দাকোপে সর. আবাসন জরাজীর্ণ!

স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, কংক্রিট আর পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পড়ে পানি। ছাদের সিলিংয়ে সেই পানি শুকিয়ে যাওয়ার কালো ছোপ ছোপ দাগ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ভবনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে, জরাজীর্ণ হলেও নিয়মানুযায়ী ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। ফলে সেই জরাজীর্ণ ভবনেই দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে লোকজন বাস করছেন। এ চিত্র খুলনার দাকোপ উপজেলার সরকারি আবাসিক ভবনগুলোর। উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন থাকলেও সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে, বাকিরা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন এসব ভবনে। গাছপালা ঝোপঝাড়ে একাকার হয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনগুলোর বাইরে ও ভেতরের দেয়ালের অনেক স্থানে বড় ফাটল। দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে গেছে। ছাদ ঠেকা দিতে কক্ষের ভেতর বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোন কোন ভবনের পলেস্তারা ও বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। জরাজীর্ণ এমন ভবনে ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়। তিনি যে ভবনে থাকেন সেটির জীর্ণদশা অনেক আগে থেকেই। বর্ষা মৌসুমে একটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল। গৌরপদ বলেন, ছাদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরে পলিথিন টাঙিয়ে ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে কোনভাবে বসবাস করছি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ও এখানে থাকতে হয়েছে। অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের সেবায় যথাসময়ে অফিসে পৌঁছতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্ট করে থাকছি। পার্শ্ববর্তী ভবনে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অফিস সহায়ক সেখ আব্দুস সামাদ। তার পাশের ভবনে স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নিরাপত্তা প্রহরী রুহুল আমিন। তিনি জানান, ওই ভবনে ৪টি বাসা থাকলেও দুটি পরিবার থাকেন। বাকি দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলা প্রকৌশলী ননীগোপাল দাস বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যে ভবনগুলোতে থাকেন, সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, এ উপজেলা পরিষদে পাঁচটি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসিক ভবন ও একটি কর্মচারী ডরমিটরি ভবন রয়েছে। যা ১৯৮৪ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনগুলো অনেক পুরানো, সেই সঙ্গে সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউএনও মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের রেজ্যুলেশনে পরিত্যক্ত হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখন জেলা প্রশাসক নিয়মানুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন এবং নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য দাফতরিক কাজ করবেন।’

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১১ পৌষ ১৪২৬, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪১

দাকোপে সর. আবাসন জরাজীর্ণ!

শুভ্র শচীন, খুলনা

image

স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, কংক্রিট আর পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পড়ে পানি। ছাদের সিলিংয়ে সেই পানি শুকিয়ে যাওয়ার কালো ছোপ ছোপ দাগ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ভবনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে, জরাজীর্ণ হলেও নিয়মানুযায়ী ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। ফলে সেই জরাজীর্ণ ভবনেই দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে লোকজন বাস করছেন। এ চিত্র খুলনার দাকোপ উপজেলার সরকারি আবাসিক ভবনগুলোর। উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন থাকলেও সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে, বাকিরা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন এসব ভবনে। গাছপালা ঝোপঝাড়ে একাকার হয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনগুলোর বাইরে ও ভেতরের দেয়ালের অনেক স্থানে বড় ফাটল। দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে গেছে। ছাদ ঠেকা দিতে কক্ষের ভেতর বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোন কোন ভবনের পলেস্তারা ও বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। জরাজীর্ণ এমন ভবনে ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়। তিনি যে ভবনে থাকেন সেটির জীর্ণদশা অনেক আগে থেকেই। বর্ষা মৌসুমে একটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল। গৌরপদ বলেন, ছাদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরে পলিথিন টাঙিয়ে ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে কোনভাবে বসবাস করছি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ও এখানে থাকতে হয়েছে। অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের সেবায় যথাসময়ে অফিসে পৌঁছতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্ট করে থাকছি। পার্শ্ববর্তী ভবনে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অফিস সহায়ক সেখ আব্দুস সামাদ। তার পাশের ভবনে স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নিরাপত্তা প্রহরী রুহুল আমিন। তিনি জানান, ওই ভবনে ৪টি বাসা থাকলেও দুটি পরিবার থাকেন। বাকি দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলা প্রকৌশলী ননীগোপাল দাস বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যে ভবনগুলোতে থাকেন, সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, এ উপজেলা পরিষদে পাঁচটি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসিক ভবন ও একটি কর্মচারী ডরমিটরি ভবন রয়েছে। যা ১৯৮৪ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনগুলো অনেক পুরানো, সেই সঙ্গে সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউএনও মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের রেজ্যুলেশনে পরিত্যক্ত হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখন জেলা প্রশাসক নিয়মানুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন এবং নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য দাফতরিক কাজ করবেন।’