অতিরিক্ত সচিব ওয়াছি উদ্দিনের অপসারণ দাবি

দুধ নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে অপমান করেছেন উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের অপসারণ দাবি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি করা হয়। ‘নিরাপদ খাদ্য চাই, ফারুক স্যারের পাশে দাঁড়াই’ প্রতিপাদ্যে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ঢাবির পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাদ্দামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রহমান, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহের, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ সৈকত, সমাজকর্মী মিজানুর রহমান, ‘নিরাপদ খাদ্য চাই’-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বাচ্চু, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, রাইসা নাসের, নজরুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন স্বাধীনতা চর্চা কেন্দ্রের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন অপু ও ডা. সুব্রত ঘোষ।

অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রহমান বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এ ওষুধের ব্যবহার যদি দুধের ভেতরে করা হয়, তাহলে এর যে কী ভয়াবহতা, তা আমরা সবাই জানি। অধ্যাপক ফারুক গবেষণা করে দেখিয়েছেন, দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি আছে এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য তার গবেষণার ফল জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজী ওয়াছি উদ্দিন বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করা যায় কি না, এতে গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে, তাকে অপমান করে আমাদেরও কলঙ্কিত করেছেন তিনি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা এই মন্তব্যকে সাধারণ মন্তব্য মনে করছি না। আমরা মনে করি, তাকে অপসারণ করা দরকার। তার শাস্তি হওয়া দরকার। এর পাশাপাশি গবেষণার ফল নিয়ে যদি কোন সন্দেহ থাকে, তাহলে আরেকটি গবেষণা করা যেতে পারে। তবে তা যেন নিরপেক্ষ একটি সংস্থা দিয়ে করা হয়। তিনি বলেন, বিএসটিআইয়ের অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করার কোন সক্ষমতা নেই বলে আমরা শুনেছি। অবিলম্বে বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হোক এবং সেখানে সৎ ব্যক্তির নিয়োগ দেয়া হোক। ভেজালমুক্ত দুধ যাতে খেতে পারি, সরকারের প্রতি ওই দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহের বলেন, প্রশ্ন এসেছে ফারুক স্যারের স্টাডি ডিজাইন নিয়ে। স্টাডি ডিজাইন নিয়ে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত গবেষণা হয়েছে, সব নিয়েই কিছু না কিছু কথা আছে। আমার ডিজাইনের আর অন্যের ডিজাইন এক হবে না। যদি কোন গবেষণা আপনি ভুল প্রমাণ করতে চান, তাহলে সেটিকে আরেকটি গবেষণা দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তির বিদ্যা, বুদ্ধি বা বিজ্ঞান গবেষণার সঙ্গে কোন সম্পর্কই নেই, ফারুক স্যারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন সেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ওয়াছি উদ্দিন। তিনি বলেন, ফারুক স্যার যে পরীক্ষা করেছেন, সেটি হলো জনস্বাস্থ্য সম্পৃক্ত। যেখানে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে, সেখানে গবেষণার ফল জার্নালে প্রকাশ করার দরকার নেই। তাৎক্ষণিক প্রকাশ করা উচিত। কারণ আগে তো মানুষের স্বাস্থ্য।

ডা. জাহের বলেন, বাংলাদেশে এমন একটিও খাবার নেই- যা ভেজালমুক্ত, বিষমুক্ত বা নিরাপদ। আমরা ১৭ কোটি মানুষ দৈনিক চার থেকে পাঁচবেলা বিষ খাচ্ছি অথবা ভেজাল খাচ্ছি। আমাদের শিশুদের আমরা বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়াচ্ছি- যেটি ভেজাল। বেবি ফুড কিনে খাওয়াচ্ছি- সেটি ভেজাল। এখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এমন একটি চক্র করে রেখেছে- যাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বা সত্যিও যদি প্রকাশ করেন, তাহলে ফারুক স্যারের মতো হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।

সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, পুষ্টির অন্যতম উৎস হচ্ছে দুধ। ঢাবির বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক দুধ পরীক্ষা করেছেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে এটি গবেষণা কি না। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয় প্রকাশের জন্য তো ছয় মাস অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কিন্তু যিনি আজ এসব নিয়ে কথা বলছেন, ওই সচিবের লজ্জা হওয়া উচিত। এতটা বর্বর কী করে হন! বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গবেষণা করে দেখিয়ে দিয়েছেন, দুধে দূষিত পদার্থ আছে। এরপর রাষ্ট্রের তো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। অথচ অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে যিনি গবেষণা করেছেন, তার বিরুদ্ধে। এ জন্য প্রতিবাদের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। যদি জবাব না দিই, তাহলে আমরা তো মারা যাচ্ছিই, আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

