আকাশ যেভাবে আঁখি বেগম হলো

শিল্পী সাহা

ঘটনার বিবরণ : নিখোঁজ মা ও পঙ্গু বাবার ছেলে আকাশ (১০) শাহবাগ, ঢাকাতে বড় বোনের কাছে বড় হয়েছে। তার বড় বোন শাহবাগের ফুটপাতের ভাসমান ফুল বিক্রেতা। আকাশও তার বোনের সঙ্গে শাহবাগের সিগন্যালে ফুল বিক্রি করে। সিগন্যালে আরও অনেক ফুল বিক্রেতার মধ্যে কয়েকজন হিজরাও রয়েছে। তাদের সঙ্গে আকাশের বন্ধুত্ব হয়। মাঝে মাঝে আকাশ তার বোনের অজান্তে হিজরাদের সঙ্গে বেড়াতে চলে যায়। হিজরাদের চলন, বলন, ঢং সাজ-পোশাক আকাশ রপ্ত করে ফেলে। জীবন-জীবিকার কষাঘাতে ভাইয়ের খোঁজ নেবার সময় নেই আকাশের বোনের। এভাবেই একদিন আকাশ হিজরাদের সঙ্গে চলে যায় গোয়ালন্দ ঘাট, ফরিদপুরে। সেখানে সংঘবদ্ধ হিজরারা রয়েছে, তারা গোয়ালন্দ ফেরি ঘাটে পারাপার হওয়া বাসে টাকা তোলে। আকাশ গোয়ালন্দ ঘাটে এসে নাম বদল করে হয়ে যায় আঁখি বেগম। আঁখি বেগম নামে পরিচিত হয় আকাশ। হিজরাদের মতো সাজগোজ করে সব সময়।

এখানেই মানব পাচারকারী আ. কাদের রুবেল (২৩) এর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমের। বেশ ভালোই কাটছিল আঁখি বেগমের দিনগুলো। আকাশ কখনোই বুঝতে পারেনি আ. কাদের রুবেল একজন মানব পাচারকারী। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে রুবেলকে খুঁজছিল। এরপর গত ২৫/১০/১৪ তারিখ গোয়ালন্দ থানা পুলিশের হাতে ধরা পরে রুবেল সঙ্গে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমও। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এ মামলা হয়। যার নম্বর-৩৯ তাং-২৫/১০/১৪ ইং। পুলিশ রাজবাড়ি কোর্টের মাধ্যমে রুবেলকে জেলহাজতে পাঠায় এবং আকাশ ওরফে আঁখি বেগম (১৩) এর কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় কোর্ট তাকে সেফ হোম ফরিদপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গত ২৬/১০/১৪ তারিখ সেফ হোমে নেবার পর তাকে অন্যান্য নিরাপদ হেফাজতীদের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আঁখি বেগমের আচরণ এবং শারীরিক অবয়বে সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি সেফ হোমের তত্ত্বাবধায়ককে জানায়। তখন সেফ হোম কর্তৃপক্ষ একজন আনসার সদস্যের মাধ্যমে আঁখি বেগমকে পরীক্ষা করালে দেখা যায় আঁখি বেগম আসলে মেয়ে বা হিজরা নয়, সে একজন বালক। এর প্রেক্ষিতে ফরিদপুর সেফ হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, রাজবাড়ি বরাবরে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন।

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয় যে ‘ফরিদপুর সেফ হোমে থাকা ১০টি শিশু অভিভাবকের কাছে বাড়ি ফিরতে চায়। ’ সেই প্রেক্ষিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এ্যাকশন মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয় যে, এই ১০টি শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে আসক আইনগত সহযোগিতা প্রদান করবে। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আসক থেকে মাঠকর্মী ফরিদপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট শিশুদের সঙ্গে কথা বলাসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তোলা হয়। মাঠকর্মী শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুরা অস্পষ্টভাবে যতটুকু ঠিকানা বলতে পারে সেটুকু, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মাঠকর্মী ঢাকাতে ফিরে আসে। এরপর শুরু হয় অভিভাবক খোঁজার পালা। আসক প্রথমে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমের অভিভাবক খোঁজার কাজ শুরু করে। সেফ হোমে মাঠকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সময় আকাশ জানিয়ে ছিল, সে তার বোনের সঙ্গে শাহবাগের সিগন্যালে ফুল বিক্রি করতো। সেই কথার সূত্র ধরে মাঠকর্মী শাহবাগের সিগন্যালে থাকা সকল ফুলের দোকানে যান এবং আকাশের বিষয়ে খোঁজ করেন কিন্তু কেউ আকাশের বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। তবে শাহবাগের একজন ভাসমান ফুল বিক্রেতা আসককর্মীকে জানান যে, তাদের সঙ্গে মনির হোসেন বলে একজন ফুল বিক্রি করতো, তার ভাই হারিয়ে গেছে বলে সে শুনেছিল। তবে মনির কোথায় থাকে তা সে জানে না। এরপর মাঠকর্মী শাহবাগের রাস্তার মোড়ে আকাশের বোনকে খুঁজতে থাকে।

এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শাহবাগ চার রাস্তার মোড়, কাঁটাবন মোড়, শেরাটন মোড়, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন মোড়, শিশুপার্কের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে একদিন আকাশের বোন ও তার স্বামীকে পাওয়া যায়। মাঠকর্মী তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি দেখে আকাশের বোন আকাশকে সনাক্ত করে। আকাশের বোনের স্বামী জানায়, তারা এখন আর শাহবাগে ফুল বিক্রি করে না। তারা ঢাকার অন্য রাস্তায় ফুল বিক্রি করে। আজ তারা শাহবাগে ফুল কিনতে এসেছে। আরও বেশী নিশ্চিত হবার জন্য মাঠকর্মী আকাশের বোনের স্বামীকে তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পারিবারিক ছবি (যদি থাকে), আকাশের বাবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, এলাকার চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ আসক কার্যালয়ে আসতে বলেন।

মনির হোসেন গত ২/৮/২০১৬ তারিখ আসক কার্যালয়ে আসেন এবং তার কাছে থাকা প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়। এরপর গত ৪/৮/১৬ ইং তারিখ আসককর্মী এবং মনির হোসেনকে ফরিদপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়। আকাশ ওরফে আঁখি বেগম তার বোনের স্বামীকে চিনতে পারে এবং মনির হোসেনও আকাশকে সনাক্ত করে। আকাশ আসককর্মীকে জানায় যে, মনির হোসেন তার বোনের স্বামী, দীর্ঘদিন ধরে সে তার বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গেই থেকেছে। আকাশের বাবা অসুস্থ ও পঙ্গু এবং চট্টগ্রামে অবস্থান করে বিধায় আকাশের বোনের স্বামী মনির হোসেন আসকের নিকট আবেদন করেন আকাশের জামিনের জন্য আইনগত সহযোগিতা দিতে। এরপর রাজবাড়ি কোর্টের আইনজীবী মো. আক্কাস আলীর মাধ্যমে ফাইল পুট-আপ দিয়ে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পি ডব্লিউ) চাইলে আদালত গত ২৫/৯/২০১৬ ইং তারিখ শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানির দিন ধার্য হবার পর আসক থেকে আকাশের বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয় এবং আকাশের বাবা মো. জসিম ঢাকায় আসতে রাজি হন। গত ২৪/৯/১৬ ইং তারিখ আকাশের বাবা খুব ভোরে ঢাকায় পৌঁছান এবং ফোনে আসকের আইনজীবীকে অবহিত করেন যে, তারা গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন।

আসকের আইনজীবী এবং মাঠকর্মী গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে আকাশের বাবার শারীরিক অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আকাশের বাবা শীর্ণকায় পঙ্গু এবং ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন শুধু দীর্ঘদিন পর ছেলেকে ফিরে পাবার আশায়। এরপর ঐদিন আসক আইনজীবী ও মাঠকর্মী আকাশের বাবা ও বোনের স্বামীকে নিয়ে রাজবাড়ি যান এবং নির্ধারিত তারিখে আসক আইনজীবী জিম্মা শুনানি করেন। কিন্তু কোর্ট আকাশের বাহ্যিক অবয়ব দেখে কিছুটা অনাস্থা প্রকাশ করে। কারণ কোর্ট মনে করেন যে, আকাশকে জামিন দেয়া হলে সে পুনরায় ওই পেশায় ফিরে যাবে। আসকের আইনজীবী আকাশের বাবাকে মাঠকর্মীর সহযোগিতায় এজলাসে উঠালে কোর্ট কিছুটা নমনীয় হন। তখন আসক আইনজীবী মানবিক ও আইনগত দিকগুলো বিবেচনা করে পুনরায় জামিন আবেদন করলে কোর্ট আকাশ ওরফে আঁখি বেগমকে তার বাবার জিম্মায় প্রদান করে। দীর্ঘদিন পর একমাত্র ছেলেকে ফিওে পেয়ে খুবই খুশি হন। আকাশ তার বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে ফিরে যায়। ফিরে যাবার পর আসক থেকে প্রায়ই আকাশের খোঁজ রাখা হতো। বর্তমানে আকাশ একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে।

সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৩ পৌষ ১৪২৬, ৩০ রবিউস সানি ১৪৪১

আকাশ যেভাবে আঁখি বেগম হলো

শিল্পী সাহা

ঘটনার বিবরণ : নিখোঁজ মা ও পঙ্গু বাবার ছেলে আকাশ (১০) শাহবাগ, ঢাকাতে বড় বোনের কাছে বড় হয়েছে। তার বড় বোন শাহবাগের ফুটপাতের ভাসমান ফুল বিক্রেতা। আকাশও তার বোনের সঙ্গে শাহবাগের সিগন্যালে ফুল বিক্রি করে। সিগন্যালে আরও অনেক ফুল বিক্রেতার মধ্যে কয়েকজন হিজরাও রয়েছে। তাদের সঙ্গে আকাশের বন্ধুত্ব হয়। মাঝে মাঝে আকাশ তার বোনের অজান্তে হিজরাদের সঙ্গে বেড়াতে চলে যায়। হিজরাদের চলন, বলন, ঢং সাজ-পোশাক আকাশ রপ্ত করে ফেলে। জীবন-জীবিকার কষাঘাতে ভাইয়ের খোঁজ নেবার সময় নেই আকাশের বোনের। এভাবেই একদিন আকাশ হিজরাদের সঙ্গে চলে যায় গোয়ালন্দ ঘাট, ফরিদপুরে। সেখানে সংঘবদ্ধ হিজরারা রয়েছে, তারা গোয়ালন্দ ফেরি ঘাটে পারাপার হওয়া বাসে টাকা তোলে। আকাশ গোয়ালন্দ ঘাটে এসে নাম বদল করে হয়ে যায় আঁখি বেগম। আঁখি বেগম নামে পরিচিত হয় আকাশ। হিজরাদের মতো সাজগোজ করে সব সময়।

এখানেই মানব পাচারকারী আ. কাদের রুবেল (২৩) এর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমের। বেশ ভালোই কাটছিল আঁখি বেগমের দিনগুলো। আকাশ কখনোই বুঝতে পারেনি আ. কাদের রুবেল একজন মানব পাচারকারী। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে রুবেলকে খুঁজছিল। এরপর গত ২৫/১০/১৪ তারিখ গোয়ালন্দ থানা পুলিশের হাতে ধরা পরে রুবেল সঙ্গে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমও। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এ মামলা হয়। যার নম্বর-৩৯ তাং-২৫/১০/১৪ ইং। পুলিশ রাজবাড়ি কোর্টের মাধ্যমে রুবেলকে জেলহাজতে পাঠায় এবং আকাশ ওরফে আঁখি বেগম (১৩) এর কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় কোর্ট তাকে সেফ হোম ফরিদপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গত ২৬/১০/১৪ তারিখ সেফ হোমে নেবার পর তাকে অন্যান্য নিরাপদ হেফাজতীদের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আঁখি বেগমের আচরণ এবং শারীরিক অবয়বে সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি সেফ হোমের তত্ত্বাবধায়ককে জানায়। তখন সেফ হোম কর্তৃপক্ষ একজন আনসার সদস্যের মাধ্যমে আঁখি বেগমকে পরীক্ষা করালে দেখা যায় আঁখি বেগম আসলে মেয়ে বা হিজরা নয়, সে একজন বালক। এর প্রেক্ষিতে ফরিদপুর সেফ হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, রাজবাড়ি বরাবরে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন।

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয় যে ‘ফরিদপুর সেফ হোমে থাকা ১০টি শিশু অভিভাবকের কাছে বাড়ি ফিরতে চায়। ’ সেই প্রেক্ষিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এ্যাকশন মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয় যে, এই ১০টি শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে আসক আইনগত সহযোগিতা প্রদান করবে। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আসক থেকে মাঠকর্মী ফরিদপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট শিশুদের সঙ্গে কথা বলাসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তোলা হয়। মাঠকর্মী শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুরা অস্পষ্টভাবে যতটুকু ঠিকানা বলতে পারে সেটুকু, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মাঠকর্মী ঢাকাতে ফিরে আসে। এরপর শুরু হয় অভিভাবক খোঁজার পালা। আসক প্রথমে আকাশ ওরফে আঁখি বেগমের অভিভাবক খোঁজার কাজ শুরু করে। সেফ হোমে মাঠকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সময় আকাশ জানিয়ে ছিল, সে তার বোনের সঙ্গে শাহবাগের সিগন্যালে ফুল বিক্রি করতো। সেই কথার সূত্র ধরে মাঠকর্মী শাহবাগের সিগন্যালে থাকা সকল ফুলের দোকানে যান এবং আকাশের বিষয়ে খোঁজ করেন কিন্তু কেউ আকাশের বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। তবে শাহবাগের একজন ভাসমান ফুল বিক্রেতা আসককর্মীকে জানান যে, তাদের সঙ্গে মনির হোসেন বলে একজন ফুল বিক্রি করতো, তার ভাই হারিয়ে গেছে বলে সে শুনেছিল। তবে মনির কোথায় থাকে তা সে জানে না। এরপর মাঠকর্মী শাহবাগের রাস্তার মোড়ে আকাশের বোনকে খুঁজতে থাকে।

এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শাহবাগ চার রাস্তার মোড়, কাঁটাবন মোড়, শেরাটন মোড়, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন মোড়, শিশুপার্কের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে একদিন আকাশের বোন ও তার স্বামীকে পাওয়া যায়। মাঠকর্মী তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি দেখে আকাশের বোন আকাশকে সনাক্ত করে। আকাশের বোনের স্বামী জানায়, তারা এখন আর শাহবাগে ফুল বিক্রি করে না। তারা ঢাকার অন্য রাস্তায় ফুল বিক্রি করে। আজ তারা শাহবাগে ফুল কিনতে এসেছে। আরও বেশী নিশ্চিত হবার জন্য মাঠকর্মী আকাশের বোনের স্বামীকে তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পারিবারিক ছবি (যদি থাকে), আকাশের বাবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, এলাকার চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ আসক কার্যালয়ে আসতে বলেন।

মনির হোসেন গত ২/৮/২০১৬ তারিখ আসক কার্যালয়ে আসেন এবং তার কাছে থাকা প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়। এরপর গত ৪/৮/১৬ ইং তারিখ আসককর্মী এবং মনির হোসেনকে ফরিদপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়। আকাশ ওরফে আঁখি বেগম তার বোনের স্বামীকে চিনতে পারে এবং মনির হোসেনও আকাশকে সনাক্ত করে। আকাশ আসককর্মীকে জানায় যে, মনির হোসেন তার বোনের স্বামী, দীর্ঘদিন ধরে সে তার বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গেই থেকেছে। আকাশের বাবা অসুস্থ ও পঙ্গু এবং চট্টগ্রামে অবস্থান করে বিধায় আকাশের বোনের স্বামী মনির হোসেন আসকের নিকট আবেদন করেন আকাশের জামিনের জন্য আইনগত সহযোগিতা দিতে। এরপর রাজবাড়ি কোর্টের আইনজীবী মো. আক্কাস আলীর মাধ্যমে ফাইল পুট-আপ দিয়ে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পি ডব্লিউ) চাইলে আদালত গত ২৫/৯/২০১৬ ইং তারিখ শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানির দিন ধার্য হবার পর আসক থেকে আকাশের বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয় এবং আকাশের বাবা মো. জসিম ঢাকায় আসতে রাজি হন। গত ২৪/৯/১৬ ইং তারিখ আকাশের বাবা খুব ভোরে ঢাকায় পৌঁছান এবং ফোনে আসকের আইনজীবীকে অবহিত করেন যে, তারা গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন।

আসকের আইনজীবী এবং মাঠকর্মী গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে আকাশের বাবার শারীরিক অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আকাশের বাবা শীর্ণকায় পঙ্গু এবং ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন শুধু দীর্ঘদিন পর ছেলেকে ফিরে পাবার আশায়। এরপর ঐদিন আসক আইনজীবী ও মাঠকর্মী আকাশের বাবা ও বোনের স্বামীকে নিয়ে রাজবাড়ি যান এবং নির্ধারিত তারিখে আসক আইনজীবী জিম্মা শুনানি করেন। কিন্তু কোর্ট আকাশের বাহ্যিক অবয়ব দেখে কিছুটা অনাস্থা প্রকাশ করে। কারণ কোর্ট মনে করেন যে, আকাশকে জামিন দেয়া হলে সে পুনরায় ওই পেশায় ফিরে যাবে। আসকের আইনজীবী আকাশের বাবাকে মাঠকর্মীর সহযোগিতায় এজলাসে উঠালে কোর্ট কিছুটা নমনীয় হন। তখন আসক আইনজীবী মানবিক ও আইনগত দিকগুলো বিবেচনা করে পুনরায় জামিন আবেদন করলে কোর্ট আকাশ ওরফে আঁখি বেগমকে তার বাবার জিম্মায় প্রদান করে। দীর্ঘদিন পর একমাত্র ছেলেকে ফিওে পেয়ে খুবই খুশি হন। আকাশ তার বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে ফিরে যায়। ফিরে যাবার পর আসক থেকে প্রায়ই আকাশের খোঁজ রাখা হতো। বর্তমানে আকাশ একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে।

সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)