যাত্রাবাড়ীতে পৃথক ঘটনায় ২ জন খুন

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পৃথক ঘটনায় দুইজন খুন হয়েছে। এদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ শেখদি এলাকায় সিনিয়র-জুনিয়র কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে রিফাত হোসেন বাইদুল নামে এক তরুণ এবং মোমেনবাগে বাসায় ঢুকে মহিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে গতকাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত রিফাতের বন্ধু মো. শাকিল জানান, গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে দক্ষিণ শেখদি ৫ নং গলির সততা ফার্নিচার দোকানের সামনে ছুরিকাঘাতে আহত হয় রিফাত। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৩টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিফাতের পিতার নাম আয়নাল হক। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার হুগলাকান্দি। তার মায়ের নাম সাহিদা বেগম। যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া স্বপন মৃধা রোডের শাহ আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া তারা। ৫ ভাইবোনের মধ্যে রিফাত ছিল ৩য়।

বন্ধু শাকিল আরও জানান, রোববার সকালে ওই এলাকার রাকিব, মহসিনসহ ৩ জন রিফাতকে মারধর করে। এরপর সে ফিরে এসে মোল্লা বাড়ি এলাকায় থাকা বন্ধুদের জানায়। এরপর শাকিলসহ ৩/৪ জন বন্ধু আবার ওই এলাকায় যায়। গিয়ে দূর থেকেই রাকিবকে দেখে রিফাত দৌড়ে গিয়ে রাকিবের কলার টেনে ধরে। তখন রাকিবের পকেটে থাকা সুইচ গিয়ার (ধারালো ছুরি) দিয়ে রিফাতের গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমরাও তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের ধরতে পারিনি।

রিফাতের অপর বন্ধু আবদুর রহমান জানান, রাকিব, মহসিন পাশের এলাকায় থাকে। তারা এলাকায় নিজেদের সিনিয়র বলে দাবি করতো। মাঝে মধ্যেই এটা নিয়ে তারা ঝগড়া করতো। রিফাতের মা সাহিদা বেগম জানান, তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রিফাত ছিল তৃতীয়। রোববার দুপুরে সিনিয়র-জুনিয়র কেন্দ্রে করে রাকিব ও মহসিনসহ তিন যুবক মিলে রিফাতকে ছুরিকাঘাত করে। এতে রিফাত গুরুতর আহত হয়। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনা হলে বিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) আবদুল্লাহ খান জানান, রিফাতের গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামকে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গত শনিবার গভীর রাতে একই এলাকার মোমেনবাগে বাসায় ঢুকে মহিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় জখম হয়েছেন তার মেয়ে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ডাকাতি করতে এসে কিছু না পেয়ে মহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে ডাকাতরা।

নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার মধ্যরাতে দরজায় ধাক্কার শব্দ পেয়ে ভাড়াটিয়া আসছে ভেবে দরজা খুলে দেন মহিবুল্লার ছোট মেয়ে প্রীতি। কিন্তু হঠাৎ করে দুইজন অপরিচিত লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রীতির হাত এবং মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর আরো কয়েকজন মুখোশ পরা অবস্থায় ঘরের মধ্যে ঢুকে। এ সময় তারা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করে। কিন্তু দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডাকাতরা মহিবুল্লাহকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। দীর্ঘ ৩০ বছর যাত্রাবাড়ীর মোমিনবাগ এলাকার এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মহিবুল্লাহ। পারিবারিক বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই বলে জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় আবদুর রহিম নামে একজন বলেন, উনি ভালো মানুষ, দীর্ঘদিন থেকেই এখানে থাকেন। প্রায় ত্রিশ বছর হলো এখানে বাড়ি করেছেন। আমরা কখনও শুনিনি তার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব আছে। পূর্ব শত্রুতা বা ডাকাতি কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়া মোমিনবাগ এলাকায় নিজ বাড়ির নিচতলায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন মহিবুল্লাহ। রাতে বাইরে থেকে কেউ বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে হত্যার পর পালিয়েছে। এছাড়া ডাকাতির ঘটনা কিনা তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনাÑ তা তদন্ত করার পর জানতে পারব। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪০

