উইঘুরদের জোর করে মুসলিম বানানো হয়েছে

চীনা সরকারি শ্বেতপত্রের দাবি

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নৃশংস আচরণের পক্ষে যুক্তি দেখাতে এবার শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসের দোহাই দিয়েছে চীন। দেশটির স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের এ প্রদেশটির ২০ লাখ উইঘুর নিপীড়নের শিকার বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসার পর এবার বেইজিং দাবি করছে, ওই অঞ্চলে কেউই ইচ্ছা করে ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং দশম শতকে যুদ্ধের পর এ ধর্ম তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

চীনে হান চাইনিজরা সংখ্যাগুরু। দেশটির এ জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিম উইঘুরদের সংখ্যা নগন্য। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। বিদেশি গণমাধ্যমের ওপর প্রদেশটিতে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে গত বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটকের শিকার হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে গত রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় তথ্য পরিষদ দফতর থেকে ৬ হাজার ৮০০ শব্দের একটি নথি প্রকাশ করা হয়। নথিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে সব ধর্মের মানুষই কয়েকশ’ বছর ধরে সহাবস্থান করছে আসছে। ওই প্রদেশ তাদের নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা বিশ্বাস না করার প্রতি সম্মান জানায়। প্রতিবেদনে চীন দাবি করে, ১০তম শতকে যুদ্ধের মাধ্যমে এ অঞ্চলে মুসলিমরা প্রবেশ করে। ফলে শত শত বছর ধরে বজায় রাখা বৌদ্ধ ধর্মের আধিপত্য ক্ষুণ্ন হয়। বলা হয়, উইঘুররা নিজেদের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং ধর্মীয় যুদ্ধ ও শাসকদের চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। ওই অঞ্চলের ইতিহাস বিদেশি শক্তি, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা বিকৃত হয়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, চীনের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৫ শতাংশ খ্রিস্টান ও ২ শতাংশ মুসলিম। তবে চীনের নথিতে দাবি করা হয়, ‘উইঘুর মুসলিমরা মূলত তুর্কিস্তান থেকে এসেছে এ ধারণা সঠিক নয়। জিনজিয়াং যুগ যুগ ধরেই চীনা ভূখন্ডের অংশ। এটা কখনোই তথাকথিত পূর্ব তুর্কিস্তানের অংশ ছিলো না।’ ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে চীন ওই প্রতিবেদনে দাবি করেছে, জিনজিয়াংয়ে ২৪ হাজার ৮০০টি স্থানে ধর্মীয় কার্যক্রম চলে। সেখানে ২৪ হাজার ৪০০ মসজিদ রয়েছে আর ৪০০ মন্দির ও গির্জাও রয়েছে।

তবে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের ওপর চীনের অভিযানকে ‘সাংস্কৃতিক নিশ্চিহ্নকরণ’ বলছে তাদের আটককেন্দ্রে থাকা সাবেক বন্দিরা। এর আগে ২০১৭ সালে জিনজিয়াংয়ে বড় দাড়ি রাখা এবং পর্দা করা নিষিদ্ধ করা হয়। ‘অদ্ভুত উপায়ে’ শিশুদের নাম রাখাও নিষেধ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরে (২০১৮ সাল) চীনা সরকারি কর্মকর্তারা উইঘুর পরিবারকে জোরপূর্বক বাড়িতে রাখতে শুরু করে। চলতি বছর ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে অনেক মসজিদও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রদেশটির এ আটক কেন্দ্রগুলোকে ‘উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ দাবি করে চীন। তাদের দাবি, ইসলামী উগ্রবাদ রুখতে এ কেন্দ্রগুলো খুবই জরুরি। রোববার প্রকাশিত সরকারি শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে এমন ঘটনার অনেক আগেই বিশ্বে এমন ঘটনা ঘটেছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এ প্রবণতা বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়ে। বেইজিংয়ের দাবি, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এই অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনায় এনে আইন মেনেই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদবিরোধী এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ এই পদক্ষেপের যে কোন ধরনের সমালোচনা প্রকৃতপক্ষে ‘দ্বিমুখী’ আচরণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের সমালোচনা আসলে বিবেক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। প্রকৃত ন্যায়বিচার নিয়ে যারা সত্যিই কাজ করে তাদের কেউই এ সমালোচনা সমর্থন করবেন না।

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯ , ৯ শ্রাবন ১৪২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪০

উইঘুরদের জোর করে মুসলিম বানানো হয়েছে

চীনা সরকারি শ্বেতপত্রের দাবি

সংবাদ ডেস্ক

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নৃশংস আচরণের পক্ষে যুক্তি দেখাতে এবার শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসের দোহাই দিয়েছে চীন। দেশটির স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের এ প্রদেশটির ২০ লাখ উইঘুর নিপীড়নের শিকার বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসার পর এবার বেইজিং দাবি করছে, ওই অঞ্চলে কেউই ইচ্ছা করে ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং দশম শতকে যুদ্ধের পর এ ধর্ম তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

চীনে হান চাইনিজরা সংখ্যাগুরু। দেশটির এ জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিম উইঘুরদের সংখ্যা নগন্য। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। বিদেশি গণমাধ্যমের ওপর প্রদেশটিতে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে গত বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটকের শিকার হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে গত রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় তথ্য পরিষদ দফতর থেকে ৬ হাজার ৮০০ শব্দের একটি নথি প্রকাশ করা হয়। নথিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে সব ধর্মের মানুষই কয়েকশ’ বছর ধরে সহাবস্থান করছে আসছে। ওই প্রদেশ তাদের নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা বিশ্বাস না করার প্রতি সম্মান জানায়। প্রতিবেদনে চীন দাবি করে, ১০তম শতকে যুদ্ধের মাধ্যমে এ অঞ্চলে মুসলিমরা প্রবেশ করে। ফলে শত শত বছর ধরে বজায় রাখা বৌদ্ধ ধর্মের আধিপত্য ক্ষুণ্ন হয়। বলা হয়, উইঘুররা নিজেদের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং ধর্মীয় যুদ্ধ ও শাসকদের চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। ওই অঞ্চলের ইতিহাস বিদেশি শক্তি, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা বিকৃত হয়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, চীনের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৫ শতাংশ খ্রিস্টান ও ২ শতাংশ মুসলিম। তবে চীনের নথিতে দাবি করা হয়, ‘উইঘুর মুসলিমরা মূলত তুর্কিস্তান থেকে এসেছে এ ধারণা সঠিক নয়। জিনজিয়াং যুগ যুগ ধরেই চীনা ভূখন্ডের অংশ। এটা কখনোই তথাকথিত পূর্ব তুর্কিস্তানের অংশ ছিলো না।’ ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে চীন ওই প্রতিবেদনে দাবি করেছে, জিনজিয়াংয়ে ২৪ হাজার ৮০০টি স্থানে ধর্মীয় কার্যক্রম চলে। সেখানে ২৪ হাজার ৪০০ মসজিদ রয়েছে আর ৪০০ মন্দির ও গির্জাও রয়েছে।

তবে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের ওপর চীনের অভিযানকে ‘সাংস্কৃতিক নিশ্চিহ্নকরণ’ বলছে তাদের আটককেন্দ্রে থাকা সাবেক বন্দিরা। এর আগে ২০১৭ সালে জিনজিয়াংয়ে বড় দাড়ি রাখা এবং পর্দা করা নিষিদ্ধ করা হয়। ‘অদ্ভুত উপায়ে’ শিশুদের নাম রাখাও নিষেধ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরে (২০১৮ সাল) চীনা সরকারি কর্মকর্তারা উইঘুর পরিবারকে জোরপূর্বক বাড়িতে রাখতে শুরু করে। চলতি বছর ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে অনেক মসজিদও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রদেশটির এ আটক কেন্দ্রগুলোকে ‘উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ দাবি করে চীন। তাদের দাবি, ইসলামী উগ্রবাদ রুখতে এ কেন্দ্রগুলো খুবই জরুরি। রোববার প্রকাশিত সরকারি শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে এমন ঘটনার অনেক আগেই বিশ্বে এমন ঘটনা ঘটেছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এ প্রবণতা বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়ে। বেইজিংয়ের দাবি, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এই অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনায় এনে আইন মেনেই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদবিরোধী এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ এই পদক্ষেপের যে কোন ধরনের সমালোচনা প্রকৃতপক্ষে ‘দ্বিমুখী’ আচরণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের সমালোচনা আসলে বিবেক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। প্রকৃত ন্যায়বিচার নিয়ে যারা সত্যিই কাজ করে তাদের কেউই এ সমালোচনা সমর্থন করবেন না।