প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মায়ানমারের হাতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল মায়ানমারের বাংলাদেশ-মায়নামার প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কামরুল আহসান বলেন, এর আগে দুই দফায় যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ৮ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের কাজ মায়ানমার শেষ করেছে। এই আট হাজার রোহিঙ্গা এখন চাইলে যে কোন সময় তাদের দেশে ফিরে যেতে পারেন।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ মায়ানমার প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান এবং মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।
নতুন তালিকায় যে রোহিঙ্গাদের নাম এসেছে, তারা ছয় হাজার পরিবারের সদস্য। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পর সব মিলিয়ে ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য মায়ানমারকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা একজন রোহিঙ্গাও মায়ানমারের রাখাইনে তাদের ভিটায় ফিরে যেতে পারেনি।
তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসছে সেপ্টেম্বরেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু করা যাবে বলে এখন আশা করছে সরকার। কামরুল আহসান প্রত্যাবাসন শুরু করতে এই বিলম্বের জন্য ‘আস্থার সংকটকেই’ সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের এ ধরনের প্রথম সফর, যেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রথম দাবি মায়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব। তারপর তারা চলাফেরার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক কর্মকা-ের স্বাধীনতা এবং নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা চায়।
‘এক সফরে সব সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের (মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের) আরও বেশ কয়েকবার আসতে হবে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাতে তাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জোর করে কাউকে ফেরত পাঠাব না।’
মায়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।
মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে অবশ্য দাবি করেছেন, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকেই তারা প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রস্তুত ছিলেন।
‘তাদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত, তাদের গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু বিষয়টা হলো, ফিরবে কিনাÑ সে সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে।’
মিন্ট থোয়ে বলেন, রোববার কক্সবাজারে গিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ আর দাবির কথা শুনেছেন, মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের তথ্য দিয়েছেন।
‘এখন তারা কখন যেতে চায়, এটা তারাই ঠিক করবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করব। কক্সবাজারে আমরা আরও যাব, আমাদের প্রস্তুতি তাদের জানাব।’
মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মায়ানমারের হাতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল মায়ানমারের বাংলাদেশ-মায়নামার প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কামরুল আহসান বলেন, এর আগে দুই দফায় যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ৮ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের কাজ মায়ানমার শেষ করেছে। এই আট হাজার রোহিঙ্গা এখন চাইলে যে কোন সময় তাদের দেশে ফিরে যেতে পারেন।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ মায়ানমার প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান এবং মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।
নতুন তালিকায় যে রোহিঙ্গাদের নাম এসেছে, তারা ছয় হাজার পরিবারের সদস্য। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পর সব মিলিয়ে ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য মায়ানমারকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা একজন রোহিঙ্গাও মায়ানমারের রাখাইনে তাদের ভিটায় ফিরে যেতে পারেনি।
তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসছে সেপ্টেম্বরেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু করা যাবে বলে এখন আশা করছে সরকার। কামরুল আহসান প্রত্যাবাসন শুরু করতে এই বিলম্বের জন্য ‘আস্থার সংকটকেই’ সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের এ ধরনের প্রথম সফর, যেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রথম দাবি মায়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব। তারপর তারা চলাফেরার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক কর্মকা-ের স্বাধীনতা এবং নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা চায়।
‘এক সফরে সব সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের (মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের) আরও বেশ কয়েকবার আসতে হবে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাতে তাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জোর করে কাউকে ফেরত পাঠাব না।’
মায়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।
মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে অবশ্য দাবি করেছেন, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকেই তারা প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রস্তুত ছিলেন।
‘তাদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত, তাদের গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু বিষয়টা হলো, ফিরবে কিনাÑ সে সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে।’
মিন্ট থোয়ে বলেন, রোববার কক্সবাজারে গিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ আর দাবির কথা শুনেছেন, মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের তথ্য দিয়েছেন।
‘এখন তারা কখন যেতে চায়, এটা তারাই ঠিক করবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করব। কক্সবাজারে আমরা আরও যাব, আমাদের প্রস্তুতি তাদের জানাব।’