পানির দরে দুধ খামারিরা বিপাকে

সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ

১৫ থেকে ২০ টাকা লিটার দুধ, তার পরেও খরিদ্দার না পেয়ে খমারিরা মহাবিপাকে পড়েছে। দুধ বিক্রি করতে না পেরে প্রতিবাদে খামারিরা সড়কে দুধ ঢেলে মানববন্ধন করে। এছাড়া কলস-বালতি-বোতলে ভরে দুধ পাঠাচ্ছে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে।

উচ্চ আদালত দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গতকাল থেকে মিল্টভিটা কর্তৃপক্ষ দুধ ক্রয় বন্ধ করে দেয়। একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিও দুধ ক্রয় বন্ধ রাখে।

বাঘাবাড়ি ‘মিল্ক ভিটা’ দুগ্ধ পক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে দুধ না নেয়ায় বৃহত্তর পাবনা জেলার (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ) প্রায় ২০ হাজার দুধ বিক্রেতা পড়েছে মহাবিপাকে। মিল্কভিটা তাদের তালিকাভুক্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারিদের কাছ থেকে গত দুই মাসে দুধ ক্রয় করা কমিয়ে দেয়। স্বাভাবিক সময়ে মিল্কভিটা প্রতিদিন দুইবেলা (সকাল-বিকাল) মোট সোয়া লাখ লিটার করে দুধ ক্রয় করে থাকে। কিন্তু দুধে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে এমন তথ্যের পর গত দুই মাস (জুন-জুলাই) মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ দুধ ক্রয় কমিয়ে ক্রয় করে প্রতিদিন ৮৫ থেকে ৯০ হাজার লিটার। সকালে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার লিটার এবং বিকেলে ৪০ থেকে ৪৩ হাজার লিটার করে। দুধের ফ্যাট অনুসারে মিল্ক ভিটায় দাম নির্ধারণ আছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা প্রতি লিটার।

মিল্কভিটা প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিামাণ দুধ ক্রয় করছিল গত দুই মাসে সেই পরিমাণ দুধ ক্রয় কমিয়ে দেয়ায় বাজারে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। রোববার দুধ ক্রয় না করার ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল দুধের বাজার আরও হ্রাস পেয়ে ১৫/২০ টাকায় দাঁড়ায়।

এদিকে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম দামে দুধ কিনে মাখন ও ছনা তৈরি করছে। পাবনার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া, বেড়া এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তারাশ, বেলকুচি উপজেলা এলাকার ছোট বড় বাজারে গতকাল খামারিরা প্রচুর দুধ নিয়ে আসে খোলাবাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু দুধের আমদানির পরিমাণের চেয়ে ক্রেতা কম হওয়ায় দুধ অবিক্রিত থাকে। দুধ ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হয় অসহায় খামারিরা। অনেকেই পাত্র ভর্তি করে দুধ পাঠায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।

পাবনার ডেমড়া, সোনাতলা, বেড়া, নাকালিয়া, আতাইকুলা, গোপালনগর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তালগাছিতে যেসব বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি (আড়ং, প্রাণ, ফ্রেশ মিল্ক, আকিজ, একমি, বারো আউলিয়া) দুধ ক্রয় করে থাকে সেসব কোম্পনিও গতকাল তাদের ক্রয়কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে রাখে। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ ক্রয় করে থাকে।

দুধে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক, সিসা ও ব্যাক্টেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে এই খবরের পর থেকেই বাজারে দুধের দাম হ্রাস পাওয়ায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দুধ ক্রয় করে মাখন এবং ছানা তৈরি করে পাঠাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। অনেকেই মাখন থেকে ঘি তৈরি করছে। মাত্র দুইমাস আগেও যেখানে পাবনা-সিরাজগঞ্জের বাজারে ঘি বিক্রি হচ্ছিল বারোশ’ টাকা কেজি দরে। গত একমাস হলো তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশ’ থেকে নয়শ’ টাকায়। কেন এই দাম কম? অনুসন্ধান করে জানা গেছে দুধের দাম কমার ফলে মাখনের দাম কমেছে তাই ঘি বিক্রি হচ্ছে কম দামে। সাঁথিয়ার ঘি বিক্রেতা নব কুমার পাল জানান এখন ঘি বিক্রি করছি দুশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা কম দামে। শ্যামল ঘোষ বললেন, দাম কমায় ঘিতে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। তাতে বাজরে আমরা খাঁটি ঘি কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

শতভাগ মাখন সমৃদ্ধ ছানা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে তিনশ’ টাকায়। যা আগে সাড়ে চারশ’ টাকায় বিক্রি হতো। দুধের দাম হ্রাস পাওয়ায় দইয়ের বাজারেও মন্দাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রতিবাদী খামারীদের মানববন্ধন

পাবনায় দেশের সকল দুগ্ধ কোম্পানি দুধ ক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিবাদে দুগ্ধ খামারিরা সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন। জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা শহরের প্রবেশপথে অর্ধশতাধিক খামারি সড়কে দুধ ঢেলে এই প্রতিবাদ জানান। এর আগে খামারিরা সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুগ্ধ সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ও খামারিরা অংশ গ্রহন করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পারভাঙ্গুড়া গ্রামের খামারি হাসিনুর রহমান, দুগ্ধ সমিতির ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ, উপজেলা পাড়ার খামারি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। বক্তারা জানান, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বড় ও মাঝারি আকারের ৭৪৫টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের খামারের সংখ্যা আছে প্রায় দুই হাজার দুশ’। এসব খামার থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। মিল্কভিটা, ব্র্যাক, প্রাণ, আকিজ ও বারো আউলিয়া দুগ্ধ কোম্পানির ২৮টি ক্রয় ও শীতলীকরণ কেন্দ্র উৎপাদিত এ দুধের ৮০ ভাগ দুধ ক্রয় করে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে দুধ ক্রয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার প্রায় দুই হাজার দুগ্ধ খামারি।

খামারি হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমার খামারে প্রতিদিন ৬০ লিটার করে দুধ উৎপাদন করা হয়। দুধ বিক্রির টাকার ওপর ভরসা করে আমি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা লোন নিয়ে তিন মাস আগে দুটি গাভী কিনেছি। ব্যাংকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু এখন দুধ বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো কিভাবে? বাইরে দুধ বিক্রি করতে গেলে ছয়শ’ থেকে সাতশ’ টাকা মণ দরে দুধ বিক্রি করতে হয়। ওই টাকায় গাভী প্রতিপালন করব, নাকি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করব? এভাবে চলতে থাকলে গাভি বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।’

ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র ও দুগ্ধ খামারি গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, ‘খামারিদের বিরুদ্ধে দুধে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। দুধে কোন প্রকার ভেজাল বা রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেলে সেটা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মচারীরা করেন। এর দায়ভার খামারি বহন করবে কেন?’

আরও খবর
ভেঙে পড়ছে হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাপনা
সমন্বিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু ও বন্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে : কাদের
মায়ানমারকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন তালিকা দিল বাংলাদেশ
‘ভুল মশার ওপর পরীক্ষায় ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির আর নেই
বিভিন্ন সংগঠনের শোক
স্কয়ারসহ তিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তলব
মিল্কভিটা দুধ বিপণনে বাধা নেই
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
ডেঙ্গুর ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতে পদক্ষেপ
২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৯৬ জন আক্রান্ত মৃত্যু ৩ মৃত্যু ৩
বিদেশি গুঁড়োদুধ যেন বাজার দখল করতে না পারে
আসেনি শৃঙ্খলা কমেনি দুর্ঘটনা
দুই আসামির যাবজ্জীবন
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
মামলা হয়নি হেলমেটধারী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

পাবনা-সিরাজগঞ্জে

পানির দরে দুধ খামারিরা বিপাকে

সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ

হাবিবুর রহমান স্বপন, পাবনা

১৫ থেকে ২০ টাকা লিটার দুধ, তার পরেও খরিদ্দার না পেয়ে খমারিরা মহাবিপাকে পড়েছে। দুধ বিক্রি করতে না পেরে প্রতিবাদে খামারিরা সড়কে দুধ ঢেলে মানববন্ধন করে। এছাড়া কলস-বালতি-বোতলে ভরে দুধ পাঠাচ্ছে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে।

উচ্চ আদালত দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গতকাল থেকে মিল্টভিটা কর্তৃপক্ষ দুধ ক্রয় বন্ধ করে দেয়। একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিও দুধ ক্রয় বন্ধ রাখে।

বাঘাবাড়ি ‘মিল্ক ভিটা’ দুগ্ধ পক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে দুধ না নেয়ায় বৃহত্তর পাবনা জেলার (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ) প্রায় ২০ হাজার দুধ বিক্রেতা পড়েছে মহাবিপাকে। মিল্কভিটা তাদের তালিকাভুক্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারিদের কাছ থেকে গত দুই মাসে দুধ ক্রয় করা কমিয়ে দেয়। স্বাভাবিক সময়ে মিল্কভিটা প্রতিদিন দুইবেলা (সকাল-বিকাল) মোট সোয়া লাখ লিটার করে দুধ ক্রয় করে থাকে। কিন্তু দুধে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে এমন তথ্যের পর গত দুই মাস (জুন-জুলাই) মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ দুধ ক্রয় কমিয়ে ক্রয় করে প্রতিদিন ৮৫ থেকে ৯০ হাজার লিটার। সকালে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার লিটার এবং বিকেলে ৪০ থেকে ৪৩ হাজার লিটার করে। দুধের ফ্যাট অনুসারে মিল্ক ভিটায় দাম নির্ধারণ আছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা প্রতি লিটার।

মিল্কভিটা প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিামাণ দুধ ক্রয় করছিল গত দুই মাসে সেই পরিমাণ দুধ ক্রয় কমিয়ে দেয়ায় বাজারে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। রোববার দুধ ক্রয় না করার ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল দুধের বাজার আরও হ্রাস পেয়ে ১৫/২০ টাকায় দাঁড়ায়।

এদিকে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম দামে দুধ কিনে মাখন ও ছনা তৈরি করছে। পাবনার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া, বেড়া এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তারাশ, বেলকুচি উপজেলা এলাকার ছোট বড় বাজারে গতকাল খামারিরা প্রচুর দুধ নিয়ে আসে খোলাবাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু দুধের আমদানির পরিমাণের চেয়ে ক্রেতা কম হওয়ায় দুধ অবিক্রিত থাকে। দুধ ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হয় অসহায় খামারিরা। অনেকেই পাত্র ভর্তি করে দুধ পাঠায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।

পাবনার ডেমড়া, সোনাতলা, বেড়া, নাকালিয়া, আতাইকুলা, গোপালনগর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তালগাছিতে যেসব বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি (আড়ং, প্রাণ, ফ্রেশ মিল্ক, আকিজ, একমি, বারো আউলিয়া) দুধ ক্রয় করে থাকে সেসব কোম্পনিও গতকাল তাদের ক্রয়কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে রাখে। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ ক্রয় করে থাকে।

দুধে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক, সিসা ও ব্যাক্টেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে এই খবরের পর থেকেই বাজারে দুধের দাম হ্রাস পাওয়ায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দুধ ক্রয় করে মাখন এবং ছানা তৈরি করে পাঠাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। অনেকেই মাখন থেকে ঘি তৈরি করছে। মাত্র দুইমাস আগেও যেখানে পাবনা-সিরাজগঞ্জের বাজারে ঘি বিক্রি হচ্ছিল বারোশ’ টাকা কেজি দরে। গত একমাস হলো তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশ’ থেকে নয়শ’ টাকায়। কেন এই দাম কম? অনুসন্ধান করে জানা গেছে দুধের দাম কমার ফলে মাখনের দাম কমেছে তাই ঘি বিক্রি হচ্ছে কম দামে। সাঁথিয়ার ঘি বিক্রেতা নব কুমার পাল জানান এখন ঘি বিক্রি করছি দুশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা কম দামে। শ্যামল ঘোষ বললেন, দাম কমায় ঘিতে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। তাতে বাজরে আমরা খাঁটি ঘি কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

শতভাগ মাখন সমৃদ্ধ ছানা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে তিনশ’ টাকায়। যা আগে সাড়ে চারশ’ টাকায় বিক্রি হতো। দুধের দাম হ্রাস পাওয়ায় দইয়ের বাজারেও মন্দাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রতিবাদী খামারীদের মানববন্ধন

পাবনায় দেশের সকল দুগ্ধ কোম্পানি দুধ ক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিবাদে দুগ্ধ খামারিরা সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন। জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা শহরের প্রবেশপথে অর্ধশতাধিক খামারি সড়কে দুধ ঢেলে এই প্রতিবাদ জানান। এর আগে খামারিরা সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুগ্ধ সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ও খামারিরা অংশ গ্রহন করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পারভাঙ্গুড়া গ্রামের খামারি হাসিনুর রহমান, দুগ্ধ সমিতির ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ, উপজেলা পাড়ার খামারি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। বক্তারা জানান, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বড় ও মাঝারি আকারের ৭৪৫টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের খামারের সংখ্যা আছে প্রায় দুই হাজার দুশ’। এসব খামার থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। মিল্কভিটা, ব্র্যাক, প্রাণ, আকিজ ও বারো আউলিয়া দুগ্ধ কোম্পানির ২৮টি ক্রয় ও শীতলীকরণ কেন্দ্র উৎপাদিত এ দুধের ৮০ ভাগ দুধ ক্রয় করে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে দুধ ক্রয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার প্রায় দুই হাজার দুগ্ধ খামারি।

খামারি হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমার খামারে প্রতিদিন ৬০ লিটার করে দুধ উৎপাদন করা হয়। দুধ বিক্রির টাকার ওপর ভরসা করে আমি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা লোন নিয়ে তিন মাস আগে দুটি গাভী কিনেছি। ব্যাংকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু এখন দুধ বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো কিভাবে? বাইরে দুধ বিক্রি করতে গেলে ছয়শ’ থেকে সাতশ’ টাকা মণ দরে দুধ বিক্রি করতে হয়। ওই টাকায় গাভী প্রতিপালন করব, নাকি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করব? এভাবে চলতে থাকলে গাভি বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।’

ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র ও দুগ্ধ খামারি গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, ‘খামারিদের বিরুদ্ধে দুধে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। দুধে কোন প্রকার ভেজাল বা রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেলে সেটা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মচারীরা করেন। এর দায়ভার খামারি বহন করবে কেন?’