সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর

দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলা রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ৭ মাস পর বহুল আলোচিত এ মামলাটি সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যেই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হচ্ছে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত ১৪ জুলাই ওই প্রজ্ঞাপনটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৌঁছেছে। প্রজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে কেন এতো বিলম্ব হলোÑ তার সঠিক কোন কারণ জানা যায়নি। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজ করুনী লকেট গতকাল প্রজ্ঞাপন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনের কপি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, পিপি ও রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, শিমুল হত্যা মামলার নথি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, শিমুল হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা ও স্মারকলিপি পেশসহ নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। এক পর্যায়ে মামলার বাদী নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন দেড় বছর আগে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে গণ্য করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে সুপারিশপত্র পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে প্রায় ৭ মাস পর ওই প্রজ্ঞাপনটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসে। অপরদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম মিয়া জানান, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আমলি আদালত) থেকে সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (বিচারিক আদালত) পাঠানো হয়। বিচারিক আদালত পর্যায়ক্রমে ৭ বার চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করলেও আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করে চার্জ গঠনে বাধার সৃষ্টি করে। চার্জ গঠন না হওয়ায় শিমুল হত্যার আড়াই বছর পরেও বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। এদিকে বারবার চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ পেছানোর ফলে যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয় তাতে ন্যয়বিচার পাওয়া নিয়ে শিমুলের স্ত্রী, তার স্বজনরা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে নানা সংশয় বিরাজ করছিল। এদিকে দেরিতে হলেও শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হওয়ায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুনসহ তার স্বজনরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর মেয়র (বর্তমানে বরখাস্তকৃত) হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং পরদিন মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ একই বছরের ২ মে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু, তার ভাই মিন্টুসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। বর্তমানে হালিমুল হক মিরু কারাগারে থাকলেও অপর ৩৭ জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছে।

আরও খবর
একনেকে ৫১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ প্রকল্প অনুমোদন
কাবিননামার পাঁচ নম্বর বিধি কেন অবৈধ নয়
বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ
২৫-৩১ জুলাই পর্যন্ত মশক নিধন সপ্তাহ
রংপুরেই সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের লাশ দাফন
২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ৬ হাজার কোটি ডলার
চীনা ডেমো ট্রেন আর কিনবে না সরকার
৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
দেশজুড়ে গুম খুন-ধর্ষণ মহামারী
জঙ্গি সংগঠন ধ্বংস করেছি, মতাদর্শ রয়ে গেছে
চার বছর পর পলাতক আসামি গ্রেফতার
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ১০ বছর পর মুক্তি পেলেন আজমত আলী
খুলনায় ক্ষুদের খাল খননে হরিলুট
কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় আহত পুলিশ সার্জেন্ট কিবরিয়ার মৃত্যু
বিয়ের আনন্দবাড়ি বিষাদে পরিণত

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

প্রজ্ঞাপন জারির ৭ মাস পর

সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর

প্রতিনিধি, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলা রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ৭ মাস পর বহুল আলোচিত এ মামলাটি সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যেই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হচ্ছে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত ১৪ জুলাই ওই প্রজ্ঞাপনটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৌঁছেছে। প্রজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে কেন এতো বিলম্ব হলোÑ তার সঠিক কোন কারণ জানা যায়নি। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজ করুনী লকেট গতকাল প্রজ্ঞাপন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনের কপি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, পিপি ও রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, শিমুল হত্যা মামলার নথি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, শিমুল হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা ও স্মারকলিপি পেশসহ নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। এক পর্যায়ে মামলার বাদী নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন দেড় বছর আগে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে গণ্য করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে সুপারিশপত্র পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে প্রায় ৭ মাস পর ওই প্রজ্ঞাপনটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসে। অপরদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম মিয়া জানান, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আমলি আদালত) থেকে সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (বিচারিক আদালত) পাঠানো হয়। বিচারিক আদালত পর্যায়ক্রমে ৭ বার চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করলেও আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করে চার্জ গঠনে বাধার সৃষ্টি করে। চার্জ গঠন না হওয়ায় শিমুল হত্যার আড়াই বছর পরেও বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। এদিকে বারবার চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ পেছানোর ফলে যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয় তাতে ন্যয়বিচার পাওয়া নিয়ে শিমুলের স্ত্রী, তার স্বজনরা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে নানা সংশয় বিরাজ করছিল। এদিকে দেরিতে হলেও শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হওয়ায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুনসহ তার স্বজনরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর মেয়র (বর্তমানে বরখাস্তকৃত) হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং পরদিন মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ একই বছরের ২ মে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু, তার ভাই মিন্টুসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। বর্তমানে হালিমুল হক মিরু কারাগারে থাকলেও অপর ৩৭ জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছে।