বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

বিশুদ্ধ পানি, ত্রাণ ও ওষুধ সংকট

প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যার্তদের জন্য চলছে সুপেয় পানিসহ শুকনা খাদ্য ও ওষুধ সংকট। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। কোথাও কোথাও ত্রাণ নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। কোন কোন এলাকায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অগ্রগতি নেই। কোন কোণ নদীর পানি কমছে আবার কোন কোন নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ভাঙছে নদী। এতে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে বন্যার্তদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসেবাদান। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্রই উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। একই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনও ঘরে ফিরতে পারছেন না দুর্গতরা। গত দশ দিনে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বানভাসিদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা পৌঁছাতে পারেননি সবার কাছেই। এদিকে শুক্রবার সকালে পানিতে পড়ে দেড় বছরের শিশু সীমা খাতুন মারা গেছে। সে উলিপুর পৌরসভার খাওনারদরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ার সাদেক মিয়ার কন্যা। এ নিয়ে গত দশ দিনে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫-এ। বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে ডিসি রাস্তার পশ্চিমে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও ডিসি রাস্তার পূর্বপার্শে¦ বন্যার অবনতি হয়েছে। রাজিবপুর উপজেলার পূর্বপাশে পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। গত ৩ দিনে উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে ৬০ টন জিআরের চাল বিতরণ হলেও পানিবন্দী অনেক পরিবারের মাঝে ত্রাণ পৌঁছেনি বলে বন্যার্তদের অভিযোগ। অস্যদিকে ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা। তাদের অভিযোগ- যারা ত্রাণ দিতে যান, তারা প্রতি নৌকায় ২০ থেকে ২৫ বস্তা করে চাল রেখে দেয়। পরে বস্তাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ : প্রবল বর্ষণ ও উজানথেকে নেমে আসা পানির তোড়ে সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে থাকা জেলার হুরাসাগড়, বিল সূর্য, করতোয়া ও ফুলজোর নদীতেও পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি। দেখা দিচ্ছে গো-খাদ্য সংকট। এ পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১৮১টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ২১ হাজার ৫৫২ পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার্তদের বিতরণের জন্য ৪৯৪ টন চাল ও ৮ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : টানা ১০ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোয় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানিসহ খাদ্য ও ওষুধ সংকট। উপজেলায় ২৫টি নির্ধারিত ছাড়া বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভ্রামম্যাণ আশ্রয় কেন্দ্র। তিস্তার চরাঞ্চলের বসতবাড়ির ঘরের চালে উঠে গেছে পানি। কোথাও ঠাঁই নেই চরবাসীর। ঘরবাড়ি ছেড়ে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে চরবাসী ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্বজনদের বাড়িতে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডীপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড এখন পানির নিচে। পানিবন্দী পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। ডুবে গেছে তরিতরকারিসহ সব ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৬টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে এ পর্যন্ত ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার কার্টন শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো একক জমির মৌসুমি ফসল। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগায়োগ ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া পরিবারগুলো নৌ-ডাকাতির শঙ্কায় রয়েছে। অনেক চরবাসী রাত জেগে ঘরের চালে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি ২ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বানের পানিতে থাকা বগুড়ার যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দী, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার বন্যার্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট রয়েছে। অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অনেক এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

রাবি : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকার বিভিন্নভাবে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও ভোগান্তি যেন বেড়েই চলেছে। এমন সংকটে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে গানের আসর আয়োজন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। ‘সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন’ প্রতিপাদ্যে গতকাল বিকেল ৫টায় নগরীর পদ্মা গার্ডেনে এ গানের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আয়োজনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের তারকা নাজমুল ইসলাম পলাশ ও তার দল। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য গান শুনিয়ে শ্রোতার দেয়া অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে গত চার দিনে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে তিনটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গায় পদ্মার পানি ঢুকে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ২০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুক্রবার সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলায় ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থ দেয়া হচ্ছে পানিবন্দী মানুষের মাঝে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দেড়শ’ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

শিবচর (মাদারীপুর) : অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরে ৩ ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি বাড়ায় চরের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একদিকে নদীভঙন, অন্যদিকে পানিবন্দী দশায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩০টি ঘরবাড়িসহ কয়েকদিনে শতাধিক ঘরবাড়ি, ১টি মাদ্রাসা, কালভার্ট বিলীন হয়েছে নদীতে। ভাঙনেরর মুখে পড়েছে ৩টি স্কুল ভবনসহ ৫টি স্কুল, ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র-কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন হাটবাজারসহ ৩ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও হাজারো বসতবাড়ি। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা কোন সংস্থা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তর। গত ৬ দিন ধরেই পদ্মা নদীর শিবচর অংশে পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চল বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে নদীভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। উজানে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে এসে যমুনা নদীর বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি সড়ক ও রেললাইন ডুবে গিয়ে সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলা সদর এবং অন্যন্য স্থানের গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর, রেলস্টেশন ও সর্বত্র বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে শুকনা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯ , ৫ শ্রাবন ১৪২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪০

