ইউরোপের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন জার্মানির উরসুলা

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার রাতে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের পার্লামেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটাভুটিতে জয়ী হয়ে প্রথম নারী হিসেবে তিনি ইসির শীর্ষ পদে বসছেন। নির্বাচনে জিততে ন্যূনতম ভোটের চেয়ে মাত্র নয়টি বেশি পেয়েছেন এ জার্মান রাজনীতিবিদ; ইসির ৩৮৩ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেয়েছেন। তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩২৭ জন, ভোট দেননি ২২ জন। পার্লামেন্টে মোট ৭৫১ সদস্য থাকলেও চারজন অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকার পদ ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার পর নানা দেনদরবারের মধ্য দিয়ে গত ৩ জুলাই ইইউয়ের শীর্ষ পদে মনোনয়ন পান ৬০ বছর বয়সী জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন।

ইসির প্রেসিডেন্ট হওয়ায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত ব্রাসেলসে ফিরছেন জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) নেতা ফন ডেয়ার লাইয়েন। তার বাবা এর্নস্ট আলব্রেখট ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগের সংগঠন ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির (ইইসি) উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। ১৯৫৮ সালে বাবার কর্মস্থল ব্রাসেলসেই তার জন্ম হয়। জীবনের প্রথম ১৩ বছর ব্রাসেলসে থাকায় মাতৃভাষা জার্মানের সঙ্গে ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। তার সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতার কারণে তাকে ইউরোপের শীর্ষ পদে এগিয়ে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পেশায় চিকিৎসক ফন ডেয়ার লাইয়েনকে ২০০৫ সালে পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। শিশু ও বাবা-মার সহায়তায় যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচিত এই নারীর সংসদীয় তদন্ত চলছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত না হয়েও মেরকেলের প্রভাবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন পান ফন ডেয়ার লাইয়েন। তবে এ মনোনয়নের বিরোধিতা করে আসছে জার্মানির মহাজোট সরকারের শরিক এসপিডি। দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘সবুজ চুক্তিতে’ সম্মত করার অঙ্গীকার করেছেন উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। নির্বাচনের প্রাক্কালে পার্লামেন্টে বক্তৃতায় ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের কার্বন নিঃসরণ কূন্যতে নামিয়ে আনার উদ্যোগের কথা বলেন তিনি। ব্রেক্সিট নিয়ে ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, “ব্রিটেনের বেরিয়ে যেতে আরও সময়ের প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত। কারণ ভালো কিছুর জন্য সময় বাড়ানো দরকার। তবে যা কিছু হোক, যুক্তরাজ্য আমাদের মিত্র, সহযোগী ও বন্ধুই থাকবে।” নারীদের এগিয়ে আনা, সামাজিক সুরক্ষা এবং দারিদ্র্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়ার অঙ্গীকার করেন ফন ডেয়ার লাইয়েন।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪০

ইউরোপের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন জার্মানির উরসুলা

সংবাদ ডেস্ক

image

উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার রাতে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের পার্লামেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটাভুটিতে জয়ী হয়ে প্রথম নারী হিসেবে তিনি ইসির শীর্ষ পদে বসছেন। নির্বাচনে জিততে ন্যূনতম ভোটের চেয়ে মাত্র নয়টি বেশি পেয়েছেন এ জার্মান রাজনীতিবিদ; ইসির ৩৮৩ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেয়েছেন। তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩২৭ জন, ভোট দেননি ২২ জন। পার্লামেন্টে মোট ৭৫১ সদস্য থাকলেও চারজন অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকার পদ ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার পর নানা দেনদরবারের মধ্য দিয়ে গত ৩ জুলাই ইইউয়ের শীর্ষ পদে মনোনয়ন পান ৬০ বছর বয়সী জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন।

ইসির প্রেসিডেন্ট হওয়ায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত ব্রাসেলসে ফিরছেন জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) নেতা ফন ডেয়ার লাইয়েন। তার বাবা এর্নস্ট আলব্রেখট ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগের সংগঠন ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির (ইইসি) উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। ১৯৫৮ সালে বাবার কর্মস্থল ব্রাসেলসেই তার জন্ম হয়। জীবনের প্রথম ১৩ বছর ব্রাসেলসে থাকায় মাতৃভাষা জার্মানের সঙ্গে ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। তার সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতার কারণে তাকে ইউরোপের শীর্ষ পদে এগিয়ে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পেশায় চিকিৎসক ফন ডেয়ার লাইয়েনকে ২০০৫ সালে পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। শিশু ও বাবা-মার সহায়তায় যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচিত এই নারীর সংসদীয় তদন্ত চলছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত না হয়েও মেরকেলের প্রভাবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন পান ফন ডেয়ার লাইয়েন। তবে এ মনোনয়নের বিরোধিতা করে আসছে জার্মানির মহাজোট সরকারের শরিক এসপিডি। দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘সবুজ চুক্তিতে’ সম্মত করার অঙ্গীকার করেছেন উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। নির্বাচনের প্রাক্কালে পার্লামেন্টে বক্তৃতায় ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের কার্বন নিঃসরণ কূন্যতে নামিয়ে আনার উদ্যোগের কথা বলেন তিনি। ব্রেক্সিট নিয়ে ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, “ব্রিটেনের বেরিয়ে যেতে আরও সময়ের প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত। কারণ ভালো কিছুর জন্য সময় বাড়ানো দরকার। তবে যা কিছু হোক, যুক্তরাজ্য আমাদের মিত্র, সহযোগী ও বন্ধুই থাকবে।” নারীদের এগিয়ে আনা, সামাজিক সুরক্ষা এবং দারিদ্র্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়ার অঙ্গীকার করেন ফন ডেয়ার লাইয়েন।