কুমিল্লায় বিচারকের কক্ষে হত্যাকান্ড

  • এক আসামি আরেক আসামিকে ছুরিকাঘাতে খুন করে
  • ছুরি নিয়ে আদালতে প্রবেশে প্রশ্ন
  • ঘটনা তদন্তে কমিটি

কুমিল্লায় আদালত অভ্যন্তরে মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান অবস্থায় বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সম্মুখেই হত্যা মামলার এক আসামি মো. হাসান একই মামলার অপর আসামি মো. ফারুককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। এ সময় আদালতে অপর একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরাবাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌসের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত আসামি মো. ফারুক (২৮) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদ উল্লাহর ছেলে এবং ঘাতক হাসান (২৮) জেলার লাকসাম উপজেলার ভোচপুর গ্রামের শহীদ উল্লাহর ছেলে। নিহত ফারুক ও ঘাতক হাসান সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন আইনজীবীরা। দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আদালত সূত্র, আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য ছিল। ওই হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ডাকা হলে আসামি হাসান বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতিতে হঠাৎ করে তার সহযোগী অপর আসামি ফারুককে ছুরিকাঘাত করতে উদ্যত হয়। এ সময় ফারুক নিরুপায় হয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। এ সময় হাসান উন্মুক্ত ধারাল ছোরা হাতে দৌড়ে ওই কামরায় গিয়ে ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। সে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় আদালতের পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা হাসানকে আটক করতে এগিয়ে না গেলেও অন্য একটি মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরাবাজার থানার এএআই ফিরোজ আহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোড়াসহ ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরেন। পরে তাকে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ঘাতক হাসানকে আটকসহ তার কাছ থেকে একটি ধারাল রক্ত মাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত ফারুককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ফারুক ওই হত্যা মামলার ৪নং এবং হাসান ৬নং আসামি ছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট শাহনেয়াজ সুলতানাসহ অন্য আইনজীবীরা জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় বিচারক, কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন। ঘাতককে তাৎক্ষণিভাবে আটক করা না হলে হয়তো আরও কয়েকজনের প্রাণ যেত। ঘাতককে আটককারী বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ জানান, আমি একটি মাদক মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঘটনার সময় আদালত কক্ষে বসা ছিলাম। আবদুল করিম হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হলে এক পর্যায়ে ঘাতক হাসান উন্মুক্ত ছোরা হাতে আসামি ফারুককে হত্যার চেষ্টা চালায়। আসামি ফারুক প্রাণ বাঁচাতে বিচারকের খাস খামরায় প্রবেশ করে। কিন্তু সেখানেও গিয়ে ঘাতক তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে আদালতের সবাই হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ তাকে নিবৃত্ত করার সাহস পাচ্ছিল না। তখন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে জাপটে ধরি। এ সময় আদালতের বিচারক এজলাসে ছিলেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আসার পর আদালতে এ ঘটনা ঘটে। বিকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত ফারুকের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আদালতে ছুটে যান কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম ও জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়াও পুলিশের তদন্তকারীদল পিআইবি ও সিআইডি’র সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম জানান, ‘এতোটা নিরাপত্তার মাঝেও আসামি ছুরি নিয়ে কিভাবে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. শাখায়াত হোসেনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআইওয়ান মাহবুব মোর্শেদকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে বিচারকের সামনে এ ধরনের হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনজীবীরা। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল আলীম খান বলেন, ‘মামলার বাদী, আসামি ও স্বাক্ষীসহ যারাই আদালতে প্রবেশ করে তাদের প্রত্যেকেরই দেহ তল্লাশি করা প্রয়োজন। কারণ আদালত হলো ন্যায়বিচার পাওয়ার জায়গা। আর এখানেই যদি মানুষ অস্ত্র নিয়ে ঢুকে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাহলে মানুষ কোথায় বিচার পাবে। তাই প্রতিটি এজলাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা দরকার।’

অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এ হত্যাকান্ড দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে জন্য পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আদালতের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে এবং প্রত্যেককে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে দেহ তল্লাশিপূর্বক আদালতে প্রবেশ করতে হবে।’

কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে এমন ঘটনায় আইনজীবীরা উদ্বিগ্ন। যেখানে মানুষ আসে বিচারের জন্য সেখানে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’

image
আরও খবর
মায়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের নিয়ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ
এইচএসসির ফল প্রকাশ কাল
ট্রেন-মাইক্রো সংঘর্ষে বর-কনেসহ নিহত ১০
নতুন এলাকা প্লাবিত
অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে ৬৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার ঘোষণা মেয়র খোকনের
অনুমোদন ছাড়া স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা চালু করলে ব্যবস্থা
ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে স্বামী-স্ত্রীর কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য
সাভারে ময়লার স্তুপে তরুণীর ৬ টুকরা লাশ
রাজধানীতে নিউ নাইন স্টার গ্যাং গ্রুপের ১১ সদস্য অস্ত্রসহ আটক
ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

