রংপুরেই সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের লাশ দাফন

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের লাশ দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় তার পল্লীনিবাস বাসভবনের পাশে এরশাদের বাবা মকবুল হোসেন জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে লিচুতলায় সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। জাপা নেতাকর্মীরা তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে নিজেরাই দখলে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে পল্লীনিবাসে নিয়ে যান। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স সামনে-পেছনে হাজারো নেতাকর্মী ঘিরে রাখেন।

সাবেক স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতি ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের মরদেহ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দুপুর ১১টা ৫২ মিনিটে রংপুর সেনানিবাসে পৌঁছে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে এসে পৌঁছালে এরশাদের ছোট ভাই ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও স্বজনরা তার মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা দলের নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্মরণকালের বিশাল নামাজে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয়। জানাজা শুরুর আগে থেকে রংপুর সিটি মেয়র ও রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এরশাদের মরদেহ রংপুরে দাফন করার দাবি জানাতে থাকেন। লাখো মানুষ তার দাবি সমর্থন করে স্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের অনেক চেষ্টা করেও বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে পারেননি। ওই অবস্থাতেই জানাজা শেষে সিটি মেয়র মোস্তফা ও মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা এরশাদের লাশ বহন করা অ্যাম্বুলেন্স নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পল্লীনিবাস বাসায় নিয়ে আসেন। হাজারো জনতা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে-পেছনে পাহারা দিয়ে মরদেহ নিয়ে আসেন। মকবুল হাসপাতালে ইতোমধ্যে কবর খনন কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ওই এলাকা কর্ডন করেন। তারা এরশাদের কফিন সেনাবাহিনীর কায়দায় বহন করে কবরের কাছে নিয়ে যান। তারা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। সেনাবাহিনী এরশাদের জীবনী পড়ে শোনায়। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়। জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাপা নেতা আবুল হোসেন বাবলা, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরসহ অন্যান্য নেতাসহ হাজারো নেতাকর্মী সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যেভাবে এরশাদকে সমাহিত করা হলো : দু’দিন আগে থেকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তফা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতাদের সঙ্গে সভা করে এরশাদের মরদেহ রংপুরের পল্লীনিবাসে দাফন করার ঘোষণা দেন। তিনি যে কোন মূল্যের বিনিময়ে এখানে এরশাদের মরদেহ দাফন করার কথা বলেন। অন্যথায় প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও রংপুরে দাফন করে ছাড়বেন। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিতে থাকেন। সবার একটাই দাবি, এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করতে হবে। কোন অবস্থাতেই তার মরদেহ ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। তারা এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে হবে বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে এরশাদ লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি কালেক্টরেট মাঠে এসে পৌঁছালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সামনে রংপুরে সমাহিত করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন হাজারো নেতাকর্মী। জানাজার আগে সিটি মেয়র মোস্তফা ঘোষণা দেন, এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে হবে। তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোন অবস্থাতেই তার মরদেহ ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। কালেক্টরেট মাঠ ছাড়াও সেনানিবাসের রাস্তা ও পল্লীনিবাসের সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জানাজার আগে মহাসচিব রাঙ্গা এরশাদের জন্য দোয়া চেয়ে তার জীবনী পাঠ করাকালে হাজারো নেতাকর্মী এরশাদের লাশ রংপুরে সমাহিত করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় জিএম কাদের বক্তব্য দেয়া শুরু করলেও হাজারো জনতা তার কাছে রংপুরে এরশাদের লাশ সমাহিত করার ঘোষণা শোনার জন্য স্লোগান দিতে থাকে। ফলে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে তড়িঘড়ি জানাজা শুরু করা হয় দুপুর সোয়া ২টার দিকে। জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই এরশাদের লাশ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটির নিয়ন্ত্রণ নেন সিটি মেয়র মোস্তফা ও মহানগর জাপার সম্পাদক ইয়াসির। তারা গাড়িতে উঠে পড়েন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে তারা সেনানিবাস সড়কে না গিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক দিয়ে বিভিন্ন অলিগলি ব্যবহার করে পল্লীনিবাসের দিকে যেতে থাকেন। হাজারো নেতাকর্মী অ্যাম্বুলেন্সটি কর্ডন করে রাখেন। ফলে আধা ঘণ্টার পথ পল্লীনিবাস যেতে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়।

এদিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জিএম কাদের, রাঙ্গা ও জাপার কেন্দ্রীয় নেতা আবু হোসেন বাবলা এমপি দুটি গাড়িতে এসে সরাসরি মকবুল হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। তারা সরাসরি হাসপাতালের বারান্দায় বসে পড়েন। এ সময় এ প্রতিনিধির কাছে জিএম কাদের বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে। কিন্তু রওশন এরশাদ চাচ্ছিলেন ঢাকায়। যাই হোক, রংপুরের জনগণ চায়, এরশাদের লাশ দাফন রংপুরে হোক। আমরাও সম্মতি দিয়েছি। রওশন এরশাদও সম্মতি দিয়েছেন। একই কথা বলেন জাপার মহাসচিব রাঙ্গা। তিনি বলেন ঢাকায় এরশাদের লাশ দাফন করার কথা অনেকে বলেছিলেন। এছাড়া আরও সমস্যা ছিল। কিন্তু রংপুরের মানুষের সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে আমরাও রংপুরে এরশাদের লাশ সমাহিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এভাবেই শেষ পর্যন্ত রংপুরে এরশাদের লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরও খবর
একনেকে ৫১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ প্রকল্প অনুমোদন
কাবিননামার পাঁচ নম্বর বিধি কেন অবৈধ নয়
বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ
২৫-৩১ জুলাই পর্যন্ত মশক নিধন সপ্তাহ
২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ৬ হাজার কোটি ডলার
চীনা ডেমো ট্রেন আর কিনবে না সরকার
৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
দেশজুড়ে গুম খুন-ধর্ষণ মহামারী
জঙ্গি সংগঠন ধ্বংস করেছি, মতাদর্শ রয়ে গেছে
চার বছর পর পলাতক আসামি গ্রেফতার
সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ১০ বছর পর মুক্তি পেলেন আজমত আলী
খুলনায় ক্ষুদের খাল খননে হরিলুট
কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় আহত পুলিশ সার্জেন্ট কিবরিয়ার মৃত্যু
বিয়ের আনন্দবাড়ি বিষাদে পরিণত

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

রংপুরেই সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের লাশ দাফন

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের লাশ দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় তার পল্লীনিবাস বাসভবনের পাশে এরশাদের বাবা মকবুল হোসেন জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে লিচুতলায় সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। জাপা নেতাকর্মীরা তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে নিজেরাই দখলে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে পল্লীনিবাসে নিয়ে যান। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স সামনে-পেছনে হাজারো নেতাকর্মী ঘিরে রাখেন।

