ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে আইনি বাধা নেই : রাশিয়া

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনায় আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছে রাশিয়া। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানোভ এক টুইটার বার্তায় এমন মন্তব্য করেছেন।

মিখাইল উলিয়ানোভ বলেন, বিশ্বের কোন দেশের জন্যই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনায় আইনগত বাধা নেই যা ইরানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইরানের পরমাণু সমঝোতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে উলিয়ানোভ বলেন, তখন পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী অন্য সব দেশের সঙ্গে যে আচরণ করা হয় ইরানের সঙ্গেও একই আচরণ করা হবে। রাশিয়ার এ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক আরও বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আঞ্চলিকভাবে গঠনমূলক আলোচনা করা যায় এবং পরমাণু সমঝোতা সে ধরনের আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। উলিয়ানোভ বলেন, এনপিটিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের রয়েছে এবং সে অধিকার থেকে দেশটিকে বঞ্চিত রাখা যাবে না।

ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ইরান গত ৭ জুলাই থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ মাত্রা থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫ মাত্রায় উন্নীত করেছে। তেহরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের গড়িমসি অব্যাহত রাখলে আগামী দু’মাস পর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে ইরান।

প্রসঙ্গত, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ কয়েকটি দেশ কিছু পদক্ষেপের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি। সর্বোপরি, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে চুক্তিও (এনটিপি) ছিল এই প্রক্রিয়ারই অংশ। ১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা। অর্থাৎ, যাদের পরমাণু অস্ত্র নেই, সেই রাষ্ট্রগুলো প্রতিজ্ঞা করবে যে তারা তা বানাবে না। আর যে পাঁচটি রাষ্ট্রের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া) হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অস্ত্র আছে, তারা নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে ঐকমত্যে আসবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু সামগ্রিক ঝুঁকি কখনোই তেমন একটা কমেনি। তবে নিশ্চিতভাবেই এই এনটিপির প্রথম অংশের কিছু সফলতা আছে। এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত চারটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। দেশগুলো হলো- ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকা তার পরমাণু অস্ত্র বর্জন করে পরবর্তীতে এনটিপির পক্ষরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, আর ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তান নিজেদের পরমাণু অস্ত্র রাশিয়াতে স্থানান্তর করেছিল। ওদিকে ইরাক ও লিবিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়াও তখন থামানো হয়েছে। ইরান এই চুক্তির আরেকটি পক্ষরাষ্ট্র। তারাও সে সময় পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আরোপিত গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে আইনি বাধা নেই : রাশিয়া

সংবাদ ডেস্ক

image

মিখাইল উলিয়ানোভ

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনায় আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছে রাশিয়া। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানোভ এক টুইটার বার্তায় এমন মন্তব্য করেছেন।

মিখাইল উলিয়ানোভ বলেন, বিশ্বের কোন দেশের জন্যই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনায় আইনগত বাধা নেই যা ইরানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইরানের পরমাণু সমঝোতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে উলিয়ানোভ বলেন, তখন পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী অন্য সব দেশের সঙ্গে যে আচরণ করা হয় ইরানের সঙ্গেও একই আচরণ করা হবে। রাশিয়ার এ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক আরও বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আঞ্চলিকভাবে গঠনমূলক আলোচনা করা যায় এবং পরমাণু সমঝোতা সে ধরনের আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। উলিয়ানোভ বলেন, এনপিটিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের রয়েছে এবং সে অধিকার থেকে দেশটিকে বঞ্চিত রাখা যাবে না।

ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ইরান গত ৭ জুলাই থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ মাত্রা থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫ মাত্রায় উন্নীত করেছে। তেহরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের গড়িমসি অব্যাহত রাখলে আগামী দু’মাস পর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে ইরান।

প্রসঙ্গত, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ কয়েকটি দেশ কিছু পদক্ষেপের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি। সর্বোপরি, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে চুক্তিও (এনটিপি) ছিল এই প্রক্রিয়ারই অংশ। ১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা। অর্থাৎ, যাদের পরমাণু অস্ত্র নেই, সেই রাষ্ট্রগুলো প্রতিজ্ঞা করবে যে তারা তা বানাবে না। আর যে পাঁচটি রাষ্ট্রের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া) হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অস্ত্র আছে, তারা নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে ঐকমত্যে আসবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু সামগ্রিক ঝুঁকি কখনোই তেমন একটা কমেনি। তবে নিশ্চিতভাবেই এই এনটিপির প্রথম অংশের কিছু সফলতা আছে। এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত চারটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। দেশগুলো হলো- ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকা তার পরমাণু অস্ত্র বর্জন করে পরবর্তীতে এনটিপির পক্ষরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, আর ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তান নিজেদের পরমাণু অস্ত্র রাশিয়াতে স্থানান্তর করেছিল। ওদিকে ইরাক ও লিবিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়াও তখন থামানো হয়েছে। ইরান এই চুক্তির আরেকটি পক্ষরাষ্ট্র। তারাও সে সময় পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আরোপিত গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল।