জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ : ইমাম গ্রেফতার

জিনের ভয় দেখিয়ে একাধিক নারী ও কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আহম্মদকে (৪২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রায় ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে চার-পাঁচ নারী ও ১০-১২ কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জিনের ভয় দেখিয়ে সে এসব অপকর্ম করে আসছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার বিন কাশেম। গতকাল দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে তিনি বলেন, ইদ্রিস দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দেয়া এবং জিনের ভয় দেখিয়ে নারীদের ধর্ষণ করত। তার মসজিদ ও মাদ্রাসার খাদেম এবং ছাত্রদের ধর্ষণ করত। একই সঙ্গে এসব মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখত এবং কাউকে না বলার জন্য জিনের হুমকি দিত। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনাগুলো স্বীকার করেছে।

র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক বলেন, মসজিদে নামাজ পড়ানোর পাশাপাশি একটি মাদ্রাসাতেও শিক্ষকতা করত ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে এলাকায় প্রচার করতে থাকে, তার কাছে জিন বন্দি আছে। জিন দিয়ে রোগ সারানো হয়। এমন তথ্য প্রচার হওয়ার পর এলাকার নারীরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য তার কাছে যেতে শুরু করে। আর এ সুযোগে চিকিৎসার জন্য আসা নারীদের জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করত আর ওই ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করত অন্য সহযোগীদের দিয়ে। পরে ওই সহযোগীকে দিয়েও ধর্ষণ করাত সে। ফলে যে ভিডিও করেছে, সে আর বাইরে কারও কাছে অভিযোগ করার সাহস পেত না। তিনি বলেন, ঠিক কত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না পেলেও ৪-৫ নারীকে যে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে, সেটির ভিডিও ইদ্রিসের মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে। তবে ওইসব নারী সামাজিক অবস্থান ও মানসম্মানের ভয়ে কারও কাছে কোন অভিযোগ করেননি। মাদ্রাসায় পড়তে আসা ১০-১২ বছরের ১২ শিশুকে সে বারবার বলাৎকার করেছে। শুধু তা-ই নয়, মাদ্রাসা ও মসজিদে থাকা তার খাদেমদেরও সে একাধিকবার বলাৎকার করেছে। তাকে গ্রেফতারের পর সেসব খাদেম অকপটে তার কাছে জিম্মি হওয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বলে জানান তিনি। এমনকি মাদ্রাসার এক ছাত্রকে গত ৫ বছর যাবৎ সে বলাৎকার করে আসছিল।

র?্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে ইদ্রিস ঘুমাত। তার সব অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন করত। আর ওই অপকর্মের ভিডিওগুলো তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করত। যেসব নারী একবার তার অপকর্মের শিকার হওয়ার পর আর তার কাছে যেতে চাইত না, তাদের জিন দিয়ে ক্ষতি করাবে বলে ভয় দেখিয়ে আবার ধর্ষণ করত। আবার যেসব শিশু বা শিক্ষার্থী তার নির্যাতনের পর আর পড়তে যেত না, তাদের অভিবাবকদের বলতÑ যদি তারা না যায়, তাহলে আর কখনও ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না। জিন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন ভয় দেখানোয় ওইসব শিশুকে ফের তার কাছে পড়তে পাঠানো হতো। ইদ্রিসকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ওই ধর্ষক প্রতিটি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। জিন নিয়ে সে যে প্রচারণা চালিয়েছে, এর সত্যতাও স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত ইদ্রিসের বাড়ি সিলেটে। সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে সে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করে। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে একটি মসজিদে ইমামতি ও একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। এরপর ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানে একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হয়। সে প্রায় ১৮ বছরের ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯ , ৮ শ্রাবন ১৪২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪০

জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ : ইমাম গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জিনের ভয় দেখিয়ে একাধিক নারী ও কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আহম্মদকে (৪২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রায় ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে চার-পাঁচ নারী ও ১০-১২ কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জিনের ভয় দেখিয়ে সে এসব অপকর্ম করে আসছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার বিন কাশেম। গতকাল দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে তিনি বলেন, ইদ্রিস দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দেয়া এবং জিনের ভয় দেখিয়ে নারীদের ধর্ষণ করত। তার মসজিদ ও মাদ্রাসার খাদেম এবং ছাত্রদের ধর্ষণ করত। একই সঙ্গে এসব মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখত এবং কাউকে না বলার জন্য জিনের হুমকি দিত। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনাগুলো স্বীকার করেছে।

র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক বলেন, মসজিদে নামাজ পড়ানোর পাশাপাশি একটি মাদ্রাসাতেও শিক্ষকতা করত ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে এলাকায় প্রচার করতে থাকে, তার কাছে জিন বন্দি আছে। জিন দিয়ে রোগ সারানো হয়। এমন তথ্য প্রচার হওয়ার পর এলাকার নারীরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য তার কাছে যেতে শুরু করে। আর এ সুযোগে চিকিৎসার জন্য আসা নারীদের জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করত আর ওই ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করত অন্য সহযোগীদের দিয়ে। পরে ওই সহযোগীকে দিয়েও ধর্ষণ করাত সে। ফলে যে ভিডিও করেছে, সে আর বাইরে কারও কাছে অভিযোগ করার সাহস পেত না। তিনি বলেন, ঠিক কত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না পেলেও ৪-৫ নারীকে যে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে, সেটির ভিডিও ইদ্রিসের মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে। তবে ওইসব নারী সামাজিক অবস্থান ও মানসম্মানের ভয়ে কারও কাছে কোন অভিযোগ করেননি। মাদ্রাসায় পড়তে আসা ১০-১২ বছরের ১২ শিশুকে সে বারবার বলাৎকার করেছে। শুধু তা-ই নয়, মাদ্রাসা ও মসজিদে থাকা তার খাদেমদেরও সে একাধিকবার বলাৎকার করেছে। তাকে গ্রেফতারের পর সেসব খাদেম অকপটে তার কাছে জিম্মি হওয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বলে জানান তিনি। এমনকি মাদ্রাসার এক ছাত্রকে গত ৫ বছর যাবৎ সে বলাৎকার করে আসছিল।

র?্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে ইদ্রিস ঘুমাত। তার সব অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন করত। আর ওই অপকর্মের ভিডিওগুলো তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করত। যেসব নারী একবার তার অপকর্মের শিকার হওয়ার পর আর তার কাছে যেতে চাইত না, তাদের জিন দিয়ে ক্ষতি করাবে বলে ভয় দেখিয়ে আবার ধর্ষণ করত। আবার যেসব শিশু বা শিক্ষার্থী তার নির্যাতনের পর আর পড়তে যেত না, তাদের অভিবাবকদের বলতÑ যদি তারা না যায়, তাহলে আর কখনও ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না। জিন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন ভয় দেখানোয় ওইসব শিশুকে ফের তার কাছে পড়তে পাঠানো হতো। ইদ্রিসকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ওই ধর্ষক প্রতিটি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। জিন নিয়ে সে যে প্রচারণা চালিয়েছে, এর সত্যতাও স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত ইদ্রিসের বাড়ি সিলেটে। সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে সে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করে। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে একটি মসজিদে ইমামতি ও একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। এরপর ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানে একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হয়। সে প্রায় ১৮ বছরের ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় মামলা করা হয়েছে।