শিশু সায়মা ধর্ষণ-হত্যা

ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার

পুরান ঢাকার ওয়ারীর বনগ্রামে ৭ বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত যুবকের ফাঁসির দাবি করেছে পরিবার ও এলাকাবাসী। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে গ্রেফতার হারুন উর রশিদের মৃত্যুদন্ড দাবি করা হয়। ওই শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের পাশাপাশি ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান বক্তারা। শিশু সায়মার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার শেষ করা, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক শিক্ষা চালুরও দাবি জানান তিনি। মানববন্ধনে ওয়ারীর বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় আরমানুল হক রনি, শহিদুল আল মামুন, আবু বকর চৌধুরীসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই ভবনের ৮ তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে পাওয়া যায় গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায়। নিহত সায়মা সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসরা জানান, বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া যায়। এছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট হতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ আদায়ে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি, আমার স্ত্রীসহ সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন সকালে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করা হয়। এরপর দিন ৬ জুলাই রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হারুনকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ জানান, ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ওইদিন সায়মা তার মাকে বলে যায়, ভবনের আট তলায় ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের ছোট বাচ্চার সঙ্গে সে খেলবে। ওই ফ্ল্যাটে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানান, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। এ কারণে সায়মা বাসায় ফিরে আসছিল। ভবনের লিফটে নামার সময় সায়মার সঙ্গে হারুন সায়মাকে ছাদ দেখানোর কথা বলে লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর সে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে সায়মা চিৎকার দেয়। এ সময় সে সায়মার মুখ চেপে ধরে এবং ধর্ষণ করে। পরে সায়মাকে নিস্তেজ দেখে তার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টেনে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে যায়। এরপর সায়মার লাশ সিঙ্কের নিচে রেখে হারুন পালিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবর ডাঙ্গায় চলে যায়।

শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯ , ৫ শ্রাবন ১৪২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪০

শিশু সায়মা ধর্ষণ-হত্যা

ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

সায়মার ধর্ষক ও হত্যাকারীর ফাঁসি দাবিতে গতকাল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন -সংবাদ

পুরান ঢাকার ওয়ারীর বনগ্রামে ৭ বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত যুবকের ফাঁসির দাবি করেছে পরিবার ও এলাকাবাসী। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে গ্রেফতার হারুন উর রশিদের মৃত্যুদন্ড দাবি করা হয়। ওই শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের পাশাপাশি ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান বক্তারা। শিশু সায়মার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার শেষ করা, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক শিক্ষা চালুরও দাবি জানান তিনি। মানববন্ধনে ওয়ারীর বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় আরমানুল হক রনি, শহিদুল আল মামুন, আবু বকর চৌধুরীসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই ভবনের ৮ তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে পাওয়া যায় গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায়। নিহত সায়মা সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসরা জানান, বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া যায়। এছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট হতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ আদায়ে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি, আমার স্ত্রীসহ সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন সকালে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করা হয়। এরপর দিন ৬ জুলাই রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হারুনকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ জানান, ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ওইদিন সায়মা তার মাকে বলে যায়, ভবনের আট তলায় ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের ছোট বাচ্চার সঙ্গে সে খেলবে। ওই ফ্ল্যাটে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানান, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। এ কারণে সায়মা বাসায় ফিরে আসছিল। ভবনের লিফটে নামার সময় সায়মার সঙ্গে হারুন সায়মাকে ছাদ দেখানোর কথা বলে লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর সে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে সায়মা চিৎকার দেয়। এ সময় সে সায়মার মুখ চেপে ধরে এবং ধর্ষণ করে। পরে সায়মাকে নিস্তেজ দেখে তার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টেনে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে যায়। এরপর সায়মার লাশ সিঙ্কের নিচে রেখে হারুন পালিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবর ডাঙ্গায় চলে যায়।