২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৯৬ জন আক্রান্ত মৃত্যু ৩ মৃত্যু ৩

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নগরভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র। গতকাল নতুন করে আরও ১ হাজার ৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৩৭ জন। দেশের ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছে ৩ হাজার ৮৪৭ জন। আর ৩৬টি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ শতাধিক বেশি রোগী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু মেডিসিন ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন এবং আইসিইউতে ৭৬ জন ভর্তি আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ৬০টি নতুন শয্যা কেনা হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১২৫ জন ভর্তি হয়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৩ জন, শিশু হাসপাতালে ৩৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৮ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ৪১ জন, বারডেম হাসপাতালে ২৩ জন, বিএসএমএম ইউতে ৩৭ জন, পুলিশ হাসপাতালে ২১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ১০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৯ জন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ২৬৫ জন, দেশের অন্যান্য বিভাগে ২৪০ জন, রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩৯ জন, চট্টগ্রামে ১০১ জন, খুলনায় ১৭ জন, রংপুরে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪২ জন, বরিশালে ৬ জন, সিলেটে ১৬ জন। সব মিলিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাগুলোতে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬ জন।

চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ৬৩৭ জন। হাসপাতালগুলোতে এখনও চিকিৎসাধীন আছে ৩ হাজার ৮৪৭ জন। অপর দিকে বাংলাদেশ মেডিকেলসহ রাজধানীর ৩৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ২৬৫ জন। প্রাইভেট হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছে ১২ শতাধিক রোগী।

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলের শয্যাসংখ্যা ৪০ থেকে ১৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলের সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

বর্তমানে বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু মেডিসিন ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন এবং আইসিইউ ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। বিএসএমএমইউয়ের মেডিসিন বিভাগের আরপি সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন জ্বর নিয়ে আসেন। এসব রোগীর অধিকাংশই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তবে বেশিরভাগ রোগীরই ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না।

কয়েকজন চাকরিজীবী কর্মকর্তা বলেন, তারা তাদের শিশুসন্তান নিয়ে বিপাকে আছেন। সন্তানের জ্বর হওয়ায় মা কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে শিশুর পাশে অবস্থান করছেন। তাদের পরিবার ও সন্তান নিয়ে সব সময় টেনশনে কাটতে হচ্ছে। তারা নিজের পরিবার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। সন্তান ও পরিবারের কথা চিন্তা করে অন্য দেশে নিয়ে বসবাস করার কথা ভাবছেন। গতকাল একজন সরকারি কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। আরেকজন বলেন, তিনি তার স্ত্রীর ডেঙ্গু চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করছেন।

হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেডের অভাবে অনেকেই চিকিৎসক দেখিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানের খোঁজে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে মশা কামড়ের পর অন্য ব্যক্তিকে একই মশা কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার বিস্তার বেড়েই চলছে। আক্রান্তের সংখ্যা এখন জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

অপর দিকে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অনেক অসাধু ব্যক্তি ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এখনো বাড়তি টাকা নিচ্ছেন। তাদের রক্তের দরকার তারা রক্ত নিয়ে বাণিজ্য করছেন। রক্ত দিতে গিয়ে নারীসহ অনেকেই প্রতারণার খপ্পরে পড়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়। ওই প্রতারকচক্রকে ধরতে পুলিশের বিশেষ টিম তৎপর রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস পরিবর্তন হয়ে শংকর জাত হয়েছে, যা খুবই মারাত্মক। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও ডায়বেটিকসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। এখন ডেঙ্গু ভাইরাস আগের চেয়ে ভয়াভহ। এখন অল্প সময়ের মধ্যে মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।

সাভার (ঢাকা) : সাভার ও আশুলিয়ায় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শতাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে জুয়েল মাহমুদ নয়ন (৩৩) নামে এক ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। গতকাল দুপুরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । মৃত নয়ন ধামরাই উপজেলার কুল্লা গ্রামের জলিল উদ্দিনের ছেলে ।

