দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল আজ

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড উভয়েরই লক্ষ্য ‘প্রথম’

ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড উভয়েই ‘প্রথম’ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছে। আজ দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেখানে লড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। দু’দলের কেউই কখনো বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেনি। তিনবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি ইংলিশরা। আর গত আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও, রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। তাই ‘প্রথমবারের’ মতো বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার সুবর্ণ সুযোগ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দুই দলের সামনেই।। ক্রিকেটের লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম লর্ডসে প্রথমবার আইসিসি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে।

দশটি দেশকে নিয়ে গত ৩০ মে লন্ডনের ওভাল মাঠে পর্দা ওঠে দ্বাদশ বিশ্বকাপের। লীগ পর্বে প্রতিটি দল একে অন্যের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়। লীগ পর্বের মোট ৪৫টি ম্যাচ শেষে সেরা চার দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। শেষ চারে উঠতে পারেনি- পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিফাইনালের ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে (৪৯.৩ ওভারে ২২১) ১৮ রানে নিউজিল্যান্ড (৮ উইকেটে ২৩৯) ও দ্বিতীয় সেমিতে ইংল্যান্ড (৩২.১ ওভারে ২২৬/২) ৮ উইকেটে হারায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে (৪৯ ওভারে ২২৩)।

এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। গত তিনবারই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ইংলিশদের। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। তিনটি ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ইংলিশদের। ১৯৯২ সালে ফাইনাল খেলার ২৭ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ইয়োইন মরগানের দল। এবার অবশ্য অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল স্বাগতিক ইংলিশরা।

গত আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হযেছিল ইংলিশদের। ঐ বিদায়ের পর থেকে ক্রিকেট অঙ্গনে নিজেদের নতুনভাবে চেনাতে থাকে তারা। দুর্দান্ত ক্রিকেট নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আইসিসি র‌্যাংকিং এ ওপরের তালিকায় উঠে আসে ইংল্যান্ড। এক পর্যায়ে র‌্যাংকিং-এর শীর্ষে উঠে মরগান-রুট-স্টোকসরা। যারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়া ইংল্যান্ড চার বছর পরের আসরের ফাইনালে। গত চার বছরে ইংল্যান্ডের কতটা উন্নতি হয়েছে সেটিই সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগান।

সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারানোর পর মরগান বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, গত চার বছরে আমরা কতদূর এসেছি। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর যদি কেউ আমাকে বলত চার বছর পর ফাইনালে ওঠার কথা, তবে আমি তা বিশ্বাস করতাম না। কারণ ঐ আসরে যেভাবে আমরা বাদ পড়েছি, তা ছিল দুঃখজনক। তবে আমরা গত চার বছর অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ফল এখন দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব দেখছে আমরা এখন সেরার মুকুট পড়া থেকে একা ধাপ দূরে।’

ফাইনালে ওঠার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হলেও, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ট্রফি জয়ের সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান মরগান, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত। লর্ডসের ফাইনালটা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং সেরা সাফল্য দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে হোচট খেলেও, এরপর বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় তারা। হ্যাটট্রিক জয়ের পর টানা দু’ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে ওঠার পথ কঠিন হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার। তবে লীগ পর্বে শেষ দুই ম্যাচে ভারত-নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। ৯ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করে মরগানরা।

ফাইনালের তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নিউজিল্যান্ড ফাইনালে উঠল দ্বিতীয়বার। তাও টানা। গত আসরে মেলবোর্নের ফাইনালে ওঠে কিউইরা রানার্স-আপ হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরে।

এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১১ পাঁচবার সেমিফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কোন আসরেই সেমির বাধা টপকাতে পারেনি ।

এবারও সেমির বাধা টপকাতে বড় প্রতিপক্ষের সামনে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। লীগ পর্বের সেরা দল ভারত ছিল শেষ চারে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। বৃষ্টিতে গড়ানো দু’দিনের সেই সেমিতে বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ১৮ রানে জয় পেতে বিশ্বকে চমকে দেয় কেন উইলিয়ামসনের দল। লীগ পর্বে ৯ খেলায় ১৫ পয়েন্ট নিয়ে সেরা দল হয়েছিল ভারত। আর নিউজিল্যান্ড ছিল চতুর্থস্থানে। ৯ খেলায় ৫ জয় ৩ হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচের ফলে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থান থাকে কিউইরা।

