মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নেয়ার আবেদন ফেরত

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে তলব ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন ফেরত দিয়েছেন আদালত। মিন্নির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম গতকাল বেলা ১১টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে উক্ত আবেদন করেন। মিন্নির পক্ষে নিয়োজিত অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম উপরোক্ত তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই রাত ৯টার দিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরের দিন তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ৫ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে গত ১৯ জুলাই মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। ওইদিনই রাত সাড়ে ৭টার দিকে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, গত ২০ জুলাই তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা বরগুনা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন। মিন্নির বাবা দাবি করেছেন, মিন্নি তাদের নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে মিন্নি তার বাবা-মাকে উন্নত চিকিৎসার অনুরোধ করেছেন। গত রোববার রাতে বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগমের নেতৃত্বে নারী নেত্রীরা অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলামের সঙ্গে দেখা করে মিন্নির পক্ষে আইনি সহায়তার দাবি জানিয়ে আদালতে আবেদন করার অনুরোধ করেন।

মিন্নির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য মিন্নির স্বাক্ষর দরকার। যে কারণে তিনি মিন্নিকে আদালতে তলব ও হাসপাতালে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলেন। আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, বিচারক তার আবেদন ফেরত দিয়ে আইনের মধ্য দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছেন। আইনজীবী এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আগামীকাল তারা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে মিন্নির মাধ্যমে আবেদন করবেন।

রিফাত হত্যা : রিশান ফরাজীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন-পিপিএম জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৫ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তারা সবাই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

১৮ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে রিশান ফরাজীকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ১৫ জন স্বীকারোক্তি দিলেও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, মিন্নিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে মিন্নিকে আদালতে তলব করে জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আদালতে আবেদন করেছিলেন। বিচারক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলকোড অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন আসামির মধ্যে এখনও ৪ জন আসামি গ্রেফতার হয়নি। তারা হচ্ছেনÑ মামলার ৫ নম্বর আসামি মুসা, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান ও ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই মামলার পুলিশ রিপোর্টের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজগেটের সামনে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়েছে। বরিশাল নেয়ার পথে ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে রিফাত শরীফ মারা যায়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯ , ৮ শ্রাবন ১৪২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪০

মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নেয়ার আবেদন ফেরত

প্রতিনিধি, বরগুনা

image

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে তলব ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন ফেরত দিয়েছেন আদালত। মিন্নির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম গতকাল বেলা ১১টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে উক্ত আবেদন করেন। মিন্নির পক্ষে নিয়োজিত অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম উপরোক্ত তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই রাত ৯টার দিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরের দিন তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ৫ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে গত ১৯ জুলাই মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। ওইদিনই রাত সাড়ে ৭টার দিকে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, গত ২০ জুলাই তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা বরগুনা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন। মিন্নির বাবা দাবি করেছেন, মিন্নি তাদের নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে মিন্নি তার বাবা-মাকে উন্নত চিকিৎসার অনুরোধ করেছেন। গত রোববার রাতে বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগমের নেতৃত্বে নারী নেত্রীরা অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলামের সঙ্গে দেখা করে মিন্নির পক্ষে আইনি সহায়তার দাবি জানিয়ে আদালতে আবেদন করার অনুরোধ করেন।

মিন্নির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য মিন্নির স্বাক্ষর দরকার। যে কারণে তিনি মিন্নিকে আদালতে তলব ও হাসপাতালে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলেন। আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, বিচারক তার আবেদন ফেরত দিয়ে আইনের মধ্য দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছেন। আইনজীবী এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আগামীকাল তারা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে মিন্নির মাধ্যমে আবেদন করবেন।

রিফাত হত্যা : রিশান ফরাজীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন-পিপিএম জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৫ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তারা সবাই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

১৮ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে রিশান ফরাজীকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ১৫ জন স্বীকারোক্তি দিলেও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, মিন্নিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে মিন্নিকে আদালতে তলব করে জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আদালতে আবেদন করেছিলেন। বিচারক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলকোড অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন আসামির মধ্যে এখনও ৪ জন আসামি গ্রেফতার হয়নি। তারা হচ্ছেনÑ মামলার ৫ নম্বর আসামি মুসা, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান ও ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই মামলার পুলিশ রিপোর্টের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজগেটের সামনে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়েছে। বরিশাল নেয়ার পথে ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে রিফাত শরীফ মারা যায়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।