রিফাত হত্যা

মিন্নি রিমান্ডে : আইনি সহায়তা নিতে বাধা

সুবিচার নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে

ঘটনার ২০ দিনের মাথায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে আসামি করে গ্রেফতার করার পর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেলে তাকে রিমান্ডের জন্য হাজির করা হলে তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তবে মিন্নির বাবা অভিযোগ করেছেন মিন্নির রিমান্ড আবেদনের সময় তাদের আইনজীবীকে কথা বলতে বাধা দেয়া হয়েছে।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যার ২০ দিনের মাথায় মামলার প্রধান ও দেখা সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ গ্রেফতার দেখানোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরগুনার বিভিন্ন জন। তারা রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষীকে আসামি করে গ্রেফতার করা চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে এবং মূল আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। মন্তব্য করেছেন বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট অনিসুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজনা বেগম, জাগো নারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তবে পুলিশের ভূমিকার প্রসংশা করেছেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর, তিনি বলেন, আসামি শনাক্তকরণের কথা বলে মিন্নিকে গতকাল সকাল ৯টা ৪৫-এর দিকে পুলিশ নিয়ে যায়। সারা দিন রাত তাদের বসিয়ে রেখে মিন্নি সম্পর্কে কোন সংবাদই করেনি। রাতে পুলিশ লাইনের সামনে টেলিভিশনের মাধ্যমে মিন্নিকে গ্রেফতারের সংবাদ পান তারা। কিশোর জানান, মিন্নিরই এই মামলায় বাদী হবার কথা ছিল কিন্তু তাকে বাদী না বানিয়ে ১নং সাক্ষী বানানো হয়েছে। ২০ দিনের মাথায় তাকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে তার উকিলকে কৌশলে কথা বলতে না দিয়ে একটি ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। মিন্নির জন্যই এই মামলা এতদূর পর্যন্ত এসেছে। মিন্নির আবেদনই সারা দেশ ও বিশ্ববাসী শুনেছে। একটি মানবিক আবেদন তৈরি হয়েছে। সেই মিন্নিকে আসামি করা একটি ষড়যন্ত্র। সে ছোট মেয়ে এত ষড়যন্ত্র সে মোকাবিলা করতে পারবে না।

তবে মামলায় মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয় পুলিশ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিফাত শরীফের বাবা বলেন, এখন ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ নিশ্চিত হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়িকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, মিন্নি কোপায়নি কিন্তু ষড়যন্ত্র করেছে। তবে কুখ্যাত অন্য আসামিদের বিষয় দুলাল শরীফ তেমন কিছু বলেননি।

এ বিষয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, রিফাত হত্যার যথাযথ বিচার হবে কিনা সন্দেহ সৃষ্টি হলো। একটি ক্রিমিনাল মামলার ১নং সাক্ষী আসামি হয়ে গেলে প্রসিকিউশন কিভাবে আগাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি রিমান্ডের বিষয়ে বলেন, শুনেছি সে সময় খুনিদের পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল। মনে হচ্ছে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এ পরিণতি ভালো নয়। কুখ্যাত আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে।

উন্নয়ন সংগঠন জাগোনারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি বলেন, মিন্নি যদি নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেও তাহলে কি হত্যাকা- দিয়ে তা ঢেকে ফেলা যায়? কি কারণে মিন্নি নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল, তার ওপর কি ধরনের চাপ ছিল, এক্ষেত্রে একজন নারীর সীমাব্ধতা তদন্তকারী কর্মকর্তার বিচারে নেয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, নয়ন বন্ড-রিফাত ফরাজীর ভয়ে অনেক মেয়েই বরগুনা ছেড়ে চলে গেছে বা বাবা-মার বাল্যবিয়ে দিতে হয়েছে একথা সবাই জানে। নয়ন বন্ড রিফাত ফরাজীর কোন দৃষ্টি এড়ানোর উপায় কি কোন মেয়ের তখন ছিল? এ বিষয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম বলেন, তিনি আশা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ মামালর সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। যারাই জড়িত থাকবেন তাদের যেন সুষ্ঠু বিচার হয়।

