বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নতুন এলাকা প্লাবিত

দুই স্থানে ৫ জনের মৃত্যু

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও ত্রাণ অপ্রতুল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে ও মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার সব নদীর পানিই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সুরমা, জাদুকাটাসহ কয়েকটি নদীর পানি কমলেও হাওরের পানিতে নতুন নতুন গ্রাম ডুবে যাচ্ছে এ জেলায়। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সুন্দরগঞ্জে বন্যার পানিতে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটেছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্লাবিত হয়েছে ৩৯০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে ১ জন ও চিলমারী উপজেলায় ২ জন শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদিকে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের ৪-৫ জায়গায় হাঁটুপানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছেন। নাগেশ্বরীতে নদীতীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিনের বন্যায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। মিয়াপাড়া টু ধুলাউড়ির সংযোগ সড়ক ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ১০টি গ্রাম। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১০০ গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় বীজতলা, শাকসবজির বাগান, মাছের পুকুর, কাঁচারাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। পানি ওঠায় রাজীবপুর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সাঘাটা (গাইবান্ধা) : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী, ঘুড়িদহ, সাঘাটা, ভরতখালী ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চল ও হলদিয়া ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে শতাধিক পরিবার অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে আনারুল ইসলাম (৩২) মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কবির বিন আনোয়ার। ১০ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, চন্ডীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছ। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যায় ৮৯ হেক্টর সবজিক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সীমান্ত নদী সুরমা, জাদুকাটাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি কিছুটা কম থাকলেও বাড়ছে আশপাশের হাওরে পানি। বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, বাড়ছে লাখো মানুষের দুর্ভোগ। ১০-১২ দিন ধরে দু’দফায় ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে জেলার সব উপজেলায়। জেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে পানিবন্দী এবং অনাহার-র্অধাহারে দিনাতিপাত করছে। বন্ধ রয়েছে আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর. চৌহালি ও সদর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অভ্যন্তরে যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার পুঠিয়াবাড়ী ও চরমালশাপাড়া এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

হবিগঞ্জ : গত তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পুরনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রোববার রাত থেকে বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের দেখা দেয়। কুশিয়ারার নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি তিন ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। কুশিয়ারা পাড়ের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় সেখানের বাসিন্দাদের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বগুড়া/সারিয়াকান্দি : বগুড়ার সারিয়াকান্দির কাছে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রামের ৬৬ হাজার ৮০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় তিনটি উপজেলায় ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। বন্যায় তিনটি উপজেলায় পাট, আউশ ধান, সবজি, মরিচ, বীজতলা ও আখসহ ৮ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১ হাজার ৯০০ ল্যাট্রিন ও ২ হাজার ৪৫৭টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসলামপুর (জামালপুর) : জামালপুর জেলার ইসলামপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সোমবার দুপুরে বিপদসীমার ১২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত ৩৮ ঘণ্টায় বন্যার পানি ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা ১২টি ইউনিয়য়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ৩টি অভ্যন্তরীণ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামে ধলাই নদীতে নতুন করে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ধলাই নদীর ৪টি স্থানে ভাঙন হয় দেখা দিল। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ১১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাক্রান্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। অন্যদিকে ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া বনে পাহাড়ধসে গাছ পড়ে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। রাস্তায় ঢলের পানি জমে থাকায় কমলগঞ্জ-শমশেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ধলাই নদী ছাড়াও লাঘাটা নদী ও ক্ষিরনীছড়ার পানি বাড়ায় গত তিন দিনে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

image

জামালপুর : বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ইসলামপুরের বালিয়াদহ -সংবাদ