বড় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয় পায় তারা। শুভ সূচনার পর টানা দু’জয় তুলে নেয় কিউইরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলেও, পরের দু’ম্যাচ জিততে বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ফলে তাই প্রথম ছয় ম্যাচ থেকে পাঁচ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খুব কাছে পৌঁছে যায় উইলিয়ামসন-বোল্টরা। কিন্তু লীগ পর্বে নিজেদের শেষ তিন ম্যাচেই হেরে সেমির পথ কঠিন করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচের ফলাফলের দিকে চেয়ে থাকতে হয় কিউইদের। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতলে নিউজিল্যান্ডের সমান ১১ করে পয়েন্ট হয়। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে নেমে অসাধারণ এক জয় তুলে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দলের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে গতবার না পারলেও, এবার শিরোপা জিততে বদ্ধপরিকর কিউই অধিনায়ক, ‘আবারও আমাদের সামনে বিশ্বমঞ্চে সেরা হবার সুযোগ এসেছে। গত আসরে আমরা সুযোগ হাতছাড়া করেছিলাম। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দলের সবাই শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছে। আমি মনে করি, আমরা সেরাটা দিতে পারলে এবারের শিরোপা আমাদেরই হবে।’

এবারের আসরে লীগ পর্বে চেস্টার-লি-স্ট্রিটে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ঐ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কিউইরা। ১১৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ওপেনার জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংলিশরা। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৯ বলে ১০৬ রান করেন বেয়ারস্টো।

জবাবে ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি। ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন। তবে এই জয় কোন কাজে আসবে না ইংল্যান্ডের জন্য। কারণ এবার বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়তে হবে ইংলিশদের। সেই মঞ্চের আবহ বেশ ভালোই জানে নিউজিল্যান্ড। চার বছর পেরিয়ে গেলেও আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা বেশ রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে ইংল্যান্ড। ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা বেশি হলেও, সেই অভিজ্ঞতাও জং ধরে গিয়েছে। ২৭ বছর আগে খেলা সেই ফাইনাল, আর এই যুগের ফাইনাল খেলার মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তবে নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা সঙ্গে থাকায় এক শতাংশ হলেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার লড়াইয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড। অর্থাৎ ফাইনাল জয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, নিউজিল্যান্ডের ৪৯ শতাংশ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৯০টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ড ৪৩টিতে, ইংল্যান্ড ৪১টিতে জয় পায়। ২টি টাই ও ৪টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাসস/ওয়েবসাইট।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল আজ

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড উভয়েরই লক্ষ্য ‘প্রথম’

সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

image

ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড উভয়েই ‘প্রথম’ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছে। আজ দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেখানে লড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। দু’দলের কেউই কখনো বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেনি। তিনবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি ইংলিশরা। আর গত আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও, রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। তাই ‘প্রথমবারের’ মতো বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার সুবর্ণ সুযোগ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দুই দলের সামনেই।। ক্রিকেটের লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম লর্ডসে প্রথমবার আইসিসি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে।

দশটি দেশকে নিয়ে গত ৩০ মে লন্ডনের ওভাল মাঠে পর্দা ওঠে দ্বাদশ বিশ্বকাপের। লীগ পর্বে প্রতিটি দল একে অন্যের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়। লীগ পর্বের মোট ৪৫টি ম্যাচ শেষে সেরা চার দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। শেষ চারে উঠতে পারেনি- পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিফাইনালের ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে (৪৯.৩ ওভারে ২২১) ১৮ রানে নিউজিল্যান্ড (৮ উইকেটে ২৩৯) ও দ্বিতীয় সেমিতে ইংল্যান্ড (৩২.১ ওভারে ২২৬/২) ৮ উইকেটে হারায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে (৪৯ ওভারে ২২৩)।

এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। গত তিনবারই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ইংলিশদের। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। তিনটি ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ইংলিশদের। ১৯৯২ সালে ফাইনাল খেলার ২৭ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ইয়োইন মরগানের দল। এবার অবশ্য অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল স্বাগতিক ইংলিশরা।

গত আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হযেছিল ইংলিশদের। ঐ বিদায়ের পর থেকে ক্রিকেট অঙ্গনে নিজেদের নতুনভাবে চেনাতে থাকে তারা। দুর্দান্ত ক্রিকেট নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আইসিসি র‌্যাংকিং এ ওপরের তালিকায় উঠে আসে ইংল্যান্ড। এক পর্যায়ে র‌্যাংকিং-এর শীর্ষে উঠে মরগান-রুট-স্টোকসরা। যারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়া ইংল্যান্ড চার বছর পরের আসরের ফাইনালে। গত চার বছরে ইংল্যান্ডের কতটা উন্নতি হয়েছে সেটিই সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগান।

সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারানোর পর মরগান বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, গত চার বছরে আমরা কতদূর এসেছি। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর যদি কেউ আমাকে বলত চার বছর পর ফাইনালে ওঠার কথা, তবে আমি তা বিশ্বাস করতাম না। কারণ ঐ আসরে যেভাবে আমরা বাদ পড়েছি, তা ছিল দুঃখজনক। তবে আমরা গত চার বছর অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ফল এখন দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব দেখছে আমরা এখন সেরার মুকুট পড়া থেকে একা ধাপ দূরে।’

ফাইনালে ওঠার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হলেও, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ট্রফি জয়ের সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান মরগান, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত। লর্ডসের ফাইনালটা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং সেরা সাফল্য দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে হোচট খেলেও, এরপর বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় তারা। হ্যাটট্রিক জয়ের পর টানা দু’ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে ওঠার পথ কঠিন হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার। তবে লীগ পর্বে শেষ দুই ম্যাচে ভারত-নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। ৯ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করে মরগানরা।

ফাইনালের তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নিউজিল্যান্ড ফাইনালে উঠল দ্বিতীয়বার। তাও টানা। গত আসরে মেলবোর্নের ফাইনালে ওঠে কিউইরা রানার্স-আপ হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরে।

এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১১ পাঁচবার সেমিফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কোন আসরেই সেমির বাধা টপকাতে পারেনি ।

এবারও সেমির বাধা টপকাতে বড় প্রতিপক্ষের সামনে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। লীগ পর্বের সেরা দল ভারত ছিল শেষ চারে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। বৃষ্টিতে গড়ানো দু’দিনের সেই সেমিতে বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ১৮ রানে জয় পেতে বিশ্বকে চমকে দেয় কেন উইলিয়ামসনের দল। লীগ পর্বে ৯ খেলায় ১৫ পয়েন্ট নিয়ে সেরা দল হয়েছিল ভারত। আর নিউজিল্যান্ড ছিল চতুর্থস্থানে। ৯ খেলায় ৫ জয় ৩ হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচের ফলে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থান থাকে কিউইরা।

বড় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয় পায় তারা। শুভ সূচনার পর টানা দু’জয় তুলে নেয় কিউইরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলেও, পরের দু’ম্যাচ জিততে বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ফলে তাই প্রথম ছয় ম্যাচ থেকে পাঁচ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খুব কাছে পৌঁছে যায় উইলিয়ামসন-বোল্টরা। কিন্তু লীগ পর্বে নিজেদের শেষ তিন ম্যাচেই হেরে সেমির পথ কঠিন করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচের ফলাফলের দিকে চেয়ে থাকতে হয় কিউইদের। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতলে নিউজিল্যান্ডের সমান ১১ করে পয়েন্ট হয়। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে নেমে অসাধারণ এক জয় তুলে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দলের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে গতবার না পারলেও, এবার শিরোপা জিততে বদ্ধপরিকর কিউই অধিনায়ক, ‘আবারও আমাদের সামনে বিশ্বমঞ্চে সেরা হবার সুযোগ এসেছে। গত আসরে আমরা সুযোগ হাতছাড়া করেছিলাম। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দলের সবাই শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছে। আমি মনে করি, আমরা সেরাটা দিতে পারলে এবারের শিরোপা আমাদেরই হবে।’

এবারের আসরে লীগ পর্বে চেস্টার-লি-স্ট্রিটে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ঐ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কিউইরা। ১১৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ওপেনার জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংলিশরা। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৯ বলে ১০৬ রান করেন বেয়ারস্টো।

জবাবে ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি। ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন। তবে এই জয় কোন কাজে আসবে না ইংল্যান্ডের জন্য। কারণ এবার বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়তে হবে ইংলিশদের। সেই মঞ্চের আবহ বেশ ভালোই জানে নিউজিল্যান্ড। চার বছর পেরিয়ে গেলেও আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা বেশ রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে ইংল্যান্ড। ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা বেশি হলেও, সেই অভিজ্ঞতাও জং ধরে গিয়েছে। ২৭ বছর আগে খেলা সেই ফাইনাল, আর এই যুগের ফাইনাল খেলার মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তবে নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা সঙ্গে থাকায় এক শতাংশ হলেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার লড়াইয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড। অর্থাৎ ফাইনাল জয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, নিউজিল্যান্ডের ৪৯ শতাংশ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৯০টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ড ৪৩টিতে, ইংল্যান্ড ৪১টিতে জয় পায়। ২টি টাই ও ৪টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাসস/ওয়েবসাইট।