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

বিশুদ্ধ পানি, ত্রাণ ও ওষুধ সংকট

প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

সংবাদ ডেস্ক

image

কুড়িগ্রাম : উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে অপর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণকালে ঘিরে ধরে বানভাসিরা -সংবাদ

বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যার্তদের জন্য চলছে সুপেয় পানিসহ শুকনা খাদ্য ও ওষুধ সংকট। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। কোথাও কোথাও ত্রাণ নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। কোন কোন এলাকায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অগ্রগতি নেই। কোন কোণ নদীর পানি কমছে আবার কোন কোন নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ভাঙছে নদী। এতে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে বন্যার্তদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসেবাদান। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্রই উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। একই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনও ঘরে ফিরতে পারছেন না দুর্গতরা। গত দশ দিনে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বানভাসিদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা পৌঁছাতে পারেননি সবার কাছেই। এদিকে শুক্রবার সকালে পানিতে পড়ে দেড় বছরের শিশু সীমা খাতুন মারা গেছে। সে উলিপুর পৌরসভার খাওনারদরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ার সাদেক মিয়ার কন্যা। এ নিয়ে গত দশ দিনে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫-এ। বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে ডিসি রাস্তার পশ্চিমে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও ডিসি রাস্তার পূর্বপার্শে¦ বন্যার অবনতি হয়েছে। রাজিবপুর উপজেলার পূর্বপাশে পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। গত ৩ দিনে উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে ৬০ টন জিআরের চাল বিতরণ হলেও পানিবন্দী অনেক পরিবারের মাঝে ত্রাণ পৌঁছেনি বলে বন্যার্তদের অভিযোগ। অস্যদিকে ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা। তাদের অভিযোগ- যারা ত্রাণ দিতে যান, তারা প্রতি নৌকায় ২০ থেকে ২৫ বস্তা করে চাল রেখে দেয়। পরে বস্তাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ : প্রবল বর্ষণ ও উজানথেকে নেমে আসা পানির তোড়ে সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে থাকা জেলার হুরাসাগড়, বিল সূর্য, করতোয়া ও ফুলজোর নদীতেও পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি। দেখা দিচ্ছে গো-খাদ্য সংকট। এ পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১৮১টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ২১ হাজার ৫৫২ পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার্তদের বিতরণের জন্য ৪৯৪ টন চাল ও ৮ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : টানা ১০ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোয় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানিসহ খাদ্য ও ওষুধ সংকট। উপজেলায় ২৫টি নির্ধারিত ছাড়া বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভ্রামম্যাণ আশ্রয় কেন্দ্র। তিস্তার চরাঞ্চলের বসতবাড়ির ঘরের চালে উঠে গেছে পানি। কোথাও ঠাঁই নেই চরবাসীর। ঘরবাড়ি ছেড়ে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে চরবাসী ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্বজনদের বাড়িতে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডীপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড এখন পানির নিচে। পানিবন্দী পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। ডুবে গেছে তরিতরকারিসহ সব ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৬টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে এ পর্যন্ত ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার কার্টন শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো একক জমির মৌসুমি ফসল। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগায়োগ ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া পরিবারগুলো নৌ-ডাকাতির শঙ্কায় রয়েছে। অনেক চরবাসী রাত জেগে ঘরের চালে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি ২ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বানের পানিতে থাকা বগুড়ার যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দী, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার বন্যার্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট রয়েছে। অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অনেক এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

রাবি : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকার বিভিন্নভাবে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও ভোগান্তি যেন বেড়েই চলেছে। এমন সংকটে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে গানের আসর আয়োজন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। ‘সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন’ প্রতিপাদ্যে গতকাল বিকেল ৫টায় নগরীর পদ্মা গার্ডেনে এ গানের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আয়োজনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের তারকা নাজমুল ইসলাম পলাশ ও তার দল। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য গান শুনিয়ে শ্রোতার দেয়া অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে গত চার দিনে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে তিনটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গায় পদ্মার পানি ঢুকে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ২০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুক্রবার সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলায় ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থ দেয়া হচ্ছে পানিবন্দী মানুষের মাঝে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দেড়শ’ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

শিবচর (মাদারীপুর) : অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরে ৩ ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি বাড়ায় চরের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একদিকে নদীভঙন, অন্যদিকে পানিবন্দী দশায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩০টি ঘরবাড়িসহ কয়েকদিনে শতাধিক ঘরবাড়ি, ১টি মাদ্রাসা, কালভার্ট বিলীন হয়েছে নদীতে। ভাঙনেরর মুখে পড়েছে ৩টি স্কুল ভবনসহ ৫টি স্কুল, ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র-কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন হাটবাজারসহ ৩ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও হাজারো বসতবাড়ি। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা কোন সংস্থা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তর। গত ৬ দিন ধরেই পদ্মা নদীর শিবচর অংশে পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চল বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে নদীভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। উজানে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে এসে যমুনা নদীর বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি সড়ক ও রেললাইন ডুবে গিয়ে সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলা সদর এবং অন্যন্য স্থানের গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর, রেলস্টেশন ও সর্বত্র বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে শুকনা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।