মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব বারবার নাকচ করে অধ্যক্ষ সিরাজ

ফেনীতে অধ্যক্ষ সিরাজ কর্তৃক শ্লীলতাহানি ও পরে তারই নির্দেশে আগুনে পুড়িয়ে নৃশংস হত্যার শিকার আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের ১২তম দিনে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন ও দফতরি মো. ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন গতকাল তার সাক্ষ্যে বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক বৈঠকে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করি। কিন্তু অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তা সরাসরি নাকচ করে দেন। অধ্যক্ষের কার্যালয়টি শিক্ষক মিলনায়তনের পাশ থেকে সরিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়ারও বিরোধিতা করি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামি (বিবাদী) পক্ষের আইনজীবীরা ওই দুই সাক্ষীকে জেরা করেন। গতকাল পর্যন্ত এ মামলায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ সোমবার তিন সাক্ষী সোনাগাজী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন, অ্যাম্বুলেন্সচালক নুরুল করিম ও সোনাগাজী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিনের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।

গতকাল মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন এবং মাদ্রাসার দফতরি ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে ১৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও শিক্ষক আবুল খায়েরের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। পরে মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১২ আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

চার্জশিটের ১৬ আসামি হলো হত্যার নির্দেশদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এছাড়া ২৭ মার্চ যৌন নিপীড়নের মামলার পর বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ ও তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা করা হয়। পালানোর পর গ্রেফতার হওয়া সেই ওসি বর্তমানে কারাগারে।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

নুসরাত হত্যা : সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে

মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব বারবার নাকচ করে অধ্যক্ষ সিরাজ

প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীতে অধ্যক্ষ সিরাজ কর্তৃক শ্লীলতাহানি ও পরে তারই নির্দেশে আগুনে পুড়িয়ে নৃশংস হত্যার শিকার আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের ১২তম দিনে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন ও দফতরি মো. ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন গতকাল তার সাক্ষ্যে বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক বৈঠকে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করি। কিন্তু অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তা সরাসরি নাকচ করে দেন। অধ্যক্ষের কার্যালয়টি শিক্ষক মিলনায়তনের পাশ থেকে সরিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়ারও বিরোধিতা করি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামি (বিবাদী) পক্ষের আইনজীবীরা ওই দুই সাক্ষীকে জেরা করেন। গতকাল পর্যন্ত এ মামলায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ সোমবার তিন সাক্ষী সোনাগাজী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন, অ্যাম্বুলেন্সচালক নুরুল করিম ও সোনাগাজী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিনের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।

গতকাল মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন এবং মাদ্রাসার দফতরি ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে ১৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও শিক্ষক আবুল খায়েরের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। পরে মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১২ আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

চার্জশিটের ১৬ আসামি হলো হত্যার নির্দেশদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এছাড়া ২৭ মার্চ যৌন নিপীড়নের মামলার পর বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ ও তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা করা হয়। পালানোর পর গ্রেফতার হওয়া সেই ওসি বর্তমানে কারাগারে।