জনপদে শ্বাপদের মুখ

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

ছোট্ট সায়মার বুঝি আকাশ দেখার ইচ্ছে হয়েছিল। তাই ঘর ছেড়ে ও গিয়েছিল ছাদে। নীল আকাশে নাচবে সে। বোঝেনি নিষ্পাপ বালিকা, আকাশের নিচে সেদিন ছিল কালো থাবা। সে থাবায় রক্তাক্ত হয় সে। মানুষের জানোয়াররূপী চেহারা দেখে সেদিন কি খুব অবাক হয়েছিল ছোট্ট সায়মা? জানা হয় না। হাত পা ছুড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল বাচ্চা মেয়েটি। পারেনি। তাই বুঝি ক্ষুব্ধ হয়ে মানুষের ওপর একরাশ ঘৃণা জানিয়ে নীরবে চলে যায় ও।

ওর মৃতদেহ দেখে আমরা হই স্তম্ভিত। বাবা-মার বাঁধভাঙা কান্নায় হিম হয়ে ওঠে লাশকাটা ঘর। এক সহকর্মী জানান, এ ঘটনা জানার পর তার ৬ বছরের মেয়েকে বলে দিয়েছেন বাবা আর দাদু ছাড়া যেন কারও কোলে না যায় সে। কোনো ছেলে যেন তার হাত না ধরে। সেই ছোট্ট মেয়েটি এখন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে মায়ের আদেশ। চাচা মামা খালু, ফুপা কারও কাছে যায় না সে। কেউ চকোলেট দিলে হাত শক্ত করে রাখে। তার শিশু মনে আজ পুরুষ আর ছেলে শব্দটায় ভয়। কেন এমন হবে? এই শিশু বয়সে তো তার ছেলে বা পুরুষ শব্দ শেখার কথা না। কেন তাকে আজ এই শিশু বয়সেই শিখতে হবে ছেলেদের বিশ্বাস করা যাবে না? এই শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হবে তখন কি সে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারবে এ সমাজে?

প্রায় সব ঘরে ঘরে বাবা-মায়েরা আজ সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কিত। কাকে অবিশ্বাস করবেন তারা। চারপাশে সবাই তো আপনজন। এর মধ্যে কে শ্বাপদের মতো নখ বাড়িয়ে আছে কে জানে? সব মুখই তো সরল স্বাভাবিক। এর মধ্যে শ্বাপদের মুখ কার ? কার মনে কু ডাকে। জানে না কেউ। অসহায় ও চিন্তিত অভিভাবক। নানা রঙের মুখোশ চারদিকে। মুখোশের আড়ালে এই অচেনা মানুষগুলোই জনপদে রক্তাক্ত করছে শিশু, কিশোরী, তরুণী কিংবা শত বছরের বৃদ্ধার শরীর।

খুলনা বিভাগে গত ৩ মাসে ২৮টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। একটারও বিচার হয়নি। মূল অপরাধীরা কেউ ধরা পরেনি। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ সোনালি সেন জানান, আসামির নমুনা সংগ্রহ করা যায়না বলে বিচার কাজ আর এগোয় না। আহা কি দেশ আমার। ধর্ষকরা এতই ক্ষমতাবান তাদের ধরতে পারে না প্রশাসন। নাকের ডগার উপর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় ওরা। দিন যায়। বাড়ে ধর্ষণের ঘটনা। অসহায় আমরা শুধু দেখি ধর্ষিতার কান্না।

মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৭৮ জনকে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়।

মধ্যবয়স্ক লোক যে ৩ মাস বয়সী শিশুকে করছে পাশবিক নির্যাতন। সেই লোক কি কখনো তার শিশু কন্যাকে মা বলে আদর করেন? তিনি যখন বাড়ি যেয়ে তার নাতনিকে কোলে নেন পরম মমতায়। তখন কি তার একবারও মনে হয় না সেই ছোট্ট শিশুর সঙ্গে তার নির্মম ঘৃণ্য আচরণের কথা? তখন ঘৃণা হয় না তার নিজের প্রতি? যে তরুণ, বন্ধুত্ব, প্রেম আর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন প্রেয়সীর। সেই তরুণ কি কখনো সুখে থাকেন মনে? অনুশোচনায় কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে না তার? যে আত্মীয় আপন লোক পরিচয়ে তার নোংরা কালো হাত দেন শিশুর গায়ে। তিনি কি পাপের ভয় পান না মনে? চারিদিকে আজ মানুষরূপী হায়েনার ডাক। অফিসে, কারখানায়, বাসে, আড্ডায় সবাই আজ ক্ষুব্ধ এই বিকৃত মনের মানুষগুলোকে নিয়ে।

