বিশেষ বাহিনী চেয়েছেন ডিসিরা

মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পুলিশের মতো বিশেষ বাহিনী চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। এ দাবির ব্যাপারে ডিসিদের যুক্তি হলো, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অনেক সময় পুলিশের যথাযথ সহায়তা পাওয়া যায় না। কখনো কখনো চেয়েও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ পাওয়া যায় না। এতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়। ডিসিরা প্রশাসন পরিচালনায় বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসাও করেছেন।

গতকাল জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুক্ত আলোচনায় একাধিক ডিসি এ প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কয়েকজন ডিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ২৭ জন ডিসি। মুক্ত আলোচনায় সূচনা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বেলা ১১টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনজন ডিসি ও একজন বিভাগীয় কমিশনার আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আপনাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।’ জঙ্গিবাদ যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এবার সম্মেলন উপলক্ষে ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ন্যূনতম চারজন ডিসি নিজেদের নিরাপত্তা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় এক প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। তারা পুলিশের আদলে নিজস্ব বাহিনী চেয়েছেন। কক্সবাজার, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাটের ডিসি এই প্রস্তাব করেছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনায় ডিসিদের অধীনে একটি বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স গঠনের দাবি প্রসঙ্গে কয়েকজন ডিসি তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। এর মধ্যে কক্সবাজার, কুমিল্লা, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গার ডিসি বলেছেন, প্রায়ই উন্নয়ন-আইনশৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। প্রায়ই ডিসিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিদেশি প্রতিনিধিরা সাক্ষাতের জন্য আসেন। তাদেরও নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। এছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও যে কোন সময় প্রস্তাবিত পুলিশ ফোর্স ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি ডিসি অফিসের বিচারিক আদালতগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ ফোর্স জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় খুলনা মেডিকেল কলেজকে ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে’ রূপান্তরিত করার প্রস্তাব করেছেন খুলনার ডিসি। তিনি সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, খুলনা অঞ্চলের মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বই যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দিয়েছেন বরগুনা ও পটুয়াখালীর ডিসি। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬-এর ২৩ (ঙ) পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব করেছেন ঢাকার ডিসি।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বইয়ের পক্ষে বরগুনা ও পটুয়াখালীর ডিসি বলেন, বর্তমানে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের যে বই আছে, তা ব্রিটিশ আমলের। যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। মাত্র চার-পাঁচ বছর ব্যবহার ও নবায়নে জরাজীর্ণ হয়ে যায় এবং ভাজ করতে সমস্যা হয়। প্রস্তাবিত পাসপোর্ট আকারে করা এক পৃষ্ঠায় নবায়ন ও অন্য পৃষ্ঠায় পুলিশি প্রতিপাদন, গুলি কেনা ও খরচের হিসাব লেখা যাবে। প্রতিটি বইয়ে ও পাতায় নিরাপত্তা প্রতীকসহ ক্রমিক নম্বর থাকলে লাইসেন্স জাল হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এছাড়া রাউজানে একটি নৌ-থানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের ডিসি। ফেনীর ডিসি উপজেলায় আনসার ব্যাটালিয়ন স্থাপন করার প্রস্তাব করেছেন।

একাধিক ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের প্রস্তাব ও দাবিগুলো মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। অনেক দাবির পক্ষেই তিনি একমত পোষণ করেছেন। জেলা প্রশাসকরা তাদের কর্মপরিকল্পনার পাশপাশি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ কর্মপরিকল্পনা যৌক্তিক। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবে।

কার্য অধিবেশন : এদিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম কার্য অধিবেশনে গতকাল বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন।

ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচিতে যে-ই অনিয়ম করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি।’

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির দুর্নীতি প্রতিরোধে ডিসিদের কী নির্দেশনা দিয়েছেনÑ জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোন অনিয়ম যেন না হয়। যে-ই অনিয়ম করুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছি।’

ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের ভাতাপ্রাপ্তি সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ধরনের রোগীদের ৫০ হাজার টাকা দেই। আগে ঢাকা থেকে এ টাকা দেয়া হতো। কিন্তু টাকা প্রাপ্তি সহজ করার জন্য এখন জেলায় জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে বিতরণ করব। সভা করে এক মাসের মধ্যেই ব্যবস্থা নেব।’

তিনি জানান, ‘ভাতাভোগীরা যেন সুষ্ঠুভাবে ভাতা পান সেজন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা ভাতাও দিয়ে থাকে।’

রাজনৈতিক কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটেÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দরিদ্রদের, দুস্থদের কাজে ব্যাঘাত ঘটুক সেটি প্রধানমন্ত্রী চান না।’

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে ভাতা পান নাÑ এ বিষয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে ভাতা পায় না, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা গরিব দুস্থ সবাইকে, সে বিএনপি-আওয়ামী লীগ যে দলেরই হোক তাদের ভাতা দিচ্ছি।’

পরিবেশ মন্ত্রণালয় : প্রথম দিনে দ্বিতীয় কার্যঅধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বেআইনি ইটভাটা চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছি। কারণ বনখেকোদের কোন স্থান নেই। বনখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় বনের গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বন ধ্বংস হয় এমন কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।’

শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে স’ মিল করা যাবে না। কেউ করে থাকলে চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। ২০১৩ ও ২০১৯ সালের আইন মোতাবেক এটি কার্যকর করতে হবে। আইনে বিস্তারিত বিধি দেয়া আছে। কোন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নয়; আদালতে মামলা থাকার কারণে অনেক ইটভাটা ও স’ মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে ডিসিরা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে মামলার বিবরণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় মামলা নিষ্পত্তি করবে। এরপর সেসব ইটভাটা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।’