মিন্নির রিমান্ড ৫ দিন

রিফাত শরীফ হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বুধবার বিকেলে বরগুনার সি. জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট গাজী মো. সিরাজুল ইসলামের কোর্টে মিন্নিকে ৭ দিনের জন্য রিমান্ডের প্রার্থনা করেন। আদালত মিনিকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির কোর্টকে জানায়, এই মামলার বর্তমান আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি মূলত: নয়ন বন্ডের স্ত্রী থাকা অবস্থায় রিফাতের সঙ্গে বিয়ে বসেছে। মিন্নি একই সঙ্গে দু’জনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখত। মিন্নি রিফাত শরীফ হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, রিমান্ড আবেদনের সময় মিন্নির পক্ষের আইনজীবীদের কৌশলে কথা বলতে দেয়নি। কে তাদের আইনজীবী ছিলেন জানতে চাইলে তিনি একজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিনের নাম বলেন। তবে এই মামলায় আরও দুজন আইনজীবী নিযুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।

মিন্নির গ্রেফতার ও সংবাদ সম্মেলন

রিফাত হত্যার পর পরই মিন্নির নিরাপত্তার জন্য মিন্নির বাবার বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। প্রথমে ৪ পরে ১০ জন। পুলিশ পাহাড়া বাড়ানো হয় ১৩ জুলাই রিফাত শরীফের বাবা কর্তৃক মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও একটি বিতর্কিত মানববন্ধনের পর জনমনে ধারণা ছিল মিন্নিকে পুলিশ আগে থেকেই নজরবন্দি করে রেখেছিল। গ্রেফতার দেখানোটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তবে মিন্নির বিরুদ্ধে ফেইজবুকে বিভিন্ন মন্তব্য, পালটা ভিডিও ভাইরাল, রিফাত শরীফের বাবার সংবাদ সম্মেলন এবং মিন্নির পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের পর মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় পুলিশ মিন্নির বাবার বাড়িতে গিয়ে অন্যান্য আসামিদের শনাক্ত করার জন্য সাহায্যের কথা বলে মিন্নিকে নিয়ে আসে। এ সময়ই মিন্নিকে গ্রেফতারের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। দুপুর ১টায় এ বিষয় পুলিশ প্রেস ব্রিফিংও করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে মিন্নিকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকা-ের ধারাবাহিকতা, প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে মিন্নিকে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়ে মিন্নিকে গ্রেফতাররের ঘোষণা দিচ্ছে।

পুলিশ সুপারের পেস ব্রিফিং

প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ, আস সালামু আলাইকুম। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, গত ২৬-০৬-২০১৯ তারিখ সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ৭ জন (৬ জন জীবিত) ও তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ ৭ জন আসামিসহ মোট ১৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। এজাহারনামীয় গ্রেফতারকৃত ৪ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ গ্রেফতারকৃত মোট ১০ জন আসামিকে ফৌ: কা: বি: আইনের ১৬৪ জবানবন্দি গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এজাহারনামীয় ২ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ৩ জন আসামিকে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার ১ নং সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০), স্বামী মৃত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ, পিতা মোজাম্মেল হক কিশোর, সাং দক্ষিণ মাইঠা ২নং ওয়ার্ড বরগুনা পৌরসভা থানা ও জেলা বরগুনাকে অদ্য ১৬-০৭-১৯ তারিখ সকাল ০৯-৪৫ ঘটিকায় ডেকে এনে মামলা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও সুদীর্ঘ সময় যাবত প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণপূর্বক হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে এবং সুষ্ঠু তদন্তের নিমিত্বে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০) স্বামী মৃত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ, পিতা মোজাম্মেল হক কিশোর, সাং দক্ষিণ মাইঠা ২নং ওয়ার্ড বরগুনা পৌরসভা, থানা ও জেলা বরগুনাকে অদ্য ১৬-০৭-১৯ রাত ৯টায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা

মিন্নি রিমান্ডে : আইনি সহায়তা নিতে বাধা

সুবিচার নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে

প্রতিনিধি, বরগুনা

image

ঘটনার ২০ দিনের মাথায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে আসামি করে গ্রেফতার করার পর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেলে তাকে রিমান্ডের জন্য হাজির করা হলে তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তবে মিন্নির বাবা অভিযোগ করেছেন মিন্নির রিমান্ড আবেদনের সময় তাদের আইনজীবীকে কথা বলতে বাধা দেয়া হয়েছে।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যার ২০ দিনের মাথায় মামলার প্রধান ও দেখা সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ গ্রেফতার দেখানোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরগুনার বিভিন্ন জন। তারা রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষীকে আসামি করে গ্রেফতার করা চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে এবং মূল আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। মন্তব্য করেছেন বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট অনিসুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজনা বেগম, জাগো নারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তবে পুলিশের ভূমিকার প্রসংশা করেছেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর, তিনি বলেন, আসামি শনাক্তকরণের কথা বলে মিন্নিকে গতকাল সকাল ৯টা ৪৫-এর দিকে পুলিশ নিয়ে যায়। সারা দিন রাত তাদের বসিয়ে রেখে মিন্নি সম্পর্কে কোন সংবাদই করেনি। রাতে পুলিশ লাইনের সামনে টেলিভিশনের মাধ্যমে মিন্নিকে গ্রেফতারের সংবাদ পান তারা। কিশোর জানান, মিন্নিরই এই মামলায় বাদী হবার কথা ছিল কিন্তু তাকে বাদী না বানিয়ে ১নং সাক্ষী বানানো হয়েছে। ২০ দিনের মাথায় তাকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে তার উকিলকে কৌশলে কথা বলতে না দিয়ে একটি ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। মিন্নির জন্যই এই মামলা এতদূর পর্যন্ত এসেছে। মিন্নির আবেদনই সারা দেশ ও বিশ্ববাসী শুনেছে। একটি মানবিক আবেদন তৈরি হয়েছে। সেই মিন্নিকে আসামি করা একটি ষড়যন্ত্র। সে ছোট মেয়ে এত ষড়যন্ত্র সে মোকাবিলা করতে পারবে না।

তবে মামলায় মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয় পুলিশ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিফাত শরীফের বাবা বলেন, এখন ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ নিশ্চিত হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়িকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, মিন্নি কোপায়নি কিন্তু ষড়যন্ত্র করেছে। তবে কুখ্যাত অন্য আসামিদের বিষয় দুলাল শরীফ তেমন কিছু বলেননি।

এ বিষয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, রিফাত হত্যার যথাযথ বিচার হবে কিনা সন্দেহ সৃষ্টি হলো। একটি ক্রিমিনাল মামলার ১নং সাক্ষী আসামি হয়ে গেলে প্রসিকিউশন কিভাবে আগাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি রিমান্ডের বিষয়ে বলেন, শুনেছি সে সময় খুনিদের পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল। মনে হচ্ছে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এ পরিণতি ভালো নয়। কুখ্যাত আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে।

উন্নয়ন সংগঠন জাগোনারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি বলেন, মিন্নি যদি নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেও তাহলে কি হত্যাকা- দিয়ে তা ঢেকে ফেলা যায়? কি কারণে মিন্নি নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল, তার ওপর কি ধরনের চাপ ছিল, এক্ষেত্রে একজন নারীর সীমাব্ধতা তদন্তকারী কর্মকর্তার বিচারে নেয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, নয়ন বন্ড-রিফাত ফরাজীর ভয়ে অনেক মেয়েই বরগুনা ছেড়ে চলে গেছে বা বাবা-মার বাল্যবিয়ে দিতে হয়েছে একথা সবাই জানে। নয়ন বন্ড রিফাত ফরাজীর কোন দৃষ্টি এড়ানোর উপায় কি কোন মেয়ের তখন ছিল? এ বিষয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম বলেন, তিনি আশা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ মামালর সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। যারাই জড়িত থাকবেন তাদের যেন সুষ্ঠু বিচার হয়।