কুমিল্লায় বিচারকের কক্ষে হত্যাকান্ড

জাহিদুর রহমান, কুমিল্লা

image

  • এক আসামি আরেক আসামিকে ছুরিকাঘাতে খুন করে
  • ছুরি নিয়ে আদালতে প্রবেশে প্রশ্ন
  • ঘটনা তদন্তে কমিটি

কুমিল্লায় আদালত অভ্যন্তরে মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান অবস্থায় বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সম্মুখেই হত্যা মামলার এক আসামি মো. হাসান একই মামলার অপর আসামি মো. ফারুককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। এ সময় আদালতে অপর একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরাবাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌসের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত আসামি মো. ফারুক (২৮) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদ উল্লাহর ছেলে এবং ঘাতক হাসান (২৮) জেলার লাকসাম উপজেলার ভোচপুর গ্রামের শহীদ উল্লাহর ছেলে। নিহত ফারুক ও ঘাতক হাসান সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন আইনজীবীরা। দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আদালত সূত্র, আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য ছিল। ওই হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ডাকা হলে আসামি হাসান বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতিতে হঠাৎ করে তার সহযোগী অপর আসামি ফারুককে ছুরিকাঘাত করতে উদ্যত হয়। এ সময় ফারুক নিরুপায় হয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। এ সময় হাসান উন্মুক্ত ধারাল ছোরা হাতে দৌড়ে ওই কামরায় গিয়ে ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। সে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় আদালতের পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা হাসানকে আটক করতে এগিয়ে না গেলেও অন্য একটি মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরাবাজার থানার এএআই ফিরোজ আহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোড়াসহ ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরেন। পরে তাকে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ঘাতক হাসানকে আটকসহ তার কাছ থেকে একটি ধারাল রক্ত মাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত ফারুককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ফারুক ওই হত্যা মামলার ৪নং এবং হাসান ৬নং আসামি ছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট শাহনেয়াজ সুলতানাসহ অন্য আইনজীবীরা জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় বিচারক, কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন। ঘাতককে তাৎক্ষণিভাবে আটক করা না হলে হয়তো আরও কয়েকজনের প্রাণ যেত। ঘাতককে আটককারী বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ জানান, আমি একটি মাদক মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঘটনার সময় আদালত কক্ষে বসা ছিলাম। আবদুল করিম হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হলে এক পর্যায়ে ঘাতক হাসান উন্মুক্ত ছোরা হাতে আসামি ফারুককে হত্যার চেষ্টা চালায়। আসামি ফারুক প্রাণ বাঁচাতে বিচারকের খাস খামরায় প্রবেশ করে। কিন্তু সেখানেও গিয়ে ঘাতক তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে আদালতের সবাই হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ তাকে নিবৃত্ত করার সাহস পাচ্ছিল না। তখন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে জাপটে ধরি। এ সময় আদালতের বিচারক এজলাসে ছিলেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আসার পর আদালতে এ ঘটনা ঘটে। বিকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত ফারুকের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আদালতে ছুটে যান কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম ও জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়াও পুলিশের তদন্তকারীদল পিআইবি ও সিআইডি’র সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম জানান, ‘এতোটা নিরাপত্তার মাঝেও আসামি ছুরি নিয়ে কিভাবে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. শাখায়াত হোসেনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআইওয়ান মাহবুব মোর্শেদকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে বিচারকের সামনে এ ধরনের হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনজীবীরা। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল আলীম খান বলেন, ‘মামলার বাদী, আসামি ও স্বাক্ষীসহ যারাই আদালতে প্রবেশ করে তাদের প্রত্যেকেরই দেহ তল্লাশি করা প্রয়োজন। কারণ আদালত হলো ন্যায়বিচার পাওয়ার জায়গা। আর এখানেই যদি মানুষ অস্ত্র নিয়ে ঢুকে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাহলে মানুষ কোথায় বিচার পাবে। তাই প্রতিটি এজলাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা দরকার।’

অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এ হত্যাকান্ড দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে জন্য পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আদালতের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে এবং প্রত্যেককে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে দেহ তল্লাশিপূর্বক আদালতে প্রবেশ করতে হবে।’

কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে এমন ঘটনায় আইনজীবীরা উদ্বিগ্ন। যেখানে মানুষ আসে বিচারের জন্য সেখানে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’