সাবেক স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতি ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের মরদেহ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দুপুর ১১টা ৫২ মিনিটে রংপুর সেনানিবাসে পৌঁছে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে এসে পৌঁছালে এরশাদের ছোট ভাই ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও স্বজনরা তার মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা দলের নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্মরণকালের বিশাল নামাজে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয়। জানাজা শুরুর আগে থেকে রংপুর সিটি মেয়র ও রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এরশাদের মরদেহ রংপুরে দাফন করার দাবি জানাতে থাকেন। লাখো মানুষ তার দাবি সমর্থন করে স্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের অনেক চেষ্টা করেও বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে পারেননি। ওই অবস্থাতেই জানাজা শেষে সিটি মেয়র মোস্তফা ও মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা এরশাদের লাশ বহন করা অ্যাম্বুলেন্স নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পল্লীনিবাস বাসায় নিয়ে আসেন। হাজারো জনতা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে-পেছনে পাহারা দিয়ে মরদেহ নিয়ে আসেন। মকবুল হাসপাতালে ইতোমধ্যে কবর খনন কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ওই এলাকা কর্ডন করেন। তারা এরশাদের কফিন সেনাবাহিনীর কায়দায় বহন করে কবরের কাছে নিয়ে যান। তারা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। সেনাবাহিনী এরশাদের জীবনী পড়ে শোনায়। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়। জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাপা নেতা আবুল হোসেন বাবলা, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরসহ অন্যান্য নেতাসহ হাজারো নেতাকর্মী সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যেভাবে এরশাদকে সমাহিত করা হলো : দু’দিন আগে থেকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তফা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতাদের সঙ্গে সভা করে এরশাদের মরদেহ রংপুরের পল্লীনিবাসে দাফন করার ঘোষণা দেন। তিনি যে কোন মূল্যের বিনিময়ে এখানে এরশাদের মরদেহ দাফন করার কথা বলেন। অন্যথায় প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও রংপুরে দাফন করে ছাড়বেন। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিতে থাকেন। সবার একটাই দাবি, এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করতে হবে। কোন অবস্থাতেই তার মরদেহ ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। তারা এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে হবে বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে এরশাদ লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি কালেক্টরেট মাঠে এসে পৌঁছালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সামনে রংপুরে সমাহিত করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন হাজারো নেতাকর্মী। জানাজার আগে সিটি মেয়র মোস্তফা ঘোষণা দেন, এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে হবে। তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোন অবস্থাতেই তার মরদেহ ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। কালেক্টরেট মাঠ ছাড়াও সেনানিবাসের রাস্তা ও পল্লীনিবাসের সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জানাজার আগে মহাসচিব রাঙ্গা এরশাদের জন্য দোয়া চেয়ে তার জীবনী পাঠ করাকালে হাজারো নেতাকর্মী এরশাদের লাশ রংপুরে সমাহিত করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় জিএম কাদের বক্তব্য দেয়া শুরু করলেও হাজারো জনতা তার কাছে রংপুরে এরশাদের লাশ সমাহিত করার ঘোষণা শোনার জন্য স্লোগান দিতে থাকে। ফলে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে তড়িঘড়ি জানাজা শুরু করা হয় দুপুর সোয়া ২টার দিকে। জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই এরশাদের লাশ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটির নিয়ন্ত্রণ নেন সিটি মেয়র মোস্তফা ও মহানগর জাপার সম্পাদক ইয়াসির। তারা গাড়িতে উঠে পড়েন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে তারা সেনানিবাস সড়কে না গিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক দিয়ে বিভিন্ন অলিগলি ব্যবহার করে পল্লীনিবাসের দিকে যেতে থাকেন। হাজারো নেতাকর্মী অ্যাম্বুলেন্সটি কর্ডন করে রাখেন। ফলে আধা ঘণ্টার পথ পল্লীনিবাস যেতে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়।

এদিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জিএম কাদের, রাঙ্গা ও জাপার কেন্দ্রীয় নেতা আবু হোসেন বাবলা এমপি দুটি গাড়িতে এসে সরাসরি মকবুল হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। তারা সরাসরি হাসপাতালের বারান্দায় বসে পড়েন। এ সময় এ প্রতিনিধির কাছে জিএম কাদের বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম এরশাদের লাশ রংপুরে দাফন করতে। কিন্তু রওশন এরশাদ চাচ্ছিলেন ঢাকায়। যাই হোক, রংপুরের জনগণ চায়, এরশাদের লাশ দাফন রংপুরে হোক। আমরাও সম্মতি দিয়েছি। রওশন এরশাদও সম্মতি দিয়েছেন। একই কথা বলেন জাপার মহাসচিব রাঙ্গা। তিনি বলেন ঢাকায় এরশাদের লাশ দাফন করার কথা অনেকে বলেছিলেন। এছাড়া আরও সমস্যা ছিল। কিন্তু রংপুরের মানুষের সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে আমরাও রংপুরে এরশাদের লাশ সমাহিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এভাবেই শেষ পর্যন্ত রংপুরে এরশাদের লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।