মিন্নির রিমান্ড ৫ দিন

রিফাত শরীফ হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বুধবার বিকেলে বরগুনার সি. জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট গাজী মো. সিরাজুল ইসলামের কোর্টে মিন্নিকে ৭ দিনের জন্য রিমান্ডের প্রার্থনা করেন। আদালত মিনিকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির কোর্টকে জানায়, এই মামলার বর্তমান আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি মূলত: নয়ন বন্ডের স্ত্রী থাকা অবস্থায় রিফাতের সঙ্গে বিয়ে বসেছে। মিন্নি একই সঙ্গে দু’জনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখত। মিন্নি রিফাত শরীফ হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, রিমান্ড আবেদনের সময় মিন্নির পক্ষের আইনজীবীদের কৌশলে কথা বলতে দেয়নি। কে তাদের আইনজীবী ছিলেন জানতে চাইলে তিনি একজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিনের নাম বলেন। তবে এই মামলায় আরও দুজন আইনজীবী নিযুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।

মিন্নির গ্রেফতার ও সংবাদ সম্মেলন

রিফাত হত্যার পর পরই মিন্নির নিরাপত্তার জন্য মিন্নির বাবার বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। প্রথমে ৪ পরে ১০ জন। পুলিশ পাহাড়া বাড়ানো হয় ১৩ জুলাই রিফাত শরীফের বাবা কর্তৃক মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও একটি বিতর্কিত মানববন্ধনের পর জনমনে ধারণা ছিল মিন্নিকে পুলিশ আগে থেকেই নজরবন্দি করে রেখেছিল। গ্রেফতার দেখানোটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তবে মিন্নির বিরুদ্ধে ফেইজবুকে বিভিন্ন মন্তব্য, পালটা ভিডিও ভাইরাল, রিফাত শরীফের বাবার সংবাদ সম্মেলন এবং মিন্নির পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের পর মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় পুলিশ মিন্নির বাবার বাড়িতে গিয়ে অন্যান্য আসামিদের শনাক্ত করার জন্য সাহায্যের কথা বলে মিন্নিকে নিয়ে আসে। এ সময়ই মিন্নিকে গ্রেফতারের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। দুপুর ১টায় এ বিষয় পুলিশ প্রেস ব্রিফিংও করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে মিন্নিকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকা-ের ধারাবাহিকতা, প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে মিন্নিকে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়ে মিন্নিকে গ্রেফতাররের ঘোষণা দিচ্ছে।

পুলিশ সুপারের পেস ব্রিফিং

প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ, আস সালামু আলাইকুম। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, গত ২৬-০৬-২০১৯ তারিখ সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ৭ জন (৬ জন জীবিত) ও তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ ৭ জন আসামিসহ মোট ১৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। এজাহারনামীয় গ্রেফতারকৃত ৪ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ গ্রেফতারকৃত মোট ১০ জন আসামিকে ফৌ: কা: বি: আইনের ১৬৪ জবানবন্দি গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এজাহারনামীয় ২ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ৩ জন আসামিকে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার ১ নং সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০), স্বামী মৃত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ, পিতা মোজাম্মেল হক কিশোর, সাং দক্ষিণ মাইঠা ২নং ওয়ার্ড বরগুনা পৌরসভা থানা ও জেলা বরগুনাকে অদ্য ১৬-০৭-১৯ তারিখ সকাল ০৯-৪৫ ঘটিকায় ডেকে এনে মামলা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও সুদীর্ঘ সময় যাবত প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণপূর্বক হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে এবং সুষ্ঠু তদন্তের নিমিত্বে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০) স্বামী মৃত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ, পিতা মোজাম্মেল হক কিশোর, সাং দক্ষিণ মাইঠা ২নং ওয়ার্ড বরগুনা পৌরসভা, থানা ও জেলা বরগুনাকে অদ্য ১৬-০৭-১৯ রাত ৯টায় গ্রেফতার করা হয়েছে।