‘এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে’

আবুল হাসনাত

রবীন্দ্র উৎসবের লেখাটির শিরোনাম এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে। রবীন্দ্রনাথের বহুচর্চিত ও গীত এই গানটি নানা কারণে আমাদের কাছে অর্থময় হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি লিখেছিলেন শান্তিনিকেতনে ১৫ ভাদ্র, ১৩২৫ সালে। এ বর্ষামঙ্গলের গান-এমন তথ্য দিয়েছেন প্রভাত মুখোপাধ্যায়। আর এই শ্রাবণেই ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন নবীন মাত্রায় সঞ্জীবিত হয়েছিল। সেজন্যই এই শিরোনাম। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস ২২শে শ্রাবণ এলেই সেই সংকটে দীর্ণ, উদ্দীপনাময় ও প্রত্যয়দীপ্ত সাংস্কৃতিক বিলোড়নের দিনগুলো উজ্জ্বলতা নিয়ে উন্মোচিত হয়।

আপনারা সকলে জানেন, সেনাশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে এদেশের প্রগতিশীল সৃজন-উদ্যোগী কয়েকজন মানুষ যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা আজ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উজ্জ্বল এক অধ্যায় হয়ে আছে। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অব্যবহিত পরে রবীন্দ্র-সংস্কৃতি চর্চাকে আরো খরপ্রবাহিণী, জীবনলগ্ন ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চাকে গতিশীল করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ছায়ানট। এই সেই ছায়ানট-যা বিরতিহীন এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির জীবনবোধ ও চেতনাকে করে তুলেছিল স্বাজাত্যবোধে উদ্দীপ্ত এবং স্বরূপচেতনায় প্রখর। ছায়ানটের এই যাত্রা সহজ ও মসৃণ ছিল না। সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতকে বুকে ধারণ করে তাকে পথ চলতে হয়েছে। এই পথচলায় সন্জীদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হক যে নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা নিয়ে একটি রবীন্দ্রমন্ডলী ও বাঙালি সংস্কৃতি ও চর্চাকে নবমাত্রা দান করেছেন তা ঐতিহাসিকতার মূল্য পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীক্ষা দিয়েছেন শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়-তারা যেন হয়ে ওঠে মানবিক বোধ ও বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল এক মানব-মানবী। সর্বদা তাঁদের এ ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে উঠেছিল। এই যাত্রায় সঙ্গী ও সখা হয়ে উঠেছিলেন দেশের প্রগতিশীল অগনিত মানুষ।

সংগীত বিদ্যায়তন শুরু হয়েছিল ইংলিশ প্রিপারেটরি ইশকুল থেকে, প্রতিকূলতায় সরে যেতে হলো আজিমপুরের অগ্রণী বিদ্যালয়ে। সেখানেও স্থান হলো না, চলে যেতে হলো কলাবাগান লেক সার্কাস ইশকুলে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি ইশকুলে ঠাঁই হলো। সকল ক্ষেত্রেই বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। সে বিঘ্ন ও প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পথ চলতে হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মে উদ্দীপনা ও বাঙালির স্বাজাত্যবোধে নবীন চেতনা সৃষ্টি করেছিল ছায়ানট। ছায়ানটের এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ছায়ানটের প্রাক্তনী মাননীয় শেখ হাসিনার আগ্রহ ও দানে এক ভবন গড়ে উঠেছে শংকরের সন্নিকটে। এই ভবনেই কয়েক সহস্র শিক্ষার্থী দীক্ষা নিচ্ছে সংগীতে ও জীবনবোধে, বাঙালিত্বের সাধনা যাতে উন্নত ও স্নিগ্ধ, চারু ও মনোজ সুষমায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে-এ ছায়ানটের আরাধ্য হয়ে উঠেছে। এই ভবন এখন সংস্কৃতি চর্চারও এক প্রতীক।

ছায়ানটের এই সাংস্কৃতিক কর্মপ্রবাহ মুক্তিযুদ্ধের পথ নির্মাণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে এবং যে-কোনো যুদ্ধের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গে দীপ্তিমান হয়ে থাকে সাংস্কৃতিক বোধ ও বুদ্ধির আদর্শিক চেতনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন যে বৃহৎ পটভূমি সৃষ্টি করেছিল, সেখানেও অনন্য অবদান রেখেছে ছায়ানট।

এবার শ্রাবণের কথায় ফিরে আসি। এই শ্রাবণ মাসেই এই বাংলাদেশে এক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আকস্মিক বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা নিষিদ্ধ করেন। এরই প্রতিবাদে আসন্ন বাইশে শ্রাবণ পালন উপলক্ষে গড়ে ওঠে রবীন্দ্র স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা পরিষদ। ছায়ানট এই সাংস্কৃতিক যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সঙ্গী হিসেবে পায় বাফা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদকে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশ মঞ্চস্থ হয়। তখন সেনা শাসন। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে তাসের দেশ নাটকের মঞ্চায়ন এক নবীন ব্যঞ্জনা ও প্রত্যয়ে দর্শকদের হৃদয় ও মনে অর্থবোধক হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন খ্যাতনামা শিল্পীরা। শেষের দিন রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা পরিবেশনের পর গানের অনুষ্ঠান চলাকালে গভর্নর মোনায়েম খানের গুন্ডাবাহিনী নানা মারণাস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে অনুষ্ঠানস্থলে। তবু প্রতিবাদী সংস্কৃতির চর্চা থেমে থাকে না।

সেই সময়ে প্রাণের আবেগে রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন দেশের খ্যাতনামা ও প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পীরা। এক যুক্ত বিবৃতিতে রবীন্দ্রনাথকে পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অভিহিত করেন তাঁরা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাল্টা বিবৃতি ও রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়। এসব সত্ত্বেও রবীন্দ্র-সংস্কৃতির নানামুখী সৃজন ধারা ও চর্চা প্রতিবাদী চেতনায় আরো প্রাণপ্রবাহিণী হয়ে ওঠে। স্বাজাত্যবোধে ও ঐতিহ্য-জিজ্ঞাসায় ষাটের দশকে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেও রবীন্দ্রনাথ প্রতিনিয়ত নবীন মাত্রা যোগ করতে থাকেন। সমগ্র দেশের সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। মিছিল ও সভাও হতে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রতিবাদ থেকেই দেশে আরেক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নবীন মাত্রাসঞ্চারী হয়ে ওঠে।

ষাটের দশকের প্রারম্ভে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপন, সেই সময়ে বাফার প্রযত্নে রবীন্দ্র-সংস্কৃতির চর্চা, ছায়ানটের জন্ম এবং প্রতিষ্ঠা এবং এই প্রতিষ্ঠানের বিরতিহীন সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথকে, রবীন্দ্র-সংস্কৃতিকে প্রাণের আবেগে ও অঙ্গীকারে পেয়েছি। তাঁর কাছেই মহান মানবিকতার শিক্ষা নিয়ে যে-কোনো জাতীয় দুর্যোগ ও আর্তমানবতার সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত করেছে ছায়ানট। বন্যা-ত্রাণ ও জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত মানুষের হৃদয়ে মনোবল সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে ছায়ানটের কর্মীরা দুর্গত অঞ্চলে ছুটে যায়।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের সকল দুঃখ-সুখে, প্রেম-অপ্রেমে ও দৈনন্দিন জীবনে সংকট ও ত্রাণে হয়ে উঠেছেন অন্যতম এক সহায়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে জীবনে প্রত্যয়দীপ্ত হতে শিখিয়েছেন তিনি। সুন্দরকে অভ্যর্থনার জন্য আমরা শিক্ষিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে। সভ্যতা আজ যে সংকটে পতিত হয়েছে সেখানে তাঁর অজস্র লেখনীর মধ্যে, ভাষণে ও চিঠিপত্রে সংকট নিরসনের যে আভাস ছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়ে শতবর্ষ পূর্বের তাঁর প্রত্যক্ষণ, শঙ্কা ও ভবিষ্যদ্বাণী কত যে তাৎপর্যময় ছিল তা উপলব্ধি করি। ঠিক শত বর্ষ আগে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি যে নাইটহুট ত্যাগ করেন তা হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দেশচেতনার এক দলিল। তিনি ১৯১৯ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ ভাইসরয়কে চিঠি লিখে নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করেন। মানবের মঙ্গলচিন্তা নিয়ে সকল সময় তিনি ভেবেছেন। সেজন্যই মহামনীষী রোম্যাঁ রোলাঁ ও আইনস্টাইনের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভাবুকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। পত্রালাপ চলতে থাকে। সম্প্রতি চিন্ময় গুহের সম্পাদনায় অক্সফোর্ড প্রকাশনা থেকে রোম্যাঁ রোলাঁ ও রবীন্দ্রনাথের পত্রালাপ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটির নাম BRIDGING EAST & WEST। গ্রন্থটি এক অর্থে অসাধারণ। সম্পাদকের ৭২ পৃষ্ঠার ভূমিকা সংবলিত এই গ্রন্থটি এই দুই মনীষীর ভাবনার জগৎ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার দিগন্তকে বিস্তৃত করে। এই বইটি আলো ফেলেছে নতুন করে ভাবনার জগতে। বিশেষ করে বর্তমান সংকটকালে নিরাশায়ও অটল ও অবিচলিত বিশ্বাসী হয়ে উঠি। সখ্যে এই পত্রলিপি বিশ্ববাসী ও আমাদের জন্য হয়ে ওঠে নির্ভীক স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন দুই মহামানবের মিলিত ভাবনার প্রকাশ। তাঁদের দুজনের সখ্য ও আত্মীয়তা কত গভীর ছিল এও প্রতীয়মান হয়। বইটি আলোচনাকালে মনসিজ মজুমদার বলছেন, “দুজনেরই স্বপ্ন ছিল বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক মৈত্রী। দুজনেই চেয়েছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার মিলন : BRIDGING EAST & WEST-এ প্রত্যক্ষ করা যায় Rabindranath Tagore and Romain Rolland Correspondence (1919-1940) । দুজনেরই চিন্তাভাবনা জারিত ছিল আধ্যাত্মিকতায়। আবার দুজনেই অনেক বিষয়ে ভিন্ন মত ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির চিন্তাবিদ ছিলেন। এমন ধারণাই পাওয়া যায় তাঁদের চিঠিগুলিতে এবং সাক্ষাৎ-সংলাপে।”

