সৌদিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে কংগ্রেসের প্রস্তাবে ভেটো ট্রাম্পের

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে কংগ্রেসের একাধিক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তিনটি প্রস্তাব পাস হয়ে হোয়াইট হাউজে গেলে ট্রাম্প ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা বাতিল করে দেন।

গত মে মাসে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সৌদির কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেন মার্কিন ট্রাম্প। এ ধরনের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সাধারণত মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের দরকার হলেও বিশেষ অবস্থায় প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে তা অনুমোদনের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন তিনি। গত জুনে সৌদিও কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করতে তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করে সিনেট। বুধবার (১৭ জুলাই) প্রস্তাবগুলো প্রতিনিধি পরিষদও পাস করে। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া তিনটি প্রস্তাবের দুটি ২৩৮-১৯০ ভোটে এবং তৃতীয়টি ২৩৭-১৯০ ভোটে পাস হয়। তিনটি প্রস্তাবেই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় আঘাতের সক্ষমতাসম্পন্ন মার্কিন অস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প তা আমলে নেননি। গত মে মাসেই ট্রাম্প বলেন, তিনি এ অস্ত্র বিক্রিতে প্রয়োজনে জরুরি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি বলেন, এ অস্ত্র বিক্রিতে বাধা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব। সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ ছাড়াও ইরাক ও লেবাননে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানও বিপরীতমুখী। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা বেশ কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতি ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকা-ের কারণে সৌদি সরকারের সঙ্গে এমন চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না কংগ্রেস সদস্যরা। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে শুরু হয়েছিল গৃহযুদ্ধ। হাউথি ও সালেহ জোট রাজধানী সানা দখল করলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে হামলা চালানো শুরু করে। সৌদি আরবের দাবি, হুদাইদা বন্দর দিয়ে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে, যা দিয়ে তারা ইরান থেকে অস্ত্র কেনে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ভেঙে পড়ে হুদাইদা বন্দরের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ইয়েমেনে দেখা দেয় চরম মানবিক দুর্যোগ। হুদাইদা বন্দরই ইয়েমেনে ত্রাণ সরবরাহের মূল মাধ্যম। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়ে।

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯ , ১১ শ্রাবন ১৪২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪০

সৌদিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে কংগ্রেসের প্রস্তাবে ভেটো ট্রাম্পের

সংবাদ ডেস্ক |

image

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে কংগ্রেসের একাধিক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তিনটি প্রস্তাব পাস হয়ে হোয়াইট হাউজে গেলে ট্রাম্প ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা বাতিল করে দেন।

গত মে মাসে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সৌদির কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেন মার্কিন ট্রাম্প। এ ধরনের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সাধারণত মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের দরকার হলেও বিশেষ অবস্থায় প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে তা অনুমোদনের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন তিনি। গত জুনে সৌদিও কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করতে তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করে সিনেট। বুধবার (১৭ জুলাই) প্রস্তাবগুলো প্রতিনিধি পরিষদও পাস করে। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া তিনটি প্রস্তাবের দুটি ২৩৮-১৯০ ভোটে এবং তৃতীয়টি ২৩৭-১৯০ ভোটে পাস হয়। তিনটি প্রস্তাবেই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় আঘাতের সক্ষমতাসম্পন্ন মার্কিন অস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প তা আমলে নেননি। গত মে মাসেই ট্রাম্প বলেন, তিনি এ অস্ত্র বিক্রিতে প্রয়োজনে জরুরি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি বলেন, এ অস্ত্র বিক্রিতে বাধা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব। সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ ছাড়াও ইরাক ও লেবাননে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানও বিপরীতমুখী। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা বেশ কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতি ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকা-ের কারণে সৌদি সরকারের সঙ্গে এমন চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না কংগ্রেস সদস্যরা। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে শুরু হয়েছিল গৃহযুদ্ধ। হাউথি ও সালেহ জোট রাজধানী সানা দখল করলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে হামলা চালানো শুরু করে। সৌদি আরবের দাবি, হুদাইদা বন্দর দিয়ে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে, যা দিয়ে তারা ইরান থেকে অস্ত্র কেনে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ভেঙে পড়ে হুদাইদা বন্দরের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ইয়েমেনে দেখা দেয় চরম মানবিক দুর্যোগ। হুদাইদা বন্দরই ইয়েমেনে ত্রাণ সরবরাহের মূল মাধ্যম। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়ে।