১৯ বছরেও সম্পন্ন হলো না বিচার

ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ

যশোরের শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার ১৯ বছরেও সম্পন্ন হলো না। গত ১৪ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে মামলার বিচার প্রক্রিয়া। হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। আজ নির্মম এ হত্যাকান্ডের ১৯তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সে সময় বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।

একই সঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার (বাদী) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের ওপর রুল জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজে সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাংবাদিক নেতাদের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু জানানÑ তাদেরও প্রত্যাশা, আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্ট অ্যাটাকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনঃতদন্তের।

শামছুর রহমানের ১৯তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রেসক্লাবও শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের হত্যাবার্ষিকীতে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আরও খবর
বাংলাদেশ ভারত অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা
উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুতের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
এরশাদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন
শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস আজ
বাংলাদেশ থেকে চাল নিতে আগ্রহী ফিলিপাইন
বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত আদেশে ফেঁসে যাচ্ছেন অসাধু কর্মকর্তারা
নিবন্ধন চায় ৮ হাজার অনলাইন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও আজমত আলী কারাগারে মুক্তির নির্দেশ
কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বহিষ্কার দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন
দুটি হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন
শিল্পাঞ্চলের বাইরে কারখানায় গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ নয় : প্রতিমন্ত্রী
দুই ধর্ষক গ্রেফতার
বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা
মাহিনুর হকের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ড

১৯ বছরেও সম্পন্ন হলো না বিচার

ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ

যশোর অফিস

যশোরের শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার ১৯ বছরেও সম্পন্ন হলো না। গত ১৪ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে মামলার বিচার প্রক্রিয়া। হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। আজ নির্মম এ হত্যাকান্ডের ১৯তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সে সময় বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।

একই সঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার (বাদী) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের ওপর রুল জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজে সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাংবাদিক নেতাদের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু জানানÑ তাদেরও প্রত্যাশা, আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্ট অ্যাটাকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনঃতদন্তের।

শামছুর রহমানের ১৯তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রেসক্লাবও শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের হত্যাবার্ষিকীতে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।