গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা

৯০ জনের নামে অভিযোগপত্র

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের সাঁওতাল পল্লীতে হত্যা, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার দুই বছর আট মাস পর গতকাল গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার। এদিকে মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে বিকাল ৩টায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে সাঁওতালরা।

পিবিআই কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিনিয়র বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্র-এর আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ শাকিল, একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম ও আইয়ুব আলী, চিনি কলের (জিএম-অর্থ) নাজমুল হুদা এবং চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলালসহ ৯০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার সারাই গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে মিঠু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। সাঁওতালদের লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও অন্যান্য মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, এই মামলাটি গোবিন্দগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়। তাই প্রথম দিকে গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই আবদুল গফুর ও পুলিশ পরিদর্শক আল মামুন মোহাম্মদ নাজমুল আহম্মেদ তদন্ত করেন। পরে পিবিআই এ হস্তান্তর হলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন এবং সবশেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার তদন্ত করেন।

মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, শুধু পিবিআই নয়, অতিরিক্ত গাইবান্ধা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই মামলার জুডিশিয়াল তদন্ত করেছেন। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেননি। এছাড়া পিবিআই ঘটনা তদন্তে প্রত্যক্ষ সাক্ষী, জখমি, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ ঘটনায় জড়িত কোন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেনি। এমনকি ভিডিও, পত্রিকার ছবি বিশ্লেষণ করে এই ঘটনার সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত আছে বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। এ কারণে চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে কোন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয় নাই। তিনি আরও জানান, একইভাবে ব্যাপক তদন্ত করে এই ঘটনার সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এক প্রতিক্রিয়ায় সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন অসংখ্য সাঁওতাল। এছাড়া অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়। এমনকি আদিবাসী সাঁওতাল শিশুদের স্কুলটি সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার মামলার চূড়ান্ত অভিযোগ প্রতিবেদনে প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক আসামিদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই চার্জশিটের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে এই মামলার চার্জশিট সংশোধন করে থমাস হেমব্রম যে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন তার আলোকে পুনরায় চার্জশিট প্রদান করা হোক। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।

অপরদিকে সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারকৃত প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৩টায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে সাঁওতালরা। ফলে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী পল্লী মাদারপুর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহকারে ৩ শতাধিক সাঁওতাল ওই এলাকায় এসে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এই অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেয়।

অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, আদিবাসী নেতা বার্নাবাশ, প্রিসিলা মুরমু, স্বপন শেখ, সুফল হেমব্রম, হবিবুর রহমান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা প্রমুখ। সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে ওই কর্মসূচিতে আগামী ৩০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও ১০ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাহেবগঞ্জ আখ খামার গড়ে তোলে। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। ২০১৫ সালে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের পূর্বপুরুদের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বড় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ওই খামারের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯ পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল মারা যান। পরবর্তীতে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

image

গাইবান্ধা : সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারকৃত প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে সাঁওতালরা

আরও খবর
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ আসছেন
জাতীয় মসজিদে বোমা হামলার হুমকির নেপথ্য কাহিনী
২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে
ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষ হতাহত হচ্ছে
গুজব ছড়ানোয় ৪ জন গ্রেফতার
নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ
বন্যার্তদের ত্রাণ অপ্রতুল
যুগ্ম সচিবের জন্য ফেরি ছাড়তে বিলম্ব অ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ গেল রোগীর
সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জেলায় নিহত ৬
ব্যাংক কর্মকর্তা নিজেই পরিবারকে জঙ্গি বানিয়েছে
ধর্ষণের অভিযোগে আ’লীগ নেতা আটক
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগে বদলি আতঙ্ক
যাত্রাবাড়ীতে পৃথক ঘটনায় ২ জন খুন

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪০

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা

৯০ জনের নামে অভিযোগপত্র

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারকৃত প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে সাঁওতালরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের সাঁওতাল পল্লীতে হত্যা, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার দুই বছর আট মাস পর গতকাল গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার। এদিকে মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে বিকাল ৩টায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে সাঁওতালরা।

পিবিআই কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিনিয়র বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্র-এর আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ শাকিল, একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম ও আইয়ুব আলী, চিনি কলের (জিএম-অর্থ) নাজমুল হুদা এবং চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলালসহ ৯০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার সারাই গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে মিঠু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। সাঁওতালদের লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও অন্যান্য মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, এই মামলাটি গোবিন্দগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়। তাই প্রথম দিকে গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই আবদুল গফুর ও পুলিশ পরিদর্শক আল মামুন মোহাম্মদ নাজমুল আহম্মেদ তদন্ত করেন। পরে পিবিআই এ হস্তান্তর হলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন এবং সবশেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার তদন্ত করেন।

মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, শুধু পিবিআই নয়, অতিরিক্ত গাইবান্ধা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই মামলার জুডিশিয়াল তদন্ত করেছেন। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেননি। এছাড়া পিবিআই ঘটনা তদন্তে প্রত্যক্ষ সাক্ষী, জখমি, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ ঘটনায় জড়িত কোন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেনি। এমনকি ভিডিও, পত্রিকার ছবি বিশ্লেষণ করে এই ঘটনার সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত আছে বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। এ কারণে চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে কোন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয় নাই। তিনি আরও জানান, একইভাবে ব্যাপক তদন্ত করে এই ঘটনার সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এক প্রতিক্রিয়ায় সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন অসংখ্য সাঁওতাল। এছাড়া অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়। এমনকি আদিবাসী সাঁওতাল শিশুদের স্কুলটি সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার মামলার চূড়ান্ত অভিযোগ প্রতিবেদনে প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক আসামিদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই চার্জশিটের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে এই মামলার চার্জশিট সংশোধন করে থমাস হেমব্রম যে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন তার আলোকে পুনরায় চার্জশিট প্রদান করা হোক। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।

অপরদিকে সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারকৃত প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৩টায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে সাঁওতালরা। ফলে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী পল্লী মাদারপুর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহকারে ৩ শতাধিক সাঁওতাল ওই এলাকায় এসে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এই অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেয়।

অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, আদিবাসী নেতা বার্নাবাশ, প্রিসিলা মুরমু, স্বপন শেখ, সুফল হেমব্রম, হবিবুর রহমান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা প্রমুখ। সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে ওই কর্মসূচিতে আগামী ৩০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও ১০ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাহেবগঞ্জ আখ খামার গড়ে তোলে। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। ২০১৫ সালে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের পূর্বপুরুদের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বড় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ওই খামারের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯ পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল মারা যান। পরবর্তীতে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।