প্রতিনিধি, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : কাপাসিয়ায় আবদুল করিম সরকার (৬৫) নামে একজন ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার রাতে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বড়পুশিয়া গ্রামের মৃত হাসেন আলী সরকারের ছেলে।

আদমদীঘি, (বগুড়া) : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের ওপর পৌঁওতা গ্রামের সাজেদুর রহমান সাজু নামে এক ব্যক্তি ঢাকা গাজীপুরের টঙ্গীতে কর্মরত অবস্থায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের ওপর পৌঁওতা মহল্লার আনছার আলীর ছেলে সাজেদুর রহমান সাজু (৩৫) গাজীপুরের টঙ্গী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের মাস্টাররোলে কর্মচারী হিসেবে ওই কেন্দ্রের গাড়ি চালাতেন।

টঙ্গী (গাজীপুর) : টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে গত ২২ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। (রেজিস্ট্রার অনুযায়ী) ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারিভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন র‌্যালি, সভা এবং মশকনিধন কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষ করে দেশব্যাপী মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ উপলক্ষে ‘নিজ আঙিনা পরিষ্কার রাখি, সবাই মিলে সুস্থ থাকি’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মহানগরীতে গতকাল সোমবার একদিনে একদিনে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

খুলনা : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জন। এর মধ্যে খুলনার ৫০ ও যশোরের ৪৪ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ তথ্য জানান।

রংপুর : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জনে। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এখনও ১১ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

টাঙ্গাইল : শরীরে জ্বর নিয়ে গত তিন দিনে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও অন্যান্য হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরও খবর
ভেঙে পড়ছে হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাপনা
সমন্বিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু ও বন্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে : কাদের
মায়ানমারকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন তালিকা দিল বাংলাদেশ
‘ভুল মশার ওপর পরীক্ষায় ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির আর নেই
বিভিন্ন সংগঠনের শোক
স্কয়ারসহ তিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তলব
মিল্কভিটা দুধ বিপণনে বাধা নেই
পানির দরে দুধ খামারিরা বিপাকে
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
ডেঙ্গুর ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতে পদক্ষেপ
বিদেশি গুঁড়োদুধ যেন বাজার দখল করতে না পারে
আসেনি শৃঙ্খলা কমেনি দুর্ঘটনা
দুই আসামির যাবজ্জীবন
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
মামলা হয়নি হেলমেটধারী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৯৬ জন আক্রান্ত মৃত্যু ৩ মৃত্যু ৩

বাকী বিল্লাহ

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নগরভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র। গতকাল নতুন করে আরও ১ হাজার ৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৩৭ জন। দেশের ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছে ৩ হাজার ৮৪৭ জন। আর ৩৬টি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ শতাধিক বেশি রোগী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু মেডিসিন ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন এবং আইসিইউতে ৭৬ জন ভর্তি আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ৬০টি নতুন শয্যা কেনা হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১২৫ জন ভর্তি হয়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৩ জন, শিশু হাসপাতালে ৩৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৮ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ৪১ জন, বারডেম হাসপাতালে ২৩ জন, বিএসএমএম ইউতে ৩৭ জন, পুলিশ হাসপাতালে ২১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ১০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৯ জন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ২৬৫ জন, দেশের অন্যান্য বিভাগে ২৪০ জন, রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩৯ জন, চট্টগ্রামে ১০১ জন, খুলনায় ১৭ জন, রংপুরে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪২ জন, বরিশালে ৬ জন, সিলেটে ১৬ জন। সব মিলিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাগুলোতে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬ জন।

চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ৬৩৭ জন। হাসপাতালগুলোতে এখনও চিকিৎসাধীন আছে ৩ হাজার ৮৪৭ জন। অপর দিকে বাংলাদেশ মেডিকেলসহ রাজধানীর ৩৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ২৬৫ জন। প্রাইভেট হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছে ১২ শতাধিক রোগী।

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলের শয্যাসংখ্যা ৪০ থেকে ১৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলের সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

