ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। বরং বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রহী বলে জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন এসপার।

ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর ওই শুনানিতে আরও বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ না জড়ানোর বিষয়ে আমার সমর্থন রয়েছে। তেহরানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সমাধানে যেতে হবে বলে আমার মত। ইরানের বিষয়ে কূটনীতিকে ‘সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ উপায়’ মনে করেন কিনা- সিনেটরদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কূটনীতিই সর্বোত্তম পন্থা। তিনি বলেন, পারস্য উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এগুলোর চলাচলের ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এ লক্ষ্যে মার্কিন সরকার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। এ বিষয়ে শীঘ্রই সিনেটকে জানাবে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ২০ জুন একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করলে সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে তেহরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। এ ঘটনায় দেশ দুটির চলমান উত্তেজনা আরও চরম আকার ধারনকরে। এ ঘটনার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলপন্থি মার্কিন খ্রিস্টানদের এক অনুষ্ঠানে তেহরানের কঠোর সমালোচনা করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এ সময় ইরানকে কখনও পরমাণু অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ার করেন তিনি। ক্রিস্টিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েলের (সিইউএফআই) সম্মেলনে দেয়া ওই ভাষণে মাইক পেন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র কখনও তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধের জেরে বিশ্বেও ছয় শক্তিধর দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ইরানের আংশিক সরে আসায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ঘটনায় অবিলম্বে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পরাশক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলে তৃতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। জিব্রাল্টার প্রণালীতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইরানি তেল ট্যাংকার আটকের পর তেহরান ও লন্ডনের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই এমন ঘোষণা এলো। তবে ব্রিটিশ সরকারের দাবি, ইরান পরিস্থিতির সঙ্গে অঞ্চলটিতে তৃতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর কোন সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে পারস্য উপসাগরে ‘এইচএমএস কেন্ট’ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হবে। কৌশলগত ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার কাজে অংশগ্রহণ ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে বর্তমানে ‘এইচএমএস মন্ট্রোস’ নামে তাদের যে যুদ্ধজাহাজটি রয়েছে মেরামতের জন্য সেটি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হচ্ছে। এর পরিবর্তে ‘এইচএমএস ডানকান’ নামে একটি ডেস্ট্রয়ার মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ডানকান পারস্য উপসাগরে প্রবেশের কথা রয়েছে। এদিকে জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক ইরানের তেলবাহী ট্যাংকার নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তেহরান। লন্ডনে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হামিদ বায়েদিনেজাদ বলেছেন, আটক তেলবাহী সুপার ট্যাংকার গ্রেস-ওয়ানকে মুক্তি না দিলে যুক্তরাজ্যকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪০

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

সংবাদ ডেস্ক

image

মার্ক এসপার

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। বরং বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রহী বলে জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন এসপার।

ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর ওই শুনানিতে আরও বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ না জড়ানোর বিষয়ে আমার সমর্থন রয়েছে। তেহরানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সমাধানে যেতে হবে বলে আমার মত। ইরানের বিষয়ে কূটনীতিকে ‘সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ উপায়’ মনে করেন কিনা- সিনেটরদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কূটনীতিই সর্বোত্তম পন্থা। তিনি বলেন, পারস্য উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এগুলোর চলাচলের ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এ লক্ষ্যে মার্কিন সরকার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। এ বিষয়ে শীঘ্রই সিনেটকে জানাবে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ২০ জুন একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করলে সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে তেহরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। এ ঘটনায় দেশ দুটির চলমান উত্তেজনা আরও চরম আকার ধারনকরে। এ ঘটনার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলপন্থি মার্কিন খ্রিস্টানদের এক অনুষ্ঠানে তেহরানের কঠোর সমালোচনা করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এ সময় ইরানকে কখনও পরমাণু অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ার করেন তিনি। ক্রিস্টিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েলের (সিইউএফআই) সম্মেলনে দেয়া ওই ভাষণে মাইক পেন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র কখনও তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধের জেরে বিশ্বেও ছয় শক্তিধর দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ইরানের আংশিক সরে আসায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ঘটনায় অবিলম্বে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পরাশক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলে তৃতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। জিব্রাল্টার প্রণালীতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইরানি তেল ট্যাংকার আটকের পর তেহরান ও লন্ডনের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই এমন ঘোষণা এলো। তবে ব্রিটিশ সরকারের দাবি, ইরান পরিস্থিতির সঙ্গে অঞ্চলটিতে তৃতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর কোন সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে পারস্য উপসাগরে ‘এইচএমএস কেন্ট’ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হবে। কৌশলগত ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার কাজে অংশগ্রহণ ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে বর্তমানে ‘এইচএমএস মন্ট্রোস’ নামে তাদের যে যুদ্ধজাহাজটি রয়েছে মেরামতের জন্য সেটি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হচ্ছে। এর পরিবর্তে ‘এইচএমএস ডানকান’ নামে একটি ডেস্ট্রয়ার মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ডানকান পারস্য উপসাগরে প্রবেশের কথা রয়েছে। এদিকে জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক ইরানের তেলবাহী ট্যাংকার নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তেহরান। লন্ডনে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হামিদ বায়েদিনেজাদ বলেছেন, আটক তেলবাহী সুপার ট্যাংকার গ্রেস-ওয়ানকে মুক্তি না দিলে যুক্তরাজ্যকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।