হাইকোর্টের রায় অমান্য হচ্ছে কি?

সামসুল ইসলাম টুকু

পত্রিকায় প্রকাশ, হাইকোর্টকেও হাইকোর্ট দেখাচ্ছে প্রভাবশালীরা। এই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অনিয়ম অসঙ্গতি দেখা দিলে আইনজীবীরা রিট করেন। প্রেক্ষিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা প্রতিনিয়তই উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞগণ। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালীদের কারণে হাইকোর্টে দেয়া বেশকিছু নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

এমন কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনটিতে সেগুলো যেমন বিবেচনাযোগ্য তেমনি আদালতকে বা নির্দেশকে অবমাননা করার সামিল। সংক্ষেপে সেগুলো হচ্ছে- গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জের ধরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটে আদালত শুনানি শেষে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সে নির্দেশ কার্যকর করেনি গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় এ ব্যাপারে আদালত বারবার আদেশ দিলেও হাজির হননি ওই পরিবহনের মালিক হাজী মো. আলাউদ্দিন সাভারের আমিন বাজারে বিল মালিয়া ও বসিয়ারপুর মৌজায় বন্যা প্রবণ এলাকায় অবৈধভাবে বালু ভরাট করে মধুমতি মডেল হাউজিং প্রকল্প গ্রহণ করে মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার লি.। এই প্রকল্পে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বেসরকারি সংস্থা ‘বেলা’। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২০ জুলাই হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই প্রকল্পে কাজ বেপরোয়াভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত বছর ৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের মধ্যে রেষারেষিতে হাত হারানো রাজিব হাসপাতালে মারা যান। এরপর রাজিবের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেয়া হবে না কেন এই মর্মে একটি রিট দায়ের করা হয়। গত ২০ জুন রাজিবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই টাকা উল্লেখিত দুটি পরিবহনকে অর্ধেক অর্ধেক করে পরিশোধ করার নির্দেশ থাকলেও তা অদ্যবধি পরিশোধ করা হয়নি। ২০১১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে হাইকোর্ট রায় দেন। একই বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে নীতিমালা গ্রহণ করে এবং ২০১৩ সালের শিশু আইনে ৭০ ধারাতে বলা হয়েছে কোন শিশু কারো দ্বারা আঘাত, অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকার হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শিশুদের ওপর এ ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়নি। মানা হয়নি উচ্চ আদালতের আদেশ। গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। নীতিমালায় বলা হয় কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবে না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। কিন্তু আজও এই রায়ের নির্দেশ মানা হচ্ছে না।

এছাড়া রয়েছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ও প্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী না হলে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না এ মর্মে হাইকোর্টের রায়, ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোতে পথচারীদের চলাচলের উপযুক্ত করার জন্য যানজট কমাতে ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য হাইকোর্টের রায়, গত বছর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্ট. স্কুল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর হাইকোর্ট সারা দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি চালানো বন্ধ, লাইসেন্সহীন চালক দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশ দেন বিআরটিএকে, শিশুদের তার ওজনের ১০ শতাংশের ওপর বইপত্র বহন না করার জন্য শিক্ষা বিভাগের ওপর হাইকোর্টের নির্দেশ জারি, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন আনার অপরাধে তার বাবা-মাতাকে অপমান করা এবং কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অরিত্রীর আত্মহত্যা করার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের মতামত প্রভৃতির কোনটিই সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষগুলো মেনে নেয়নি অথবা কার্যকর করেনি।

প্রশ্ন হচ্ছে উল্লিখিত ঘটনা সমূহ ও বিষয়গুলো কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাধান করতে পারে না। সেখানেতো জ্ঞানীগুণী বিদ্বান কর্মকর্তাসহ সচিব মন্ত্রী আছেন। তারা এসব সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ সুগম করেন না কেন। জনস্বার্থে বিষয়গুলো ভাবেন না কেন। তাই সচেতন ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের ওপর চাপ বাড়ে। তাই এ অচলাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য হাইকোর্টকে আরও কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালী ক্ষমতাশালীরা আদালতের আদেশ অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখালেও দেখাতে পারে বিভিন্ন অজুহাতে। আর এ ধৃষ্টতাকে দমন করতে না পারলে আইনজীবীদের ভাষায় Justice delayed, Justice denied কথাটি সত্যে পরিণত হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করলে তা হবে আইন অবমাননার সামিল এবং আদালতের বিধান অনুযায়ী আদেশ অমান্যকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতে আদেশ অমান্য করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা উচ্চ আদালতের জন্য কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এখনও মানুষ বিশ্বাস করে এই দুনিয়ায় অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার একমাত্র আশ্রয় স্থল বিচার বিভাগ এবং বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের ক্ষেত্রেও সর্বস্তরের মানুষের আস্থা আজও অটুট। তাই হাইকোর্টের রায় যদি সর্বোতভাবে পালিত না হয় এবং একাধিক উদাহরণ সৃষ্টি হতে থাকে তবে মানুষের আস্থার জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যাবে। অপরাধীরা বেপরোয়া হবে। বারবার অপরাধ করতে থাকবে। সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। এ অবস্থা কারও কাম্য নয়। উল্লেখিত অসংগতি অনিয়ম মফস্বল শহরগুলোতেও ঘটে, সেই ক্ষেত্রে রিট করার জন্য ঢাকা যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মফস্বল শহরগুলোতে এর বিকল্প করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়।

[লেখক : সাংবাদিক]

তারিখ : ২৯-০৭-২০১৯

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

হাইকোর্টের রায় অমান্য হচ্ছে কি?

সামসুল ইসলাম টুকু

পত্রিকায় প্রকাশ, হাইকোর্টকেও হাইকোর্ট দেখাচ্ছে প্রভাবশালীরা। এই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অনিয়ম অসঙ্গতি দেখা দিলে আইনজীবীরা রিট করেন। প্রেক্ষিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা প্রতিনিয়তই উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞগণ। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালীদের কারণে হাইকোর্টে দেয়া বেশকিছু নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

এমন কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনটিতে সেগুলো যেমন বিবেচনাযোগ্য তেমনি আদালতকে বা নির্দেশকে অবমাননা করার সামিল। সংক্ষেপে সেগুলো হচ্ছে- গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জের ধরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটে আদালত শুনানি শেষে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সে নির্দেশ কার্যকর করেনি গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় এ ব্যাপারে আদালত বারবার আদেশ দিলেও হাজির হননি ওই পরিবহনের মালিক হাজী মো. আলাউদ্দিন সাভারের আমিন বাজারে বিল মালিয়া ও বসিয়ারপুর মৌজায় বন্যা প্রবণ এলাকায় অবৈধভাবে বালু ভরাট করে মধুমতি মডেল হাউজিং প্রকল্প গ্রহণ করে মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার লি.। এই প্রকল্পে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বেসরকারি সংস্থা ‘বেলা’। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২০ জুলাই হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই প্রকল্পে কাজ বেপরোয়াভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত বছর ৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের মধ্যে রেষারেষিতে হাত হারানো রাজিব হাসপাতালে মারা যান। এরপর রাজিবের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেয়া হবে না কেন এই মর্মে একটি রিট দায়ের করা হয়। গত ২০ জুন রাজিবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই টাকা উল্লেখিত দুটি পরিবহনকে অর্ধেক অর্ধেক করে পরিশোধ করার নির্দেশ থাকলেও তা অদ্যবধি পরিশোধ করা হয়নি। ২০১১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে হাইকোর্ট রায় দেন। একই বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে নীতিমালা গ্রহণ করে এবং ২০১৩ সালের শিশু আইনে ৭০ ধারাতে বলা হয়েছে কোন শিশু কারো দ্বারা আঘাত, অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকার হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শিশুদের ওপর এ ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়নি। মানা হয়নি উচ্চ আদালতের আদেশ। গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। নীতিমালায় বলা হয় কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবে না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। কিন্তু আজও এই রায়ের নির্দেশ মানা হচ্ছে না।

এছাড়া রয়েছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ও প্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী না হলে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না এ মর্মে হাইকোর্টের রায়, ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোতে পথচারীদের চলাচলের উপযুক্ত করার জন্য যানজট কমাতে ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য হাইকোর্টের রায়, গত বছর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্ট. স্কুল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর হাইকোর্ট সারা দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি চালানো বন্ধ, লাইসেন্সহীন চালক দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশ দেন বিআরটিএকে, শিশুদের তার ওজনের ১০ শতাংশের ওপর বইপত্র বহন না করার জন্য শিক্ষা বিভাগের ওপর হাইকোর্টের নির্দেশ জারি, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন আনার অপরাধে তার বাবা-মাতাকে অপমান করা এবং কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অরিত্রীর আত্মহত্যা করার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের মতামত প্রভৃতির কোনটিই সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষগুলো মেনে নেয়নি অথবা কার্যকর করেনি।

প্রশ্ন হচ্ছে উল্লিখিত ঘটনা সমূহ ও বিষয়গুলো কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাধান করতে পারে না। সেখানেতো জ্ঞানীগুণী বিদ্বান কর্মকর্তাসহ সচিব মন্ত্রী আছেন। তারা এসব সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ সুগম করেন না কেন। জনস্বার্থে বিষয়গুলো ভাবেন না কেন। তাই সচেতন ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের ওপর চাপ বাড়ে। তাই এ অচলাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য হাইকোর্টকে আরও কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালী ক্ষমতাশালীরা আদালতের আদেশ অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখালেও দেখাতে পারে বিভিন্ন অজুহাতে। আর এ ধৃষ্টতাকে দমন করতে না পারলে আইনজীবীদের ভাষায় Justice delayed, Justice denied কথাটি সত্যে পরিণত হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করলে তা হবে আইন অবমাননার সামিল এবং আদালতের বিধান অনুযায়ী আদেশ অমান্যকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতে আদেশ অমান্য করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা উচ্চ আদালতের জন্য কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এখনও মানুষ বিশ্বাস করে এই দুনিয়ায় অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার একমাত্র আশ্রয় স্থল বিচার বিভাগ এবং বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের ক্ষেত্রেও সর্বস্তরের মানুষের আস্থা আজও অটুট। তাই হাইকোর্টের রায় যদি সর্বোতভাবে পালিত না হয় এবং একাধিক উদাহরণ সৃষ্টি হতে থাকে তবে মানুষের আস্থার জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যাবে। অপরাধীরা বেপরোয়া হবে। বারবার অপরাধ করতে থাকবে। সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। এ অবস্থা কারও কাম্য নয়। উল্লেখিত অসংগতি অনিয়ম মফস্বল শহরগুলোতেও ঘটে, সেই ক্ষেত্রে রিট করার জন্য ঢাকা যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মফস্বল শহরগুলোতে এর বিকল্প করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়।

[লেখক : সাংবাদিক]

তারিখ : ২৯-০৭-২০১৯