রিফাত হত্যা : আরও স্বীকারোক্তি

বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা

রিফাত হত্যার ঘটনায় চার্জশিট প্রদানের আগে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টার সমালোচনা করেছেন বরগুনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতারা। সোমবার মাদকবিরোধী এক মানববন্ধনেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রিফাত হত্যার বর্তমান পরিস্থিতি।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে দিবালোকে স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পর ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কিন্তু সব আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। অন্যদিকে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেনি। এরমধ্যে মামলার বাদী নিহতের পিতা আ. হালিম দুলাল শরীফ গত ১৩ জুলাই রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রিফাত হত্যার মূল কারণ তার নিহত ছেলের স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। পরের দিন সকালে তার এই বক্তব্যের সমর্থনে শহরে একটি মানববন্ধনেরও আয়োজন করা হয়। প্রক্রিয়ায় মূল বিষয়কে ধামাচাপা দিয়ে মিন্নিকে ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিও তার বাবার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে শ্বশুরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, চক্রান্তের অংশ হিসেবে শ্বশুর মিন্নিকে দোষারোপ করেছে। মিন্নি তার শ্বশুরের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে গত দু’দিন বরগুনায় আলোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি সোমবার সকালে বরগুনায় মাদকবিরোধী মানববন্ধন পর্যন্ত গড়ায়।

মানববন্ধন উপলক্ষে আয়োজিত বক্তব্য প্রদানকালে বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম, জাতীয় মহিলা সংস্থা-বরগুনার চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা চম্পা, বুড়িরচর এএমজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেলি পারভীন ছবি ও পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে বলেন, এখন সাপে-নেউলে লড়াই। তারা বরগুনায় রিফাত হত্যার কারণ হিসেবে মাদককে দায়ী করে বলেন, ভাইরাল হওয়া দৃশ্যে মেয়েটি তার স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেছে একথা সবাই জানে। মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষীও মিন্নি। সে হিসেবে পুলিশি কার্যক্রমে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু মামলার প্রধান সাক্ষীকে বিব্রত করা মামালার ক্ষতিসাধন করাই বটে। এ ঘটনা রিফাত হত্যার বিচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মারাত্মক আসামিরা এই সুযোগে বেড়িয়ে আসবে।

বক্তারা আরও বলেন, গত ২৬ জুন প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে শতশত লোকের সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ হত্যার পিছনে রয়েছে ০০৭ কিশোর গ্যাং বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৬০ জন। তিনটি পরীক্ষায় পাশ করে ০০৭ কিশোর গ্যাং বাহিনীর সদস্য হতে হয়। প্রথমত : অবশ্যই তাকে মাদকসেবী হতে হবে। দ্বিতীয়ত : তাকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত হতে হবে। তৃতীয়ত : এ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাট, অপহরণ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও বরগুনায় টিম ৬১, লারেলাপ্পা, হানিবন্ডসহ বিভিন্ন নামে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। সবমিলিয়ে এদের সদস্যসংখ্যা সহস্রাধিক। বরগুনার মতো ছোট্ট একটি জেলায় সহস্রাধিক মাদক ব্যবসায়ী বা সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়াই স্বাভাবিক। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপ সদস্যদের বয়স ১২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। হাতেগোণা কয়েকজন লিডারের বয়স ৪০ এর মধ্যে।

  • রিফাত ফরাজীকে ফের সাত দিনের রিমান্ড
  • সাইমুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীর জন্য ফের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে কামরুল হাসান সাইমুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

সোমবার বিকেলে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চারজনসহ নয় আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে আরও ২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে এদিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

টিকটক হৃদয় ও রাতুল সিকদারের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে টিকটক হৃদয় ও রাতুল সিকদার। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা বিচারকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়কে গত ৩ জুলাই প্রথমবারের মতো ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। গত ১০ জুলাই পুনরায় তাকে আদালতে হাজির করে আরও ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিচারক পুনরায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ আদালতে হাজির করা হলে সে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সন্দেহভাজন আসামি রাতুল সিকদারকে ১১ জুলাই গ্রেফতারের পরে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রাতুলও আজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত পহেলা জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীর, ৪ জুলাই রাতে মামলার ৪নম্বর আসামি চন্দন ও ৯নম্বর আসামি মো. হাসান, ৫ জুলাই রাতে মো. সাগর ও নাজমুল হাসান এবং ১০ জুলাই রাতে রাফিউল ইসলাম রাব্বী আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের সামনে রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রিফাত হত্যা মামলায় রোববার পর্যন্ত ১৪ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে ৩ জুলাই রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে হত্যা মামলায় ৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অস্ত্র মামলায় আরও ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আগামী মঙ্গলবার রিফাত ফরাজীর ১৪ দিনের রিমান্ড শেষ হবে। কামরুল হাসান সাইমুনকে চার দফায় ১৬ দিন ও আরিয়ান শ্রাবনকে দুই দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

৮ আসামিকে আদালতে হাজির

৮ আসামিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আগামী ৩১ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করে আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।

রাতুল সিকদার নামে এক আসামি ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে সেফহোমে পাঠানোর কারণে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। রাতুল সিকদার বরগুনা এফএম স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। এ মামলায় চারজন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এপর্যন্ত এই মামলায় এজাহারভুক্ত ৬ জন এবং সন্দেহজনক ৭ জন। মোট ১৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

image
আরও খবর
বাংলাদেশ ভারত অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা
উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুতের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
এরশাদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন
শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস আজ
বাংলাদেশ থেকে চাল নিতে আগ্রহী ফিলিপাইন
বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত আদেশে ফেঁসে যাচ্ছেন অসাধু কর্মকর্তারা
নিবন্ধন চায় ৮ হাজার অনলাইন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও আজমত আলী কারাগারে মুক্তির নির্দেশ
১৯ বছরেও সম্পন্ন হলো না বিচার
কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বহিষ্কার দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন
দুটি হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন
শিল্পাঞ্চলের বাইরে কারখানায় গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ নয় : প্রতিমন্ত্রী
দুই ধর্ষক গ্রেফতার
মাহিনুর হকের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা : আরও স্বীকারোক্তি

বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা

প্রতিনিধি, বরগুনা

image

রিফাত হত্যার ঘটনায় চার্জশিট প্রদানের আগে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টার সমালোচনা করেছেন বরগুনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতারা। সোমবার মাদকবিরোধী এক মানববন্ধনেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রিফাত হত্যার বর্তমান পরিস্থিতি।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে দিবালোকে স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পর ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কিন্তু সব আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। অন্যদিকে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেনি। এরমধ্যে মামলার বাদী নিহতের পিতা আ. হালিম দুলাল শরীফ গত ১৩ জুলাই রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রিফাত হত্যার মূল কারণ তার নিহত ছেলের স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। পরের দিন সকালে তার এই বক্তব্যের সমর্থনে শহরে একটি মানববন্ধনেরও আয়োজন করা হয়। প্রক্রিয়ায় মূল বিষয়কে ধামাচাপা দিয়ে মিন্নিকে ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিও তার বাবার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে শ্বশুরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, চক্রান্তের অংশ হিসেবে শ্বশুর মিন্নিকে দোষারোপ করেছে। মিন্নি তার শ্বশুরের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে গত দু’দিন বরগুনায় আলোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি সোমবার সকালে বরগুনায় মাদকবিরোধী মানববন্ধন পর্যন্ত গড়ায়।

মানববন্ধন উপলক্ষে আয়োজিত বক্তব্য প্রদানকালে বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম, জাতীয় মহিলা সংস্থা-বরগুনার চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা চম্পা, বুড়িরচর এএমজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেলি পারভীন ছবি ও পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে বলেন, এখন সাপে-নেউলে লড়াই। তারা বরগুনায় রিফাত হত্যার কারণ হিসেবে মাদককে দায়ী করে বলেন, ভাইরাল হওয়া দৃশ্যে মেয়েটি তার স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেছে একথা সবাই জানে। মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষীও মিন্নি। সে হিসেবে পুলিশি কার্যক্রমে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু মামলার প্রধান সাক্ষীকে বিব্রত করা মামালার ক্ষতিসাধন করাই বটে। এ ঘটনা রিফাত হত্যার বিচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মারাত্মক আসামিরা এই সুযোগে বেড়িয়ে আসবে।

বক্তারা আরও বলেন, গত ২৬ জুন প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে শতশত লোকের সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ হত্যার পিছনে রয়েছে ০০৭ কিশোর গ্যাং বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৬০ জন। তিনটি পরীক্ষায় পাশ করে ০০৭ কিশোর গ্যাং বাহিনীর সদস্য হতে হয়। প্রথমত : অবশ্যই তাকে মাদকসেবী হতে হবে। দ্বিতীয়ত : তাকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত হতে হবে। তৃতীয়ত : এ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাট, অপহরণ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও বরগুনায় টিম ৬১, লারেলাপ্পা, হানিবন্ডসহ বিভিন্ন নামে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। সবমিলিয়ে এদের সদস্যসংখ্যা সহস্রাধিক। বরগুনার মতো ছোট্ট একটি জেলায় সহস্রাধিক মাদক ব্যবসায়ী বা সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়াই স্বাভাবিক। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপ সদস্যদের বয়স ১২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। হাতেগোণা কয়েকজন লিডারের বয়স ৪০ এর মধ্যে।

  • রিফাত ফরাজীকে ফের সাত দিনের রিমান্ড
  • সাইমুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীর জন্য ফের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে কামরুল হাসান সাইমুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

সোমবার বিকেলে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চারজনসহ নয় আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে আরও ২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে এদিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

টিকটক হৃদয় ও রাতুল সিকদারের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে টিকটক হৃদয় ও রাতুল সিকদার। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা বিচারকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়কে গত ৩ জুলাই প্রথমবারের মতো ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। গত ১০ জুলাই পুনরায় তাকে আদালতে হাজির করে আরও ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিচারক পুনরায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ আদালতে হাজির করা হলে সে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সন্দেহভাজন আসামি রাতুল সিকদারকে ১১ জুলাই গ্রেফতারের পরে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রাতুলও আজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত পহেলা জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীর, ৪ জুলাই রাতে মামলার ৪নম্বর আসামি চন্দন ও ৯নম্বর আসামি মো. হাসান, ৫ জুলাই রাতে মো. সাগর ও নাজমুল হাসান এবং ১০ জুলাই রাতে রাফিউল ইসলাম রাব্বী আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের সামনে রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রিফাত হত্যা মামলায় রোববার পর্যন্ত ১৪ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে ৩ জুলাই রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে হত্যা মামলায় ৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অস্ত্র মামলায় আরও ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আগামী মঙ্গলবার রিফাত ফরাজীর ১৪ দিনের রিমান্ড শেষ হবে। কামরুল হাসান সাইমুনকে চার দফায় ১৬ দিন ও আরিয়ান শ্রাবনকে দুই দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

৮ আসামিকে আদালতে হাজির

৮ আসামিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আগামী ৩১ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করে আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।

রাতুল সিকদার নামে এক আসামি ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে সেফহোমে পাঠানোর কারণে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। রাতুল সিকদার বরগুনা এফএম স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। এ মামলায় চারজন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এপর্যন্ত এই মামলায় এজাহারভুক্ত ৬ জন এবং সন্দেহজনক ৭ জন। মোট ১৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।