জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের উপস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এদিকে সরকারি ভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসকদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িতে দ্রুতগতির কানেক্টিভিটি (ইন্টারনেট সংযোগ) পৌঁছে দিতে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এর পাশাপাশি চর্তুথ শিল্পবিপ্লবের জন্য তাদের প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। নারী ও শিশু নির্যাতনের সমস্যাগুলো সমাধানে ডিসিদের কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। এদিকে আগামী কোরবানির ঈদে সড়ক-মহাসড়কের পাশে যাতে পশুর হাট বসতে না পারে, এ জন্য ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মো. নজরুল ইসলাম। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ দিনে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ দিনের কার্যঅধিবেশনের সভাপত্বি করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে মোট ৩৩৩টি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাঁচ দিনের এ সম্মেলনে মোট ২৯টি অধিবেশন হচ্ছে। এর মধ্যে ২৪টি কার্যঅধিবেশন ছিণ।
ডিসি’দের সঙ্হে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কার্যঅধিবেশন : ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ২৫ থেকে ৩১ জুলাই সারাদেশে মশকনিধন সপ্তাহ পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ২৫ থেকে ৩১ জুলাই সারাদেশে মশকনিধন সপ্তাহ পালন করা হবে। এছাড়া মশার ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে। তাদের বলা হয়েছে পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য তাদের আয় বাড়াতে হবে। তারপর তারা ব্যয় করবেন। এ উদ্দেশ্যেই পৌরসভা গঠন করা হয়েছে। এখন যারা এ কাজ করতে পারবেন না বা ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন না, তারা ঢাকায় এসে আন্দোলন করবেনÑ এটা সুস্থ ব্যবস্থাপনা নয়। ডিসিদের কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেয়া আছে, তা সঠিকভাবে পালন করার জন্য সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ জন্য আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করা এবং তাদের বরাদ্দ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখাশোনা করা। রাস্তাঘাটের মান বাড়ানোসহ গ্রামের অর্থনীতি উন্নয়নে যেসব বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছেÑ কৃষি খাতের পরিবর্তন, সুপেয় পানি সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার যে অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা।
ডাক্তাদের নিয়মিত উপস্থিতির নজর রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক : বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ডিসিদের জানিয়েছি। জেলা-উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা নিয়মিত মিটিং করবেন। স্বাস্থ্য রিলেটেড যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছেÑ জেলা, উপজেলা হাসপাতলে মিটিং করবেন। সেসব জায়গায় যাবেন, পরিদর্শন করবেন। সেসব হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি খেয়াল রাখবেন। রোগীরা যাতে ভালো সেবা পান, এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে বলেছি ডিসিদের। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যানসার ও হার্টের রোগ অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণগুলো ডিসিদের বললাম। এর একটি কারণ হলো ভেজাল খাবার। এদিকে নজর রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করা যাবে না। ইটের ভাটার ধোঁয়া যাতে বায়ুদূষণ করতে না পারে, এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। এতে ক্যানসার ও স্ট্রোক হয়। প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ করছি। প্রতিটি বিভাগে একটি করে কিডনি হাসপাতালও করতে যাচ্ছি। প্রতিটি জেলায় ৫ বেড করে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এগুলোর কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফার্মেসিগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করে, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। আমাদের ওষুধ পলিসিতেও এটা রয়েছে। কিন্তু এটা সবাই মানে না। গরুর খামার, পোলট্রি, মৎস্য খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হয়। সেটি গরু, পোলট্রি ও মাছ হয়ে আবার মানুষের গায়েও চলে আসে। এ বিষয়গুলোতেও ডিসিদের সতর্ক হতে বলেছি- বিভিন্ন স্থানে তারা গিয়ে এ বিষয়টি যেন নিয়ন্ত্রণ করেন।
ভূমি উদ্ধারে ডিসিদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা ভূমিমন্ত্রীর : যে যত বেশি সরকারি ভূমি উদ্ধার করতে পারবেন, তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, সরকারি ভূমি উদ্ধার আরও কীভাবে করা যায়, এ বিষয়ে তাদের বলেছি। তারপরও যে যত বেশি ভূমি উদ্ধার করতে পারবেন, তত তাদের পুরস্কৃত করা হবে। অনেক ভালো প্রস্তাব এসেছে। আমরা বলেছি, করব। আমরা জনগণকে সেবা দিতে চাচ্ছি। তাই গতানুগতিক সিস্টেমের কথা চিন্তা করলে হবে না, আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করতে হবে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা অনেক সময় হয়। প্রকৃত যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাদের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হচ্ছে। আমি বারবার বলেছি, ৭ ও ৮ ধারা নোটিশের পরে কেন মামলা হয়ে থাকে? মামলা মামলার গতিতে চলবে। উপজেলা পর্যায়ে আমরা যেসব নতুন ভবন করছি, সেখানে আমরা রেকর্ড রুমের ব্যবস্থা করেছি। ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। ল্যান্ড জোনিংয়ের কাজ করছি। ল্যান্ড জোনিংয়ে প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। আশা করছি তা হয়ে যাবে।
প্রতিটি বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী : চর্তুথ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে ডিসিদের আহবান জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, চর্তুথ শিল্পবিপ্লব ও ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে বলেছি। আমাদের জনগণও এসব কিছু সহায়তা করবে বলে আশা করছি। ডিসিরা উৎসাহী। তারা সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের প্রতিটি বাড়িতে কানেক্টিভিটি (ইন্টারনেট সংযোগ) পৌঁছে দেয়া। এটা আমার কমিটমেন্ট। এই কমিটমেন্ট রক্ষা করার জন্য রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথের মতো ইন্টারনেটের পথ তৈরি করতে না পারিÑ তাহলে যে বাংলাদেশের (ডিজিটাল) কথাই বলি, কোনটাই হবে না। আমাদের জন্য যেটি চ্যালেঞ্জ, সেটি হলো গ্রামকে শহর বানানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। শহর বানানো মানে দালানকোঠা তৈরি ও রাস্তাঘাট পাকা করা বা মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করা নয়। আমরা যে সময়ে বাস করছি, তখন সারাবিশ্বই ডিজিটালে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারটা করেই রূপান্তরটা করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ডিসিরাও ভূমিকা পালন করবেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করবেন। তবে তারা একটি প্রশ্ন তুলেছেনÑ মোবাইলের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রকম জিনিস দেখছে। এটিও একটি অংশ। এটি কাটিয়ে উঠতে হবে। এর থেকে দূরে সরে গেলাম, বন্ধ করে দিলাম। এতে সমাধান হবে না। আমি বলেছি, আমাদের পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে। মানসিকতাও তৈরি করতে হবে। আমরা ওই জায়গায় যেতে চাই। বাংলাদেশ কোথায় উঠবে, বাঙালি তা নিজেও জানেন না। কিন্তু আমাদের চাওয়াটা আকাশছোঁয়া।
নারী ও শিশু নির্যাতনে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ডিসিদের : মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বলেছেন, আগেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটত। কিন্তু তা তারা প্রকাশ করত না। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নারীদের এতটা ক্ষমতাধর ও ভয়েস রেইজ করেছেন যে, তারা এগিয়ে আসছেন এবং ঘটনাগুলো প্রকাশ করছেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বেজলাইন ডেটা কোথাও নেই। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে ডিসিদের এ বিষয়ে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। তারা যাতে তাদের মনিটরিং, কো-অপারেশন বাড়ানÑ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আপনাকে কি উদ্বিগ্ন করে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই উদ্বিগ্ন করে। কারণ আমিও তো নারী।
সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পশুর হাট নয় : কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে প্রধান সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পশুর হাট যেন বসতে না পারে, এ জন্য ডিসিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছু রাস্তা আছে এলজিআরডির। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো মহাসড়ক বিভাগে আনা দরকার। এ বিষয়ে ডিসিদের সুপারিশ রয়েছে। কিছু রাস্তা প্রশস্ত করা, ফোর লেন কারর সুপারিশও তারা করেছেন। এগুলো আমাদের পরিকল্পনার মধ্যেও রয়েছে। তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করব। আমাদের দিক থেকে ডিসিদের একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি, সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ কেন্দ্র মহাসড়কের পাশে অনেক সময় কোরবানি পশুর হাট বসে। এতে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাস্তায় হাট যেন না বসে, এ জন্য ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছি।
