বন্ড খেলাপিদেরও ঋণখেলাপির তালিকায় রাখার সুপারিশ

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও মূলধন বাজারের উন্নয়নে বন্ডের প্রতি জোর দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে, যারা বন্ড ইস্যু করবে তারা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে করণীয় নিয়ে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং মূলধন জোগানের জন্য বন্ড ইস্যুর প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মুর্শেদা জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ, এনবিআর, এফবিসিসিআই, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের সমন্বয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একাধিকবার মতবিনিময় সভা এবং কর্মশালা করে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত পর্যালোচনা করে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে। অর্থমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এ ৯ দফা সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিন মাস পরপর ৯ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পর্যালোচনা করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বন্ডের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ ইস্যুকারীদের ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইডি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যাতে তারা নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে। বর্তমানে বন্ড এবং ডিবেঞ্চার খেলাপিরা কোন বাধা ছাড়াই ব্যাংকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করছে।

বিএসইসিকে সিআইবি ডাটাবেজে এক্সেস দেয়ার সুযোগ নিয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বিএসইসি যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে দ্রুত এক্সেস করে বন্ড ইস্যুকারীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ঋণের রেকর্ড এবং ঋণ পরিশোধের ইতিহাস সহজেই যাচাই করতে পারে। এছাড়া কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, বন্ড অনুমোদন সহজীকরণ করার জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য প্রেরণ করা হলে একই কার্যক্রমে দ্বৈত যাচাইকরণের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা।

ব্যাংকের পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা অর্থাৎ বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়া এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে নতুন সিরিজ ইস্যুকরণের শর্ত হিসেবে আগের ইস্যু করার পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনা। সূত্র জানায়, বন্ডে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়াতে করহারে বিশেষ সুযোগ দিতে এনবিআরকে তিনটি সুপারিশ করেছে কমিটি। তাদের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্ট্যাম্প শুল্ক বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। ফলে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কে (থোক আকারে এক লাখ টাকা) নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত হবে। এই শুল্ক শুধু কাগজভিত্তিক বন্ড ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা উচিত অর্থাৎ ডিম্যাটেরিয়ালাইজড বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে স্ট্যাম্প ডিউটি আরোপ পরিহার করা। বন্ড থেকে আয়ের ওপর কর আদায় এবং এটি প্রাপ্ত হওয়ার পর চার্জ করা যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে অগ্রিম আয়কর বা উইথহোল্ডিং কর আদায়ের নিয়ম পরিবর্তন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আদায় করা যেতে পারে। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া।

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

বন্ড খেলাপিদেরও ঋণখেলাপির তালিকায় রাখার সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও মূলধন বাজারের উন্নয়নে বন্ডের প্রতি জোর দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে, যারা বন্ড ইস্যু করবে তারা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে করণীয় নিয়ে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং মূলধন জোগানের জন্য বন্ড ইস্যুর প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মুর্শেদা জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ, এনবিআর, এফবিসিসিআই, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের সমন্বয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একাধিকবার মতবিনিময় সভা এবং কর্মশালা করে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত পর্যালোচনা করে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে। অর্থমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এ ৯ দফা সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিন মাস পরপর ৯ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পর্যালোচনা করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বন্ডের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ ইস্যুকারীদের ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইডি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যাতে তারা নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে। বর্তমানে বন্ড এবং ডিবেঞ্চার খেলাপিরা কোন বাধা ছাড়াই ব্যাংকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করছে।

বিএসইসিকে সিআইবি ডাটাবেজে এক্সেস দেয়ার সুযোগ নিয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বিএসইসি যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে দ্রুত এক্সেস করে বন্ড ইস্যুকারীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ঋণের রেকর্ড এবং ঋণ পরিশোধের ইতিহাস সহজেই যাচাই করতে পারে। এছাড়া কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, বন্ড অনুমোদন সহজীকরণ করার জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য প্রেরণ করা হলে একই কার্যক্রমে দ্বৈত যাচাইকরণের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা।

ব্যাংকের পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা অর্থাৎ বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়া এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে নতুন সিরিজ ইস্যুকরণের শর্ত হিসেবে আগের ইস্যু করার পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনা। সূত্র জানায়, বন্ডে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়াতে করহারে বিশেষ সুযোগ দিতে এনবিআরকে তিনটি সুপারিশ করেছে কমিটি। তাদের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্ট্যাম্প শুল্ক বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। ফলে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কে (থোক আকারে এক লাখ টাকা) নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত হবে। এই শুল্ক শুধু কাগজভিত্তিক বন্ড ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা উচিত অর্থাৎ ডিম্যাটেরিয়ালাইজড বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে স্ট্যাম্প ডিউটি আরোপ পরিহার করা। বন্ড থেকে আয়ের ওপর কর আদায় এবং এটি প্রাপ্ত হওয়ার পর চার্জ করা যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে অগ্রিম আয়কর বা উইথহোল্ডিং কর আদায়ের নিয়ম পরিবর্তন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আদায় করা যেতে পারে। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া।