‘মিনি গেস্টরুম’ ডেকে নিয়ে ঢাবির ২৫ ছাত্রকে পেটাল ছাত্রলীগ

পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ‘মিনি গেস্টরুম’-এ ডেকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে মনিরকে মারধরের পর লুকিয়ে রাখা হয়। পরে হল প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে রাত ২টার দিকে অন্য একটি হল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। হলের প্রথম বর্ষের বেশ কয়েক শিক্ষার্থী এসব তথ্য জানান।

সূত্র জানায়, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ছিল। ওই প্রোগ্রামে প্রথম বর্ষের কয়েক ছাত্র টিউশনি, ক্লাস ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এ কারণে সেদিন রাতে প্রথম বর্ষের সব ছাত্রকে মিনিগস্টরুমে ডাকে নেন দ্বিতীয় বর্ষের ‘পলিটিক্যাল ভাইয়েরা’। এ সময় যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের রাতে রুমে ঘুমাতে নিষেধ করে দেয়া হয় এবং তাদের রুমমেটদেরও বলে দেয়া হয়, তারা যাতে রুমে ঢুকতে না পারেন। কিন্তু বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে সেসব ছাত্রকে রুমে ঘুমাতে দেন তাদের রুমমেটরা। পরে নেতাদের নির্দেশ অমান্য করা ও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে গেস্টরুম করে প্রথম বর্ষের প্রায় ২৫ শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। মারধরের সময় দ্বিতীয় বর্ষের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সোলেমান রনি, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মাহমুদুল হাসান, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের রুবেল হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বড় ভাইদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে ফেলেন। এ অপরাধে তাকে আলাদা করে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করা হয়।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা জিয়া হলে যাওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল ছাত্ররা রুম থেকে রড, স্ট্যাম্প সরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এছাড়া মনির এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে নিয়ে গিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এ সময় তারা যাতে সাংবাদিকদের সামনে কিছু স্বীকার না করেন, এ নির্দেশ দেন তারা। এরপর সাংবাদিকরা ও জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ তাদের দু’জনকে রাত আড়াইটার দিকে খুঁজে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ভয়ে সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘তেমন কিছু হয়নি।’

এ ব্যাপারে জিয়া হলের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইয়েরা আমাদের গেস্টরুমে নিয়ে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তাদের মধ্যে রনি, রুবেল, মাহমুদ, ইমরান ও সাফওয়ান নিয়মিত আমাদের গায়ে হাত তোলেন। গতকাল গেস্টরুমে তারা আমাদের সবাইকে রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছেন। মনির বড় ভাইদের ভুলে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে ফেলায় তাকে মেরে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছেন।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ ঘটনার পর বড় ভাইয়েরা আমাদের রুমে এসে সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা হল সংসদের এজিএস আবিরের অনুসারী। তবে এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে এর সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন আবির।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও কল রিসিভ করেননি।

জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান শনিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ঘটনার তদন্তের জন্য হলের শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করব। কেউ অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

‘মিনি গেস্টরুম’ ডেকে নিয়ে ঢাবির ২৫ ছাত্রকে পেটাল ছাত্রলীগ

প্রতিনিধি, ঢাবি

পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ‘মিনি গেস্টরুম’-এ ডেকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে মনিরকে মারধরের পর লুকিয়ে রাখা হয়। পরে হল প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে রাত ২টার দিকে অন্য একটি হল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। হলের প্রথম বর্ষের বেশ কয়েক শিক্ষার্থী এসব তথ্য জানান।

সূত্র জানায়, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ছিল। ওই প্রোগ্রামে প্রথম বর্ষের কয়েক ছাত্র টিউশনি, ক্লাস ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এ কারণে সেদিন রাতে প্রথম বর্ষের সব ছাত্রকে মিনিগস্টরুমে ডাকে নেন দ্বিতীয় বর্ষের ‘পলিটিক্যাল ভাইয়েরা’। এ সময় যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের রাতে রুমে ঘুমাতে নিষেধ করে দেয়া হয় এবং তাদের রুমমেটদেরও বলে দেয়া হয়, তারা যাতে রুমে ঢুকতে না পারেন। কিন্তু বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে সেসব ছাত্রকে রুমে ঘুমাতে দেন তাদের রুমমেটরা। পরে নেতাদের নির্দেশ অমান্য করা ও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে গেস্টরুম করে প্রথম বর্ষের প্রায় ২৫ শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। মারধরের সময় দ্বিতীয় বর্ষের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সোলেমান রনি, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মাহমুদুল হাসান, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের রুবেল হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বড় ভাইদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে ফেলেন। এ অপরাধে তাকে আলাদা করে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করা হয়।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা জিয়া হলে যাওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল ছাত্ররা রুম থেকে রড, স্ট্যাম্প সরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এছাড়া মনির এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে নিয়ে গিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এ সময় তারা যাতে সাংবাদিকদের সামনে কিছু স্বীকার না করেন, এ নির্দেশ দেন তারা। এরপর সাংবাদিকরা ও জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ তাদের দু’জনকে রাত আড়াইটার দিকে খুঁজে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ভয়ে সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘তেমন কিছু হয়নি।’

এ ব্যাপারে জিয়া হলের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইয়েরা আমাদের গেস্টরুমে নিয়ে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তাদের মধ্যে রনি, রুবেল, মাহমুদ, ইমরান ও সাফওয়ান নিয়মিত আমাদের গায়ে হাত তোলেন। গতকাল গেস্টরুমে তারা আমাদের সবাইকে রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছেন। মনির বড় ভাইদের ভুলে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে ফেলায় তাকে মেরে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছেন।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ ঘটনার পর বড় ভাইয়েরা আমাদের রুমে এসে সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা হল সংসদের এজিএস আবিরের অনুসারী। তবে এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে এর সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন আবির।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও কল রিসিভ করেননি।

জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান শনিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ঘটনার তদন্তের জন্য হলের শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করব। কেউ অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।