পৃথিবীকে বাঁচাতে সময় আছে মাত্র ১৮ মাস!

কিছুদিন আগেও বলা হচ্ছিল, পৃথিবীকে বাঁচাতে আর সময় আছে মাত্র ১২ বছর। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, ১২ বছর নয়, আগামী ১৮ মাস (দেড় বছর) পৃথিবীকে রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যা করার করতে হবে এর মধ্যেই। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের বরাতে সম্প্রতি বিবিসির বাংলা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের বিজ্ঞানীদের একটি টিম, ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) গত বছর জানায়, যদি এ শতকের মধ্যে আমরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে চাই, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু এখন অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, অতটা সময় আর হাতে নেই। কার্বন নির্গমন কমাতে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে ২০২০ সালের আগেই। পৃথিবীকে রক্ষার জন্য ২০২০ সালকে শেষ সময়সীমা বলে ধরে নেয়া হচ্ছে, সেটা বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী প্রথম ঘোষণা করেন ২০১৭ সালে। জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং পটসড্যাম ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের হ্যান্স জোয়াকিম শেলনহুবার বলেন, ‘জলবায়ু বিষয়ক অংকটা বেশ নির্মমভাবেই স্পষ্ট এখন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো পৃথিবীর ক্ষত সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, কিন্তু ২০২০ সালের মধ্যে আমরা পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারি আমাদের অবহেলার মাধ্যমে।’ ২০২০ সালই যে পৃথিবীকে জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ- তা দিনে দিনে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসও সম্প্রতি কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে একই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় মত হচ্ছে, আগামী ১৮ মাসেই নির্ধারিত হবে আমরা জলবায়ুর পরিবর্তনকে আমাদের টিকে থাকার মাত্রায় আটকে রাখতে পারব কিনা। আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রকৃতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারব কিনা।’

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হওয়ার পর এটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। কারণ এ চুক্তির একটি রুলবুক এখনও প্রস্তুত করা হয়নি। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এমন অঙ্গীকারও করেছিল যে তারা ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমাতে আরও ব্যবস্থা নেবে। গত বছর আইপিসিসির রিপোর্টে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ঠিক করা হয়েছিল, যেটি সেভাবে আলোচিত হয়নি। সেটি হচ্ছে, কার্বন নির্গমন বাড়ার হার ২০২০ সালেই থামিয়ে দিতে হবে, যাতে তাপমাত্রা এ শতকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি আর না বাড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা কোনভাবেই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নিরাপদ সীমার মধ্যে ধরে রাখতে পারবে না। চলতি শতকের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা হয়তো তিন ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো সাধারণত পাঁচ বা দশ বছর মেয়াদি। কাজেই ২০৩০ সাল নাগাদ যদি কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হয়, সেই পরিকল্পনা টেবিলে হাজির করতে হবে ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই। প্রথম যে বড় বাধাটি অতিক্রম করতে হবে সেটি হচ্ছে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসের আহ্বানে বিশেষ জলবায়ু সম্মেলন, যেটি হবে এবছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। জাতিসংঘ মহাসচিব বেশ খোলাখুলিই বলেছেন, কোনও দেশ যদি তাদের কার্বন নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর প্রস্তাব করতে পারে, তবেই যেন তারা এই সম্মেলনে আসে। এরপর চলতি বছরের শেষ নাগাদ চিলির সান্টিয়াগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলে একটি সম্মেলন হবে। সেখানে এই প্রক্রিয়া আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটবে এর পরের সম্মেলনটিতে- যা ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ব্রিটেনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্রিটেন আশা করছে, ব্রেক্সিটের পর তারা সেখানে এই কাজের জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার- সেটা তারা দেখাতে পারবে।

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯ , ১১ শ্রাবন ১৪২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪০

পৃথিবীকে বাঁচাতে সময় আছে মাত্র ১৮ মাস!

সংবাদ ডেস্ক |

image

কিছুদিন আগেও বলা হচ্ছিল, পৃথিবীকে বাঁচাতে আর সময় আছে মাত্র ১২ বছর। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, ১২ বছর নয়, আগামী ১৮ মাস (দেড় বছর) পৃথিবীকে রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যা করার করতে হবে এর মধ্যেই। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের বরাতে সম্প্রতি বিবিসির বাংলা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের বিজ্ঞানীদের একটি টিম, ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) গত বছর জানায়, যদি এ শতকের মধ্যে আমরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে চাই, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু এখন অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, অতটা সময় আর হাতে নেই। কার্বন নির্গমন কমাতে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে ২০২০ সালের আগেই। পৃথিবীকে রক্ষার জন্য ২০২০ সালকে শেষ সময়সীমা বলে ধরে নেয়া হচ্ছে, সেটা বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী প্রথম ঘোষণা করেন ২০১৭ সালে। জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং পটসড্যাম ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের হ্যান্স জোয়াকিম শেলনহুবার বলেন, ‘জলবায়ু বিষয়ক অংকটা বেশ নির্মমভাবেই স্পষ্ট এখন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো পৃথিবীর ক্ষত সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, কিন্তু ২০২০ সালের মধ্যে আমরা পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারি আমাদের অবহেলার মাধ্যমে।’ ২০২০ সালই যে পৃথিবীকে জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ- তা দিনে দিনে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসও সম্প্রতি কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে একই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় মত হচ্ছে, আগামী ১৮ মাসেই নির্ধারিত হবে আমরা জলবায়ুর পরিবর্তনকে আমাদের টিকে থাকার মাত্রায় আটকে রাখতে পারব কিনা। আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রকৃতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারব কিনা।’

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হওয়ার পর এটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। কারণ এ চুক্তির একটি রুলবুক এখনও প্রস্তুত করা হয়নি। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এমন অঙ্গীকারও করেছিল যে তারা ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমাতে আরও ব্যবস্থা নেবে। গত বছর আইপিসিসির রিপোর্টে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ঠিক করা হয়েছিল, যেটি সেভাবে আলোচিত হয়নি। সেটি হচ্ছে, কার্বন নির্গমন বাড়ার হার ২০২০ সালেই থামিয়ে দিতে হবে, যাতে তাপমাত্রা এ শতকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি আর না বাড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা কোনভাবেই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নিরাপদ সীমার মধ্যে ধরে রাখতে পারবে না। চলতি শতকের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা হয়তো তিন ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো সাধারণত পাঁচ বা দশ বছর মেয়াদি। কাজেই ২০৩০ সাল নাগাদ যদি কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হয়, সেই পরিকল্পনা টেবিলে হাজির করতে হবে ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই। প্রথম যে বড় বাধাটি অতিক্রম করতে হবে সেটি হচ্ছে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসের আহ্বানে বিশেষ জলবায়ু সম্মেলন, যেটি হবে এবছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। জাতিসংঘ মহাসচিব বেশ খোলাখুলিই বলেছেন, কোনও দেশ যদি তাদের কার্বন নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর প্রস্তাব করতে পারে, তবেই যেন তারা এই সম্মেলনে আসে। এরপর চলতি বছরের শেষ নাগাদ চিলির সান্টিয়াগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলে একটি সম্মেলন হবে। সেখানে এই প্রক্রিয়া আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটবে এর পরের সম্মেলনটিতে- যা ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ব্রিটেনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্রিটেন আশা করছে, ব্রেক্সিটের পর তারা সেখানে এই কাজের জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার- সেটা তারা দেখাতে পারবে।