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

বিশেষ বাহিনী চেয়েছেন ডিসিরা

রাকিব উদ্দিন

মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পুলিশের মতো বিশেষ বাহিনী চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। এ দাবির ব্যাপারে ডিসিদের যুক্তি হলো, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অনেক সময় পুলিশের যথাযথ সহায়তা পাওয়া যায় না। কখনো কখনো চেয়েও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ পাওয়া যায় না। এতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়। ডিসিরা প্রশাসন পরিচালনায় বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসাও করেছেন।

গতকাল জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুক্ত আলোচনায় একাধিক ডিসি এ প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কয়েকজন ডিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ২৭ জন ডিসি। মুক্ত আলোচনায় সূচনা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বেলা ১১টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনজন ডিসি ও একজন বিভাগীয় কমিশনার আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আপনাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।’ জঙ্গিবাদ যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এবার সম্মেলন উপলক্ষে ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ন্যূনতম চারজন ডিসি নিজেদের নিরাপত্তা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় এক প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। তারা পুলিশের আদলে নিজস্ব বাহিনী চেয়েছেন। কক্সবাজার, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাটের ডিসি এই প্রস্তাব করেছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনায় ডিসিদের অধীনে একটি বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স গঠনের দাবি প্রসঙ্গে কয়েকজন ডিসি তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। এর মধ্যে কক্সবাজার, কুমিল্লা, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গার ডিসি বলেছেন, প্রায়ই উন্নয়ন-আইনশৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। প্রায়ই ডিসিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিদেশি প্রতিনিধিরা সাক্ষাতের জন্য আসেন। তাদেরও নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। এছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও যে কোন সময় প্রস্তাবিত পুলিশ ফোর্স ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি ডিসি অফিসের বিচারিক আদালতগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ ফোর্স জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় খুলনা মেডিকেল কলেজকে ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে’ রূপান্তরিত করার প্রস্তাব করেছেন খুলনার ডিসি। তিনি সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, খুলনা অঞ্চলের মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বই যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দিয়েছেন বরগুনা ও পটুয়াখালীর ডিসি। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬-এর ২৩ (ঙ) পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব করেছেন ঢাকার ডিসি।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বইয়ের পক্ষে বরগুনা ও পটুয়াখালীর ডিসি বলেন, বর্তমানে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের যে বই আছে, তা ব্রিটিশ আমলের। যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। মাত্র চার-পাঁচ বছর ব্যবহার ও নবায়নে জরাজীর্ণ হয়ে যায় এবং ভাজ করতে সমস্যা হয়। প্রস্তাবিত পাসপোর্ট আকারে করা এক পৃষ্ঠায় নবায়ন ও অন্য পৃষ্ঠায় পুলিশি প্রতিপাদন, গুলি কেনা ও খরচের হিসাব লেখা যাবে। প্রতিটি বইয়ে ও পাতায় নিরাপত্তা প্রতীকসহ ক্রমিক নম্বর থাকলে লাইসেন্স জাল হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এছাড়া রাউজানে একটি নৌ-থানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের ডিসি। ফেনীর ডিসি উপজেলায় আনসার ব্যাটালিয়ন স্থাপন করার প্রস্তাব করেছেন।

একাধিক ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের প্রস্তাব ও দাবিগুলো মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। অনেক দাবির পক্ষেই তিনি একমত পোষণ করেছেন। জেলা প্রশাসকরা তাদের কর্মপরিকল্পনার পাশপাশি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ কর্মপরিকল্পনা যৌক্তিক। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবে।

কার্য অধিবেশন : এদিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম কার্য অধিবেশনে গতকাল বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন।

ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচিতে যে-ই অনিয়ম করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি।’

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির দুর্নীতি প্রতিরোধে ডিসিদের কী নির্দেশনা দিয়েছেনÑ জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোন অনিয়ম যেন না হয়। যে-ই অনিয়ম করুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছি।’

ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের ভাতাপ্রাপ্তি সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ধরনের রোগীদের ৫০ হাজার টাকা দেই। আগে ঢাকা থেকে এ টাকা দেয়া হতো। কিন্তু টাকা প্রাপ্তি সহজ করার জন্য এখন জেলায় জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে বিতরণ করব। সভা করে এক মাসের মধ্যেই ব্যবস্থা নেব।’

তিনি জানান, ‘ভাতাভোগীরা যেন সুষ্ঠুভাবে ভাতা পান সেজন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা ভাতাও দিয়ে থাকে।’

রাজনৈতিক কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটেÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দরিদ্রদের, দুস্থদের কাজে ব্যাঘাত ঘটুক সেটি প্রধানমন্ত্রী চান না।’

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে ভাতা পান নাÑ এ বিষয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে ভাতা পায় না, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা গরিব দুস্থ সবাইকে, সে বিএনপি-আওয়ামী লীগ যে দলেরই হোক তাদের ভাতা দিচ্ছি।’

পরিবেশ মন্ত্রণালয় : প্রথম দিনে দ্বিতীয় কার্যঅধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বেআইনি ইটভাটা চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছি। কারণ বনখেকোদের কোন স্থান নেই। বনখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় বনের গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বন ধ্বংস হয় এমন কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।’

শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে স’ মিল করা যাবে না। কেউ করে থাকলে চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। ২০১৩ ও ২০১৯ সালের আইন মোতাবেক এটি কার্যকর করতে হবে। আইনে বিস্তারিত বিধি দেয়া আছে। কোন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নয়; আদালতে মামলা থাকার কারণে অনেক ইটভাটা ও স’ মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে ডিসিরা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে মামলার বিবরণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় মামলা নিষ্পত্তি করবে। এরপর সেসব ইটভাটা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।’