আরও খবর
কুমিল্লায় বিচারকের কক্ষে হত্যাকান্ড
মায়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের নিয়ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ
এইচএসসির ফল প্রকাশ কাল
ট্রেন-মাইক্রো সংঘর্ষে বর-কনেসহ নিহত ১০
অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে ৬৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার ঘোষণা মেয়র খোকনের
অনুমোদন ছাড়া স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা চালু করলে ব্যবস্থা
ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে স্বামী-স্ত্রীর কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য
সাভারে ময়লার স্তুপে তরুণীর ৬ টুকরা লাশ
রাজধানীতে নিউ নাইন স্টার গ্যাং গ্রুপের ১১ সদস্য অস্ত্রসহ আটক
ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নতুন এলাকা প্লাবিত

দুই স্থানে ৫ জনের মৃত্যু

সংবাদ ডেস্ক

image

জামালপুর : বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ইসলামপুরের বালিয়াদহ -সংবাদ

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও ত্রাণ অপ্রতুল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে ও মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার সব নদীর পানিই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সুরমা, জাদুকাটাসহ কয়েকটি নদীর পানি কমলেও হাওরের পানিতে নতুন নতুন গ্রাম ডুবে যাচ্ছে এ জেলায়। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সুন্দরগঞ্জে বন্যার পানিতে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটেছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্লাবিত হয়েছে ৩৯০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে ১ জন ও চিলমারী উপজেলায় ২ জন শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদিকে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের ৪-৫ জায়গায় হাঁটুপানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছেন। নাগেশ্বরীতে নদীতীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিনের বন্যায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। মিয়াপাড়া টু ধুলাউড়ির সংযোগ সড়ক ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ১০টি গ্রাম। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১০০ গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় বীজতলা, শাকসবজির বাগান, মাছের পুকুর, কাঁচারাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। পানি ওঠায় রাজীবপুর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সাঘাটা (গাইবান্ধা) : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী, ঘুড়িদহ, সাঘাটা, ভরতখালী ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চল ও হলদিয়া ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে শতাধিক পরিবার অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে আনারুল ইসলাম (৩২) মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কবির বিন আনোয়ার। ১০ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, চন্ডীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছ। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যায় ৮৯ হেক্টর সবজিক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সীমান্ত নদী সুরমা, জাদুকাটাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি কিছুটা কম থাকলেও বাড়ছে আশপাশের হাওরে পানি। বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, বাড়ছে লাখো মানুষের দুর্ভোগ। ১০-১২ দিন ধরে দু’দফায় ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে জেলার সব উপজেলায়। জেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে পানিবন্দী এবং অনাহার-র্অধাহারে দিনাতিপাত করছে। বন্ধ রয়েছে আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর. চৌহালি ও সদর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অভ্যন্তরে যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার পুঠিয়াবাড়ী ও চরমালশাপাড়া এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

হবিগঞ্জ : গত তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পুরনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রোববার রাত থেকে বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের দেখা দেয়। কুশিয়ারার নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি তিন ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। কুশিয়ারা পাড়ের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় সেখানের বাসিন্দাদের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বগুড়া/সারিয়াকান্দি : বগুড়ার সারিয়াকান্দির কাছে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রামের ৬৬ হাজার ৮০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় তিনটি উপজেলায় ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। বন্যায় তিনটি উপজেলায় পাট, আউশ ধান, সবজি, মরিচ, বীজতলা ও আখসহ ৮ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১ হাজার ৯০০ ল্যাট্রিন ও ২ হাজার ৪৫৭টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসলামপুর (জামালপুর) : জামালপুর জেলার ইসলামপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সোমবার দুপুরে বিপদসীমার ১২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত ৩৮ ঘণ্টায় বন্যার পানি ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা ১২টি ইউনিয়য়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ৩টি অভ্যন্তরীণ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামে ধলাই নদীতে নতুন করে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ধলাই নদীর ৪টি স্থানে ভাঙন হয় দেখা দিল। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ১১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাক্রান্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। অন্যদিকে ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া বনে পাহাড়ধসে গাছ পড়ে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। রাস্তায় ঢলের পানি জমে থাকায় কমলগঞ্জ-শমশেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ধলাই নদী ছাড়াও লাঘাটা নদী ও ক্ষিরনীছড়ার পানি বাড়ায় গত তিন দিনে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।