বেসরকারি চাকরিজীবী জেবিন রহমান ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন আজ অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলছেন কিন্তু এখনই তার পাশ দিয়ে কোনো তরুণী হেঁটে গেলে মনে মনে তিনিও কিন্তু বলেন ... তো বেশ। আড়চোখে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকান কিশোরীর দিকে। আড্ডায়, গল্পে নারী শরীর যেন এক রসালো গল্প। ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হয় নোংরা বিকৃত সব ছবি। অনেকেই দেখেন নানা ধরনের পর্নোসাইট। এসব অসুস্থ কাজ যখন করেন তখন একবারও হলেও কি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে না আত্মজার নিষ্পাপ মুখ? আপনি আজ যখন অন্যের মেয়ের দিকে তাকাবেন হায়েনার মতো। কাল আরেকজন আপনার মেয়ের দিকে তাকাবে সেই একই দৃষ্টিতে। প্রকৃতির বিচার বড় নির্মম। তিনি বিকৃত বোধের মানুষদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

কেন মানুষের মন আজ এত বিকৃত? কোথায় সমস্যা ? সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবার ও সমাজ থেকে মানুষ মূল্যবোধ শেখে। তার সামাজিকীকরণ হয় সমাজ কাঠামো থেকে। পুঁজিবাদী সমাজের কারণে সেই কাঠামো যখন ভেঙে যায় তখন এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। এক সময় মানুষ অপরাধ করতে ভয় পেতো। সমাজ কি বলবে এই ভয়ে থাকতো সে। কারণ সমাজে তখন শাসন ছিল। এঁটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না এ ধরনের কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল। সমাজের মাতবর বা যিনি মোড়ল ছিলেন তার কথা শুনতো সবাই। মানুষ মানুষকে মানার একটা প্রবণতা ছিল। কিন্তু এখন পুঁজিবাদী সমাজের কারণে সে নিয়ম আর মানছে না কেউ। বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে কিছু মানুষের কাছে এখন অনেক টাকা। তারা সমাজকে তোয়াক্কা করেন না। ফলে সামাজিকীকরণে একটা ধস নামে। প্রভাবশালী ব্যাক্তি সে তার মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চায় অনেককিছু। ফলে কাঠামোয় দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। টাকা আছে সব ম্যানেজ হয়ে যাবে । এ ভাবনার বাড়ছে বিকৃত রুচির মানুষ। বাড়ছে অপরাধ। ফলে যারা মূল্যবোধ নৈতিকতা নিয়ে ভাবেন তারা ধীরে ধীরে ক্ষমতার দাপটের কাছে হতাশ অসহায় হয়ে পড়েন। মাদ্রাসাগুলোকে আগে সবাই সম্মানের চোখে দেখত। এখন অনেক মাদ্রাসা থেকেই উগ্রবাদ জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। ফলে সেখানে ধস নামছে মূল্যবোধের। নৈতিকতা হারিয়ে নিষ্পাপ শিশুরাও আজ রেহাই পাচ্ছে না নির্যাতন থেকে। তবে আশার কথা এই যে, সামাজিক মাধ্যমসহ সব জায়গায় মানুষ এখন প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছে। একটা সময় আসবে এসব অন্ধকার একদিন ঠিক দূর হয়ে যাবে। যারা পড়াশুনা করছে বা যারা পড়াশুনার বাইরে তাদের সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া দরকার। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ঠিক করতে হবে সমাজ কাঠামোর সিস্টেম।

দমবন্ধ এ পরিবেশ থেকে আমাদের শিশুরা আলোর মুখ দেখুক। সেই আগের মতো বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করতে চাই আমরা। প্ল্যাকার্ড হাতে দেবশিশুদের আমরা আর রাস্তায় দেখতে চাই না। আমরা চাই ছেলে শিশু বা মেয়ে শিশু নয়, সব শিশুরা সমাজে শিশু হিসেবে নিরাপদে আনন্দে হাসতে হাসতে বড় হোক। কোনো শ্বাপদের কালো থাবার আঁচড় যেন আর একজনের গায়েও না লাগে তার জন্য আমাদের এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। যে যেভাবেই পারি। আঁধার ভেদ করে সূর্যকে কাছে আনা চাই, ওই দূর বহুদূর তবে তত দূর নয়।

[লেখক : সাংবাদিক, একুশে টেলিভিশন]