বর্তমানে বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু মেডিসিন ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন এবং আইসিইউ ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। বিএসএমএমইউয়ের মেডিসিন বিভাগের আরপি সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন জ্বর নিয়ে আসেন। এসব রোগীর অধিকাংশই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তবে বেশিরভাগ রোগীরই ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না।

কয়েকজন চাকরিজীবী কর্মকর্তা বলেন, তারা তাদের শিশুসন্তান নিয়ে বিপাকে আছেন। সন্তানের জ্বর হওয়ায় মা কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে শিশুর পাশে অবস্থান করছেন। তাদের পরিবার ও সন্তান নিয়ে সব সময় টেনশনে কাটতে হচ্ছে। তারা নিজের পরিবার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। সন্তান ও পরিবারের কথা চিন্তা করে অন্য দেশে নিয়ে বসবাস করার কথা ভাবছেন। গতকাল একজন সরকারি কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। আরেকজন বলেন, তিনি তার স্ত্রীর ডেঙ্গু চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করছেন।

হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেডের অভাবে অনেকেই চিকিৎসক দেখিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানের খোঁজে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে মশা কামড়ের পর অন্য ব্যক্তিকে একই মশা কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার বিস্তার বেড়েই চলছে। আক্রান্তের সংখ্যা এখন জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

অপর দিকে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অনেক অসাধু ব্যক্তি ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এখনো বাড়তি টাকা নিচ্ছেন। তাদের রক্তের দরকার তারা রক্ত নিয়ে বাণিজ্য করছেন। রক্ত দিতে গিয়ে নারীসহ অনেকেই প্রতারণার খপ্পরে পড়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়। ওই প্রতারকচক্রকে ধরতে পুলিশের বিশেষ টিম তৎপর রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস পরিবর্তন হয়ে শংকর জাত হয়েছে, যা খুবই মারাত্মক। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও ডায়বেটিকসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। এখন ডেঙ্গু ভাইরাস আগের চেয়ে ভয়াভহ। এখন অল্প সময়ের মধ্যে মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।

সাভার (ঢাকা) : সাভার ও আশুলিয়ায় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শতাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে জুয়েল মাহমুদ নয়ন (৩৩) নামে এক ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। গতকাল দুপুরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । মৃত নয়ন ধামরাই উপজেলার কুল্লা গ্রামের জলিল উদ্দিনের ছেলে ।

প্রতিনিধি, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : কাপাসিয়ায় আবদুল করিম সরকার (৬৫) নামে একজন ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার রাতে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বড়পুশিয়া গ্রামের মৃত হাসেন আলী সরকারের ছেলে।

আদমদীঘি, (বগুড়া) : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের ওপর পৌঁওতা গ্রামের সাজেদুর রহমান সাজু নামে এক ব্যক্তি ঢাকা গাজীপুরের টঙ্গীতে কর্মরত অবস্থায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের ওপর পৌঁওতা মহল্লার আনছার আলীর ছেলে সাজেদুর রহমান সাজু (৩৫) গাজীপুরের টঙ্গী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের মাস্টাররোলে কর্মচারী হিসেবে ওই কেন্দ্রের গাড়ি চালাতেন।

টঙ্গী (গাজীপুর) : টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে গত ২২ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। (রেজিস্ট্রার অনুযায়ী) ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারিভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন র‌্যালি, সভা এবং মশকনিধন কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষ করে দেশব্যাপী মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ উপলক্ষে ‘নিজ আঙিনা পরিষ্কার রাখি, সবাই মিলে সুস্থ থাকি’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মহানগরীতে গতকাল সোমবার একদিনে একদিনে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

খুলনা : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জন। এর মধ্যে খুলনার ৫০ ও যশোরের ৪৪ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ তথ্য জানান।

রংপুর : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জনে। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এখনও ১১ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

টাঙ্গাইল : শরীরে জ্বর নিয়ে গত তিন দিনে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও অন্যান্য হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে।