ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

দাবি ট্রাম্পের

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, হরমুজ প্রণালিতে ইরানের একটি ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বক্সারের ১ হাজার গজের মধ্যে উড়ে এসে হুমকি দেয়ায় মার্কিন নৌবাহিনী সেটিকে ভূপাতিত করেছে। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ড হরমুজ প্রণালি থেকে ১২ জন নাবিকসহ একটি বিদেশি জাহাজ আটক করার পরই গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন দাবি করলেন। তবে সাম্প্রতিক এসব ঘটনা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এ জাহাজ চলাচল অঞ্চলে সামরিক সংঘাত বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের।

এ দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ড্রোনটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বক্সারের এক হাজার গজের মধ্যে চলে আসায় প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সেটিকে ভূপাতিত করে মার্কিন নৌবাহিনী।’ জল ও স্থলÑ উভয় স্থানেই চলতে পারে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের নাম ইউএসএস বক্সার। তিনি বলেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে চাই আমি। এটি ইউএসএস বক্সার সম্পর্কিত যা একটি উভচর যুদ্ধজাহাজ। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অনেক বেশি কাছেÑ প্রায় এক হাজার গজের মধ্যে চলে আসার কারণে ইরানের একটি ড্রোনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বক্সার।

ড্রোনটি বেশ কয়েকবার হুশিয়ারি এবং থামার নির্দেশ উপেক্ষা করে জাহাজ এবং ক্রুদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি করায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। ড্রোনটি সাথে সাথেই ধ্বংস করা হয়। আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজের বিরুদ্ধে ইরানের বহু উস্কানিমূলক ও শত্রুভাবাপন্ন আচরণের মধ্যে এটি একটি। নিজেদের লোকবল, স্থাপনা এবং স্বার্থ রক্ষার পুরো অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’

এর আগে ইরানের বিপ্লবী রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস (আরআইজিসি) হরমুজ প্রণালি থেকে ১২ জন নাবিকসহ একটি বিদেশি জাহাজ আটক করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দেশটির রেভ্যুলুশনারি গার্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জাহাজটি ১০ লাখ লিটার জ্বালানি চোরাচালান করছিল। পরে পানামার পতাকা সম্বলিত রিয়াহ ট্যাঙ্কারের চারপাশে ইরানের স্পিডবোটের টহল দেয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ইরান জানায়, লারাক দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন জানায়, ইরানের উচিত আটক করা বিদেশি জাহাজটিকে দ্রুত ছেড়ে দেয়া।

‘কোন ড্রোনই খোয়া যায়নি’

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হরমুজ প্রণালিতে একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করলেও তেহরান বলেছে, তাদের কোনো ড্রোনই খোয়া যায়নি। মার্কিন জাহাজ ভুল করে নিজেদেরই কোনো ড্রোন ধ্বংস করেছে কিনা, তা ওয়াশিংটনকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। শুক্রবার ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইরানি ড্রোন ধ্বংসের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিন এক টুইটার বার্তায় আরাকচি বলেছেন, ‘হরমুজ প্রণালি বা অন্য কোথাও আমরা কোনো ড্রোন হারাইনি। ইউএসএস বক্সার ভুল করে তাদেরই কোনো মনুষ্যবিহীন ড্রোন ধ্বংস করে ফেলেছে কিনা, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’ দেশটির সেনাবাহিনীও পরে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।

ইরানের সব ড্রোনই ঘাঁটিতে ফিরেছে এবং সবই অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানি একটি ড্রোন ইউএসএস বক্সারের ১ হাজার গজের মধ্যে উড়ে আসায় সেটিকে ভূপাতিত করা হয় বলে দাবি করেন। ওয়াশিংটনের ওই দাবির পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ‘এখন পর্যন্ত কোনো ড্রোন হারানোর খবর পাইনি’ বলে জানিয়েছেন।

এর আগে জুনে ইরান তাদের আকাশসীমায় ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা’ একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, তাদের ড্রোনটি ইরানি নয়, আন্তর্জাতিক আকাশসীমার মধ্যেই অবস্থান করছিল। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চার বছর আগে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই হরমুজকে ঘিরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। ইরানের তেল রফতানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন ইরানি কর্মকর্তাদের অনেকেই হরমুজ দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন।

গত জুনে ইরান ওই এলাকায় একটি মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করে। এর আগে তেহরান জানায়, জ্বালানি চোরাচালানের অভিযোগে বিদেশি একটি ট্যাঙ্কার এবং ১২ জন ক্রু আটক করেছে তারা। গত মে মাস থেকে ইরানের বিরুদ্ধে হরমুজ প্রণালিতে ট্যাংকারে হামলার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তেহরান।

শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯ , ৫ শ্রাবন ১৪২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪০

ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

দাবি ট্রাম্পের

সংবাদ ডেস্ক

image

আব্বাস আরাকচি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, হরমুজ প্রণালিতে ইরানের একটি ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বক্সারের ১ হাজার গজের মধ্যে উড়ে এসে হুমকি দেয়ায় মার্কিন নৌবাহিনী সেটিকে ভূপাতিত করেছে। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ড হরমুজ প্রণালি থেকে ১২ জন নাবিকসহ একটি বিদেশি জাহাজ আটক করার পরই গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন দাবি করলেন। তবে সাম্প্রতিক এসব ঘটনা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এ জাহাজ চলাচল অঞ্চলে সামরিক সংঘাত বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের।

এ দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ড্রোনটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বক্সারের এক হাজার গজের মধ্যে চলে আসায় প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সেটিকে ভূপাতিত করে মার্কিন নৌবাহিনী।’ জল ও স্থলÑ উভয় স্থানেই চলতে পারে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের নাম ইউএসএস বক্সার। তিনি বলেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে চাই আমি। এটি ইউএসএস বক্সার সম্পর্কিত যা একটি উভচর যুদ্ধজাহাজ। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অনেক বেশি কাছেÑ প্রায় এক হাজার গজের মধ্যে চলে আসার কারণে ইরানের একটি ড্রোনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বক্সার।

ড্রোনটি বেশ কয়েকবার হুশিয়ারি এবং থামার নির্দেশ উপেক্ষা করে জাহাজ এবং ক্রুদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি করায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। ড্রোনটি সাথে সাথেই ধ্বংস করা হয়। আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজের বিরুদ্ধে ইরানের বহু উস্কানিমূলক ও শত্রুভাবাপন্ন আচরণের মধ্যে এটি একটি। নিজেদের লোকবল, স্থাপনা এবং স্বার্থ রক্ষার পুরো অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’

এর আগে ইরানের বিপ্লবী রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস (আরআইজিসি) হরমুজ প্রণালি থেকে ১২ জন নাবিকসহ একটি বিদেশি জাহাজ আটক করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দেশটির রেভ্যুলুশনারি গার্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জাহাজটি ১০ লাখ লিটার জ্বালানি চোরাচালান করছিল। পরে পানামার পতাকা সম্বলিত রিয়াহ ট্যাঙ্কারের চারপাশে ইরানের স্পিডবোটের টহল দেয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ইরান জানায়, লারাক দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন জানায়, ইরানের উচিত আটক করা বিদেশি জাহাজটিকে দ্রুত ছেড়ে দেয়া।

‘কোন ড্রোনই খোয়া যায়নি’

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হরমুজ প্রণালিতে একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করলেও তেহরান বলেছে, তাদের কোনো ড্রোনই খোয়া যায়নি। মার্কিন জাহাজ ভুল করে নিজেদেরই কোনো ড্রোন ধ্বংস করেছে কিনা, তা ওয়াশিংটনকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। শুক্রবার ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইরানি ড্রোন ধ্বংসের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিন এক টুইটার বার্তায় আরাকচি বলেছেন, ‘হরমুজ প্রণালি বা অন্য কোথাও আমরা কোনো ড্রোন হারাইনি। ইউএসএস বক্সার ভুল করে তাদেরই কোনো মনুষ্যবিহীন ড্রোন ধ্বংস করে ফেলেছে কিনা, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’ দেশটির সেনাবাহিনীও পরে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।

ইরানের সব ড্রোনই ঘাঁটিতে ফিরেছে এবং সবই অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানি একটি ড্রোন ইউএসএস বক্সারের ১ হাজার গজের মধ্যে উড়ে আসায় সেটিকে ভূপাতিত করা হয় বলে দাবি করেন। ওয়াশিংটনের ওই দাবির পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ‘এখন পর্যন্ত কোনো ড্রোন হারানোর খবর পাইনি’ বলে জানিয়েছেন।

এর আগে জুনে ইরান তাদের আকাশসীমায় ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা’ একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, তাদের ড্রোনটি ইরানি নয়, আন্তর্জাতিক আকাশসীমার মধ্যেই অবস্থান করছিল। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চার বছর আগে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই হরমুজকে ঘিরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। ইরানের তেল রফতানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন ইরানি কর্মকর্তাদের অনেকেই হরমুজ দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন।

গত জুনে ইরান ওই এলাকায় একটি মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করে। এর আগে তেহরান জানায়, জ্বালানি চোরাচালানের অভিযোগে বিদেশি একটি ট্যাঙ্কার এবং ১২ জন ক্রু আটক করেছে তারা। গত মে মাস থেকে ইরানের বিরুদ্ধে হরমুজ প্রণালিতে ট্যাংকারে হামলার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তেহরান।