এদিকে ডিসি সম্মেলনের বিভিন্ন কার্যঅধিবেশনে গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের উপস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এদিকে সরকারি ভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসকদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িতে দ্রুতগতির কানেক্টিভিটি (ইন্টারনেট সংযোগ) পৌঁছে দিতে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এর পাশাপাশি চর্তুথ শিল্পবিপ্লবের জন্য তাদের প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। নারী ও শিশু নির্যাতনের সমস্যাগুলো সমাধানে ডিসিদের কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। এদিকে আগামী কোরবানির ঈদে সড়ক-মহাসড়কের পাশে যাতে পশুর হাট বসতে না পারে, এ জন্য ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মো. নজরুল ইসলাম। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ দিনে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ দিনের কার্যঅধিবেশনের সভাপত্বি করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে মোট ৩৩৩টি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাঁচ দিনের এ সম্মেলনে মোট ২৯টি অধিবেশন হচ্ছে। এর মধ্যে ২৪টি কার্যঅধিবেশন ছিণ।
ডিসি’দের সঙ্হে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কার্যঅধিবেশন : ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ২৫ থেকে ৩১ জুলাই সারাদেশে মশকনিধন সপ্তাহ পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ২৫ থেকে ৩১ জুলাই সারাদেশে মশকনিধন সপ্তাহ পালন করা হবে। এছাড়া মশার ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে। তাদের বলা হয়েছে পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য তাদের আয় বাড়াতে হবে। তারপর তারা ব্যয় করবেন। এ উদ্দেশ্যেই পৌরসভা গঠন করা হয়েছে। এখন যারা এ কাজ করতে পারবেন না বা ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন না, তারা ঢাকায় এসে আন্দোলন করবেনÑ এটা সুস্থ ব্যবস্থাপনা নয়। ডিসিদের কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেয়া আছে, তা সঠিকভাবে পালন করার জন্য সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ জন্য আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করা এবং তাদের বরাদ্দ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখাশোনা করা। রাস্তাঘাটের মান বাড়ানোসহ গ্রামের অর্থনীতি উন্নয়নে যেসব বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছেÑ কৃষি খাতের পরিবর্তন, সুপেয় পানি সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার যে অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা।
ডাক্তাদের নিয়মিত উপস্থিতির নজর রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক : বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ডিসিদের জানিয়েছি। জেলা-উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা নিয়মিত মিটিং করবেন। স্বাস্থ্য রিলেটেড যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছেÑ জেলা, উপজেলা হাসপাতলে মিটিং করবেন। সেসব জায়গায় যাবেন, পরিদর্শন করবেন। সেসব হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি খেয়াল রাখবেন। রোগীরা যাতে ভালো সেবা পান, এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে বলেছি ডিসিদের। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যানসার ও হার্টের রোগ অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণগুলো ডিসিদের বললাম। এর একটি কারণ হলো ভেজাল খাবার। এদিকে নজর রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করা যাবে না। ইটের ভাটার ধোঁয়া যাতে বায়ুদূষণ করতে না পারে, এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। এতে ক্যানসার ও স্ট্রোক হয়। প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ করছি। প্রতিটি বিভাগে একটি করে কিডনি হাসপাতালও করতে যাচ্ছি। প্রতিটি জেলায় ৫ বেড করে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এগুলোর কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফার্মেসিগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করে, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। আমাদের ওষুধ পলিসিতেও এটা রয়েছে। কিন্তু এটা সবাই মানে না। গরুর খামার, পোলট্রি, মৎস্য খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হয়। সেটি গরু, পোলট্রি ও মাছ হয়ে আবার মানুষের গায়েও চলে আসে। এ বিষয়গুলোতেও ডিসিদের সতর্ক হতে বলেছি- বিভিন্ন স্থানে তারা গিয়ে এ বিষয়টি যেন নিয়ন্ত্রণ করেন।
