ডিআইজি প্রিজনস পার্থ কারাগারে

বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বাসায় রাখার অভিযোগে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এদিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত পার্থ বণিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাসায় যে ৮০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে, এর বৈধ উৎস সম্পর্কে দুদককে কিছুই জানাতে পারেননি গ্রেফতার হওয়া পার্থ বণিক।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ঘুষ গ্রহণ করে অর্জিত ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদেশ্যে নিজ বাসায় রাখায় গতকাল দুদক মামলা করেছে ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে বৈধ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত হিসেবে ঘুষ গ্রহণ করে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। তা তার নিজের দখলে নিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন করে পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ আবাসিক বাসার (গ্রিন রোড, কলাবাগান, ঢাকা) ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রেখে অপরাধ করেছেন। এ কারণে দন্ডবিধির ১৬১ ধারা, তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক ও সিলেটের বর্তমান ডিআইজি (প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক। চট্টগ্রাম কারাগারে দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃত টাকার বিষয়ে তিনি (পার্থ) স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা জব্দকৃত টাকার বৈধ উৎস খুঁজে পাননি। তার (পার্থ) বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, মানি লন্ডারিং ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে দন্ড বিধি ১৬১, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানি লন্ডারিং আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, তার ঘোষিত আয়কর ফাইলে এ টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। পার্থ গোপাল বণিক ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চট্টগ্রামে ডিআইজি (প্রিজনস) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

কারাগারে ডিআইজি পার্থ : ঘুষসহ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার সিলেট রেঞ্জের কারা ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে গতকাল আদালতে হাজির করে দুদক। এ সময় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী ঘুষসহ গ্রেফতার হওয়া ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের আবেদন করলেও দুদকের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।

কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক আদালতের কাছে দাবি করেছেন, তার বাসা থেকে দুদক যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে, সেটি তার নিজের। এই টাকা তার বেতন-ভাতার টাকা। আদালত তখন পার্থ বণিকের কাছে জানতে চান, এ টাকা আপনি কোথায় পেয়েছেন? জবাবে পার্থ বণিক বলেন, ৩৯ লাখ টাকা তার সঞ্চয়পত্রের টাকা। এই টাকা তিনি পোস্ট অফিস থেকেই তুলেছেন। আদালত তখন জানতে চান, এই টাকা আপনি কি আপনার আয়কর বিবরণীতে দেখিয়েছেন? জবাবে পার্থ বণিক বলেন, এই টাকা আয়কর বিবরণীতে দেখানো হয়নি। তার আইনজীবী ভুলবশত এ টাকা আয়করে দেখাননি। পার্থ গোপাল বারবারই আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

পার্থ গোপাল বণিকের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার আদালতকে বলেন, দুদক যে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করেছে, তা পার্থ বণিকেরই টাকা। এই টাকা সম্পূর্ণ বৈধ টাকা। তার ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বৈধ টাকা। বাকি টাকা তার মা ও শাশুড়ির সঞ্চয়পত্রের টাকা। বৈধ এই টাকা ফ্ল্যাট কেনার জন্য রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা করেছে দুদক।

আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, দুদক পার্থ বণিকের ঘর থেকে যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার দেখিয়েছে, তা তার নিজের টাকা। দুদকের কাছে পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। বাংলাদেশি টাকা ঘরে রাখা কোন আইনে অপরাধ। গোপাল বণিকের এ টাকা সাদা টাকা। এই টাকা কালো টাকা নয়। ফ্ল্যাট কেনার জন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, দুদক গোপাল বণিকের বাসা থেকে যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে, তা ঘুষের টাকা এবং অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা। তিনি সরকারি কর্মকর্তা। তার বছরে আয় ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে। তল্লাশি চালিয়ে তার বাসা থেকে অবৈধভাবে উপার্জিত ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তার আইনজীবীরা যা বলছেন, তা কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাকে এই মুহূর্তে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হোক। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ অপরাধের সঙ্গে আর যারা জড়িত আছেন, তাদের খুঁজে বের করা হবে।

উল্লেখ, গত রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ঘুষের ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। তার বর্তমান কর্মস্থল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। এর আগে রোববার সকালে সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুপুরে তাকে নিয়ে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা টাকা উদ্ধারে অভিযানে বের হয় দুদক টিম। ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। পার্থ ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরাও বসবাস করেন সেখানে। দুদক পার্থের ব্যবহার করা একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করে।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ময়মনসিংহগামী ট্রেন থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ব্যাংকের চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন তিনি। ওই সময় সোহেল রানা দাবি করেন, ওই টাকা তার নয়। তা ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের। ওই টাকা তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন তিনি। পরে সোহেল রানার বিষয়ে অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে নানা তথ্য পায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলম। কমিটি ওই সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন ডিআইজি প্রিজনস পার্থসহ ৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির তথ্য পায়। পরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণীও চাওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে পার্থ গোপালও সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেন।

বরখাস্ত হচ্ছেন পার্থ গোপাল বণিক : কারা অধিদফতরের কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরেকটি ঘটনা আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। দাফতরিকভাবে আমরা এখনও কোন কাগজপত্র পাইনি। দাফতরিকভাবে নথিপত্র পেলেই তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

দুদকের মামলা

ডিআইজি প্রিজনস পার্থ কারাগারে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বাসায় রাখার অভিযোগে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এদিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত পার্থ বণিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাসায় যে ৮০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে, এর বৈধ উৎস সম্পর্কে দুদককে কিছুই জানাতে পারেননি গ্রেফতার হওয়া পার্থ বণিক।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ঘুষ গ্রহণ করে অর্জিত ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদেশ্যে নিজ বাসায় রাখায় গতকাল দুদক মামলা করেছে ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে বৈধ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত হিসেবে ঘুষ গ্রহণ করে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। তা তার নিজের দখলে নিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন করে পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ আবাসিক বাসার (গ্রিন রোড, কলাবাগান, ঢাকা) ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রেখে অপরাধ করেছেন। এ কারণে দন্ডবিধির ১৬১ ধারা, তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক ও সিলেটের বর্তমান ডিআইজি (প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক। চট্টগ্রাম কারাগারে দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃত টাকার বিষয়ে তিনি (পার্থ) স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা জব্দকৃত টাকার বৈধ উৎস খুঁজে পাননি। তার (পার্থ) বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, মানি লন্ডারিং ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে দন্ড বিধি ১৬১, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানি লন্ডারিং আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, তার ঘোষিত আয়কর ফাইলে এ টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। পার্থ গোপাল বণিক ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চট্টগ্রামে ডিআইজি (প্রিজনস) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

কারাগারে ডিআইজি পার্থ : ঘুষসহ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার সিলেট রেঞ্জের কারা ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে গতকাল আদালতে হাজির করে দুদক। এ সময় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী ঘুষসহ গ্রেফতার হওয়া ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের আবেদন করলেও দুদকের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।

কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক আদালতের কাছে দাবি করেছেন, তার বাসা থেকে দুদক যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে, সেটি তার নিজের। এই টাকা তার বেতন-ভাতার টাকা। আদালত তখন পার্থ বণিকের কাছে জানতে চান, এ টাকা আপনি কোথায় পেয়েছেন? জবাবে পার্থ বণিক বলেন, ৩৯ লাখ টাকা তার সঞ্চয়পত্রের টাকা। এই টাকা তিনি পোস্ট অফিস থেকেই তুলেছেন। আদালত তখন জানতে চান, এই টাকা আপনি কি আপনার আয়কর বিবরণীতে দেখিয়েছেন? জবাবে পার্থ বণিক বলেন, এই টাকা আয়কর বিবরণীতে দেখানো হয়নি। তার আইনজীবী ভুলবশত এ টাকা আয়করে দেখাননি। পার্থ গোপাল বারবারই আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

পার্থ গোপাল বণিকের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার আদালতকে বলেন, দুদক যে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করেছে, তা পার্থ বণিকেরই টাকা। এই টাকা সম্পূর্ণ বৈধ টাকা। তার ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বৈধ টাকা। বাকি টাকা তার মা ও শাশুড়ির সঞ্চয়পত্রের টাকা। বৈধ এই টাকা ফ্ল্যাট কেনার জন্য রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা করেছে দুদক।

আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, দুদক পার্থ বণিকের ঘর থেকে যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার দেখিয়েছে, তা তার নিজের টাকা। দুদকের কাছে পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। বাংলাদেশি টাকা ঘরে রাখা কোন আইনে অপরাধ। গোপাল বণিকের এ টাকা সাদা টাকা। এই টাকা কালো টাকা নয়। ফ্ল্যাট কেনার জন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, দুদক গোপাল বণিকের বাসা থেকে যে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে, তা ঘুষের টাকা এবং অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা। তিনি সরকারি কর্মকর্তা। তার বছরে আয় ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে। তল্লাশি চালিয়ে তার বাসা থেকে অবৈধভাবে উপার্জিত ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তার আইনজীবীরা যা বলছেন, তা কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাকে এই মুহূর্তে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হোক। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ অপরাধের সঙ্গে আর যারা জড়িত আছেন, তাদের খুঁজে বের করা হবে।

উল্লেখ, গত রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ঘুষের ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। তার বর্তমান কর্মস্থল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। এর আগে রোববার সকালে সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুপুরে তাকে নিয়ে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা টাকা উদ্ধারে অভিযানে বের হয় দুদক টিম। ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। পার্থ ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরাও বসবাস করেন সেখানে। দুদক পার্থের ব্যবহার করা একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করে।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ময়মনসিংহগামী ট্রেন থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ব্যাংকের চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন তিনি। ওই সময় সোহেল রানা দাবি করেন, ওই টাকা তার নয়। তা ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের। ওই টাকা তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন তিনি। পরে সোহেল রানার বিষয়ে অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে নানা তথ্য পায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলম। কমিটি ওই সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন ডিআইজি প্রিজনস পার্থসহ ৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির তথ্য পায়। পরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণীও চাওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে পার্থ গোপালও সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেন।

বরখাস্ত হচ্ছেন পার্থ গোপাল বণিক : কারা অধিদফতরের কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরেকটি ঘটনা আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। দাফতরিকভাবে আমরা এখনও কোন কাগজপত্র পাইনি। দাফতরিকভাবে নথিপত্র পেলেই তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।