রাজাকারের পাঁচালী ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা

বশীর আহমেদ

প্যান্ডোরার বাকশো খুলে গেছে। এই বাকশো খোলার কাজটি ছিল সময়ের দাবি। বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের অভ্যুদয় ঠেকাতে জান-মালসহ যারা প্রাণপাত করেছে; বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম ধষর্ক-লুণ্ঠক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহরণ, ১ কোটি মানুষকে গায়ের জোরে দেশান্তরসহ ৪ কোটি নরনারীকে আপন মাতৃভূমিতে উদ্বাস্তুকরণ, ১০ লাখ- মতান্তরে ৬ লাখ না হলেও নিশ্চিত পরিসংখ্যান মতে ৪ লাখের বেশি অসহায় নারীর সম্ভ্রমহরণ এবং সোনার বাংলার সম্পদ বিনাশের মহোৎসবে যারা অংশ নিয়েছিল গভীর আন্তরিকতায়, বাংলা মায়ের গর্ভজাত সেই সব কুলাঙ্গারদের নাম ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকবে না কেন? এ নামগুলো প্রায় পাঁচ দশক বাকশোবন্দী থাকার পর আলোয় আসার পথ যে খুঁজে পেয়েছে, সেটাই বড় অর্জন এ মুহূর্তের। এখন বাকশো-বিমুক্ত এই নামের তালিকায় সতর্কতা-অসতর্কতাজনিত নাম-বিভ্রাট বা বিচ্যুতি যাই বলা হোক না কেন- তা সংশোধনের সঙ্গে বেশি করে দরকার মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস গড়ার পথে এমন বিপর্যয় কিভাবে ঘটতে পারল- সেটাই খুঁজে দেখা।

স্বাভাবিক মৃত্যুর সুযোগ নিয়ে ফাঁসির দড়ি এড়িয়ে যাওয়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের একদা বয়ান মতে দেশে বহুল উচ্চারিত ‘রাজাকার’ শব্দটি নাকি উচ্চারণগত এক প্রচলিত ভুল। এই উর্দু শব্দটির সঠিক উচ্চারণ নাকি ‘রেজাকার’; যার অর্থ সাহায্য বা সহায়তাকারী। একাত্তর সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে গোলাম আযম বর্ণিত রেজাকার নামক যে গুটিকয় মীরজাফর পাকিস্তানি সেনাদের সহায়ক শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছিল, তারা মূলত ছিল- এক. রাজনৈতিক-আদর্শিকভাবে সুসংগঠিত সহায়তাকারী, যেমন- তৎকালীন রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং ধর্মাশ্রয়ী সমমনা অন্যরা। দুই. সশস্ত্রভাবে সহায়তাকারী, যেমন- রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামের ঘাতক বাহিনীসহ পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা কিছু বাঙালি পুলিশ। তিন. দখলদার পাকিস্তানিদের দখলবাজি চলমান রাখতে প্রশাসনিকভাবে সহায়তাকারী, যেমন- টিক্কা-নিয়াজির হুকুমবরদার বাঙালি সুইপার, চাপরাশি, পিয়ন, আর্দালী, কেরানি, ছোট-মধ্যম-উঁচু পদবিধারী অফিসারগণ। তৎকালীন ইপিআর, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী বা অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর বাঙালি সদস্যদের বেশিরভাগই যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তথাপি বিচ্ছিন্নভাবে এ বাহিনীগুলোর সদস্য আর কেউ পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালি নিধনে সহায়তাকারীর ভূমিকায় ছিলেন কিনা, সেটা অবশ্য আগে কখনও আলোচনায় আসেনি।

আমাদের জানা রয়েছে, ইন্দো-চীনের ভিয়েতনাম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পরাজিত মার্কিন বাহিনীর দোসর ভিয়েতনামীদের নাগরিক মর্যাদা পাইকারি হারে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অবদমন করে। জাতির দুর্দিনে শত্রুর পক্ষ নেয়া দুর্বৃত্তদের গোষ্ঠীশুদ্ধ নাম-ধাম সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়- যেন তারা কোনভাবে সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে না পারে, ভোটার হতে বা পাসপোর্ট নিতে না পারে। একজন সাধারণ ভিয়েতনামীর পাশে এসব জাতি-বিদ্বেষী ভিয়েতনামীর অবস্থা দাঁড়ায় স্রেফ ভারবাহী পশুর মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধক্লান্ত অনেক দেশেই স্থানীয় কোলাবরেটরদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশই বোধকরি একমাত্র ব্যতিক্রম- যেখানে স্বাধীনতাবিরোধী এবং দখলদার শত্রু বাহিনীর সাহায্যকারীদের কোন নামের তালিকা সরকারি উদ্যোগে তৈরি বা সংরক্ষণ, নাগরিক মর্যাদা অবদমন বা সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যাপারে ‘ফাইনাল সলিউশন’ টানতে বঙ্গবন্ধুর ফেরার অপেক্ষা করেছিলেন। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে পরিস্থিতি আঁচ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করে আরেকটি নিশ্চিত ‘ব্লাডশেড’ পরিহারে সফল হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ-১৯৭২’ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীদের বিচারের জন্য গঠন করেছিলেন ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল অধ্যাদেশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৩৭,৪৭১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছিল ২,৮৪৮টি এবং দ-প্রাপ্ত হয়েছিল মাত্র ৭৫২ অভিযুক্ত।

স্মরণযোগ্য, দালাল আইনের একটি বিধান- যাতে অনেকটা এভাবে বলা হয়েছিল যে, থানায় দায়েরকৃত অভিযোগগুলো মামলায় পরিণত করতে হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে অভিযোগটি আমলযোগ্য বিবেচিত হতে হবে। এ অবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধে শত্রু বাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত যে অল্পসংখ্যক সাহসী মানুষের দায়ের করা প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার অভিযোগের বিপরীতে কেন যে মাত্র ২ হাজার সাড়ে ৮শ’ অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং শুধু সাড়ে ৭শ’ অভিযুক্তের দণ্ডাদেশ দৃশ্যমান হয়েছিল- তার অন্তরালবর্তী কারণ ব্যাখ্যার বোধকরি প্রয়োজন পড়ে না।

দুর্ভাগ্যজনক, একাত্তরে যে বাঙালি পুলিশ ৯ মাস পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বেতন খেয়ে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানিদের দখলকৃত স্থাপনা পাহারা দিয়েছিল, ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী-পরাজিত সেই পুলিশের কাছেই মাত্র দু’মাসের মাথায় অস্ত্রসমর্পণ করতে হয়েছিল বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের। এ অবিশ্বাস্য উদারতায় কোন ইতিবাচক ফলাফল যে আসেনি তার অজস্র প্রমাণ দেশেই রয়েছে। সম্প্রতি উদ্ঘাটিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রাজাকারের তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠকদের নাম থাকার ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হলো যে, উদারতা যতই দেখানো হোক না কেন- রাজাকারের আদর্শিক চেতনা কখনো নির্বাপিত হয় না। রাজাকার সব অবস্থায় রাজাকারই। এদের প্রতি উদারতা দেখানো স্রেফ উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতো।

সে যাই হোক, পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীনতাবিরোধী-বান্ধব বললে অত্যুক্তি হবে না। বঙ্গবন্ধু সরকারের করা শক্ত-নরম যাই হোক- দালাল আইনটি ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক সামরিক অর্ডিন্যান্স জারি করে বাতিল এবং ওই আইনে দণ্ডপ্রাপ্তদের কারামুক্তির ব্যবস্থা করেছিল জেনারেল জিয়ার শিখণ্ডী সেনাশাসিত সরকার। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বনকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বৃদ্ধির পথ খুলে দেয়। দালাল আইনের চাপে একদা কোণঠাসা স্বাধীনতাবিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার পুরো লাইসেন্স হাতে পেয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিরোধী এ পদক্ষেপের সুবাদে কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থান ঘটে প্রায় সর্বত্র। প্রাপ্ত সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে তারা নিজেদের কুকর্মের যাবতীয় রেকর্ড যতদূর সম্ভব গায়েব করে সুদীর্ঘ ২৫ বছরব্যাপী। সেই সঙ্গে ইচ্ছামতো বিকৃত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

এতদসত্ত্বেও, প্রায় ৪৮ বছর আগে দালাল আইনের অভিযোগগুলো নিয়ে যা কিছুই ঘটে থাকুক না কেন, ওই সাড়ে সাইত্রিশ হাজার অভিযোগের নিখুঁত ফিরিস্তি এখনো বিদ্যমান দেশীয় নানা প্রকাশনায় এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য ভাণ্ডারে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সহযোগী ও নিয়মিত বেতনভোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস আর বাঙালি পুলিশসহ সরকারি চাকুরেদের তালিকাও পাওয়া অসম্ভব নয় মোটেই। আর রাজনৈতিকভাবে সাহায্যকারী দালালদের নামগুলোও সহজেই উদ্ধার করা সম্ভব। এখন প্রয়োজন কেবল ঐতিহাসিক এ কাজটি ভালোভাবে নিষ্পন্ন করতে ঐতিহাসিক দায় অনুভব এবং উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। প্রায় চার দশক পর হলেও লড়াকু এ জাতি সন্তুষ্টির সঙ্গে অবলোকন করতে সক্ষম হয়েছে একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ দণ্ডিত অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর এবং বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখার অবিশ্বাস্য ঘটনা। সে তুলনায় মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ পাকিস্তানিদের এ দেশীয় দোসরদের নামের তালিকা তৈরি ও প্রকাশ কঠিন কোন কাজ নয় মোটেই।

প্রসঙ্গত, রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সহযোগী রাজাকারের তালিকায় যেভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সংগঠকদের নাম এসেছে, প্রকাশের জন্য অপেক্ষমাণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় রাজাকার-আলবদর-স্বাধীনতাবিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের নাম যে অন্তর্ভুক্ত হয়নি- সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কাজেই প্রকাশিতব্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে তালিকাটি কেবল উপজেলা পর্যায়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটি নামে হাতেগোনা কয়েক ব্যক্তির বিবেচনার ওপর ছেড়ে না দিয়ে বরং আরও তৃণমূল অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে তোলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে গণশুনানি বা গণপর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা সময়ের দাবি। দেশের প্রতি ইউনিয়নে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কারাণ্ড তা একাত্তরেই চিনে রেখেছেন স্ব স্ব ইউনিয়নবাসী।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় সবাই অস্ত্র জমা দিয়ে জেলা ও তৎকালীন মহুকুমা সদরে প্রতিষ্ঠিত মিলিশিয়া ক্যাম্পে কমবেশি ২ মাস সময় কাটিয়েছেন। দীর্ঘ এ সময়ে তারা সরকারিভাবে বরাদ্দ রেশন খেয়েছেন। সুতরাং মিলিশিয়া ক্যাম্পে রিপোর্ট করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল নামের ভাণ্ডার নিশ্চয়ই রক্ষিত আছে প্রত্যেক জেলা প্রশাসন অফিসে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নিখুঁত তালিকার জন্য সে নথিপত্রও এখন খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এত কথা উঠছে এ কারণে যে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে গিয়ে অতীতে যে অনেক নয়ছয় করা হয়েছে, সেটা তো আর মিথ্যা নয়।

জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামগুলো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই বীর সেনানীদের নামের নির্ভুল তালিকা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। একইভাবে খুনি-ধর্ষক পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তাকারী এ দেশীয় কুলাঙ্গারদের নামের তালিকাটাও গুরুত্বপূর্ণ একই কারণে। ওদেরও চিনে রাখা দরকার- এখন এবং আগামীর প্রয়োজনে। কাজেই তাড়াহুড়ো নয়, সময় নিয়ে চূড়ান্ত করা হোক মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তালিকা দুটো; যাচাই করা হোক একবারের জায়গায় একাধিকবার। তাড়াহুড়ো করে ভুল তালিকা প্রকাশের চাইতে বিলম্বে নির্ভুল তালিকা প্রকাশ অনেক বেশি দরকারি। তাড়াহুড়োর ফল যে ভালো হয় না, সে অভিজ্ঞতা তো ইতোমধ্যেই হয়েছে। আটচল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হলেও মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না হওয়াতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। আর রাজাকারের তালিকায় তো হাত পড়েছে অতি সম্প্রতি। সুতরাং তালিকার কাজ নির্ভুল করতে প্রয়োজনে আরও এক-দু’বছর সময় লাগলে ক্ষতি কী! কাজেই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে দেশব্যাপী ক্ষোভ-অসন্তোষ সঙ্গত হলেও তা নিয়ে পাকিয়ে ওঠা কূটতর্ক আর দোষারোপের পরিবর্তে নির্ভুল তালিকা তৈরির প্রতি সংশ্লিষ্টদের সব মনোযোগ নিবদ্ধ রাখাই হবে এ মুহূর্তের করণীয়।

ডিসেম্বর ২১, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা]

bahmedbd6@gmail.com

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১২ পৌষ ১৪২৬, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪১

রাজাকারের পাঁচালী ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা

বশীর আহমেদ

প্যান্ডোরার বাকশো খুলে গেছে। এই বাকশো খোলার কাজটি ছিল সময়ের দাবি। বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের অভ্যুদয় ঠেকাতে জান-মালসহ যারা প্রাণপাত করেছে; বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম ধষর্ক-লুণ্ঠক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহরণ, ১ কোটি মানুষকে গায়ের জোরে দেশান্তরসহ ৪ কোটি নরনারীকে আপন মাতৃভূমিতে উদ্বাস্তুকরণ, ১০ লাখ- মতান্তরে ৬ লাখ না হলেও নিশ্চিত পরিসংখ্যান মতে ৪ লাখের বেশি অসহায় নারীর সম্ভ্রমহরণ এবং সোনার বাংলার সম্পদ বিনাশের মহোৎসবে যারা অংশ নিয়েছিল গভীর আন্তরিকতায়, বাংলা মায়ের গর্ভজাত সেই সব কুলাঙ্গারদের নাম ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকবে না কেন? এ নামগুলো প্রায় পাঁচ দশক বাকশোবন্দী থাকার পর আলোয় আসার পথ যে খুঁজে পেয়েছে, সেটাই বড় অর্জন এ মুহূর্তের। এখন বাকশো-বিমুক্ত এই নামের তালিকায় সতর্কতা-অসতর্কতাজনিত নাম-বিভ্রাট বা বিচ্যুতি যাই বলা হোক না কেন- তা সংশোধনের সঙ্গে বেশি করে দরকার মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস গড়ার পথে এমন বিপর্যয় কিভাবে ঘটতে পারল- সেটাই খুঁজে দেখা।

স্বাভাবিক মৃত্যুর সুযোগ নিয়ে ফাঁসির দড়ি এড়িয়ে যাওয়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের একদা বয়ান মতে দেশে বহুল উচ্চারিত ‘রাজাকার’ শব্দটি নাকি উচ্চারণগত এক প্রচলিত ভুল। এই উর্দু শব্দটির সঠিক উচ্চারণ নাকি ‘রেজাকার’; যার অর্থ সাহায্য বা সহায়তাকারী। একাত্তর সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে গোলাম আযম বর্ণিত রেজাকার নামক যে গুটিকয় মীরজাফর পাকিস্তানি সেনাদের সহায়ক শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছিল, তারা মূলত ছিল- এক. রাজনৈতিক-আদর্শিকভাবে সুসংগঠিত সহায়তাকারী, যেমন- তৎকালীন রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং ধর্মাশ্রয়ী সমমনা অন্যরা। দুই. সশস্ত্রভাবে সহায়তাকারী, যেমন- রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামের ঘাতক বাহিনীসহ পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা কিছু বাঙালি পুলিশ। তিন. দখলদার পাকিস্তানিদের দখলবাজি চলমান রাখতে প্রশাসনিকভাবে সহায়তাকারী, যেমন- টিক্কা-নিয়াজির হুকুমবরদার বাঙালি সুইপার, চাপরাশি, পিয়ন, আর্দালী, কেরানি, ছোট-মধ্যম-উঁচু পদবিধারী অফিসারগণ। তৎকালীন ইপিআর, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী বা অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর বাঙালি সদস্যদের বেশিরভাগই যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তথাপি বিচ্ছিন্নভাবে এ বাহিনীগুলোর সদস্য আর কেউ পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালি নিধনে সহায়তাকারীর ভূমিকায় ছিলেন কিনা, সেটা অবশ্য আগে কখনও আলোচনায় আসেনি।

আমাদের জানা রয়েছে, ইন্দো-চীনের ভিয়েতনাম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পরাজিত মার্কিন বাহিনীর দোসর ভিয়েতনামীদের নাগরিক মর্যাদা পাইকারি হারে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অবদমন করে। জাতির দুর্দিনে শত্রুর পক্ষ নেয়া দুর্বৃত্তদের গোষ্ঠীশুদ্ধ নাম-ধাম সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়- যেন তারা কোনভাবে সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে না পারে, ভোটার হতে বা পাসপোর্ট নিতে না পারে। একজন সাধারণ ভিয়েতনামীর পাশে এসব জাতি-বিদ্বেষী ভিয়েতনামীর অবস্থা দাঁড়ায় স্রেফ ভারবাহী পশুর মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধক্লান্ত অনেক দেশেই স্থানীয় কোলাবরেটরদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশই বোধকরি একমাত্র ব্যতিক্রম- যেখানে স্বাধীনতাবিরোধী এবং দখলদার শত্রু বাহিনীর সাহায্যকারীদের কোন নামের তালিকা সরকারি উদ্যোগে তৈরি বা সংরক্ষণ, নাগরিক মর্যাদা অবদমন বা সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যাপারে ‘ফাইনাল সলিউশন’ টানতে বঙ্গবন্ধুর ফেরার অপেক্ষা করেছিলেন। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে পরিস্থিতি আঁচ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করে আরেকটি নিশ্চিত ‘ব্লাডশেড’ পরিহারে সফল হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ-১৯৭২’ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীদের বিচারের জন্য গঠন করেছিলেন ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল অধ্যাদেশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৩৭,৪৭১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছিল ২,৮৪৮টি এবং দ-প্রাপ্ত হয়েছিল মাত্র ৭৫২ অভিযুক্ত।

স্মরণযোগ্য, দালাল আইনের একটি বিধান- যাতে অনেকটা এভাবে বলা হয়েছিল যে, থানায় দায়েরকৃত অভিযোগগুলো মামলায় পরিণত করতে হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে অভিযোগটি আমলযোগ্য বিবেচিত হতে হবে। এ অবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধে শত্রু বাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত যে অল্পসংখ্যক সাহসী মানুষের দায়ের করা প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার অভিযোগের বিপরীতে কেন যে মাত্র ২ হাজার সাড়ে ৮শ’ অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং শুধু সাড়ে ৭শ’ অভিযুক্তের দণ্ডাদেশ দৃশ্যমান হয়েছিল- তার অন্তরালবর্তী কারণ ব্যাখ্যার বোধকরি প্রয়োজন পড়ে না।

দুর্ভাগ্যজনক, একাত্তরে যে বাঙালি পুলিশ ৯ মাস পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বেতন খেয়ে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানিদের দখলকৃত স্থাপনা পাহারা দিয়েছিল, ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী-পরাজিত সেই পুলিশের কাছেই মাত্র দু’মাসের মাথায় অস্ত্রসমর্পণ করতে হয়েছিল বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের। এ অবিশ্বাস্য উদারতায় কোন ইতিবাচক ফলাফল যে আসেনি তার অজস্র প্রমাণ দেশেই রয়েছে। সম্প্রতি উদ্ঘাটিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রাজাকারের তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠকদের নাম থাকার ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হলো যে, উদারতা যতই দেখানো হোক না কেন- রাজাকারের আদর্শিক চেতনা কখনো নির্বাপিত হয় না। রাজাকার সব অবস্থায় রাজাকারই। এদের প্রতি উদারতা দেখানো স্রেফ উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতো।

সে যাই হোক, পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীনতাবিরোধী-বান্ধব বললে অত্যুক্তি হবে না। বঙ্গবন্ধু সরকারের করা শক্ত-নরম যাই হোক- দালাল আইনটি ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক সামরিক অর্ডিন্যান্স জারি করে বাতিল এবং ওই আইনে দণ্ডপ্রাপ্তদের কারামুক্তির ব্যবস্থা করেছিল জেনারেল জিয়ার শিখণ্ডী সেনাশাসিত সরকার। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বনকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বৃদ্ধির পথ খুলে দেয়। দালাল আইনের চাপে একদা কোণঠাসা স্বাধীনতাবিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার পুরো লাইসেন্স হাতে পেয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিরোধী এ পদক্ষেপের সুবাদে কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থান ঘটে প্রায় সর্বত্র। প্রাপ্ত সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে তারা নিজেদের কুকর্মের যাবতীয় রেকর্ড যতদূর সম্ভব গায়েব করে সুদীর্ঘ ২৫ বছরব্যাপী। সেই সঙ্গে ইচ্ছামতো বিকৃত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

এতদসত্ত্বেও, প্রায় ৪৮ বছর আগে দালাল আইনের অভিযোগগুলো নিয়ে যা কিছুই ঘটে থাকুক না কেন, ওই সাড়ে সাইত্রিশ হাজার অভিযোগের নিখুঁত ফিরিস্তি এখনো বিদ্যমান দেশীয় নানা প্রকাশনায় এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য ভাণ্ডারে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সহযোগী ও নিয়মিত বেতনভোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস আর বাঙালি পুলিশসহ সরকারি চাকুরেদের তালিকাও পাওয়া অসম্ভব নয় মোটেই। আর রাজনৈতিকভাবে সাহায্যকারী দালালদের নামগুলোও সহজেই উদ্ধার করা সম্ভব। এখন প্রয়োজন কেবল ঐতিহাসিক এ কাজটি ভালোভাবে নিষ্পন্ন করতে ঐতিহাসিক দায় অনুভব এবং উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। প্রায় চার দশক পর হলেও লড়াকু এ জাতি সন্তুষ্টির সঙ্গে অবলোকন করতে সক্ষম হয়েছে একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ দণ্ডিত অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর এবং বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখার অবিশ্বাস্য ঘটনা। সে তুলনায় মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ পাকিস্তানিদের এ দেশীয় দোসরদের নামের তালিকা তৈরি ও প্রকাশ কঠিন কোন কাজ নয় মোটেই।

প্রসঙ্গত, রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সহযোগী রাজাকারের তালিকায় যেভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সংগঠকদের নাম এসেছে, প্রকাশের জন্য অপেক্ষমাণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় রাজাকার-আলবদর-স্বাধীনতাবিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের নাম যে অন্তর্ভুক্ত হয়নি- সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কাজেই প্রকাশিতব্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে তালিকাটি কেবল উপজেলা পর্যায়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটি নামে হাতেগোনা কয়েক ব্যক্তির বিবেচনার ওপর ছেড়ে না দিয়ে বরং আরও তৃণমূল অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে তোলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে গণশুনানি বা গণপর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা সময়ের দাবি। দেশের প্রতি ইউনিয়নে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কারাণ্ড তা একাত্তরেই চিনে রেখেছেন স্ব স্ব ইউনিয়নবাসী।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় সবাই অস্ত্র জমা দিয়ে জেলা ও তৎকালীন মহুকুমা সদরে প্রতিষ্ঠিত মিলিশিয়া ক্যাম্পে কমবেশি ২ মাস সময় কাটিয়েছেন। দীর্ঘ এ সময়ে তারা সরকারিভাবে বরাদ্দ রেশন খেয়েছেন। সুতরাং মিলিশিয়া ক্যাম্পে রিপোর্ট করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল নামের ভাণ্ডার নিশ্চয়ই রক্ষিত আছে প্রত্যেক জেলা প্রশাসন অফিসে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নিখুঁত তালিকার জন্য সে নথিপত্রও এখন খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এত কথা উঠছে এ কারণে যে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে গিয়ে অতীতে যে অনেক নয়ছয় করা হয়েছে, সেটা তো আর মিথ্যা নয়।

জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামগুলো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই বীর সেনানীদের নামের নির্ভুল তালিকা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। একইভাবে খুনি-ধর্ষক পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তাকারী এ দেশীয় কুলাঙ্গারদের নামের তালিকাটাও গুরুত্বপূর্ণ একই কারণে। ওদেরও চিনে রাখা দরকার- এখন এবং আগামীর প্রয়োজনে। কাজেই তাড়াহুড়ো নয়, সময় নিয়ে চূড়ান্ত করা হোক মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তালিকা দুটো; যাচাই করা হোক একবারের জায়গায় একাধিকবার। তাড়াহুড়ো করে ভুল তালিকা প্রকাশের চাইতে বিলম্বে নির্ভুল তালিকা প্রকাশ অনেক বেশি দরকারি। তাড়াহুড়োর ফল যে ভালো হয় না, সে অভিজ্ঞতা তো ইতোমধ্যেই হয়েছে। আটচল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হলেও মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না হওয়াতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। আর রাজাকারের তালিকায় তো হাত পড়েছে অতি সম্প্রতি। সুতরাং তালিকার কাজ নির্ভুল করতে প্রয়োজনে আরও এক-দু’বছর সময় লাগলে ক্ষতি কী! কাজেই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে দেশব্যাপী ক্ষোভ-অসন্তোষ সঙ্গত হলেও তা নিয়ে পাকিয়ে ওঠা কূটতর্ক আর দোষারোপের পরিবর্তে নির্ভুল তালিকা তৈরির প্রতি সংশ্লিষ্টদের সব মনোযোগ নিবদ্ধ রাখাই হবে এ মুহূর্তের করণীয়।

ডিসেম্বর ২১, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা]

bahmedbd6@gmail.com