ঢাবি অধ্যাপকের পক্ষে মানববন্ধন

অতিরিক্ত সচিব ওয়াছি উদ্দিনের অপসারণ দাবি

প্রতিনিধি, ঢাবি

দুধ নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে অপমান করেছেন উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের অপসারণ দাবি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি করা হয়। ‘নিরাপদ খাদ্য চাই, ফারুক স্যারের পাশে দাঁড়াই’ প্রতিপাদ্যে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ঢাবির পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাদ্দামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রহমান, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহের, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ সৈকত, সমাজকর্মী মিজানুর রহমান, ‘নিরাপদ খাদ্য চাই’-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বাচ্চু, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, রাইসা নাসের, নজরুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন স্বাধীনতা চর্চা কেন্দ্রের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন অপু ও ডা. সুব্রত ঘোষ।

অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রহমান বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এ ওষুধের ব্যবহার যদি দুধের ভেতরে করা হয়, তাহলে এর যে কী ভয়াবহতা, তা আমরা সবাই জানি। অধ্যাপক ফারুক গবেষণা করে দেখিয়েছেন, দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি আছে এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য তার গবেষণার ফল জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজী ওয়াছি উদ্দিন বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করা যায় কি না, এতে গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে, তাকে অপমান করে আমাদেরও কলঙ্কিত করেছেন তিনি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা এই মন্তব্যকে সাধারণ মন্তব্য মনে করছি না। আমরা মনে করি, তাকে অপসারণ করা দরকার। তার শাস্তি হওয়া দরকার। এর পাশাপাশি গবেষণার ফল নিয়ে যদি কোন সন্দেহ থাকে, তাহলে আরেকটি গবেষণা করা যেতে পারে। তবে তা যেন নিরপেক্ষ একটি সংস্থা দিয়ে করা হয়। তিনি বলেন, বিএসটিআইয়ের অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করার কোন সক্ষমতা নেই বলে আমরা শুনেছি। অবিলম্বে বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হোক এবং সেখানে সৎ ব্যক্তির নিয়োগ দেয়া হোক। ভেজালমুক্ত দুধ যাতে খেতে পারি, সরকারের প্রতি ওই দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহের বলেন, প্রশ্ন এসেছে ফারুক স্যারের স্টাডি ডিজাইন নিয়ে। স্টাডি ডিজাইন নিয়ে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত গবেষণা হয়েছে, সব নিয়েই কিছু না কিছু কথা আছে। আমার ডিজাইনের আর অন্যের ডিজাইন এক হবে না। যদি কোন গবেষণা আপনি ভুল প্রমাণ করতে চান, তাহলে সেটিকে আরেকটি গবেষণা দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তির বিদ্যা, বুদ্ধি বা বিজ্ঞান গবেষণার সঙ্গে কোন সম্পর্কই নেই, ফারুক স্যারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন সেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ওয়াছি উদ্দিন। তিনি বলেন, ফারুক স্যার যে পরীক্ষা করেছেন, সেটি হলো জনস্বাস্থ্য সম্পৃক্ত। যেখানে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে, সেখানে গবেষণার ফল জার্নালে প্রকাশ করার দরকার নেই। তাৎক্ষণিক প্রকাশ করা উচিত। কারণ আগে তো মানুষের স্বাস্থ্য।

ডা. জাহের বলেন, বাংলাদেশে এমন একটিও খাবার নেই- যা ভেজালমুক্ত, বিষমুক্ত বা নিরাপদ। আমরা ১৭ কোটি মানুষ দৈনিক চার থেকে পাঁচবেলা বিষ খাচ্ছি অথবা ভেজাল খাচ্ছি। আমাদের শিশুদের আমরা বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়াচ্ছি- যেটি ভেজাল। বেবি ফুড কিনে খাওয়াচ্ছি- সেটি ভেজাল। এখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এমন একটি চক্র করে রেখেছে- যাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বা সত্যিও যদি প্রকাশ করেন, তাহলে ফারুক স্যারের মতো হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।

সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, পুষ্টির অন্যতম উৎস হচ্ছে দুধ। ঢাবির বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক দুধ পরীক্ষা করেছেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে এটি গবেষণা কি না। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয় প্রকাশের জন্য তো ছয় মাস অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কিন্তু যিনি আজ এসব নিয়ে কথা বলছেন, ওই সচিবের লজ্জা হওয়া উচিত। এতটা বর্বর কী করে হন! বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গবেষণা করে দেখিয়ে দিয়েছেন, দুধে দূষিত পদার্থ আছে। এরপর রাষ্ট্রের তো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। অথচ অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে যিনি গবেষণা করেছেন, তার বিরুদ্ধে। এ জন্য প্রতিবাদের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। যদি জবাব না দিই, তাহলে আমরা তো মারা যাচ্ছিই, আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।