ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ৩১ নির্দেশনা

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করাসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার তেজগাঁও কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ নির্দেশনা দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৫ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, চট্টগ্রামের ডিসি ইলিয়াস হোসাইন, শেরপুরের ডিসি আনারকলি মাহবুব ও টাঙ্গাইলের ডিসি শহীদুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হলো : (১) ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(২) ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করা।

(৩) সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখা।

(৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করা।

(৫) যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৬) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

(৭) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে জেলার সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

(৮) তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা।

(৯) শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।

(১০) ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখা।

(১১) কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

১২) ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

(১৩) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করা।

(১৪) পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

(১৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ-সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(১৬) সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করা।

(১৭) জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা।

(১৮) দফতরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্যমেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা।

(১৯) শিল্পাঞ্চলে শান্তিরক্ষা, পণ্যপরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(২০) বাজারব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। ভোক্তা-অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা।

(২১ নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা।

(২২) নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

(২৩) শিশু-কিশোরদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।

(২৪) প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(২৫) পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গ গুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

(২৬) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবস্থা নেয়া।

(২৭) জেলার আকার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে সেই জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কোন ঢালাও পরিকল্পনা নয়, জেলার চাহিদানুযায়ী এবং তার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করা।

(২৮) স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।

(২৯) চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় সরকারের একটি মিনি স্টেডিয়াম করার উদ্যোগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল-কলেজের খেলার মাঠটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেটি কিন্তু উদ্দেশ্য নয়, স্টেডিয়াম বলতে চারদিকে আবার ঘেরাও করে ফেলা নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশটাও ঠিক রাখতে হবে।

(৩০) গৃহহারা, ভূমিহীন এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন-সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষকে পুনর্বাসন করছে। কিন্তু আবার নদী ভাঙছে এবং মানুষ গৃহহারা হচ্ছে। কাজেই যখনই এমন হবে তখনই তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। আর সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির তালিকা প্রণয়নকালে প্রকৃত দুস্থরাই যেন সহায়তা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

(৩১) সাম্প্রদায়িক বজায় রেখে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা, জলাধার সংরক্ষণের নিমিত্তে খাল খনন ও পুকুর খনন করা এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনায়ন নিশ্চিত করা।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ৩১ নির্দেশনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করাসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার তেজগাঁও কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ নির্দেশনা দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৫ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, চট্টগ্রামের ডিসি ইলিয়াস হোসাইন, শেরপুরের ডিসি আনারকলি মাহবুব ও টাঙ্গাইলের ডিসি শহীদুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হলো : (১) ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(২) ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করা।

(৩) সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখা।

(৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করা।

(৫) যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৬) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

(৭) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে জেলার সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

(৮) তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা।

(৯) শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।

(১০) ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখা।

(১১) কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

১২) ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

(১৩) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করা।

(১৪) পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

(১৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ-সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(১৬) সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করা।

(১৭) জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা।

(১৮) দফতরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্যমেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা।

(১৯) শিল্পাঞ্চলে শান্তিরক্ষা, পণ্যপরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(২০) বাজারব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। ভোক্তা-অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা।

(২১ নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা।

(২২) নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

(২৩) শিশু-কিশোরদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।

(২৪) প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(২৫) পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গ গুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

(২৬) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবস্থা নেয়া।

(২৭) জেলার আকার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে সেই জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কোন ঢালাও পরিকল্পনা নয়, জেলার চাহিদানুযায়ী এবং তার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করা।

(২৮) স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।

(২৯) চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় সরকারের একটি মিনি স্টেডিয়াম করার উদ্যোগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল-কলেজের খেলার মাঠটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেটি কিন্তু উদ্দেশ্য নয়, স্টেডিয়াম বলতে চারদিকে আবার ঘেরাও করে ফেলা নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশটাও ঠিক রাখতে হবে।

(৩০) গৃহহারা, ভূমিহীন এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন-সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষকে পুনর্বাসন করছে। কিন্তু আবার নদী ভাঙছে এবং মানুষ গৃহহারা হচ্ছে। কাজেই যখনই এমন হবে তখনই তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। আর সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির তালিকা প্রণয়নকালে প্রকৃত দুস্থরাই যেন সহায়তা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

(৩১) সাম্প্রদায়িক বজায় রেখে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা, জলাধার সংরক্ষণের নিমিত্তে খাল খনন ও পুকুর খনন করা এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনায়ন নিশ্চিত করা।