ভূমি উদ্ধারে ডিসিদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা ভূমিমন্ত্রীর : যে যত বেশি সরকারি ভূমি উদ্ধার করতে পারবেন, তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, সরকারি ভূমি উদ্ধার আরও কীভাবে করা যায়, এ বিষয়ে তাদের বলেছি। তারপরও যে যত বেশি ভূমি উদ্ধার করতে পারবেন, তত তাদের পুরস্কৃত করা হবে। অনেক ভালো প্রস্তাব এসেছে। আমরা বলেছি, করব। আমরা জনগণকে সেবা দিতে চাচ্ছি। তাই গতানুগতিক সিস্টেমের কথা চিন্তা করলে হবে না, আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করতে হবে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা অনেক সময় হয়। প্রকৃত যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাদের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হচ্ছে। আমি বারবার বলেছি, ৭ ও ৮ ধারা নোটিশের পরে কেন মামলা হয়ে থাকে? মামলা মামলার গতিতে চলবে। উপজেলা পর্যায়ে আমরা যেসব নতুন ভবন করছি, সেখানে আমরা রেকর্ড রুমের ব্যবস্থা করেছি। ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। ল্যান্ড জোনিংয়ের কাজ করছি। ল্যান্ড জোনিংয়ে প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। আশা করছি তা হয়ে যাবে।
প্রতিটি বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী : চর্তুথ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে ডিসিদের আহবান জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, চর্তুথ শিল্পবিপ্লব ও ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে বলেছি। আমাদের জনগণও এসব কিছু সহায়তা করবে বলে আশা করছি। ডিসিরা উৎসাহী। তারা সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের প্রতিটি বাড়িতে কানেক্টিভিটি (ইন্টারনেট সংযোগ) পৌঁছে দেয়া। এটা আমার কমিটমেন্ট। এই কমিটমেন্ট রক্ষা করার জন্য রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথের মতো ইন্টারনেটের পথ তৈরি করতে না পারিÑ তাহলে যে বাংলাদেশের (ডিজিটাল) কথাই বলি, কোনটাই হবে না। আমাদের জন্য যেটি চ্যালেঞ্জ, সেটি হলো গ্রামকে শহর বানানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। শহর বানানো মানে দালানকোঠা তৈরি ও রাস্তাঘাট পাকা করা বা মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করা নয়। আমরা যে সময়ে বাস করছি, তখন সারাবিশ্বই ডিজিটালে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারটা করেই রূপান্তরটা করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ডিসিরাও ভূমিকা পালন করবেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করবেন। তবে তারা একটি প্রশ্ন তুলেছেনÑ মোবাইলের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রকম জিনিস দেখছে। এটিও একটি অংশ। এটি কাটিয়ে উঠতে হবে। এর থেকে দূরে সরে গেলাম, বন্ধ করে দিলাম। এতে সমাধান হবে না। আমি বলেছি, আমাদের পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে। মানসিকতাও তৈরি করতে হবে। আমরা ওই জায়গায় যেতে চাই। বাংলাদেশ কোথায় উঠবে, বাঙালি তা নিজেও জানেন না। কিন্তু আমাদের চাওয়াটা আকাশছোঁয়া।
নারী ও শিশু নির্যাতনে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ডিসিদের : মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বলেছেন, আগেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটত। কিন্তু তা তারা প্রকাশ করত না। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নারীদের এতটা ক্ষমতাধর ও ভয়েস রেইজ করেছেন যে, তারা এগিয়ে আসছেন এবং ঘটনাগুলো প্রকাশ করছেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বেজলাইন ডেটা কোথাও নেই। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে ডিসিদের এ বিষয়ে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। তারা যাতে তাদের মনিটরিং, কো-অপারেশন বাড়ানÑ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আপনাকে কি উদ্বিগ্ন করে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই উদ্বিগ্ন করে। কারণ আমিও তো নারী।
সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পশুর হাট নয় : কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে প্রধান সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পশুর হাট যেন বসতে না পারে, এ জন্য ডিসিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছু রাস্তা আছে এলজিআরডির। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো মহাসড়ক বিভাগে আনা দরকার। এ বিষয়ে ডিসিদের সুপারিশ রয়েছে। কিছু রাস্তা প্রশস্ত করা, ফোর লেন কারর সুপারিশও তারা করেছেন। এগুলো আমাদের পরিকল্পনার মধ্যেও রয়েছে। তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করব। আমাদের দিক থেকে ডিসিদের একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি, সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ কেন্দ্র মহাসড়কের পাশে অনেক সময় কোরবানি পশুর হাট বসে। এতে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাস্তায় হাট যেন না বসে, এ জন্য ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছি।
এদিকে ডিসি সম্মেলনের বিভিন্ন কার্যঅধিবেশনে গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।