পরবর্তীকালে রবীন্দ্রাথের সঙ্গে সাক্ষাৎও হয় পাশ্চাত্যে অনেকের সঙ্গে। মানবসভ্যতার সংকট, মানবের মঙ্গল চেতনা ও যুক্তিবাদিতা এবং সৃজন তাঁদের ভাববিনিময়ের বিষয় হয়ে ওঠে। আসন্ন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের লগ্নে এই ভাবুক মানুষদের চিন্তা ও মানবসভ্যতা রক্ষাকল্পে দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের জীবনচেতনাকে আজো নানা জিজ্ঞাসায় আলোড়িত করে। আমরা প্রাণিত বোধ করি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে। তাঁর শিক্ষাদর্শ, রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা, সৃজনধারা, মানবিক ভাবনা সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকার যে শিক্ষা দিয়েছে, তা আমাদের কাছে আজো প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিপরীতে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ, শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। শ্রী নিকেতন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি পল্লীর মানুষের সৃজনশক্তি ও আত্মশক্তিকে ভিন্ন মর্যাদা দান করেছিলেন। এখনো জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণতা নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ বা সভ্যতার সংকট নিয়ে তাঁর ভাবনা আমাদের সংকটদীর্ণ সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়। বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক মৈত্রীর যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তাও খুব তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার মিলন রবীন্দ্রনাথের অন্বিষ্ট হয়ে উঠেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনের সূত্র হোক জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও সংস্কারের ক্ষুদ্র গন্ডির বাইরে বৃহত্তর সংস্কৃতি, মানবিকতা ও বিশ্বমৈত্রী-এই অভিপ্রায় নিয়ে তিনি বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন। এই বাণীর বিদ্যুচ্ছটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন সকল মানবের হৃদয়ে।

ছায়ানট রবীন্দ্রনাথের জীবনসাধনার মর্মবাণীকে ধারণ করেই পথ চলছে ও সংস্কৃতির সকল শাখাকে দীপ্তিময় করে তুলছে। সেখানে উপেক্ষিত হননি নজরুল ও ঐতিহ্য জিজ্ঞাসা। লোক সংগীত, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও শাস্ত্রীয় যন্ত্রসংগীতেরও চর্চা ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে করা হয় ছায়ানটে। রবীন্দ্রনাথের মানবিক সৃজন-উৎকর্ষ আমাদের আধুনিকতায়, আমাদের মনন ও মনীষায় যে কত দীপ্তিমান-এ কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর প্রয়াণ দিবস ও স্মরণ উৎসবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি তাঁকে।

সকলকে ধন্যবাদ জানাই

(২২শে শ্রাবণ উপলক্ষে ছায়ানটে রবীন্দ্র উৎসবের সূচনায় এই লেখাটি পঠিত। ঈষৎ পরিবর্তিত।)

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯ , ৯ শ্রাবন ১৪২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪০

‘এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে’

আবুল হাসনাত

রবীন্দ্র উৎসবের লেখাটির শিরোনাম এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে। রবীন্দ্রনাথের বহুচর্চিত ও গীত এই গানটি নানা কারণে আমাদের কাছে অর্থময় হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি লিখেছিলেন শান্তিনিকেতনে ১৫ ভাদ্র, ১৩২৫ সালে। এ বর্ষামঙ্গলের গান-এমন তথ্য দিয়েছেন প্রভাত মুখোপাধ্যায়। আর এই শ্রাবণেই ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন নবীন মাত্রায় সঞ্জীবিত হয়েছিল। সেজন্যই এই শিরোনাম। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস ২২শে শ্রাবণ এলেই সেই সংকটে দীর্ণ, উদ্দীপনাময় ও প্রত্যয়দীপ্ত সাংস্কৃতিক বিলোড়নের দিনগুলো উজ্জ্বলতা নিয়ে উন্মোচিত হয়।

আপনারা সকলে জানেন, সেনাশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে এদেশের প্রগতিশীল সৃজন-উদ্যোগী কয়েকজন মানুষ যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা আজ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উজ্জ্বল এক অধ্যায় হয়ে আছে। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অব্যবহিত পরে রবীন্দ্র-সংস্কৃতি চর্চাকে আরো খরপ্রবাহিণী, জীবনলগ্ন ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চাকে গতিশীল করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ছায়ানট। এই সেই ছায়ানট-যা বিরতিহীন এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির জীবনবোধ ও চেতনাকে করে তুলেছিল স্বাজাত্যবোধে উদ্দীপ্ত এবং স্বরূপচেতনায় প্রখর। ছায়ানটের এই যাত্রা সহজ ও মসৃণ ছিল না। সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতকে বুকে ধারণ করে তাকে পথ চলতে হয়েছে। এই পথচলায় সন্জীদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হক যে নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা নিয়ে একটি রবীন্দ্রমন্ডলী ও বাঙালি সংস্কৃতি ও চর্চাকে নবমাত্রা দান করেছেন তা ঐতিহাসিকতার মূল্য পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীক্ষা দিয়েছেন শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়-তারা যেন হয়ে ওঠে মানবিক বোধ ও বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল এক মানব-মানবী। সর্বদা তাঁদের এ ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে উঠেছিল। এই যাত্রায় সঙ্গী ও সখা হয়ে উঠেছিলেন দেশের প্রগতিশীল অগনিত মানুষ।

সংগীত বিদ্যায়তন শুরু হয়েছিল ইংলিশ প্রিপারেটরি ইশকুল থেকে, প্রতিকূলতায় সরে যেতে হলো আজিমপুরের অগ্রণী বিদ্যালয়ে। সেখানেও স্থান হলো না, চলে যেতে হলো কলাবাগান লেক সার্কাস ইশকুলে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি ইশকুলে ঠাঁই হলো। সকল ক্ষেত্রেই বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। সে বিঘ্ন ও প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পথ চলতে হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মে উদ্দীপনা ও বাঙালির স্বাজাত্যবোধে নবীন চেতনা সৃষ্টি করেছিল ছায়ানট। ছায়ানটের এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ছায়ানটের প্রাক্তনী মাননীয় শেখ হাসিনার আগ্রহ ও দানে এক ভবন গড়ে উঠেছে শংকরের সন্নিকটে। এই ভবনেই কয়েক সহস্র শিক্ষার্থী দীক্ষা নিচ্ছে সংগীতে ও জীবনবোধে, বাঙালিত্বের সাধনা যাতে উন্নত ও স্নিগ্ধ, চারু ও মনোজ সুষমায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে-এ ছায়ানটের আরাধ্য হয়ে উঠেছে। এই ভবন এখন সংস্কৃতি চর্চারও এক প্রতীক।

ছায়ানটের এই সাংস্কৃতিক কর্মপ্রবাহ মুক্তিযুদ্ধের পথ নির্মাণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে এবং যে-কোনো যুদ্ধের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গে দীপ্তিমান হয়ে থাকে সাংস্কৃতিক বোধ ও বুদ্ধির আদর্শিক চেতনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন যে বৃহৎ পটভূমি সৃষ্টি করেছিল, সেখানেও অনন্য অবদান রেখেছে ছায়ানট।

এবার শ্রাবণের কথায় ফিরে আসি। এই শ্রাবণ মাসেই এই বাংলাদেশে এক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আকস্মিক বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা নিষিদ্ধ করেন। এরই প্রতিবাদে আসন্ন বাইশে শ্রাবণ পালন উপলক্ষে গড়ে ওঠে রবীন্দ্র স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা পরিষদ। ছায়ানট এই সাংস্কৃতিক যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সঙ্গী হিসেবে পায় বাফা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদকে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশ মঞ্চস্থ হয়। তখন সেনা শাসন। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে তাসের দেশ নাটকের মঞ্চায়ন এক নবীন ব্যঞ্জনা ও প্রত্যয়ে দর্শকদের হৃদয় ও মনে অর্থবোধক হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন খ্যাতনামা শিল্পীরা। শেষের দিন রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা পরিবেশনের পর গানের অনুষ্ঠান চলাকালে গভর্নর মোনায়েম খানের গুন্ডাবাহিনী নানা মারণাস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে অনুষ্ঠানস্থলে। তবু প্রতিবাদী সংস্কৃতির চর্চা থেমে থাকে না।

সেই সময়ে প্রাণের আবেগে রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন দেশের খ্যাতনামা ও প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পীরা। এক যুক্ত বিবৃতিতে রবীন্দ্রনাথকে পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অভিহিত করেন তাঁরা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাল্টা বিবৃতি ও রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়। এসব সত্ত্বেও রবীন্দ্র-সংস্কৃতির নানামুখী সৃজন ধারা ও চর্চা প্রতিবাদী চেতনায় আরো প্রাণপ্রবাহিণী হয়ে ওঠে। স্বাজাত্যবোধে ও ঐতিহ্য-জিজ্ঞাসায় ষাটের দশকে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেও রবীন্দ্রনাথ প্রতিনিয়ত নবীন মাত্রা যোগ করতে থাকেন। সমগ্র দেশের সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। মিছিল ও সভাও হতে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রতিবাদ থেকেই দেশে আরেক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নবীন মাত্রাসঞ্চারী হয়ে ওঠে।

ষাটের দশকের প্রারম্ভে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপন, সেই সময়ে বাফার প্রযত্নে রবীন্দ্র-সংস্কৃতির চর্চা, ছায়ানটের জন্ম এবং প্রতিষ্ঠা এবং এই প্রতিষ্ঠানের বিরতিহীন সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথকে, রবীন্দ্র-সংস্কৃতিকে প্রাণের আবেগে ও অঙ্গীকারে পেয়েছি। তাঁর কাছেই মহান মানবিকতার শিক্ষা নিয়ে যে-কোনো জাতীয় দুর্যোগ ও আর্তমানবতার সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত করেছে ছায়ানট। বন্যা-ত্রাণ ও জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত মানুষের হৃদয়ে মনোবল সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে ছায়ানটের কর্মীরা দুর্গত অঞ্চলে ছুটে যায়।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের সকল দুঃখ-সুখে, প্রেম-অপ্রেমে ও দৈনন্দিন জীবনে সংকট ও ত্রাণে হয়ে উঠেছেন অন্যতম এক সহায়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে জীবনে প্রত্যয়দীপ্ত হতে শিখিয়েছেন তিনি। সুন্দরকে অভ্যর্থনার জন্য আমরা শিক্ষিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে। সভ্যতা আজ যে সংকটে পতিত হয়েছে সেখানে তাঁর অজস্র লেখনীর মধ্যে, ভাষণে ও চিঠিপত্রে সংকট নিরসনের যে আভাস ছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়ে শতবর্ষ পূর্বের তাঁর প্রত্যক্ষণ, শঙ্কা ও ভবিষ্যদ্বাণী কত যে তাৎপর্যময় ছিল তা উপলব্ধি করি। ঠিক শত বর্ষ আগে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি যে নাইটহুট ত্যাগ করেন তা হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দেশচেতনার এক দলিল। তিনি ১৯১৯ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ ভাইসরয়কে চিঠি লিখে নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করেন। মানবের মঙ্গলচিন্তা নিয়ে সকল সময় তিনি ভেবেছেন। সেজন্যই মহামনীষী রোম্যাঁ রোলাঁ ও আইনস্টাইনের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভাবুকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। পত্রালাপ চলতে থাকে। সম্প্রতি চিন্ময় গুহের সম্পাদনায় অক্সফোর্ড প্রকাশনা থেকে রোম্যাঁ রোলাঁ ও রবীন্দ্রনাথের পত্রালাপ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটির নাম BRIDGING EAST & WEST। গ্রন্থটি এক অর্থে অসাধারণ। সম্পাদকের ৭২ পৃষ্ঠার ভূমিকা সংবলিত এই গ্রন্থটি এই দুই মনীষীর ভাবনার জগৎ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার দিগন্তকে বিস্তৃত করে। এই বইটি আলো ফেলেছে নতুন করে ভাবনার জগতে। বিশেষ করে বর্তমান সংকটকালে নিরাশায়ও অটল ও অবিচলিত বিশ্বাসী হয়ে উঠি। সখ্যে এই পত্রলিপি বিশ্ববাসী ও আমাদের জন্য হয়ে ওঠে নির্ভীক স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন দুই মহামানবের মিলিত ভাবনার প্রকাশ। তাঁদের দুজনের সখ্য ও আত্মীয়তা কত গভীর ছিল এও প্রতীয়মান হয়। বইটি আলোচনাকালে মনসিজ মজুমদার বলছেন, “দুজনেরই স্বপ্ন ছিল বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক মৈত্রী। দুজনেই চেয়েছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার মিলন : BRIDGING EAST & WEST-এ প্রত্যক্ষ করা যায় Rabindranath Tagore and Romain Rolland Correspondence (1919-1940) । দুজনেরই চিন্তাভাবনা জারিত ছিল আধ্যাত্মিকতায়। আবার দুজনেই অনেক বিষয়ে ভিন্ন মত ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির চিন্তাবিদ ছিলেন। এমন ধারণাই পাওয়া যায় তাঁদের চিঠিগুলিতে এবং সাক্ষাৎ-সংলাপে।”

পরবর্তীকালে রবীন্দ্রাথের সঙ্গে সাক্ষাৎও হয় পাশ্চাত্যে অনেকের সঙ্গে। মানবসভ্যতার সংকট, মানবের মঙ্গল চেতনা ও যুক্তিবাদিতা এবং সৃজন তাঁদের ভাববিনিময়ের বিষয় হয়ে ওঠে। আসন্ন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের লগ্নে এই ভাবুক মানুষদের চিন্তা ও মানবসভ্যতা রক্ষাকল্পে দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের জীবনচেতনাকে আজো নানা জিজ্ঞাসায় আলোড়িত করে। আমরা প্রাণিত বোধ করি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে। তাঁর শিক্ষাদর্শ, রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা, সৃজনধারা, মানবিক ভাবনা সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকার যে শিক্ষা দিয়েছে, তা আমাদের কাছে আজো প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিপরীতে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ, শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। শ্রী নিকেতন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি পল্লীর মানুষের সৃজনশক্তি ও আত্মশক্তিকে ভিন্ন মর্যাদা দান করেছিলেন। এখনো জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণতা নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ বা সভ্যতার সংকট নিয়ে তাঁর ভাবনা আমাদের সংকটদীর্ণ সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়। বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক মৈত্রীর যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তাও খুব তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার মিলন রবীন্দ্রনাথের অন্বিষ্ট হয়ে উঠেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনের সূত্র হোক জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও সংস্কারের ক্ষুদ্র গন্ডির বাইরে বৃহত্তর সংস্কৃতি, মানবিকতা ও বিশ্বমৈত্রী-এই অভিপ্রায় নিয়ে তিনি বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন। এই বাণীর বিদ্যুচ্ছটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন সকল মানবের হৃদয়ে।

ছায়ানট রবীন্দ্রনাথের জীবনসাধনার মর্মবাণীকে ধারণ করেই পথ চলছে ও সংস্কৃতির সকল শাখাকে দীপ্তিময় করে তুলছে। সেখানে উপেক্ষিত হননি নজরুল ও ঐতিহ্য জিজ্ঞাসা। লোক সংগীত, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও শাস্ত্রীয় যন্ত্রসংগীতেরও চর্চা ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে করা হয় ছায়ানটে। রবীন্দ্রনাথের মানবিক সৃজন-উৎকর্ষ আমাদের আধুনিকতায়, আমাদের মনন ও মনীষায় যে কত দীপ্তিমান-এ কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর প্রয়াণ দিবস ও স্মরণ উৎসবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি তাঁকে।

সকলকে ধন্যবাদ জানাই

(২২শে শ্রাবণ উপলক্ষে ছায়ানটে রবীন্দ্র উৎসবের সূচনায় এই লেখাটি পঠিত। ঈষৎ পরিবর্তিত।)