বিভিন্ন নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি এবং কোন কোন নদীতে পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কুড়িগ্রামে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী এবং গত ৯ দিনে এ জেলায় ১৪ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এছাড়া জামালপুরে ৪ জনসহ বিভিন্ন জেলায় আরও ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সরবরাহ অপ্রতুল। তারা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। জামালপুরে মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে বলে খোদ ইউপি চেয়ারম্যান জানান। এ জেলায় যমুনা নদীর পানি এতটাই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছেÑ যা একশ’ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেছে। গাইবান্ধায় ২১ বছরের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এতটা বিপদসীমায় পৌঁছায়নি বলে জেলাবাসী জানায়। এ জেলায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। বন্যার কারণে বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙনে নদীতে বিলীন হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকটও তীব্র। এখনও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছে কোন কোন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। কোথাও কোথাও জরুরি পদক্ষেপে অবস্থা সামাল দেয়া হচ্ছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারিভাবে আরও দ্রুত পদক্ষেপ চায় সংশ্লিষ্ট জেলার বন্যার্ত মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্রই উঠে এসেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি কমতে শুরু করলেও টানা ৯ দিন পানিবন্দী হয়ে মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। সীমিত আকারে ত্রাণ দেয়া শুরু হলেও বেশ কয়েক জায়গার মানুষ তা পায়নি। ফলে বানভাসি মানুষ রয়েছে খাদ্য সংকটে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯ সে.মি কমে গিয়ে এখন ১২৩ সে.মি এবং ধরলা নদীর ১৪ সে.মি কমে গিয়ে ১০২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার রাতে চিলমারী উপজেলার কাচকল এলাকায় বাঁধ ভেঙে গোটা উপজেলা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায়। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে উপজেলা প্রশাসন, থানা, হাসপাতালসহ গোটা এলাকা। এখন পর্যন্ত বন্যায় ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৮টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উলিপুরের ধামশ্রেণি ইউনিয়নের মধ্য নাওড়া গ্রামের বাবলু মিয়ার কন্যা গৃহবধূ ববিতা খাতুন (১৬) খালে পড়ে মারা যান। এ নিয়ে গত ৯ দিনে জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে উলিপুরেই মারা গেছেন ৮ জন।
জামালপুর : যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্তরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে গবাদিপশুর খাবার নিয়ে। পানিবন্দী মানুষের অভিযোগ, অনেকেই এখনও ত্রাণ পাননি। তবে যে ত্রাণ আসছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার যমুনার পানি বিপদসীমার ১৬৬ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। গত বুধবার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরনাদাগাড়িতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে যাওয়ায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গাইবান্ধা : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধা শহর। গাইবান্ধা পৌরসভার প্রায় সব ওয়ার্ড বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী পৌরবাসী। এ জন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি ও সদর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, পৌরসভার আংশিক ও কাজীপুর উপজেলার প্রায় ৬৭টি গ্রামের প্রায় ১৩ সহ¯্রাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বগুড়া : বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। যুমনার পানি বেড়েই চলছে। বৃহস্পতিবার বিকালে যমুনার পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সঙ্গে বাঙ্গালী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমানবতি হচ্ছে এবং প্রতিদিন নতুন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যার্তদের। যমুনাতীরবর্তী বন্যাকবলিত বগুড়ার ৩ উপজেলা- সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়া অব্যাহত রয়েছে।
টাঙ্গাইল : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে টাঙ্গাইলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ভূঞাপুর উপজেলার তাড়াই এলাকার পানির প্রবল স্্েরাতে মাটির কাঁচা সড়ক ভেঙে প্রায় ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। পানি বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে সড়ক ও রেললাইন ডুবে গিয়ে সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলা সদর ও অন্যান্য স্থানের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের বন্যার পানিতে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে। চিলমারী উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি বানভাসির।
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : নতুন করে আরেকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বানভাসি মানুষ আরও চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিবেরডাঙ্গী বালিয়ামারী ক্ষুদ্র পানিসম্পদ বিভাগের বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোয় বানভাসি মানুষ তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরের দিকে দ্রুতগতিতে তেড়ে আসছে বন্যার পানি। গোয়ালন্দ পয়েন্টে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৩৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন এই গতিতে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আাকার ধরাণ করবে।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলখ্যাত চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলজুড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখন চড়ম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চরম হুমকির মুখে চ-ীপুর থেকে লালচামার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ভান্ডালজুড়ি খালের ভাঙনে ঘরভিটে হারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম।
শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪০
সংবাদ ডেস্ক |
বিভিন্ন নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি এবং কোন কোন নদীতে পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কুড়িগ্রামে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী এবং গত ৯ দিনে এ জেলায় ১৪ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এছাড়া জামালপুরে ৪ জনসহ বিভিন্ন জেলায় আরও ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সরবরাহ অপ্রতুল। তারা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। জামালপুরে মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে বলে খোদ ইউপি চেয়ারম্যান জানান। এ জেলায় যমুনা নদীর পানি এতটাই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছেÑ যা একশ’ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেছে। গাইবান্ধায় ২১ বছরের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এতটা বিপদসীমায় পৌঁছায়নি বলে জেলাবাসী জানায়। এ জেলায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। বন্যার কারণে বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙনে নদীতে বিলীন হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকটও তীব্র। এখনও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছে কোন কোন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। কোথাও কোথাও জরুরি পদক্ষেপে অবস্থা সামাল দেয়া হচ্ছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারিভাবে আরও দ্রুত পদক্ষেপ চায় সংশ্লিষ্ট জেলার বন্যার্ত মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্রই উঠে এসেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি কমতে শুরু করলেও টানা ৯ দিন পানিবন্দী হয়ে মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। সীমিত আকারে ত্রাণ দেয়া শুরু হলেও বেশ কয়েক জায়গার মানুষ তা পায়নি। ফলে বানভাসি মানুষ রয়েছে খাদ্য সংকটে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯ সে.মি কমে গিয়ে এখন ১২৩ সে.মি এবং ধরলা নদীর ১৪ সে.মি কমে গিয়ে ১০২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার রাতে চিলমারী উপজেলার কাচকল এলাকায় বাঁধ ভেঙে গোটা উপজেলা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায়। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে উপজেলা প্রশাসন, থানা, হাসপাতালসহ গোটা এলাকা। এখন পর্যন্ত বন্যায় ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৮টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উলিপুরের ধামশ্রেণি ইউনিয়নের মধ্য নাওড়া গ্রামের বাবলু মিয়ার কন্যা গৃহবধূ ববিতা খাতুন (১৬) খালে পড়ে মারা যান। এ নিয়ে গত ৯ দিনে জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে উলিপুরেই মারা গেছেন ৮ জন।
জামালপুর : যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্তরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে গবাদিপশুর খাবার নিয়ে। পানিবন্দী মানুষের অভিযোগ, অনেকেই এখনও ত্রাণ পাননি। তবে যে ত্রাণ আসছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার যমুনার পানি বিপদসীমার ১৬৬ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। গত বুধবার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরনাদাগাড়িতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে যাওয়ায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গাইবান্ধা : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধা শহর। গাইবান্ধা পৌরসভার প্রায় সব ওয়ার্ড বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী পৌরবাসী। এ জন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি ও সদর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, পৌরসভার আংশিক ও কাজীপুর উপজেলার প্রায় ৬৭টি গ্রামের প্রায় ১৩ সহ¯্রাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বগুড়া : বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। যুমনার পানি বেড়েই চলছে। বৃহস্পতিবার বিকালে যমুনার পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সঙ্গে বাঙ্গালী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমানবতি হচ্ছে এবং প্রতিদিন নতুন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যার্তদের। যমুনাতীরবর্তী বন্যাকবলিত বগুড়ার ৩ উপজেলা- সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়া অব্যাহত রয়েছে।
টাঙ্গাইল : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে টাঙ্গাইলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ভূঞাপুর উপজেলার তাড়াই এলাকার পানির প্রবল স্্েরাতে মাটির কাঁচা সড়ক ভেঙে প্রায় ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। পানি বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে সড়ক ও রেললাইন ডুবে গিয়ে সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলা সদর ও অন্যান্য স্থানের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের বন্যার পানিতে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে। চিলমারী উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি বানভাসির।
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : নতুন করে আরেকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বানভাসি মানুষ আরও চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিবেরডাঙ্গী বালিয়ামারী ক্ষুদ্র পানিসম্পদ বিভাগের বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোয় বানভাসি মানুষ তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরের দিকে দ্রুতগতিতে তেড়ে আসছে বন্যার পানি। গোয়ালন্দ পয়েন্টে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৩৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন এই গতিতে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আাকার ধরাণ করবে।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলখ্যাত চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলজুড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখন চড়ম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চরম হুমকির মুখে চ-ীপুর থেকে লালচামার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ভান্ডালজুড়ি খালের ভাঙনে ঘরভিটে হারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম।