দুই সিটির প্রতিবেদনে হাইকোর্টের অসন্তোষ

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদনে শুধু জনগণকে সচেতন না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মশানিধনে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপ যথাযথভাবে উঠে না আসায় দুই সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ। এ সময় তিনি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এর ওপর শুনানি করেন। পরে তিনি আদালতকে জানান, মশানিধনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ দিচ্ছে এবং নাগরিকদের সচেতন করে যাচ্ছে। আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কীভাবে ওষুধ দিচ্ছেন? আমরা কি বাসায় থাকি না? মশার মেশিনের শব্দে আমাদের কান কি নষ্ট হয়ে গেছে? এসব তো আমাদের দেখার কথা নয়। যে ওষুধ দেয়, এতে কি কাজ হয়? ওষুধে কাজ হয় না, তা মেয়র নিজেই বললেন। জনগণকে সচেতন করে তাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তাদের (সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের) কী দায়িত্ব?’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সিটি করপোরেশন সচেতন করার কাজ করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার টায়ার কিংবা বাসার টবে যেন পানি জমে না থাকে, এসব বিষয়ে তারা সচেতন করে যাচ্ছেন। আদালত বলেন, ‘এসব বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আপনারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা জানান। দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদের কাজ করতে হবে। মশানিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে কিছু হয়েছে? কতজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, এর তথ্য দিন। তাহলে বুঝতে পারব আপনারা কাজ করছেন কি না।’ আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোন দেশের হাইকোর্ট মশা মারতে আদেশ দেন না। আমাদের তা দিতে হয়। যতই বলেন আর ছবি দেখান, তা বিশ্বাসযোগ্য হবে তখনÑ যখন হাসপাতালে মানুষ যাবে না, মশার বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাবেন। মশানিধন সিরিয়াসলি কেন হচ্ছে না? বরং আরও বাড়ছে?’

মশানিধনের প্রতিবেদনে শুধু জনসচেতনতার বিষয়টিকে প্রধান্য দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেন, ‘জনগণ সচেতন আছে। আগে আপনারা (সিটি করপোরেশন) সচেতন হোন। আর না পারলে আপনারা একটি আবেদন নিয়ে আসেন, জনগণের ওপর সচেতন হওয়ার জন্য রুল জারি করি। মশানিধনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট করুন। আজও (গতকাল) পত্রিকায় রিপোর্ট দেখেছি ডেঙ্গুতে কতজন মারা গেছে। সাংবাদিকরা কি তাহলে সব মিথ্যা লিখছেন? আমরা এই রিপোর্টে সন্তুষ্ট নই। শুধু জনসচেতনতা দিয়ে হবে না।’ এরপর আদালত এ মামলায় ঢাকার দুই সিটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং ২৫ জুলাই তাদের হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে ১৪ জুলাই ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে তথ্য জানাতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে নাগরিকদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে এবং অ্যাডিস মশা নির্মূলে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাতে বলে মামলার শুনানির জন্য গতকাল (২২ জুলাই) তারিখ ধার্য রেখেছিলেন আদালত।

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯ , ৮ শ্রাবন ১৪২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪০

ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া

দুই সিটির প্রতিবেদনে হাইকোর্টের অসন্তোষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদনে শুধু জনগণকে সচেতন না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মশানিধনে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপ যথাযথভাবে উঠে না আসায় দুই সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ। এ সময় তিনি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এর ওপর শুনানি করেন। পরে তিনি আদালতকে জানান, মশানিধনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ দিচ্ছে এবং নাগরিকদের সচেতন করে যাচ্ছে। আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কীভাবে ওষুধ দিচ্ছেন? আমরা কি বাসায় থাকি না? মশার মেশিনের শব্দে আমাদের কান কি নষ্ট হয়ে গেছে? এসব তো আমাদের দেখার কথা নয়। যে ওষুধ দেয়, এতে কি কাজ হয়? ওষুধে কাজ হয় না, তা মেয়র নিজেই বললেন। জনগণকে সচেতন করে তাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তাদের (সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের) কী দায়িত্ব?’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সিটি করপোরেশন সচেতন করার কাজ করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার টায়ার কিংবা বাসার টবে যেন পানি জমে না থাকে, এসব বিষয়ে তারা সচেতন করে যাচ্ছেন। আদালত বলেন, ‘এসব বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আপনারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা জানান। দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদের কাজ করতে হবে। মশানিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে কিছু হয়েছে? কতজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, এর তথ্য দিন। তাহলে বুঝতে পারব আপনারা কাজ করছেন কি না।’ আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোন দেশের হাইকোর্ট মশা মারতে আদেশ দেন না। আমাদের তা দিতে হয়। যতই বলেন আর ছবি দেখান, তা বিশ্বাসযোগ্য হবে তখনÑ যখন হাসপাতালে মানুষ যাবে না, মশার বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাবেন। মশানিধন সিরিয়াসলি কেন হচ্ছে না? বরং আরও বাড়ছে?’

মশানিধনের প্রতিবেদনে শুধু জনসচেতনতার বিষয়টিকে প্রধান্য দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেন, ‘জনগণ সচেতন আছে। আগে আপনারা (সিটি করপোরেশন) সচেতন হোন। আর না পারলে আপনারা একটি আবেদন নিয়ে আসেন, জনগণের ওপর সচেতন হওয়ার জন্য রুল জারি করি। মশানিধনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট করুন। আজও (গতকাল) পত্রিকায় রিপোর্ট দেখেছি ডেঙ্গুতে কতজন মারা গেছে। সাংবাদিকরা কি তাহলে সব মিথ্যা লিখছেন? আমরা এই রিপোর্টে সন্তুষ্ট নই। শুধু জনসচেতনতা দিয়ে হবে না।’ এরপর আদালত এ মামলায় ঢাকার দুই সিটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং ২৫ জুলাই তাদের হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে ১৪ জুলাই ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে তথ্য জানাতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে নাগরিকদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে এবং অ্যাডিস মশা নির্মূলে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাতে বলে মামলার শুনানির জন্য গতকাল (২২ জুলাই) তারিখ ধার্য রেখেছিলেন আদালত।