙে পড়া সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য এ বিভাগের কয়েক কোটি টাকার পরিকল্পনা এখনও বাস্তবাযিত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা টেকসই করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও জনমনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এবারের টানা ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর জন্য বোল্লা প্যারাসাইডিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভাগীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তবে একে লোক দেখানো এবং স্থানীয় কিছু লোকজনের পকেট ভারি করার উদ্যোগ বলে অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যে বোল্লা পোঁতা হচ্ছে সেগুলোর মাধ্যমে সড়কের ধস রক্ষা করার পরিবর্তে সড়কগুলো আরও হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। এবারের অতি বৃষ্টির ফলে গত ছয় দিনের এ জেলায় মৃতের সংখ্যা এ পর্ষন্ত চারে দাঁড়িয়েছে।