যাত্রাবাড়ীতে পৃথক ঘটনায় ২ জন খুন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পৃথক ঘটনায় দুইজন খুন হয়েছে। এদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ শেখদি এলাকায় সিনিয়র-জুনিয়র কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে রিফাত হোসেন বাইদুল নামে এক তরুণ এবং মোমেনবাগে বাসায় ঢুকে মহিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে গতকাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত রিফাতের বন্ধু মো. শাকিল জানান, গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে দক্ষিণ শেখদি ৫ নং গলির সততা ফার্নিচার দোকানের সামনে ছুরিকাঘাতে আহত হয় রিফাত। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৩টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিফাতের পিতার নাম আয়নাল হক। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার হুগলাকান্দি। তার মায়ের নাম সাহিদা বেগম। যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া স্বপন মৃধা রোডের শাহ আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া তারা। ৫ ভাইবোনের মধ্যে রিফাত ছিল ৩য়।

বন্ধু শাকিল আরও জানান, রোববার সকালে ওই এলাকার রাকিব, মহসিনসহ ৩ জন রিফাতকে মারধর করে। এরপর সে ফিরে এসে মোল্লা বাড়ি এলাকায় থাকা বন্ধুদের জানায়। এরপর শাকিলসহ ৩/৪ জন বন্ধু আবার ওই এলাকায় যায়। গিয়ে দূর থেকেই রাকিবকে দেখে রিফাত দৌড়ে গিয়ে রাকিবের কলার টেনে ধরে। তখন রাকিবের পকেটে থাকা সুইচ গিয়ার (ধারালো ছুরি) দিয়ে রিফাতের গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমরাও তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের ধরতে পারিনি।

রিফাতের অপর বন্ধু আবদুর রহমান জানান, রাকিব, মহসিন পাশের এলাকায় থাকে। তারা এলাকায় নিজেদের সিনিয়র বলে দাবি করতো। মাঝে মধ্যেই এটা নিয়ে তারা ঝগড়া করতো। রিফাতের মা সাহিদা বেগম জানান, তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রিফাত ছিল তৃতীয়। রোববার দুপুরে সিনিয়র-জুনিয়র কেন্দ্রে করে রাকিব ও মহসিনসহ তিন যুবক মিলে রিফাতকে ছুরিকাঘাত করে। এতে রিফাত গুরুতর আহত হয়। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনা হলে বিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) আবদুল্লাহ খান জানান, রিফাতের গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামকে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গত শনিবার গভীর রাতে একই এলাকার মোমেনবাগে বাসায় ঢুকে মহিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় জখম হয়েছেন তার মেয়ে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ডাকাতি করতে এসে কিছু না পেয়ে মহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে ডাকাতরা।

নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার মধ্যরাতে দরজায় ধাক্কার শব্দ পেয়ে ভাড়াটিয়া আসছে ভেবে দরজা খুলে দেন মহিবুল্লার ছোট মেয়ে প্রীতি। কিন্তু হঠাৎ করে দুইজন অপরিচিত লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রীতির হাত এবং মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর আরো কয়েকজন মুখোশ পরা অবস্থায় ঘরের মধ্যে ঢুকে। এ সময় তারা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করে। কিন্তু দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডাকাতরা মহিবুল্লাহকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। দীর্ঘ ৩০ বছর যাত্রাবাড়ীর মোমিনবাগ এলাকার এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মহিবুল্লাহ। পারিবারিক বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই বলে জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় আবদুর রহিম নামে একজন বলেন, উনি ভালো মানুষ, দীর্ঘদিন থেকেই এখানে থাকেন। প্রায় ত্রিশ বছর হলো এখানে বাড়ি করেছেন। আমরা কখনও শুনিনি তার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব আছে। পূর্ব শত্রুতা বা ডাকাতি কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়া মোমিনবাগ এলাকায় নিজ বাড়ির নিচতলায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন মহিবুল্লাহ। রাতে বাইরে থেকে কেউ বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে হত্যার পর পালিয়েছে। এছাড়া ডাকাতির ঘটনা কিনা তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনাÑ তা তদন্ত করার পর জানতে পারব। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।