বাংলাদেশ থেকে আম ও গরুর মাংস কিনতে চায় আর্জেন্টিনা

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের সুনাম রয়েছে। অন্যদিকে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গরুর মাংসের দামও বেশ কম। এসব দিক বিবেচনা করে এ দুটি পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। এছাড়া বাংলাদেশের কৃষির সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। গত সোমবার কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আর্জেন্টিনার কৃষি ও শিল্প সচিব লুইস মিগুয়েল ইচাভেহের সঙ্গে বৈঠকে এসব প্রস্তাব দেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। তাদের প্রস্তাব আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক সর্বোপরি কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল আজ কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ উচ্চস্থান দখল করে আছে। আমাদের প্রধান ফসল ধান হলেও দেশে এখন গম ও ভুট্টাও চাষ হচ্ছে। ভুট্টা আমাদের পোলট্রি শিল্পের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এর বড় একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, আমাদের লক্ষ্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফলেরও প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক বাজারের অভাবে বিক্রি করতে পারছে না। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে এগুলোর দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। আমরা অধিক লাভজনক শস্য উৎপাদনের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আধুনিক কৃষির জন্য খাদ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাণিজ্যিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। মোট কথা আধুনিক ও বাণিজ্যিক কৃষির জন্য বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে। কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের যা যা করা দরকার সরকার সব করবে। আর্জেন্টিনার সচিব বলেন, বাংলাদেশ অনেক সুন্দর ও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দাম গরুর মাংস। আর্জেটিনা অতি শীঘ্রই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। দেশটির মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২৭ কোটি ২ লাখ হেক্টর। বিশ্বে ৪১টি পণ্য রপ্তানি করে করছে। ১৯৯৬ সাল হতে আর্জেটিনা বাণিজ্যিকভাবে জিএমও শস্য আবাদ করে থাকে, জিএমও শস্যে অবস্থান তৃতীয়। আর্জেটিনা বাংলাদেশের কৃষিখাতে পূর্ণ সহযোগিতা করতে আগ্রহী। বিশেষ করে কারিগরি ও গবেষণা ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের আম, পেঁপে বেশ সুস্বাদু, বিধায় সেটিও আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চুবুরু, অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল মার্কেটের যুগ্মসচিব জেসুস সিলভেরিয়া, টোবিয়াস ডি মার্কোস, আর্জেন্টিনার চেম্বার অব দি অয়েল ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড এক্সপোর্টারস (সিআইএঅঅরএ-সিইসি) ও উপদেষ্টা ম্যারিয়ানো বিহেরান এবং টোবিস ডি মার্কোস। বাংলাদেশের পক্ষে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব আ. রউফ, আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ, আরিফুর রহমান অপুসহ সংস্থার প্রধানরা।

বৈঠক শেষে অতিথিদের নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

বাংলাদেশ থেকে আম ও গরুর মাংস কিনতে চায় আর্জেন্টিনা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের সুনাম রয়েছে। অন্যদিকে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গরুর মাংসের দামও বেশ কম। এসব দিক বিবেচনা করে এ দুটি পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। এছাড়া বাংলাদেশের কৃষির সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। গত সোমবার কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আর্জেন্টিনার কৃষি ও শিল্প সচিব লুইস মিগুয়েল ইচাভেহের সঙ্গে বৈঠকে এসব প্রস্তাব দেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। তাদের প্রস্তাব আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক সর্বোপরি কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল আজ কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ উচ্চস্থান দখল করে আছে। আমাদের প্রধান ফসল ধান হলেও দেশে এখন গম ও ভুট্টাও চাষ হচ্ছে। ভুট্টা আমাদের পোলট্রি শিল্পের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এর বড় একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, আমাদের লক্ষ্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফলেরও প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক বাজারের অভাবে বিক্রি করতে পারছে না। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে এগুলোর দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। আমরা অধিক লাভজনক শস্য উৎপাদনের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আধুনিক কৃষির জন্য খাদ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাণিজ্যিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। মোট কথা আধুনিক ও বাণিজ্যিক কৃষির জন্য বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে। কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের যা যা করা দরকার সরকার সব করবে। আর্জেন্টিনার সচিব বলেন, বাংলাদেশ অনেক সুন্দর ও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দাম গরুর মাংস। আর্জেটিনা অতি শীঘ্রই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। দেশটির মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২৭ কোটি ২ লাখ হেক্টর। বিশ্বে ৪১টি পণ্য রপ্তানি করে করছে। ১৯৯৬ সাল হতে আর্জেটিনা বাণিজ্যিকভাবে জিএমও শস্য আবাদ করে থাকে, জিএমও শস্যে অবস্থান তৃতীয়। আর্জেটিনা বাংলাদেশের কৃষিখাতে পূর্ণ সহযোগিতা করতে আগ্রহী। বিশেষ করে কারিগরি ও গবেষণা ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের আম, পেঁপে বেশ সুস্বাদু, বিধায় সেটিও আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চুবুরু, অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল মার্কেটের যুগ্মসচিব জেসুস সিলভেরিয়া, টোবিয়াস ডি মার্কোস, আর্জেন্টিনার চেম্বার অব দি অয়েল ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড এক্সপোর্টারস (সিআইএঅঅরএ-সিইসি) ও উপদেষ্টা ম্যারিয়ানো বিহেরান এবং টোবিস ডি মার্কোস। বাংলাদেশের পক্ষে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব আ. রউফ, আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ, আরিফুর রহমান অপুসহ সংস্থার প্রধানরা।

বৈঠক শেষে অতিথিদের নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।