জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদত্যাগ করবেন চ্যান্সেলর হ্যামন্ড

বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলে চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের বিষয়ে (ব্রেক্সিট) বরিসের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মে সরকারের এক ডজন মন্ত্রী পদত্যাগ করার হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বরিস জয়ী হলে টোরি এমপিদের (পার্লামেন্ট সদস্য) আরও ছয় সদস্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের বিপদ বাড়িয়ে তুলবেন বলেও শোনা যচ্ছে। টোরি নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় বরিস বড় ধরনের জয় পেতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। আর ফলাফল তেমন হলে আগামীকাল বরিস জনসন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। ডেইলি মেইল।

সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ চ্যান্সেলর হ্যামন্ড নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়ানার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। বিবিসি’র এন্ড্রু মার শো’তে তিনি বলেন, জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের বিষয়ে ‘চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট’কে বিকল্প হিসেবে রেখেছেন। ‘আমি এমন কিছুতে কখনই মত দেব না।’ আগামী সপ্তাহে তিনি চাকরিচ্যুত হতে পারেন বলে মনে করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে হ্যামন্ড বলেন, তাহলে তিনি আগামী বুধবারই প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন। তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিট নীতিতে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ও তার চ্যান্সেলরের নিবিড় ঐকমত্য থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অনেক চেষ্টা ও নানা ছাড় দেয়ার পরও ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কোন চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হওয়ার সব দায় কাঁধে নিয়ে গত জুনে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মে। দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে নিয়মানুযায়ী তাকে প্রধানমন্ত্রীত্বও ছাড়তে হবে। তার দল কনজারভেটিভ পার্টি নতুন নেতা বেছে না নেয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। টোরি নেতৃত্বের জন্য নানা ধাপে বাছাইয়ের পর এখন লড়াইয়ে টিকে রয়েছেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। জনসন শুরু থেকেই বলে এসেছেন, যাই ঘটুক না কেন, যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই ব্রেক্সিটের নতুন সময়সীমা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইইউ ত্যাগ করতে হবে।

এদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হান্টও চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে নতুন একটি চুক্তি করতে প্রয়োজনে ব্রেক্সিটের সময় আরও বাড়ানোর পক্ষপাতি তিনি। আজ (মঙ্গলবার) কনজারভেটিভ পার্টি নতুন নেতার নাম ঘোষণা করবে। এ প্রসঙ্গে চ্যান্সেলর হ্যামন্ড বলেন, জেরেমি হান্ট কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে আসলে হয়তো ‘পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।’ ‘যদিও সব জরিপ জনসনের এগিয়ে থাকার পূর্বাভাসই দিয়েছে।’ ‘আমারও মনে হয় এটাই হবে এবং আমি সে অনুযায়ী আমার পরিকল্পনা প্রস্তুত করছি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি মঙ্গলবার ফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’ হ্যামন্ড আরও বলেন, ‘জনসনের মন্ত্রিসভায় কাজ করার একটি শর্ত থাকবে, আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। সেখানে কাজ করতে হলে সর্বশেষ সময়সীমার মধ্যে ইইউ সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, এমনকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলেও। এবং ওটা এমন কিছু যা আমি করতে পারব না।’ জনসন বা হান্ট কাউকে সমর্থন না করলেও হ্যামন্ড নতুন একটি চুক্তির মাধ্যমে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেত চান। আর নতুন চুক্তি অক্টোবর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় বলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের একটি ফলপ্রসূ চুক্তির জন্য আরেকটু বেশি সময় দরকার।’

চুক্তিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বড় সমালোচনাকারীদের একজন হ্যামন্ড। এমনকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট আটকাতে তিনি প্রয়োজনে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট ডাকারও আভাস দিয়েছেন। তবে এর প্রয়োজন হবে না বলেও মনে করা হ্যামন্ড বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, পার্লামেন্টের অনুমতি ছাড়া ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধের পথ পার্লামেন্ট নিজেই খুঁজে নেবে।’ ‘আমি বরং পার্লামেন্ট যেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নতুন সরকারকে ওই ধরনের কিছু করা থেকে আটকাতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে চাই।’

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯ , ৮ শ্রাবন ১৪২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪০

জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদত্যাগ করবেন চ্যান্সেলর হ্যামন্ড

সংবাদ ডেস্ক

image

বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলে চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের বিষয়ে (ব্রেক্সিট) বরিসের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মে সরকারের এক ডজন মন্ত্রী পদত্যাগ করার হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বরিস জয়ী হলে টোরি এমপিদের (পার্লামেন্ট সদস্য) আরও ছয় সদস্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের বিপদ বাড়িয়ে তুলবেন বলেও শোনা যচ্ছে। টোরি নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় বরিস বড় ধরনের জয় পেতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। আর ফলাফল তেমন হলে আগামীকাল বরিস জনসন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। ডেইলি মেইল।

সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ চ্যান্সেলর হ্যামন্ড নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়ানার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। বিবিসি’র এন্ড্রু মার শো’তে তিনি বলেন, জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের বিষয়ে ‘চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট’কে বিকল্প হিসেবে রেখেছেন। ‘আমি এমন কিছুতে কখনই মত দেব না।’ আগামী সপ্তাহে তিনি চাকরিচ্যুত হতে পারেন বলে মনে করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে হ্যামন্ড বলেন, তাহলে তিনি আগামী বুধবারই প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন। তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিট নীতিতে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ও তার চ্যান্সেলরের নিবিড় ঐকমত্য থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অনেক চেষ্টা ও নানা ছাড় দেয়ার পরও ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কোন চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হওয়ার সব দায় কাঁধে নিয়ে গত জুনে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মে। দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে নিয়মানুযায়ী তাকে প্রধানমন্ত্রীত্বও ছাড়তে হবে। তার দল কনজারভেটিভ পার্টি নতুন নেতা বেছে না নেয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। টোরি নেতৃত্বের জন্য নানা ধাপে বাছাইয়ের পর এখন লড়াইয়ে টিকে রয়েছেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। জনসন শুরু থেকেই বলে এসেছেন, যাই ঘটুক না কেন, যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই ব্রেক্সিটের নতুন সময়সীমা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইইউ ত্যাগ করতে হবে।

এদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হান্টও চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে নতুন একটি চুক্তি করতে প্রয়োজনে ব্রেক্সিটের সময় আরও বাড়ানোর পক্ষপাতি তিনি। আজ (মঙ্গলবার) কনজারভেটিভ পার্টি নতুন নেতার নাম ঘোষণা করবে। এ প্রসঙ্গে চ্যান্সেলর হ্যামন্ড বলেন, জেরেমি হান্ট কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে আসলে হয়তো ‘পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।’ ‘যদিও সব জরিপ জনসনের এগিয়ে থাকার পূর্বাভাসই দিয়েছে।’ ‘আমারও মনে হয় এটাই হবে এবং আমি সে অনুযায়ী আমার পরিকল্পনা প্রস্তুত করছি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি মঙ্গলবার ফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’ হ্যামন্ড আরও বলেন, ‘জনসনের মন্ত্রিসভায় কাজ করার একটি শর্ত থাকবে, আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। সেখানে কাজ করতে হলে সর্বশেষ সময়সীমার মধ্যে ইইউ সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, এমনকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলেও। এবং ওটা এমন কিছু যা আমি করতে পারব না।’ জনসন বা হান্ট কাউকে সমর্থন না করলেও হ্যামন্ড নতুন একটি চুক্তির মাধ্যমে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেত চান। আর নতুন চুক্তি অক্টোবর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় বলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের একটি ফলপ্রসূ চুক্তির জন্য আরেকটু বেশি সময় দরকার।’

চুক্তিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বড় সমালোচনাকারীদের একজন হ্যামন্ড। এমনকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট আটকাতে তিনি প্রয়োজনে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট ডাকারও আভাস দিয়েছেন। তবে এর প্রয়োজন হবে না বলেও মনে করা হ্যামন্ড বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, পার্লামেন্টের অনুমতি ছাড়া ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধের পথ পার্লামেন্ট নিজেই খুঁজে নেবে।’ ‘আমি বরং পার্লামেন্ট যেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নতুন সরকারকে ওই ধরনের কিছু করা থেকে আটকাতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে চাই।’