মিথ্যা মামলায় মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখ কারাগারে

৭৪ বছরের বৃদ্ধকে দেখানো হয়েছে ৫৮ বছর

প্রতিবেশী এক পুলিশ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান শামীমা সুলতানার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখ (৭৪) এখন বিনা দোষে জেলের ঘানি টানছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শামীমা বর্তমানে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন। বৃদ্ধ বাবার জেলে যাওয়ার খবরে তিনি সেখান থেকে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। ‘কী হবে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলে? যদি আমার মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়?’ এ ধরনের পোস্ট দেয়ার পর বিষয়টির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। ৭৪ বছরের বৃদ্ধ সলেমান শেখকে মামলায় ৫৮ বছর বয়স দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে শ্রীপুর থানা পুলিশ।

সলেমান শেখের ছোট ভাই মহম্মদ আলী অভিযোগ করেন- ক্রিকেটার শামীমার বাবা সলেমান শেখ নিজ গ্রামে গরুর খামারের পাশাপাশি গরুর খাবারের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তিনি প্রতিবেশী ও ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মফিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের (৪৫) কাছে বাকিতে কিছু গরুর খাবার বিক্রি করেন। ওই টাকা দিতে আনোয়ারা বেগম টালবাহানা করলে কয়েকদিন আগে তিনি আনোয়ারার কাছে ওই টাকা চাইতে যান। এ সময় আনোয়ারার ছেলে এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমান তাকে মারপিট করে। বৃদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী আশিকুর রহমানকেও উল্টো মারপিট করে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ আনোয়ারা বেগম শনিবার দুপুরে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান এর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে নানা রকম মিথ্যাচার করেন। তার স্বামী পুলিশের সিপাহি মফিদুল ইসলামও পুলিশ সুপারের কাছে মিথ্যাচার করেন। একতরফা মিথ্যাচার শুনেই পুলিশ সুপার বৃদ্ধ সলেমান শেখের বিরুদ্ধে মামলা নিতে শ্রীপুর থানাকে নির্দেশ দেন। এরপর মামলা নিয়ে কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান শেখসহ তার ছোটভাই আলেমান শেখ, ছেলে নুরুল শেখ, আলেমান শেখের স্ত্রী আনোয়ারা, সোহান শেখ, মেহেদী শেখ, আবদুর রহমান ও আনিস শেখের বিরুদ্ধে মামলা দেন। ওইদিনই শ্রীপুর থানায় নারী শিশু নির্যাতন ও হামলা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগের মিথ্যা মামলাটি নথিবদ্ধ করা হয়। মামলায় তিনি বৃদ্ধ সোলায়মান শেখের বয়স ৭৪ বছরের এর পরিবর্তে ৫৮ বছর দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, উত্যক্ত করাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগ আনেন। শনিবার দুপুরেই শ্রীপুর থানা পুলিশ কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ সোলেমান শেখকে তরিঘরিভাবে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সিফাতুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা মামলা কোনক্রমেই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

কৃতী ক্রিকেটার শামীমা সুলতানা অভিযোগ করেন- প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যের ওই পরিবারটি আমার বাবাসহ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে বয়স কম দেখিয়ে তারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটাচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও হেনস্তা করছে। তিনি বলেন- পুলিশ সুপারকে আমি ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে কোন তদন্ত না করে শুধুমাত্র ওই পুলিশ পরিবারের মিথ্যাচারে ভুলে গিয়ে আমার বাবাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।

মামলার বাদী জানান- সলেমান শেখের সঙ্গে আগে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সামান্য কিছু টাকার জন্য সে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। তারা অত্যন্ত হাঘরে মানুষ ইদানীং টাকা-পয়সা হওয়ায় ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী একজন পুলিশ সদস্য; তার কী করে সাহস হয় আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার? ওকে তো কেটে টুকরো টুকরো করিনি এটাই ওর ভাগ্য।’

পুরো বিষয়টি পুলিশ সুপারের ঘাড়ে চাপিয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান- ভিকটিমের পরিবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমাকে মামলা নিয়ে আসামি গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আমি সে মোতাবেক আসামি গ্রেফতার করে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।

মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান- বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

পুলিশ পরিবারের দাপট

মিথ্যা মামলায় মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখ কারাগারে

৭৪ বছরের বৃদ্ধকে দেখানো হয়েছে ৫৮ বছর

প্রতিনিধি, মাগুরা

প্রতিবেশী এক পুলিশ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান শামীমা সুলতানার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখ (৭৪) এখন বিনা দোষে জেলের ঘানি টানছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শামীমা বর্তমানে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন। বৃদ্ধ বাবার জেলে যাওয়ার খবরে তিনি সেখান থেকে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। ‘কী হবে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলে? যদি আমার মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়?’ এ ধরনের পোস্ট দেয়ার পর বিষয়টির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। ৭৪ বছরের বৃদ্ধ সলেমান শেখকে মামলায় ৫৮ বছর বয়স দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে শ্রীপুর থানা পুলিশ।

সলেমান শেখের ছোট ভাই মহম্মদ আলী অভিযোগ করেন- ক্রিকেটার শামীমার বাবা সলেমান শেখ নিজ গ্রামে গরুর খামারের পাশাপাশি গরুর খাবারের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তিনি প্রতিবেশী ও ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মফিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের (৪৫) কাছে বাকিতে কিছু গরুর খাবার বিক্রি করেন। ওই টাকা দিতে আনোয়ারা বেগম টালবাহানা করলে কয়েকদিন আগে তিনি আনোয়ারার কাছে ওই টাকা চাইতে যান। এ সময় আনোয়ারার ছেলে এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমান তাকে মারপিট করে। বৃদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী আশিকুর রহমানকেও উল্টো মারপিট করে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ আনোয়ারা বেগম শনিবার দুপুরে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান এর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে নানা রকম মিথ্যাচার করেন। তার স্বামী পুলিশের সিপাহি মফিদুল ইসলামও পুলিশ সুপারের কাছে মিথ্যাচার করেন। একতরফা মিথ্যাচার শুনেই পুলিশ সুপার বৃদ্ধ সলেমান শেখের বিরুদ্ধে মামলা নিতে শ্রীপুর থানাকে নির্দেশ দেন। এরপর মামলা নিয়ে কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান শেখসহ তার ছোটভাই আলেমান শেখ, ছেলে নুরুল শেখ, আলেমান শেখের স্ত্রী আনোয়ারা, সোহান শেখ, মেহেদী শেখ, আবদুর রহমান ও আনিস শেখের বিরুদ্ধে মামলা দেন। ওইদিনই শ্রীপুর থানায় নারী শিশু নির্যাতন ও হামলা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগের মিথ্যা মামলাটি নথিবদ্ধ করা হয়। মামলায় তিনি বৃদ্ধ সোলায়মান শেখের বয়স ৭৪ বছরের এর পরিবর্তে ৫৮ বছর দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, উত্যক্ত করাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগ আনেন। শনিবার দুপুরেই শ্রীপুর থানা পুলিশ কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ সোলেমান শেখকে তরিঘরিভাবে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সিফাতুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা মামলা কোনক্রমেই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

কৃতী ক্রিকেটার শামীমা সুলতানা অভিযোগ করেন- প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যের ওই পরিবারটি আমার বাবাসহ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে বয়স কম দেখিয়ে তারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটাচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও হেনস্তা করছে। তিনি বলেন- পুলিশ সুপারকে আমি ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে কোন তদন্ত না করে শুধুমাত্র ওই পুলিশ পরিবারের মিথ্যাচারে ভুলে গিয়ে আমার বাবাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।

মামলার বাদী জানান- সলেমান শেখের সঙ্গে আগে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সামান্য কিছু টাকার জন্য সে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। তারা অত্যন্ত হাঘরে মানুষ ইদানীং টাকা-পয়সা হওয়ায় ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী একজন পুলিশ সদস্য; তার কী করে সাহস হয় আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার? ওকে তো কেটে টুকরো টুকরো করিনি এটাই ওর ভাগ্য।’

পুরো বিষয়টি পুলিশ সুপারের ঘাড়ে চাপিয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান- ভিকটিমের পরিবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমাকে মামলা নিয়ে আসামি গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আমি সে মোতাবেক আসামি গ্রেফতার করে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।

মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান- বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।