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯ , ৯ শ্রাবন ১৪২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪০

জনপদে শ্বাপদের মুখ

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

ছোট্ট সায়মার বুঝি আকাশ দেখার ইচ্ছে হয়েছিল। তাই ঘর ছেড়ে ও গিয়েছিল ছাদে। নীল আকাশে নাচবে সে। বোঝেনি নিষ্পাপ বালিকা, আকাশের নিচে সেদিন ছিল কালো থাবা। সে থাবায় রক্তাক্ত হয় সে। মানুষের জানোয়াররূপী চেহারা দেখে সেদিন কি খুব অবাক হয়েছিল ছোট্ট সায়মা? জানা হয় না। হাত পা ছুড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল বাচ্চা মেয়েটি। পারেনি। তাই বুঝি ক্ষুব্ধ হয়ে মানুষের ওপর একরাশ ঘৃণা জানিয়ে নীরবে চলে যায় ও।

ওর মৃতদেহ দেখে আমরা হই স্তম্ভিত। বাবা-মার বাঁধভাঙা কান্নায় হিম হয়ে ওঠে লাশকাটা ঘর। এক সহকর্মী জানান, এ ঘটনা জানার পর তার ৬ বছরের মেয়েকে বলে দিয়েছেন বাবা আর দাদু ছাড়া যেন কারও কোলে না যায় সে। কোনো ছেলে যেন তার হাত না ধরে। সেই ছোট্ট মেয়েটি এখন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে মায়ের আদেশ। চাচা মামা খালু, ফুপা কারও কাছে যায় না সে। কেউ চকোলেট দিলে হাত শক্ত করে রাখে। তার শিশু মনে আজ পুরুষ আর ছেলে শব্দটায় ভয়। কেন এমন হবে? এই শিশু বয়সে তো তার ছেলে বা পুরুষ শব্দ শেখার কথা না। কেন তাকে আজ এই শিশু বয়সেই শিখতে হবে ছেলেদের বিশ্বাস করা যাবে না? এই শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হবে তখন কি সে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারবে এ সমাজে?

প্রায় সব ঘরে ঘরে বাবা-মায়েরা আজ সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কিত। কাকে অবিশ্বাস করবেন তারা। চারপাশে সবাই তো আপনজন। এর মধ্যে কে শ্বাপদের মতো নখ বাড়িয়ে আছে কে জানে? সব মুখই তো সরল স্বাভাবিক। এর মধ্যে শ্বাপদের মুখ কার ? কার মনে কু ডাকে। জানে না কেউ। অসহায় ও চিন্তিত অভিভাবক। নানা রঙের মুখোশ চারদিকে। মুখোশের আড়ালে এই অচেনা মানুষগুলোই জনপদে রক্তাক্ত করছে শিশু, কিশোরী, তরুণী কিংবা শত বছরের বৃদ্ধার শরীর।

খুলনা বিভাগে গত ৩ মাসে ২৮টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। একটারও বিচার হয়নি। মূল অপরাধীরা কেউ ধরা পরেনি। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ সোনালি সেন জানান, আসামির নমুনা সংগ্রহ করা যায়না বলে বিচার কাজ আর এগোয় না। আহা কি দেশ আমার। ধর্ষকরা এতই ক্ষমতাবান তাদের ধরতে পারে না প্রশাসন। নাকের ডগার উপর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় ওরা। দিন যায়। বাড়ে ধর্ষণের ঘটনা। অসহায় আমরা শুধু দেখি ধর্ষিতার কান্না।

মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৭৮ জনকে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়।

মধ্যবয়স্ক লোক যে ৩ মাস বয়সী শিশুকে করছে পাশবিক নির্যাতন। সেই লোক কি কখনো তার শিশু কন্যাকে মা বলে আদর করেন? তিনি যখন বাড়ি যেয়ে তার নাতনিকে কোলে নেন পরম মমতায়। তখন কি তার একবারও মনে হয় না সেই ছোট্ট শিশুর সঙ্গে তার নির্মম ঘৃণ্য আচরণের কথা? তখন ঘৃণা হয় না তার নিজের প্রতি? যে তরুণ, বন্ধুত্ব, প্রেম আর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন প্রেয়সীর। সেই তরুণ কি কখনো সুখে থাকেন মনে? অনুশোচনায় কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে না তার? যে আত্মীয় আপন লোক পরিচয়ে তার নোংরা কালো হাত দেন শিশুর গায়ে। তিনি কি পাপের ভয় পান না মনে? চারিদিকে আজ মানুষরূপী হায়েনার ডাক। অফিসে, কারখানায়, বাসে, আড্ডায় সবাই আজ ক্ষুব্ধ এই বিকৃত মনের মানুষগুলোকে নিয়ে।

বেসরকারি চাকরিজীবী জেবিন রহমান ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন আজ অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলছেন কিন্তু এখনই তার পাশ দিয়ে কোনো তরুণী হেঁটে গেলে মনে মনে তিনিও কিন্তু বলেন ... তো বেশ। আড়চোখে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকান কিশোরীর দিকে। আড্ডায়, গল্পে নারী শরীর যেন এক রসালো গল্প। ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হয় নোংরা বিকৃত সব ছবি। অনেকেই দেখেন নানা ধরনের পর্নোসাইট। এসব অসুস্থ কাজ যখন করেন তখন একবারও হলেও কি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে না আত্মজার নিষ্পাপ মুখ? আপনি আজ যখন অন্যের মেয়ের দিকে তাকাবেন হায়েনার মতো। কাল আরেকজন আপনার মেয়ের দিকে তাকাবে সেই একই দৃষ্টিতে। প্রকৃতির বিচার বড় নির্মম। তিনি বিকৃত বোধের মানুষদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

কেন মানুষের মন আজ এত বিকৃত? কোথায় সমস্যা ? সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবার ও সমাজ থেকে মানুষ মূল্যবোধ শেখে। তার সামাজিকীকরণ হয় সমাজ কাঠামো থেকে। পুঁজিবাদী সমাজের কারণে সেই কাঠামো যখন ভেঙে যায় তখন এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। এক সময় মানুষ অপরাধ করতে ভয় পেতো। সমাজ কি বলবে এই ভয়ে থাকতো সে। কারণ সমাজে তখন শাসন ছিল। এঁটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না এ ধরনের কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল। সমাজের মাতবর বা যিনি মোড়ল ছিলেন তার কথা শুনতো সবাই। মানুষ মানুষকে মানার একটা প্রবণতা ছিল। কিন্তু এখন পুঁজিবাদী সমাজের কারণে সে নিয়ম আর মানছে না কেউ। বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে কিছু মানুষের কাছে এখন অনেক টাকা। তারা সমাজকে তোয়াক্কা করেন না। ফলে সামাজিকীকরণে একটা ধস নামে। প্রভাবশালী ব্যাক্তি সে তার মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চায় অনেককিছু। ফলে কাঠামোয় দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। টাকা আছে সব ম্যানেজ হয়ে যাবে । এ ভাবনার বাড়ছে বিকৃত রুচির মানুষ। বাড়ছে অপরাধ। ফলে যারা মূল্যবোধ নৈতিকতা নিয়ে ভাবেন তারা ধীরে ধীরে ক্ষমতার দাপটের কাছে হতাশ অসহায় হয়ে পড়েন। মাদ্রাসাগুলোকে আগে সবাই সম্মানের চোখে দেখত। এখন অনেক মাদ্রাসা থেকেই উগ্রবাদ জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। ফলে সেখানে ধস নামছে মূল্যবোধের। নৈতিকতা হারিয়ে নিষ্পাপ শিশুরাও আজ রেহাই পাচ্ছে না নির্যাতন থেকে। তবে আশার কথা এই যে, সামাজিক মাধ্যমসহ সব জায়গায় মানুষ এখন প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছে। একটা সময় আসবে এসব অন্ধকার একদিন ঠিক দূর হয়ে যাবে। যারা পড়াশুনা করছে বা যারা পড়াশুনার বাইরে তাদের সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া দরকার। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ঠিক করতে হবে সমাজ কাঠামোর সিস্টেম।

দমবন্ধ এ পরিবেশ থেকে আমাদের শিশুরা আলোর মুখ দেখুক। সেই আগের মতো বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করতে চাই আমরা। প্ল্যাকার্ড হাতে দেবশিশুদের আমরা আর রাস্তায় দেখতে চাই না। আমরা চাই ছেলে শিশু বা মেয়ে শিশু নয়, সব শিশুরা সমাজে শিশু হিসেবে নিরাপদে আনন্দে হাসতে হাসতে বড় হোক। কোনো শ্বাপদের কালো থাবার আঁচড় যেন আর একজনের গায়েও না লাগে তার জন্য আমাদের এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। যে যেভাবেই পারি। আঁধার ভেদ করে সূর্যকে কাছে আনা চাই, ওই দূর বহুদূর তবে তত দূর নয়।

[লেখক : সাংবাদিক, একুশে টেলিভিশন]